ইয়াদাতুল মারীয : কিছু আদব
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি বড় সুন্নত হচ্ছে ইয়াদাতুল মারীয। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দেখতে যাওয়া, তার খোঁজ-খবর নেওয়া, হালপুরসী করা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে ইসলামের পরিভাষায় বলা হয় ইয়াদাতুল মারীয। এটি এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের একটি হক। হাদীস শরীফে এর অনেক ফযীলত বিবৃত হয়েছে।
ইয়াদাতুল মারীযের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের রহমত ও সন্তুষ্টি লাভ হয়। দিল নরম হয়। আখেরাতের কথা স্মরণ হয়। নেক আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। এমনকি খোদ এ আমলের মাধ্যমেই অনেক সওয়াব হাছিল হয়। এর মাধ্যমে পারস্পরিক সম্পর্ক সুন্দর হয়। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়। অসুস্থ ব্যক্তি প্রবোধ লাভ করে। তার সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়। যিনি এ আমলে এগিয়ে আসেন ফেরেশতাগণ তার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দুআ করতে থাকেন। আসমানে তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা হতে থাকে। যতক্ষণ সে রোগীর সেবায় ব্যস্ত থাকে ততক্ষণ সে আল্লাহ্র রহমতের বেষ্টনীতে থাকে। আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সে জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে থাকে। সর্বোপরি হাদীস শরীফের ভাষ্য অনুযায়ী রোগীর সেবা যেন আল্লাহ্রই সেবা। তাই মুসলিম মাত্রেরই কর্তব্য হচ্ছে মহিমান্বিত এ আমলের প্রতি যতœবান হওয়া।
হাদীস শরীফে যেভাবে এ আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে তেমনি তা আদায় করার পদ্ধতি ও আদবও উল্লেখিত হয়েছে।
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন প্রিয় সাহাবী ছিলেন হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাযিয়াল্লাহু আনহু। দুনিয়াতে থাকতেই বিশেষভাবে যে দশজন সাহাবী জান্নাতী হওয়ার সুসংবাদ লাভ করেছিলেন হযরত সা‘দ ছিলেন তাঁদের অন্যতম। বিদায় হজে¦র সময় তিনি ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, মুমূর্ষ অবস্থা। নবীজী তার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে তাকে দেখতে যান।
নবীজীকে কাছে পেয়ে হযরত সা‘দ বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার শারীরিক অবস্থা তো আপনি দেখতেই পাচ্ছেন। আল্লাহ তাআলা আমাকে বেশ কিছু ধনসম্পদ দান করেছেন। আর সন্তান বলতে মাত্র একটি মেয়েই আমার। আমি চাচ্ছি, আমার সম্পদের তিন ভাগের দুই ভাগ দ্বীনের জন্য খরচ করব, আল্লাহ্র রাস্তায় সদকা করে দিব। অর্থাৎ পুরো সম্পদের এক ভাগ রেখে বাকি দুই ভাগই তিনি সদকা করে দিবেন। কিন্তু নবীজী এর অনুমতি দিলেন না।
অনুমতি না পেয়ে তিনি আরেকটু কম করে এজাযত চাইলেন। বললেন, তাহলে আমি অর্ধেক সম্পত্তি দান করার ওসিয়ত করি আর অর্ধেকটা রেখে দিই? নবীজী এরও অনুমতি দিলেন না।
কিন্তু তার প্রবল ইচ্ছা- আল্লাহ্র দেওয়া এ নিআমত, এ ধনসম্পদ আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য ব্যয় করে যাবেন, আল্লাহ্র রাস্তায় সদকা করে যাবেন। তবে যেহেতু আল্লাহ্র রাস্তায় দান করতে হলেও আল্লাহ্র হুকুম মোতাবেক দান করতে হয় তাই তিনি বারবার নবীজীর কাছে অনুমতি চাচ্ছেন।
এবার তিনি আরো কম করে অনুমতি চাইলেন। বললেন, তাহলে আমার মোট সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ দ্বীনের জন্য ওসিয়ত করে যাই আর মেয়ের জন্য দুই তৃতীয়াংশ রেখে যাই? নবীজী এখন কিছুটা সম্মত হলেন। বললেন-
الثلث، والثلث كثير
আচ্ছা, তিন ভাগের এক ভাগ দিতে চাও! ঠিক আছে, দিতে পার। কিন্তু তিন ভাগের এক ভাগও অনেক।
এরপর নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পদ ব্যয় ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে একজন মুমিন কী দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করবে, সেই নীতি সুস্পষ্ট ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন। নবীজী বললেন-
إِنّكَ أَنْ تَذَرَ ذُرِّيّتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفّفُونَ النّاسَ، وَلَسْتَ بِنَافِقٍ نَفَقَةً تَبْتَغِي بِهَا وَجْهَ اللهِ، إِلّا آجَرَكَ اللهُ بِهَا، حَتّى اللّقْمَةَ تَجْعَلُهَا فِي فِي امْرَأَتِكَ.
