একটি ভিত্তিহীন কাহিনী
নবীকন্যা ফাতেমা রা.-এর ঘরে জান্নাতের খাবার
নবীকন্যা হযরত ফাতেমা রা. সম্পর্কে একটি কিসসা লোকমুখে প্রসিদ্ধ আছে। এছাড়াও সেদিন হকারদের মাধ্যমে সমাজে ছড়ানো ‘হযরত ফাতেমা রা.-এর জীবনী’ নামের একটি চটি বইয়েও কিসসাটি দেখতে পেলাম-
একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধারে দুই দিন না খেয়ে কাটানোর পর তৃতীয় দিন প্রচ- ক্ষুধার্ত অবস্থায় কন্যা ফাতেমার বাড়িতে গেলেন। নবীজীর চেহারা দেখেই ফাতেমা রা. বুঝলেন- নবীজী অনেক ক্ষুধার্ত। কিন্তু তার কিছুই করার ছিল না। কারণ, নিজেরাও আজ তিন দিন থেকে উপবাস কাটাচ্ছেন। নবীজীও আদরের কন্যার চেহারায় অনাহারের ছাপ দেখতে পেলেন। মনে মনে কষ্ট পেলেন, কিন্তু কিছু বললেন না। কন্যাকে ধৈর্যের উপদেশ দিয়ে গৃহ ত্যাগ করলেন।
নিজ পিতা নবীজীকে কিছু না খাওয়াতে পেরে ফাতেমা রা.-ও খুব কষ্ট পেলেন। তখন ফাতেমা রা. দু’হাত তুলে আল্লাহ্র কাছে দুআ করলেন। কান্নাভেজা কণ্ঠে আল্লাহ্র কাছে ফরিয়াদ জানালেন- আল্লাহ! তুমি আমাকে যে অবস্থায় রাখ তাতেই আমি খুশি; কিন্তু আমার পিতা আমার বাড়ি থেকে না খেয়ে যাবেন- এটা আামার জন্য বড় দুঃখের বিষয়। চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতে থাকলেন। একপর্যায়ে হঠাৎ দেখতে পেলেন এক অপরিচিত লোক এসে রুটি এবং পাকানো গোশত রেখে চলে গেলেন। নবীকন্যা দুআ শেষে এ খাদ্যসামগ্রী দেখে খুবই খুশি হলেন। পুত্র হাসানকে পাঠালেন- নানাকে ডেকে আনার জন্য। নবীজী উপস্থিত হলেন। ফাতেমা রা. নবীজীর সামনে অপরিচিত লোকের দেওয়া খাবার পেশ করলেন। নবীজী তখন জিজ্ঞেস করলেন, এ খাবার কোথা থেকে এল। ফাতেমা রা. বললেন, যেখান থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের মাতা মারইয়াম আ.-এর খাবার আসত সেই জান্নাত থেকেই এ বরকতময় খাবার এসেছে। একথা শুনে নবীজী খুব খুশি হলেন।
সকলে মিলে সে খাবার খেলেন। সকলে তৃপ্তিভরে খাওয়ার পরও দেখলেন খাবার উদ্বৃত্ত রয়েছে। নবীকন্যা বেঁচে যাওয়া খাবার নিজের জন্য না রেখে সব প্রতিবেশীদের মাঝে বিলিয়ে দিলেন। তখন এ বরকতময় খাবার দ্বারা প্রতিবেশীরাও তৃপ্ত হলেন। সে খাবার খেয়ে প্রতিবেশীরা বলতে লাগল, এমন মজাদার খাবার আমরা আর কখনও খাইনি।
এটি একটি বানোয়াট কিসসা; নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে তা পাওয়া যায় না। নবী পরিবারের সাথে এর চেয়েও অলৌকিক ব্যাপার ঘটতে পারে। কিন্তু যা ঘটেনি তা নবী পরিবারের সাথে যুক্ত করে বর্ণনা করার কোনো অর্থ নেই। আর এর কোনো ফায়দাও নেই। সুতরাং আমরা তা বলা থেকে বিরত থাকব।
ফাতেমা রা.-এর সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনাহার ও ক্ষুধাকষ্ট সংক্রান্ত কিছু ঘটনা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়, আমরা সেগুলো আলোচনা করতে পারি এবং তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি।
যেমন, একবার ফাতেমা রা. নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এক টুকরো যবের রুটি নিয়ে এলেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা খেয়ে বললেন-
هَذَا أَوّلُ طَعَامٍ أَكَلَهُ أَبُوكِ مِنْ ثَلَاثَةِ أَيّامٍ.
তিন দিনের মধ্যে এই প্রথম তোমার পিতা খাবার খেল।
(আরেক বর্ণনায় রয়েছে) রুটি আনলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? ফাতেমা রা. বললেন, আমি রুটি প্রস্তুত করলাম, তখন আমার মন চাইল না- আপনাকে রেখে খাই; তাই আপনার জন্য একটু নিয়ে এলাম। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৩২২৩; আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ৭৫০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৮২৩৩
ইমরান ইবনে হুসাইন রা. বলেন, একবার আমি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে বসা ছিলাম। এমন সময় ফাতেমা রা. এলেন। নবীজী তাকে বললেন, কাছে এসো ফাতেমা! ফাতেমা রা. একটু কাছে এলেন। নবীজী আবার বললেন, আরো কাছে এসো। (অনাহারে) ফাতেমা রা.-এর চেহারা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছিল। রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছিল। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য দুআ করলেন এবং বললেন-
لَا تُجِعْ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمّدٍ.
হে আল্লাহ!... মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাকে আপনি ক্ষুধার্ত রাখবেন না।
ইমরান রা. বলেন, নবীজীর দুআর পর আমি দেখলাম, ফাতেমা রা.-এর চেহারার হলুদ বর্ণ চলে গেল এবং রক্তশূন্যতা কেটে গেল। পরবর্তীতে আমি ফাতেমা রা.-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন-
مَا جُعْتُ بَعْدَ ذَلِكَ يَا عِمْرَانُ.
ইমরান! নবীজীর ঐ দুআর পর থেকে আমি আর কোনোদিন ক্ষুধায় কষ্ট পায়নি। -আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৩৯৯৯; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ১৫২০৫
হাইছামী রাহ. বলেন-
رَوَاهُ الطّبَرَانِيّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ عُتْبَةُ بْنُ حُمَيْدٍ، وَثّقَهُ ابْنُ حِبّانَ وَغَيْرُهُ، وَضَعّفَهُ جَمَاعَةٌ، وَبَقِيّةُ رِجَالِهِ وُثِّقُوا.