জুমাদাল উলা ১৪৪১   ||   জানুয়ারি ২০২০

কুরআনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী : হাদীসের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ মানুষ

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَمَه.

তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সেই, যে নিজে কুরআন শেখে এবং অন্যকে তা শেখায়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৭

কুরআন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সর্বশেষ আসমানী গ্রন্থ। মানবজাতির হেদায়েতের জন্যে, তাদেরকে আল্লাহ ও পরকালের পথে আহ্বান করার জন্যে, সঠিক পথের দিশা দেবার জন্যে আল্লাহ পাঠিয়েছেন অনেক অনেক নবী-রাসূল। তাঁদের মধ্যে কাউকে কাউকে দিয়েছেন কিতাব। পবিত্র কুরআন হচ্ছে সেই ধারাবাহিকতার সর্বশেষ কিতাব, যা নাযিল করা হয়েছিল সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর। কুরআন নাযিলের পর থেকে ইতিমধ্যে পেরিয়ে গেছে শত-সহ¯্র বছর। কিন্তু মানবজাতির ইতিহাসে এ কুরআনই এমন এক গ্রন্থ, এত দীর্ঘ  সময় পেরিয়ে গেলেও যাতে কেউ বসাতে পারেনি বিকৃতির সামান্য আঁচড়। শত্রুরা তো আর কম চেষ্টা করেনি! কিন্তু হাজারো চেষ্টা সত্ত্বেও তারা সফল হয়নি কুরআনকে মানুষের রচিত গ্রন্থ বলে প্রমাণ করায়। বরং কুরআন যখন অবিশ্বাসীদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বলেছে-

وَ اِنْ كُنْتُمْ فِیْ رَیْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلٰی عَبْدِنَا فَاْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِهٖ  وَ ادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ.

আমি আমার বান্দার ওপর যা নাযিল করেছি তা নিয়ে যদি তোমরা সামান্য সন্দেহেও থেকে থাক, তবে এর মতো একটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আসো! আর তোমরা তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে (প্রয়োজনে) আহ্বান করো, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক! -সূরা বাকারা (২) : ২৩

তখনো তারা একটি ছোট্ট সূরাও হাজির করতে পারেনি। তখনো পারেনি, এ আধুনিক কালেও নয়। এ বৈশিষ্ট্যে পাক কুরআন অনন্য। মানুষের হেদায়েতের জন্যে সর্বশেষ নাযিলকৃত এ গ্রন্থকে সংরক্ষণের ভারও নিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন-

اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ.

এ কুরআন আমিই নাযিল করেছি আর আমিই তা হেফাযত করব। -সূরা হিজ্র (১৫) : ৯

কুরআন আল্লাহর কালাম। নবী ও রাসূল হিসেবে হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কয়টি মৌলিক দায়িত্ব ছিল, সেসবের মধ্যে অন্যতম- মানুষকে কুরআনের শিক্ষা প্রদান করা। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য-

لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَی الْمُؤْمِنِیْنَ اِذْ بَعَثَ فِیْهِمْ رَسُوْلًا مِّنْ اَنْفُسِهِمْ یَتْلُوْا عَلَیْهِمْ اٰیٰتِهٖ وَ یُزَكِّیْهِمْ وَ یُعَلِّمُهُمُ الْكِتٰبَ وَ الْحِكْمَةَ .

আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশোধন করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়। -সূরা আলে ইমরান (৩) : ১৬৪

নবীর পরবর্তীতে যখন কেউ তাঁর দায়িত্ব আঞ্জাম দেবে, সে তো শ্রেষ্ঠ হবেই। উপরোক্ত হাদীসের বক্তব্যে কোনো অস্পষ্টতা নেই- যিনি প্রথমে কুরআনের শিক্ষার্থী হয়েছেন, এরপর কুরআনের শিক্ষক হয়েছেন, তিনি শ্রেষ্ঠ মানুষ।

শিক্ষকদের গুরুত্ব ও মর্যাদা এমনিতেই অতুলনীয়। আর সে শিক্ষা যদি হয় দ্বীন ও ইসলামের, আল্লাহ ও পরকালের, তাহলে তো সোনায় সোহাগা! হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষকদের মর্যাদা এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন-

إِنّ اللهَ وَمَلاَئِكَتَهُ وَأَهْلَ السَمَوَاتِ وَالأَرَضِينَ حَتّى النّمْلَةَ فِي جُحْرِهَا وَحَتَى الحُوتَ لَيُصَلّونَ عَلَى مُعَلِّمِ النَاسِ الخَيْرَ.