তুমি তোমার সন্তান-সন্ততিকে দরিদ্র অবস্থায় রেখে যাবে আর তারা মানুষের কাছে হাত পাতবে, এরচে’ অনেক উত্তম হচ্ছে তাদেরকে সচ্ছল অবস্থায় রেখে যাওয়া। আর তুমি যে খরচই কর না কেন, তা যদি আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তোমাকে সওয়াব দান করবেন। এমনকি (এমন বিষয়েও, যা সাধারণত তুমি দ্বীনী বিষয় মনে কর না- সেক্ষেত্রেও যদি আল্লাহ্র সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হয় তাহলে তাতেও আল্লাহ তাআলা তোমাকে সওয়াব দান করবেন। যেমন) একটি লোকমা, যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দাও।
মোটকথা, মুমিনের কোনো কর্মই বৃথা নয়। যদি শরীয়তের বিধান মোতাবেক কোনো কাজ করা হয় এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত থাকে তাহলে তাতেই তার জন্য পুণ্য রয়েছে।
নবীজীর এ বাণীতে ফুটে উঠেছে সম্পদ ব্যয় ও ব্যবহারের কয়েকটি মৌলিক নীতি। হাঁ, দ্বীনের মেযাজ ও রুচিবোধ এমনই- আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহ্র জন্যই ব্যবহৃত হবে। তবে কোন্ খাতে কীভাবে সম্পদ খরচ করলে তা আল্লাহ্র জন্য ব্যবহৃত বলে গণ্য হবে- নবীজী তা বলে দিয়েছেন।
সাহাবায়ে কেরাম দ্বীনের জন্য উৎসর্গিত ছিলেন। দ্বীনের প্রতি তাঁদের আবেগ ও জযবা ছিল নিঃস্বার্থ ও সীমাহীন। কিন্তু তারা এ আবেগকে নবীজীর নির্দেশনার আলোকে প্রবাহিত করেছেন। নবীজীর হুকুমকেই শিরোধার্য করেছেন। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যেভাবে দ্বীনের তাকাযা পেশ করেছেন তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে তাতে লাব্বাইক বলেছেন।
অতএব দ্বীনের জন্য আল্লাহ্র রাস্তায় সকল সম্পদ খরচ করে দেওয়াই একমাত্র পুণ্য নয়; বরং আল্লাহ তাআলা যে যে খাতে সম্পদ ব্যবহার ও ব্যয় করার বিধান রেখেছেন তাতে তা ব্যয় করাই হল পুণ্য। বস্তুত আল্লাহ্র রাস্তায় দান করা, দ্বীনের জন্য খরচ করা ইত্যাদি বিষয়গুলোও বুঝার আছে। সুতরাং হালালভাবে উপার্জিত অর্থ ও সম্পদ যেভাবে দ্বীনের জন্য খরচ করতে হয় তেমনি অন্যান্য যেসকল খাতে ব্যয় করা কর্তব্য, ভারসাম্য রক্ষা করে তাতেও ব্যয় করা শরীয়তে কাম্য। আর এক্ষেত্রে যদি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি বিবেচিত থাকে তাহলে দরবারে ইলাহীতে তা সদকা ও পুণ্য হিসাবেই বিবেচিত হবে।
তো নবীজী যখন হযরত সা‘দ রা.-কে দেখতে গিয়েছিলেন তখন তিনি কাঁদছিলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞাসা করলেন-
مَا يُبْكِيكَ؟
কাঁদছ কেন? হযরত সা‘দ বললেন-
قَدْ خَشِيتُ أَنْ أَمُوتَ بِالْأَرْضِ الّتِي
هَاجَرْتُ مِنْهَا، كَمَا مَاتَ سَعْدُ بْنُ خَوْلَةَ.
