জুমাদাল উলা ১৪৪১   ||   জানুয়ারি ২০২০

যে গল্পের শেষ নেই

মুহাম্মাদ জাহিরুল আলম

[জনাব জাহিরুল আলম একজন সাংবাদিক ও সুলেখক। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রে একজন আইনজীবীও। পাশাপাশি একজন আল্লাহমুখী মানুষ। উলামায়ে কেরামের সাথে আন্তরিক ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। ইতিপূর্বে তাঁর লেখা আলকাউসারে প্রকাশিত হয়েছে। এ নিবন্ধটিও পাঠকদের কাছে ভালো লাগবে ইনশাআল্লাহ। জায়গা স্বল্পতার কারণে লেখাটি কিছুটা সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে।  -সম্পাদক]

যে গল্পের শেষ নেই। মা অথবা স্ত্রী। পরম করুণাময়ের এক অনন্য সৃষ্টি। যার শুরু রয়েছে, কিন্তু যেন শেষ নেই। যার আরম্ভ, বিস্তৃতি, সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনা সবকিছুই রয়েছে কিন্তু কখনও শেষ হয়েও হয় না শেষ। সময়ের বিবর্তনে এই দুই অনন্য সৃষ্টির মহিমা জীবনের সাথে সমানতালে চলতে থাকে। মা এবং স্ত্রীর গল্পের শেষ নেই। হতে পারে তা যে কোনো মা। যে কোনো দেশ বা যে কোনো জাতির। তার একমাত্র পরিচয়, সে হয়তোবা মা অথবা স্ত্রী।

চান্দ্রমাস শাবানের পরেই আগমন ঘটে পবিত্র রমযানুল মুবারকের। সিয়াম সাধনার মাস। যে মাসের পুরস্কার পরম করুণাময় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা নিজ হাতে দেবেন বলে বলেছেন। যে মাসে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রাতও রয়েছে। যা কদরের রাত বলে অভিহিত। এ মাসে (সম্ভাব্য) এমন এক বিশেষ দিবসেই আমার স্ত্রী মিসেস শাহনাজ জাহির মহাযাত্রা করেছিলেন আর এক মহাবিশ্বের উদ্দেশে। যার নাম বারযাখ বিশ্ব বা অন্তরাল জগৎ। যে সম্পর্কে আমরা সাধারণ লোকেরা খুব কমই জ্ঞান রাখি। শুধু জানি, প্রত্যেক মানুষ মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে স্থানে অবস্থান করবে তার নাম বারযাখ জগত। বারযাখ শব্দটি একটি আরবী শব্দ। যার অর্থ হল অন্তরাল। পর্দার আড়ালে অজানা অবস্থান স্থল। পর্দাবৃত পৃথিবী। আমার স্ত্রী এখন সে পৃথিবীরই বাসিন্দা।

আলমে বরযাখ- আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন এক জগৎ। আমরা এখন আলাদা আলাদা পৃথিবীতে বসবাস করলেও এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, আমাদের এই অবস্থানস্থলটাকে আমাদের জন্য সাজিয়ে গুছিয়ে, একটি আরামদায়ক শান্তিপূর্ণ স্বর্গীয় রূপলাবণ্যে ভরপুর করে রেখে তিনি নিজে চলে গেছেন আরেক পৃথিবীতে।

যা দেখি, যা স্পর্শ করি সবকিছুই আমার স্ত্রীর সাজানো-গোছানো। সবকিছুর মধ্যেই ওকে খুঁজে পাওয়া যায়। মুখ ফুটে বলতে হয় না, ‘আমার জন্য দুআ করো। আমি না থাকলে আমার কৃত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দিও।’

পারিবারিক দিক থেকেই ওদের পরিবার ছিল সুফি-সাধকদের প্রভাবে প্রভাবান্বিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান, দারুল এহসান বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডক্টর সৈয়দ আলী আশরাফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান ডক্টর সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন ছিলেন আমার স্ত্রীর সম্পর্কে মামা। আবার অন্যদিক থেকে বেচারাম দেওড়ীতে অবস্থিত কাশ্মিরী শাহ সাহেবের যে মাযার রয়েছে, বাগদাদ থেকে আগত এই সুফী সাধক শাহ সাহেব ছিলেন সম্পর্কে আমার স্ত্রীর নানা। তিনি পরিচিত ছিলেন শাহ সুফী সৈয়দ হযরত ইউসুফ আলকাদেরী রাহ. নামে। যিনি নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন মিরপুর এক নম্বরে অবস্থিত শাহ সুফী সৈয়দ শাহ আলী বাগদাদী রাহ.-এর সাথে। আমার শ্বশুর ছিলেন জন্মগতভাবেই সিলেটের অধিবাসী। সিলেট শহরের হযরত শাহজালাল রাহ.-এর মাজার সংলগ্ন আবাসিক এলাকা দরগাহ মহল্লায় উনাদের বিশাল ভবন ভাটিপাড়া হাউজ এখনও সগর্বে দ-ায়মান। গ্রামের বাড়ি বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার ভাটিপাড়ার বিখ্যাত জমিদার তারা। পূর্ব পুরুষেরা এ দেশে এসেছিলেন হযরত শাহজালাল রাহ.-এর অনুসারী হয়ে। আমার বিবাহিত জীবনের প্রায় বায়ান্ন বছর ধরে আমার স্ত্রীর মাঝেও আমি তার পূর্বসূরী সুফি-সাধকদের ব্যাপক প্রভাব লক্ষ্য করেছি।