সন্দেহ নেই, যিনি মানুষকে কল্যাণের শিক্ষা দেন, তার প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন। তাঁর ফেরেশতাকুল, আকাশসমূহ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা, এমনকি গর্তের ভেতরে থাকা পিঁপড়াও, এবং মাছও এ ব্যক্তির জন্যে দুআ করে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮৫

আর এ শিক্ষক যদি সরাসরি কুরআনের শিক্ষক হন! কুরআনের ছোঁয়া তো যেখানেই লেগেছে, তা-ই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বে অনুপম হয়ে আছে। রমযান মাস কুরআন নাযিলের মাস। মর্যাদার এ মাসের সঙ্গে অন্য কোনো মাসের তুলনা চলে! কুরআন নাযিল হয়েছে লাইলাতুল কদরে, আর এ এক রাতকে পবিত্র কুরআনেই ঘোষণা করা হয়েছে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ বলে। তাই যিনি কুরআনের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক, তিনি অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ হতেই পারেন।

এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ دَلّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ.

কেউ যখন কাউকে কোনো ভালো কাজের পথ দেখিয়ে দেয়, সে ব্যক্তি কাজটি করে যে সওয়াব পাবে, যে তাকে এর পথ দেখিয়ে দিল সেও অনুরূপ সওয়াব লাভ করবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫১৩১

কুরআনের শিক্ষক যিনি, এ হাদীস অনুসারে তিনি কী বিপুল পরিমাণ পুণ্যের অধিকারী হবেন, তা ভাবতে গেলেও আমাদেরকে আগে জেনে নিতে হবে- এ কুরআন আমাদের জীবনের সঙ্গে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পালিত ইবাদতের সঙ্গে কতটা গভীরভাবে সম্পৃক্ত। প্রথমেই যে বিষয়টি আমাদের সামনে চলে আসে তা হল- কুরআন তিলাওয়াত আমাদের দ্বীনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাযের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। নফল হোক আর ফরজ হোক, প্রতিটি নামাযের প্রতি রাকাতেই আমাদের তিলাওয়াত করতে হয় এ কুরআন। নামাযে তিলাওয়াতের ন্যূনতম একটা পরিমাণ তো ফরয। এছাড়া নামাযে অধিক পরিমাণ তিলাওয়াতের জন্যে রয়েছে আরও অনেক পুরস্কার। যারা রাতে দিনে নফল নামাযে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতে থাকে, তাদের কথা ভিন্নভাবে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। আর শুধুই কুরআন তিলাওয়াত- তাও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। একটি হাদীস লক্ষ করুন-

لاَ حَسَدَ إِلاّ فِي اثْنَتَيْنِ رَجُلٌ عَلّمَهُ

اللهُ الْقُرْآنَ فَهُوَ يَتْلُوهُ آنَاءَ اللّيْلِ وَآنَاءَ النّهَارِ فَسَمِعَهُ جَارٌ لَهُ فَقَالَ لَيْتَنِي أُوتِيتُ مِثْلَ مَا أُوتِيَ فُلاَنٌ فَعَمِلْتُ مِثْلَ مَا يَعْمَلُ وَرَجُلٌ آتَاهُ اللهُ مَالاً فَهْوَ يُهْلِكُهُ فِي الْحَقِّ فَقَالَ رَجُلٌ لَيْتَنِي أُوتِيتُ مِثْلَ مَا أُوتِيَ فُلاَنٌ فَعَمِلْتُ مِثْلَ مَا يَعْمَلُ.