আমি আশঙ্কা করছি, যে ভূমি থেকে আমি হিজরত করেছি সেখানেই আবার না আমার মৃত্যু এসে যায়! যেভাবে সা‘দ ইবনে খাওলার মৃত্যু হয়ে গেল।
যেহেতু তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন তাই তার শঙ্কা হচ্ছিল মক্কা মুকাররমায় অবস্থানকালেই তার ‘সময়’ চলে আসে কি না। মুহাজির সাহাবীগণ যেহেতু একবার স্বদেশ ত্যাগ করেছেন, মক্কা মুকাররমা থেকে হিজরত করে চলে গেছেন তাই সেখানে মৃত্যুবরণ করা তারা পছন্দ করতেন না। কারণ দ্বীনের জন্য যে দেশ ত্যাগ করলাম সেখানেই যদি মৃত্যু হয় তাহলে হিজরতটা যেন কেমন হয়ে গেল! এতে তাদের এ আশঙ্কাও হত যে, আল্লাহ তাআলা আবার আমার হিজরত না-মঞ্জুর করলেন কি না, যার ফলে এখানেই আমার মৃত্যু হল! হযরত সা‘দ রা.-ও তেমনি শঙ্কিত ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আশ্বাসবাণী শোনালেন, জীবন সম্পর্কে তাকে আশান্বিত করলেন। বললেন-
وَلَعَلّكَ تُخَلّفُ حَتّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ، وَيُضَرّ بِكَ آخَرُونَ.
আশা করা যায়, তুমি বেঁচে থাকবে। তোমার মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত হবে। আর কিছু মানুষ তোমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
নবীজী এও বললেন, তুমি জীবিত থেকে যে কর্মই কর না কেন, যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি তোমার লক্ষ থাকে তাহলে এর মাধ্যমে তোমার দরজা ও মর্তবা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
এভাবে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রবোধ দিলেন। তার চেহারা ও কপালে হাত বুলিয়ে দিলেন। বুকে-শরীরে হাত মুছে দিলেন। তার সুস্থতার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করলেন-
اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا، اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا، اللهُمّ اشْفِ سَعْدًا.
আয় আল্লাহ! আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন। আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন। আপনি সাদকে সুস্থ করে দিন।
এরপর নবীজী সাহাবায়ে কেরামের হিজরত কবুল হওয়ার জন্যও দুআ করে দিলেন-
اللّهُمّ أَمْضِ لِأَصْحَابِي هِجْرَتَهُمْ، وَلاَ تَرُدّهُمْ عَلَى أَعْقَابِهِمْ.
আয় আল্লাহ! আপনি আমার সাহাবীদের হিজরতকে পূর্ণ করুন। (অর্থাৎ কবুল করে নিন।) তাদের (হিজরতকে কবুল না করে) ফিরিয়ে দিয়েন না।
আল্লাহর কী শান! নবীজীর দুআর বরকতে হযরত সা‘দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা. সুস্থ হয়ে উঠলেন। পরবর্তীতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেন। ৫৫ হিজরী সনে তাঁর ওফাত হয়। তাঁর নেতৃত্বে ইরাক বিজিত হয়। সেখানে তিনি কিছুদিন গভর্নরও থাকেন। অনেক কাফের তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করে এবং বহু কুফরী শক্তি তার হাতে চূর্ণ হয়। এটা ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুজিযা এবং দুআর বরকত।
হযরত সা‘দ রা. নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এ ঘটনার বিবরণ শোনানোর পর বলেন-
فَمَا زِلْتُ أَجِدُ بَرْدَهُ عَلَى كَبِدِي - فِيمَا يُخَالُ إِلَيّ - حَتّى السّاعَةِ.
