রবিউল আউয়াল ১৪২৯   ||   মার্চ ২০০৮

ই ব্ নে সি না

নাজনীন ইদ্রিস চৌধুরী

প্রিয় বন্ধুরা! আজকে তোমাদের এমন একজন বিশ্ববিখ্যাত চিকিৎসা-বিজ্ঞানীর নাম বলব, যিনি ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম পথিকৃৎ। তাঁর অমূল্য অবদান ও উদ্ভাবনী শক্তির জাদুস্পর্শে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে আরোহণ করেছিল। তাঁর নাম ইবনে সীনা। পুরো নাম হোসাইন ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সীনা, উপনাম আবু আলী । তিনি ৯৮০ সালে উজবেকিস্তানের বুখারা সংলগ্ন আফসানা নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম সিতারা এবং বাবার নাম আব্দুল্লাহ। মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি পবিত্র কুরআন শরীফ হেফ্জ করেন। তিনি শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানীই ছিলেন না বরং একাধারে রসায়নবিদ, দার্শনিক, রাজনীতিক ও ধর্মতত্ত্ববিদ ছিলেন। তিনি উচ্চতর অধ্যয়ন শেষ করেন বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মতাত্ত্বিক বিভিন্ন বিষয়ের উপর।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে তাঁর বিস্ময়কর অবদান তৎকালীন বিশ্বকে হতবাক করে দেয়। এই শাস্ত্রের উপর বিস্তর গবেষণা করে তিনি অনেক বই লেখেন। এর মধ্যে ২১টি বড় গ্রন্থ এবং ২৪টি ছোট। কোন কোন ঐতিহাসিক এর সংখ্যা শতাধিকও বলেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি গ্রন্থের নাম হল-

[১] কানুন ফিততিব [২] কিতাবুশ শিফা [৩] আলমানতিক [৪] কিতাবুল মাআদ [৫] আসসিয়াসাহ [৬] আলইশারাত [৭] লিসানুল আরব [৮] আসবাবুর রা‘দি ওয়াল বার্ক [৯] আসবাবু হুদূছিল হুরূফ।

তাঁর লেখা পুস্তকাদি তৎকালীন পশ্চিমা মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পড়ানো হত। তোমরা এটা জেনে অবাক হবে যে, তাঁর এই অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে ১২শ’ থেকে ১৭শ’ শতাব্দীর সমস্ত লোকেরা [ইউরোপের] Master of medicine বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের গুরু বলে মানত। এমন কি কানুন ফিততিব গ্রন্থটি তখনকার বিশ্বের ৩৬টি ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ২৩বার ল্যাটিন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। তখন পৃথিবীতে কানুন ফিততিব-এর সমপর্যায়ের কোন গ্রন্থ লিখিত হয়নি। ওই গ্রন্থে ইবনে সীনা ৭৬০টি ওষুধের বর্ণনা করেছেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে Bibel of medical science নামে প্রসিদ্ধ। তৎকালীন পাশ্চাত্যে তাঁর প্রায় সমপর্যায়ের একজন বিজ্ঞানী ছিলেন। যিনি গ্যালেন নামেই পরিচিত। ইবনে সীনাকে ইউরোপের লোকেরা ‘প্রাচ্যের গ্যালেন’ বলে অভিহিত করে। তাঁর অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তি ও প্রজ্ঞাময় জ্ঞানের জন্য স্যার টমাস ক্লিফোর্ড বলেন, ‘ইবনে সীনার আল্কানুন ফিততিব ইপোক্রিটস ও গ্যালেনের কৃতিত্বকেও ম্লান করে দিয়েছে।’

প্রিয় বন্ধুরা! আজকের উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা ক্ষেত্রে আমরা কিছুটা পিছিয়ে আছি। কারণ আমরা আমাদের অতীত গৌরবকে ধরে রাখতে পারিনি। তাই আমাদেরকেও আজ আবিষ্কার ও তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রগুলোতেও এগিয়ে যেতে হবে। তাহলে আমরা একবিংশ শতাব্দীতে ইবনে সীনাকে আবারো ফিরে পাবো উৎকর্ষতার ছন্দে। #

 

 

advertisement