কেবল দুই ব্যক্তিকে নিয়েই হিংসা করা যায়- এক. যাকে আল্লাহ কুরআনের শিক্ষা দিয়েছেন আর সে তা রাত ও দিনের বিভিন্ন প্রহরে তিলাওয়াত করতে থাকে; তার প্রতিবেশী তার তিলাওয়াত শুনে আক্ষেপ করে- আমিও যদি তার মতো শিখতে পারতাম, তাহলে এমন আমল আমিও করতাম! আরেকজন, আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন আর সে সত্যের পথে তা ব্যয় করতে থাকে। (তাকে দেখে) অন্যরা বলে, আমারও যদি তার মতো সম্পদ থাকত, তাহলে আমিও এমন করতাম! -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫০২৬

এ কুরআনই তো একমাত্র গ্রন্থ, যার শাব্দিক পাঠও ইবাদত, তা বুঝে হোক কিংবা না বুঝে। রয়েছে তিলাওয়াতের প্রতিটি হরফে হরফে নেকী লাভের ঘোষণা। তাও একেক হরফে দশটি করে-

مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ، وَالحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا.

কুরআনের যে একটি হরফ পাঠ করল তার জন্যে রয়েছে একটি নেকী। আর একটি নেকী দশটি নেকীর সমান! -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৯১০

কুরআন পড়তে শেখার পর এভাবে যে আমল করবে, ফরয নামাযে তিলাওয়াত করবে, নফল নামাযে পড়বে, নামাযের বাইরে তিলাওয়াত করবে, বুঝে কিংবা না বুঝে, দেখে কিংবা না দেখে, তার আমলনামা কতটা সমৃদ্ধ হবে! বলার কথা হল, দিনে রাতে এভাবে আমল করে সে যে সওয়াব অর্জন করবে, যিনি তাকে কুরআন পড়তে শিখিয়েছেন, হাদীসের ভাষ্য অনুসারে এর সমপরিমাণ সওয়াব তার আমলনামায়ও যোগ হতে থাকবে। এ ধারা তো চলমান। মৃত্যুর মধ্য দিয়েও শেষ হয় না পুণ্যের এ ¯্রােত। হাদীসের কথা-

إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلّا مِنْ ثَلَاثَةٍ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ.

মানুষ যখন মারা যায়, তখন তার সকল আমলের দুয়ারই বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল এর ব্যতিক্রম- এক. সদকায়ে জারিয়া, দুই. উপকারী ইলম, তিন. তার জন্যে দুআ করে এমন নেক সন্তান। -সুনানে নাসাঈ, হাদীস ৩৬৫১

এ তো গেল শুধুই শাব্দিক তিলাওয়াতের কথা। এর বাইরে রয়ে গেছে কুরআন শিক্ষার বিশাল জগৎ। কুরআনকে নাযিলই করা হয়েছে মানুষের হেদায়েতের জন্যে, হক ও বাতিলের পরিচয় তুলে ধরার জন্যে, সত্য আর মিথ্যাকে স্পষ্ট করে দিয়ে আল্লাহর পথের সন্ধান দেবার জন্যে। আর কুরআনের হেদায়েত গ্রহণ করার জন্যে কুরআনের অর্থ, মর্ম ও ব্যাখ্যা বোঝার বিকল্প নেই।

পবিত্র কুরআনের মর্ম অনুধাবন করা, এর বিধানাবলি আহরণ করা- এ এক সুবিশাল সমুদ্র। শুধুই আরবী ভাষা শিখে কেউ যদি পবিত্র এ গ্রন্থের ব্যাখ্যা করতে শুরু করে, পদস্খলন তার অনিবার্য। কুরআনের ব্যাখ্যা ও তাফসীর করতে গেলে আরবী ভাষার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকতে হবে হাদীস শরীফেরও। হাদীসকে বলাই হয় কুরআনের ব্যাখ্যা। পবিত্র কুরআনের ঘোষণা-

وَ اَنْزَلْنَاۤ اِلَیْكَ الذِّكْرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیْهِمْ وَ لَعَلَّهُمْ یَتَفَكَّرُوْنَ.

আমি তোমার কাছে কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যেন মানুষের প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা তাদের সামনে সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করতে পার এবং যেন তারা চিন্তা করে। -সূরা নাহল (১৬) : ৪৪

এমন আয়াত আরও আছে। মানুষকে তাই কুরআনের মর্ম কুরআনের বিধানাবলি কুরআনের শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত করা ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক দায়িত্ব। সঙ্গত কারণেই তাঁর মুখনিঃসৃত হাদীস সামনে রেখেই পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা করতে হবে। শুধু কি তাই, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র জীবনটাকেও গড়ে তুলেছিলেন কুরআনের নির্দেশনা অনুসারে। এজন্যেই তো আমরা দেখি, সাহাবায়ে কেরাম যখন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রা.-এর কাছে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলেন তখন তিনি তাদেরকে খুবই সংক্ষিপ্ত অথচ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন-

كَانَ خُلُقُهُ الْقُرْآنَ.