নবীজীর হাত বুলিয়ে দেওয়ার সেই শীতলতা এখনও যেন আমি আমার দেহে অনুভব করছি। (দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী, হাদীস ১২৯৫, ৩৯৩৬, ৫৬৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২৮)
হাদীস শরীফের এ ঘটনায় ইয়াদাতুল মারীয ও জীবন চলার বহুবিধ শিক্ষা ও আদব রয়েছে- সাহাবায়ে কেরামের সাথে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ কেমন সৌহার্দপূর্ণ ছিল। কীভাবে নবীজী তাদের তরবিয়ত করতেন। দ্বীনের সঠিক বোধ ও উপলব্ধি শিক্ষা দিতেন। কীভাবে সুখে-দুঃখে নবীজী তাদের সঙ্গী হতেন। তাদের সান্ত¡না যোগাতেন। আশ্বস্ত করতেন। তাদের জন্য দুআ করতেন। পাশাপাশি সাহাবায়ে কেরামও নবীজীর প্রতি কীরূপ ভক্তি-শ্রদ্ধা লালন করতেন। জীবনের সার্বিক অনুষঙ্গে কীভাবে নবীজীর সামনে নিজেকে পেশ করতেন। নবীজীর সাথে পরামর্শ করতেন। জিজ্ঞেস করে করে নবীজীর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনকে পরিচালিত করতেন। এরকম বহু শিক্ষা ফুটে উঠেছে আলোচ্য ঘটনায়।
হাদীস শরীফের এ ঘটনা থেকে এবং অন্যান্য আরো কিছু বর্ণনা থেকে ইয়াদাতুল মারীযের কিছু শিক্ষা ও আদব নিয়ে আমরা কিছু মুযাকারা করব- ইনশাআল্লাহ।
কেউ অসুস্থ হলে তার ইয়াদতে যাওয়া
এ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, হযরত সা‘দ রা.-এর অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ইয়াদতে গিয়েছেন, তার খোঁজ-খবর নিয়েছেন। নবীজীর সাধারণ রীতি এমনটাই ছিল- কেউ অসুস্থ হলে তার ইয়াদতে চলে যেতেন। সীরাতে এরকম উদাহরণ অনেক। হযরত উসমান ইবনে আফফান রা. বলেন-
إِنّا وَاللهِ قَدْ صَحِبْنَا رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي السّفَرِ وَالْحَضَرِ، فكَانَ يَعُودُ مَرْضَانَا، وَيَتْبَعُ جَنَائِزَنَا، وَيَغْزُو مَعَنَا، وَيُوَاسِينَا بِالْقَلِيلِ وَالْكَثِيرِ.
আল্লাহর কসম, আমরা সফরে ও হযরে (এলাকায় অবস্থানকালীন সময়ে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংশ্রব লাভ করেছি। তিনি আমাদের অসুস্থদের ইয়াদত (খোঁজ খবর) করতেন। আমাদের জানাযার সাথে সাথে যেতেন। আমাদের সাথে জিহাদ করতেন। অল্প হোক বেশি হোক যা থাকত তা দিয়েই আমাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করতেন, পাশে দাঁড়াতেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৫০৪
তাই আমাদেরও এ সুন্নতের প্রতি যতœবান হওয়া উচিত।
অসুস্থ ব্যক্তির হালপুরসী করা
ইয়াদতের একটি আদব হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা, তার হালপুরসী করা। এতে অসুস্থ ব্যক্তি প্রবোধ লাভ করে।
হিজরতের পর মদীনা মুনাওয়ারার আবহাওয়া অনেকের শরীরে খাপ খাচ্ছিল না। হযরত আয়েশা রা. বলেন-
لَمّا قَدِمَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ الْمَدِينَةَ وُعِكَ أَبُو بَكْرٍ وَبِلَالٌ، قَالَتْ: فَدَخَلْتُ عَلَيْهِمَا، قُلْتُ: يَا أَبَتَاهُ، كَيْفَ تَجِدُكَ؟ وَيَا بِلَالُ، كَيْفَ تَجِدُكَ؟
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হিজরত করে মদীনায় আসলেন হযরত আবু বকর রা. ও হযরত বেলাল রা. জ¦রাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, তখন আমি তাদের নিকট গেলাম। বললাম, আব্বাজী! আপনার শরীরটা কেমন লাগছে? বেলাল! আপনার কেমন লাগছে?