স্ত্রীর ইন্তেকালের পর জীবন সম্পর্কীয় অনুভূতিকে নতুন আঙ্গিকে অনুধাবন করতে শিখলাম। এ যেন অনেকটা এ রকম যে, ‘সে আর আমি এক রই সাথে তবুও লক্ষ যোজন দূরে।’ তাই পদে পদে মুহূর্তে মুহূর্তে দুআ আসে তার জন্য- 

‘হে আল্লাহ! তুমি তাঁর আখেরাতের জীবনকে মহিমান্বিত করে দাও। নূরালোকিত করে দাও তার কবরকে তোমার নূরের আলোকে। জান্নাতুল ফিরদাউসে তাকে স্থান দান কর; সাথে আমাকেও ও আমাদের সকলকে- আমীন, ছুম্মা আমীন।’

আমার স্ত্রী ছিলেন অতি স্বল্পভাষী। অতি অল্প কথায় জীবনের দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছেন। আমার শাশুড়ি আম্মা ছিলেন আরও কম কথার মানুষ। আমার স্ত্রীর ইন্তেকালের পর তাকে আরো ভালো করে চিনতে পারছি। ও নিজেও প্রায়শই বলত, ‘আমাকে চিনতে পারবে আমার মৃত্যুর পর।’

মৃত্যুর দীর্ঘদিন পূর্বেই সে হয়তো বা আঁচ করতে পেরেছিল যে, সে অতি স্বত্তরই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সে কারণেই তার প্রস্তুতি চলছিল দীর্ঘদিন ধরে। প্রস্তুতির সকল রহস্য উন্মোচিত হল যখন তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র, হ্যান্ডব্যাগ যাবতীয় আসবাবপত্র নাড়া দেওয়া হল। প্রত্যেকটি ব্যাগে, আলমারিতে অফুরন্ত প্যাকেট। যার প্রত্যেকটিতে ওর নিজের হাতের লেখায় প্রাপকের নাম লিখে রেখে গেছেন। ওনার সব একান্ত জিনিসপত্র যাকে যা দেওয়ার তার নাম লিখে বন্ধ করে এমন এক স্থানে রেখে গেছেন যেন খুব সহজেই আমাদের দৃষ্টিতে ধরা পড়ে। অনুরূপ অন্যান্য সকল গহনাপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র ছেলেদের ডেকে কাছে বসিয়ে অত্যন্ত শান্তভাবে বলে গেছেন এবং চাবিগুলো কোথায় রেখে গেছেন তাও দেখিয়ে গেছেন। যার ফলে ওর ইন্তেকালের পর কোনো কিছুই পেতে বা বের করতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। স্ত্রীর কাছে গচ্ছিত আমার কিছু জিনিস কেবল রেখে গেছেন এমন স্থানে, যা অতি সহজেই আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং তাতে কিছু লিখেও রেখে যায়নি। সুন্দর এবং গোছানো ব্যবস্থাপনা থেকেই যেন প্রতীয়মান হয় যে, তা কেবল আমারই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে। এমন সুন্দর এবং গোছানো মহাযাত্রা হয়ত পরম করুণাময় যাকে চান তাকে দান করে থাকেন।

তিনি স্বপ্নে একাধিকবার প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দীদারও লাভ করেছেন। কথায় কথায় হাজারো লাখো বিষয় অজান্তেই উন্মোচন করেছেন জীবন সাথীর সাথে, যা স্মরণ করে করে কেবল চোখে পানি আসে। অব্যক্ত থেকে যায় জীবনের অনেক মহাসত্য। সত্য একটা মহামূল্যবান মহারতেœর মতো। সত্যকে ভালবেসে কেউ কোনোদিন ঠকেনি এবং ঠকবেও না। একজন সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তির জীবনের যে আনন্দ তা পরিমাপ করে বোঝা বা বোঝানোও কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