তাঁর আচরণ তো ‘কুরআন’! -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫৩০২

পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা জানতে হলে তাই আমাদের জানতে হবে প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সীরাতও। তাঁর হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরাম কতটা সময় নিয়ে কত গভীরভাবে কুরআন শিখতে চেষ্টা করেছেন এর একটা নমুনা আমরা পাই বিখ্যাত হাদীসগ্রন্থ ‘মুয়াত্তা’ থেকে। ইমাম মালেক রাহ. বর্ণনা করেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. আট বছর ধরে কেবল সূরা বাকারাই শিখেছেন। (দ্র. মুয়াত্তা মালেক, হাদীস ৪৭৯)

কী আশ্চর্য! একজন মেধাবী বিচক্ষণ কুরাইশ বংশীয় তরুণ সাহাবী, জন্মগতভাবেই আরবীভাষী, প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুবই প্রিয় পাত্র, তিনি আট বছর সময় ব্যয় করেছেন এক সূরা বাকারা শেখার পেছনেই! আসলে কুরআনের জগৎ এমনই সুবিশাল। আমরা যদি একেবারে আক্ষরিক অর্থেও প্রথমোক্ত হাদীসটি নিয়ে ভাবি, তাহলে শ্রেষ্ঠত্বের এ কাতারে শামিল হবেন- যারা বাচ্চাদেরকে মক্তবে পবিত্র কুরআন বিশুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করতে শেখান, যারা মসজিদে কিংবা মাদরাসায় বা অন্য কোথাও বয়স হয়ে যাওয়া মুসলমানদের কুরআন পাঠ শুদ্ধ করার খেদমত করছেন, হিফযখানায় যারা ছাত্রদের হাফেযে কুরআন হিসেবে গড়ে তুলছেন, যারা কুরআনের শিক্ষার্থীদের বিশুদ্ধ তাজবীদ শেখান, যারা কুরআনের তাফসীর শেখান, কুরআনের অর্থ মর্ম ও ব্যাখ্যা শেখান, কুরআনের বিধান শেখান, এমন আরও অনেকেই-যারা সরাসরি কুরআনের সঙ্গেই যুক্ত। আর কুরআন বোঝার জন্যে, কুরআনের তাফসীর শেখার জন্যেই যেহেতু হাদীসের জ্ঞানার্জনও অপরিহার্য, তাই যারা হাদীসে নববীর পাঠদান করেন, সেরাদের কাতারে শামিল হবেন তারাও। যারা মানুষকে কুরআনে সরাসরি বর্ণিত কিংবা কুরআন থেকে আহরিত মাসায়েল শেখান, তারাও এ দলের অন্তর্ভুক্ত। এমনকি যারা কুরআন শেখার প্রাথমিক ধাপ হিসেবে আরবী ভাষাজ্ঞানের শিক্ষা দেন, আরবী ব্যাকরণ শেখান, কুরআনের ভাষা-অলংকার বোঝার জন্যে বালাগাত শাস্ত্র শেখান, আরবী সাহিত্য শেখান, তাদেরকেও সেরাদের এ কাফেলা থেকে দূরে রাখার সুযোগ কোথায়! নামাযের জন্যেই যেমন ওজু জরুরি, ফলে নামাযের মতো ওজুও ফরয, তেমনি আরবী ভাষা-ব্যাকরণ-বালাগাত ইত্যাদি সবই তো কুরআন বোঝার জন্যেই। তাই কুরআনের শিক্ষকের যে মর্যাদা, তা সঙ্গত কারণেই ভাষাশিক্ষকেরাও লাভ করতে পারেন। আল্লাহর রহমতের ভা-ার যেখানে অসীম অফুরন্ত, সেখানে আমরা এমনটা আশা করতেই পারি।

 

 

advertisement