এভাবে তিনি তাদের হালপুরসী করতেন। হযরত আয়েশা রা. বলেন, এরপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট বিষয়টি জানালাম। তখন নবীজী দুআ করে দিলেন-
اللّهُمّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْمَدِينَةَ كَحُبِّنَا مَكّةَ أَوْ أَشَدّ، وَصَحِّحْهَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِهَا وَمُدِّهَا، وَانْقُلْ حُمّاهَا فَاجْعَلْهَا بِالْجُحْفَةِ.
আয় আল্লাহ! আপনি মদীনাকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দিন; মক্কার মত বা তার চেয়ে বেশি। মদীনার পরিবেশকে ঠিক করে দিন। মদীনার স-মুদে (মাপের পাত্রগুলোতে) আমাদের জন্য বরকত দিন। এর জ¦র ও অসুখ বিসুখকে এখান থেকে সরিয়ে দিন। তা জুহফায় নিক্ষেপ করুন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৯২৬, ৫৬৭৭; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৫২৫
বর্ণনায় এও পাওয়া যায়, একবার এক যুবক সাহাবী মরণাপন্ন ছিলেন। নবীজী তাকে দেখতে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
كَيْفَ تَجِدُكَ؟
তোমার কেমন লাগছে?
তখন ঐ সাহাবী বললেন-
وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ، إِنِّي أَرْجُو اللهَ، وَإِنِّي أَخَافُ ذُنُوبِي.
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী। তবে আমি আমার গুনাহ নিয়ে ভয়ে আছি। তখন নবীজী বললেন-
لاَ يَجْتَمِعَانِ فِي قَلْبِ عَبْدٍ فِي مِثْلِ هَذَا الْمَوْطِنِ إِلاّ أَعْطَاهُ اللّهُ مَا يَرْجُو وَآمَنَهُ مِمّا يَخَافُ.
এ মুহূর্তে যার অন্তরে এ দুটি বিষয় (আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশা এবং নিজের গুনাহের ভয়) একত্র হয় আল্লাহ তাআলা তাকে তার প্রত্যাশিত বিষয় দান করেন এবং সে যা ভয় করে আল্লাহ তা থেকে তাকে নিরাপদ রাখেন। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৯৮৩; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৪২৬১; সুনানে কুবরা, নাসাঈ, হাদীস ১০৮৩৪
তাই অসুস্থ ব্যক্তির হালপুরসী করা ইয়াদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এক্ষেত্রে এ আদবটির প্রতিও লক্ষ করা জরুরি যে, অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থা জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে বিনা কারণে তার রোগ সম্পর্কে খুঁটে খুঁটে জিজ্ঞাসা না করা। কেননা এতে রোগীরও কোনো ফায়দা নেই এবং ইয়াদতকারীরও না। উপরন্তু এতে অনেক সময় রোগী বিব্রত বোধ করে এবং সংকোচে পড়ে যায়। তাই এভাবে জিজ্ঞাসা করা শোভনীয় নয়।
হযরত শেখ সাদী রাহ. বলেন-
ریشے درون جامہ داشتم، وشیخ رحمۃ اللہ علیہ ہر روز پرسیدے کہ چون ست، ونپرسیدے کہ کجا ست، دانستم کہ ازاں احتراز می کند کہ ذکر ہمہ عضوے روا نباشد۔
আমার শরীরে একটি ক্ষত ছিল। শায়েখ রাহ. প্রতিদিন আমার খোঁজ নিতেন। জিজ্ঞাসা করতেন, কী অবস্থা? এভাবে জিজ্ঞাসা করতেন না যে, তোমার ক্ষত কোথায়? বুঝতে পারলাম, তিনি এজন্য এভাবে জিজ্ঞাসা করছেন যে, শরীরের সব অঙ্গের উল্লেখ সঙ্গত নয়। -গুলিস্তাঁ, পৃ. ২৩৭
অবশ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর বিস্তারিত অবস্থা জানবেন এবং রোগীও তাকে সব খুলে খুলে বলবে। কেননা যথাযথ চিকিৎসার জন্য এর বিকল্প নেই।
দ্বীনী বিষয় এবং আখেরাত নিয়ে ফিকির করা
অসুখ বিসুখ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে। তাই এ মুহূর্তে আরো বেশি আল্লাহমুখি হওয়া জরুরি। সাহাবায়ে কেরাম অসুস্থ হলে আখেরাতের ফিকিরে অস্থির হয়ে পড়তেন। সম্পদ-স্ত্রী-পুত্র অপেক্ষা পরকালীন চিন্তা তাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখত।