আমার স্ত্রী ছিলেন মদীনাপ্রেমী। সবুজ গম্বুজের আকর্ষণ ছিল সীমাহীন। সবুজ গম্বুজ অবশ্য আমাদের পরিবারের সকলকেই আকর্ষণ করত সীমা ছাড়িয়ে। রাসূলের আসন আমাদের পরিবারের সকলের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে স্থান করে নিয়েছে। তা যেমন মুছে যাওয়ার নয় তেমনি তা কাউকে বোঝাবারও নয়। হৃদয়ের অনুভূতিকে নাড়া দিলেই পাওয়া যাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে।

সে অনেকদিন আগের কথা। হয়তোবা ত্রিশ/পঁয়ত্রিশ বছর আগের  কথা। আমরা স্বপরিবারে গিয়েছি পবিত্র উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে। উমরাহ শেষে চলে গেলাম পবিত্র মদীনা আলমুনাওয়ারায়। যে সময়ের কথা বলছি তখন সউদী আইন ও নিয়ম-কানূনও ছিল ভিন্ন রকমের। এখন থেকে আলাদা। পুরুষ বা মহিলাদের যিয়ারতের সময়কে নির্দিষ্ট সময়ের বন্ধনে আবদ্ধ করা হয়নি। যারা যখন চায় যেভাবে চায় যিয়ারত করতে পারতেন। বাকীউল গারক্বদও (জান্নাতুল বাকী) খোলা থাকত দিনরাত সবসময় চব্বিশ ঘণ্টা।

যাহোক, আসর সালাত-এর সময় রওযা মোবারক যিয়ারত করতে আমরা ঢুকে পড়লাম নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে। মহিলারা তাদের জন্য নির্দিষ্ট দরজায়। কথা ছিল প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পর আমরা মিলিত হব মসজিদের বাইরে।

চা-নাশতা খাওয়ার নিমিত্তে আমরা সবাই আসব মসজিদের বাইরে যার যার নির্দিষ্ট দরজা দিয়ে। আমরা সবাই যথারীতি এলেও আমার স্ত্রী কিন্তু আসেনি মাগরিব এবং এশার সালাতের পরও। স্বাভাবিক কারণেই আমরা একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম। মহিলাদের জন্য সুনির্দিষ্ট দরজা বলে আমরা ভেতরে গিয়ে খবরও নিতে পারছিলাম না। সে দরজায় নিরাপত্তারক্ষীও আফ্রিকান কালো বিশালকায় দেহরক্ষী ভিন্নভাষী মহিলা।

এশার সালাতের পর মসজিদে নববীর সব দরজা অবশিষ্ট রাতের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুনরায় খোলা হয় রাত তিনটায়। এশার সালাতের পর সকলকে মসজিদ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ক্রমে ক্রমে সকল মুসল্লি পুরুষ এবং মহিলা সকলে যার যার পথে সকলেই বেরিয়ে যায়। এটাই চিরাচরিত নিয়ম। পবিত্র আলমদীনা আল মুনাওয়ারায় এই নিয়ম আজও একই নিয়মে সচল। সকলে বেরিয়ে যাওয়ার পরও দেখা যায় আমার স্ত্রীর কোনো হদিস নেই। আমরা সকলে তখন পেরেশান। হন্যে হয়ে খুঁজতে খুঁজতে পিতাপুত্র সকলে মহাসমস্যায়। মসজিদ তখন একেবারে শূন্য। মহিলা অঙ্গন আরও অনেক আগেই জনশূন্য। আমাদের সকলের মানসিক অবস্থাও তখন একেবারে চরমে। কী হয়েছে বা হতে পারে আন্দাজও করতে পারছি না। নানা রকম অমূলক চিন্তায় সকলেই পাগলপ্রায়। পুলিশে খবর দেওয়ার কথাও ভাবছি। অথচ মদীনা মুনাওয়ারায় দুর্ঘটনা বা অনাকাক্সিক্ষত উদ্ভট কোনো ঘটনার নজিরও কখনো শুনিনি। ভাবছিলাম শারীরিক অসুস্থতার কারণে কোথাও জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে আছে কি না। খবর নিয়ে তাও জানলাম যে, সে রকম কিছু ঘটেনি।