উল্লিখিত হাদীসে দেখা যাচ্ছে, বিদায় হজ্বের সময় হযরত সা‘দ রা. যখন অসুস্থ তখন তার একটি মাত্র মেয়ে। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনি মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে যতটা না পেরেশান তার চেয়ে বেশি পেরেশান- আখেরাত নিয়ে। তাই আল্লাহ্র দেওয়া সম্পদ আল্লাহ্র রাস্তায় সদকা করে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। বারবার নবীজীর কাছে অনুমতি চাচ্ছেন।
আরেক হাদীসে এসেছে, একবার হযরত জাবের রা. অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আবু বকর রা. পায়ে হেঁটে তাকে দেখতে যান। গিয়ে দেখেন, হযরত জাবের রা. অজ্ঞান পড়ে আছেন। এ দেখে নবীজী পানি তলব করলেন এবং উযু করলেন। এরপর নবীজী তার উপর উযুর পানির ছিটা দিলেন। এতে হযরত জাবের রা. -এর জ্ঞান ফিরে এল। জ্ঞান ফেরার পর তিনি বললেন-
مَا تَأْمُرُنِي أَنْ أَصْنَعَ فِي مَالِي يَا رَسُولَ اللهِ؟
ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার সম্পদের ব্যাপারে আপনি কী নির্দেশ দেন? হযরত জাবের রা.-এর এমন প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে আয়াত নাযিল হয়-
يُوصِيكُمُ اللهُ فِي أَوْلادِكُمْ...
আল্লাহ তোমাদের সন্তান-সন্ততি সম্পর্কে এ মর্মে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, ...। অর্থাৎ উত্তরাধিকার সম্পত্তি বণ্টন করার বিধান সংক্রান্ত আয়াত। [সূরা নিসা (৪) : ১১] -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৫৭৭
তো হযরত সাহাবায়ে কেরাম অসুস্থ হলে আখেরাত নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকতেন। পাশাপাশি তাদের আচরণ থেকে এ গুরুত্বপূণ শিক্ষাটিও পরিস্ফুট হয় যে, তারা দুনিয়ার অর্জিত সম্পদ দ্বীনের জন্য ব্যয় করবেন, আল্লাহ্র রাস্তায় সদকা করবেন, তবুও নবীজীর কাছে অনুমতি ও পরামর্শ চাচ্ছেন, কোন্ খাতে কতটুকু ব্যয় করবেন। হাঁ, এমনই ছিলেন সাহাবায়ে কেরাম। তারা নবীজীকে জিজ্ঞাসা করা ছাড়া কোনো কিছুই করতেন না।
তারা নবীজীকে জিজ্ঞাসা করতেন। নবীজীও সুন্দরভাবে ভারসাম্যপূর্ণ সমাধান পেশ করতেন। অতএব অসুস্থ ব্যক্তির ইয়াদতের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও লক্ষ করার মত যে, অসুস্থ ব্যক্তির মেযাজ ও মর্জি বিবেচনা করে তাকে সুন্দর নসীহত করা। তাকে আখেরাতমুখী করা। কেননা কেবলমাত্র সন্তান ও পরিজনের পার্থিব ভবিষ্যত নিয়ে বিভোর না থেকে নিজের প্রকৃত ভবিষ্যত তথা আখেরাত নিয়েও ফিকির করা জরুরি।
যার ফিকির আছে তো আছেই, আলহামদু লিল্লাহ। আর যার ফিকির আসেনি তার ফিকির আনার জন্য ফিকির করা কাম্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদী বালক অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে দেখতে গিয়ে তার ঈমানের ফিকির করেছিলেন। বলেছিলেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ করে নাও। নবীজীর এ দাওয়াতে সে ইসলাম গ্রহণ করে নিয়েছিল। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩৫৬)
তেমনিভাবে নবীজীর চাচা খাজা আবু তালিব যখন মৃত্যু শয্যায় শায়িত তখন নবীজী তার শিয়রে ছিলেন। তাকে ঈমানের তালকীন করছিলেন।
মোটকথা, অসুস্থ ব্যক্তির কর্তব্য হল, সে নিজ থেকেই আরো পরকালমুখী হবে। আর যে তার শুশ্রƒষায় থাকবে তার জন্য বাঞ্ছনীয় হল, যে ঈমান থেকে দূরে তার জন্য ঈমানের ফিকির করবে আর যে দ্বীন থেকে দূরে তার জন্য দ্বীনদারির ফিকির করবে।
অসুস্থ ব্যক্তিকে আশান্বিত করা
ইয়াদাতুল মারীযের একটি গুরুত্বপূর্ণ আদব হচ্ছে অসুস্থ ব্যক্তিকে আশান্বিত করা, তাকে সান্ত¡না দেওয়া এবং জীবন সম্পর্কে তাকে প্রবোধ যোগানো।
আলোচ্য ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রা.-কে প্রবোধ দিচ্ছেন এই বলে-
وَلَعَلّكَ تُخَلّفُ حَتّى يَنْتَفِعَ بِكَ أَقْوَامٌ، وَيُضَرّ بِكَ آخَرُونَ.
আশা করা যায়, তুমি বেঁচে থাকবে। তোমার মাধ্যমে অনেকেই উপকৃত হবে। আর কিছু মানুষ তোমার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাস্তবেও তাই দেখা গেছে, হযরত সাদ রা. বিদায় হজে¦র পর আরো দীর্ঘদিন হায়াতে ছিলেন। তার মাধ্যমে ইসলাম ও মুসলমানদের অনেক উপকার সাধিত হয়েছিল। আর কুফুরী শক্তি তার নিকট পরাস্ত হয়েছিল।
তাই অসুস্থ ব্যক্তিকে সান্ত¡না প্রদান করা নবীজীর গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। হযরত ইবনে আব্বাস রা. বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُودُهُ قَالَ: لاَ بَأْسَ، طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللهُ
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কারো ইয়াদাতে গেলে (তাকে আশান্বিত করে) বলতেন-
لاَ بَأْسَ، طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللهُ
সমস্যা নেই। ইনশাআল্লাহ, সুস্থ হয়ে উঠবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৬১৬, ৫৬৫৬
এভাবে নবীজী অসুস্থ ব্যক্তিকে সান্ত¡না দিতেন। তেমনি আরো বিভিন্নভাবেও নবীজী প্রবোধ যোগাতেন। হাদীস শরীফে সেগুলোর বিবরণ রয়েছে।
অতএব আমাদেরও কর্তব্য হচ্ছে, অসুস্থ ব্যক্তিকে উৎসাহ ও সাহস যোগানো। অসুস্থতার বিভিন্ন ফযীলত শোনানো। যেমন- আল্লাহ তাআলা রোগ দিয়েছেন আবার আল্লাহ তাআলাই তা সেরে দিবেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার মর্তবা বুলন্দ করেন। গুনাহ মিটিয়ে দেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। তাই এমন মুহূর্তে আরো বেশি আল্লাহমুখি হওয়া দরকার। এভাবে রোগীকে আশ্বস্ত করলে তার মাঝে আশার সঞ্চার হয়। হতাশা দূর হয় এবং তার সুস্থতা ত্বরান্বিত হয়।
এক বর্ণনায় এও পাওয়া যায়-
إِذَا دَخَلْتُمْ عَلَى الْمَرِيضِ، فَنَفِّسُوا لَهُ فِي الْأَجَلِ، فَإِنّ ذَلِكَ لَا يَرُدّ شَيْئًا، وَهُوَ يُطَيِّبُ بِنَفْسِ الْمَرِيضِ.