মানসিক অবস্থা যখন সীমা ছাড়িয়ে পাগলপ্রায় তখন আমি নিজেই প্রবেশ করে খুঁজতে শুরু করে এগিয়ে যাই রওজা মুবারকের দিকে। রওজার নিকটস্থ হলে দেখতে পাই, আমার স্ত্রী একক দাঁড়িয়ে আছে সেখানে এবং অবশিষ্ট সুবিশাল এলাকা একেবারে শূন্য। অবাক বিস্ময়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। চেহারাটা অলৌকিক আনন্দপূর্ণ আলোকচ্ছটায় আলোকিত। উদ্ভাসিত মুখে মৃদু হাসি। রাগ করব না কি বলব ভাবছিলাম। সে নিজ থেকেই বলল। আসর থেকে শুরু করে প্রতি ওয়াক্তের জামাতে সালাত আদায় করে একেবারে রওজা মোবারক সংলগ্ন এই অবস্থানটিতে এসে যিয়ারত করেও মন ভরছিল না। পাহারারত নিরাপত্তা মহিলা প্রহরীও আমাকে নিমগ্ন অবস্থায় দেখে কোনো প্রকার বাধা না দেওয়ায় আমি এশার সালাতের পর আবার একান্ত নিরালায় প্রিয় নবীজীর কদম মোবারকের সামনে দাঁড়িয়ে দরূদ ও দুআয় নিমগ্ন হয়ে গেলে নিজের অজান্তেই গভীর তন্ময়তায় নিজকে একোবের হারিয়ে ফেলি। একটা অজানা ভালবাসার আনন্দে সময়ের সকল হিসাবই হারিয়ে যায়। অজান্তেই পৃথিবীর সকল পংকিল-মলিনতার উর্ধ্বে কোথায় যেন চলে যাই।

সারা জীবনের সকল আনন্দ-আহ্লাদকে জড়ো করলেও সে অপার্থিব আনন্দকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

আর মাত্র একটি অতি ছোট্ট ঘটনার উল্লেখ করেই এ বিষয়ের সমাপ্তি ঘোষণা করব।

আমাদের বিয়ের পর পরই এই বিস্ময়কর বিষয়টি আমার স্ত্রীর নিকট শুনে আমি কেবল বিস্ময়াভিভূত হয়ে গেছি তা নয়; বরং অভূতপূর্ব এই ঘটনায় শিহরিতও হয়ে পড়ি। ঘটনাটি ছিল নি¤œরূপ।

যখনই আমার স্ত্রী কোনো কারণে কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তেন, ক্রমে ক্রমে সে রোগ বৃদ্ধি পেয়ে পেয়ে তীব্রতর আকার ধারণ করত এবং আরোগ্যের কোনো লক্ষণই দেখা যেত না। ক্রমান্বয়ে বহু চিকিৎসার পরও যখন তার আরোগ্যের কোনো লক্ষণ দেখা যেত না এবং বাড়িসুদ্ধ সকলে যখন একেবারে হতাশায় আক্রান্ত তখন কোনো রজনীর গভীর প্রহরে হঠাৎ করে ঘুম ভাঙ্গলে আমার স্ত্রী দেখতে পেতেন আপামর শুভ্র পরিচ্ছদে আচ্ছাদিত বয়োঃবৃদ্ধ সাদা শশ্রƒম-িত কোনো ব্যক্তি তার বিছানার কোনো এক কোণে বসে হাত উঠিয়ে তার জন্য দুআ করছেন। এর পরদিন থেকেই শুরু হত আরোগ্যের পালা। তারপর ক্রমে ক্রমে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতেন। অবিশ^াস্য হলেও এ ঘটনা ঘটেছে জীবনে বহুবার। যখনি এ রকম কিছু দেখতেন আমার স্ত্রী ভয়ে শিহরিত হয়ে কাপড় মুড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পড়ে থাকতেন। ঘটনাক্রমে ওর কোনো এক অসুস্থতার গভীর রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমিও অনুরূপ দৃশ্য দেখে আঁতকে উঠলেও চোখ বন্ধ করে বিছানায়ই পড়ে থাকি। তার জীবনের বহু বিস্ময়কর বিষয়াদির মধ্যে এটাও একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনামাত্র।

আমরা আজো জানি না যে, কে সেই আল্লাহর বিশেষ প্রেরিত ব্যক্তি, যিনি আমার স্ত্রীর পীড়িত সময়ে গভীর রাতে অলক্ষ্যে দুআ করতে চলে আসতেন। শত শত অলৌকিক রহস্যের মতো এ বিষয়টিও আমাদের কাছে আজও রহস্যাবৃত। এখন আমার স্ত্রী প্রয়াত। আজ নিশ্চয়ই এই অজানা বিষয়গুলো তার কাছে আর অজানা নয়।

 

 

advertisement