যখন তোমরা কোনো অসুস্থ ব্যক্তির নিকট যাবে তখন তাকে জীবন সম্পর্কে আশান্বিত করবে। এতে যদিও তার তাকদীর থেকে কোনো কিছু টলাবে না। তবে রোগীকে তা প্রবোধ যোগাবে। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪৩৮; জামে তিরমিযী, হাদীস ২০৮৭; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৩/২৩৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৮৭৭৮
চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পৃক্ত বন্ধুগণ এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে পারেন। কারণ একজন চিকিৎসকের প্রবোধ একজন রোগী ও তার পরিবারের জন্য অনেক বড় সান্ত¡না ও প্রশান্তি বয়ে আনে।
গায়ে হাত বুলিয়ে দেওয়া
আলোচ্য ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত সাদের মাথায়-শরীরে হাত বুলিয়ে দিয়েছেন। হযরত সাদ রা.-এর প্রতিক্রিয়া হল-
فَمَا زِلْتُ أَجِدُ بَرْدَهُ عَلَى كَبِدِي - فِيمَا يُخَالُ إِلَيّ - حَتّى السّاعَةِ.
নবীজীর হাত বুলিয়ে দেওয়ার সেই শীতল পরশ এখনও যেন আমি আমার দেহে অনুভব করছি।
এ তো হল নবী কারীম সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের পারস্পরিক সম্পর্ক ও মহব্বতের একটি মোআমালা। তবে এ থেকে এও প্রতীয়মান হয় যে, ইয়াদতকারী যদি এমন বড় কেউ হন কিংবা অসুস্থ ব্যক্তির সাথে তার এমন ঘনিষ্ঠতা থাকে যে, তিনি যদি একটু পরশ বুলিয়ে দেন তাহলে রোগী সান্ত¡না লাভ করবে তাহলে তিনি হাত বুলিয়ে দিবেন। হাত বুলিয়ে দিয়ে তার জন্য দুআ করে দিবেন।
আম্মাজান হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ إِذَا عَادَ مَرِيضًا يَضَعُ يَدَهُ عَلَى الْمَكَانِ الّذِي يَأْلَمُ ثُمّ يَقُولُ بِسْمِ اللهِ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অসুস্থ কাউকে দেখতে যেতেন তখন রোগী যে স্থানে পীড়া বোধ করত সেখানে তিনি বিসমিল্লাহ বলে হাত রাখতেন। -ফাতহুল বারী ১০/১২১
হাঁ, নবীজীর আদতে শারীফা (মহিমান্বিত স্বভাব-গুণ) এমনই ছিল। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম রাহ. উল্লেখ করেন-
وَكَانَ يَدْنُو مِنْ الْمَرِيضِ وَيَجْلِسُ عِنْدَ رَأْسِهِ وَيَسْأَلُهُ عَنْ حَالِهِ فَيَقُولُ كَيْفَ تَجِدُك ؟ وَذَكَرَ أَنّهُ كَانَ يَسْأَلُ الْمَرِيضَ عَمّا يَشْتَهِيهِ فَيَقُولُ هَلْ تَشْتَهِي شَيْئًا ؟ فَإِنْ اشْتَهَى شَيْئًا وَعَلِمَ أَنّهُ لَا يَضُرّهُ أَمَرَ لَهُ بِهِ . وَكَانَ يَمْسَحُ بِيَدِهِ الْيُمْنَى عَلَى الْمَرِيضِ .
নবীজী অসুস্থ ব্যক্তির কাছে গিয়ে বসতেন; একেবারে মাথার কাছে। তার হালপুরসী করতেন। জিজ্ঞাসা করতেন- كَيْفَ تَجِدُك ؟ -তোমার কেমন লাগছে?
তিনি রোগীকে জিজ্ঞাসা করতেন, তার কী মনে চায়? কিছু লাগবে কি না? সে কিছু চাইলে তিনি তা পূরণ করার নির্দেশ দিতেন, যদি তাতে রোগীর কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা না থাকত। তিনি অসুস্থ ব্যক্তিকে তাঁর বরকতময় হাত দিয়ে বুলিয়ে দিতেন। -যাদুল মাআদ, ১/৪৭৫
এখান থেকে এ বিষয়টিও উপলব্ধ হয় যে, বড়রা ছোটদের ইয়াদতে গেলে তাতে তারা খুব পুলক অনুভব করে। অতএব বড় কেউ অসুস্থ হলে যেমনি ছোটরা তাকে দেখতে যাবে তেমনি ছোটরা অসুস্থ হলেও বড়রা তাদের ইয়াদতের প্রতি যতœবান হবেন। এতে তারা প্রবোধ লাভ করবে। হ
(চলবে ইনশাআল্লাহ)