দুর্ঘটনাঃ বাহ্যিক প্রস্তুতির পাশাপাশি দরকার আত্মিক প্রত্যাবর্তন
খসরূ খান
রাজধানীর নিমতলীতে গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার রাতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১২০ জনের করুণ মৃত্যু হয়। মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন আরো প্রায় ৫০ জন। এদের মাঝে পুরুষ, নারী, শিশুসহ সবশ্রেণীর মানুষই রয়েছেন। একটি বিয়ে বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রায় ৪০ মনের মৃত্যু হয়। উদ্ধার হয় আত্মরক্ষায় সচেষ্ট, নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ধাবমান এবং অপরকে বাঁচাতে তৎপর বেশ ক’জন মানুষের ছাই হয়ে যাওয় শবদেহ। মোবাইল ফোন ও সংবাদমাধ্যমের সুবাদে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মর্মান্তিক ঘটনাটির সংবাদ ঢাকাসহ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডে হতাহত মানুষের শোকার্ত স্বজনদের সঙ্গে গোটা দেশে শোক নেমে আসে। হঠাৎ এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে হল এবং অগ্নিকাণ্ডে এতদ্রুত এত সংখ্যক মানুষ কীভাবে হতাহত হলেন-এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ধারণা ও অনুমান ব্যক্ত করে সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার, রাসায়নিক গুদাম কিংবা বিয়ে বাড়ির গেটের পাশের রান্নার চুলা থেকে এ আগুন লাগতে পারে।
অপরদিকে এই ঘটনার একদিন আগে ঢাকার বেগুনবাড়ি অঞ্চলে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরের উপর পাশ্বাবর্তী একটি ভবন হেলে পড়ে যাওয়ায় বহু মানুষ হতাহত হয়েছেন। সে ঘটনাটিতেও বেদনা ও শোকের মাতম বয়ে গেছে দেশজুড়ে। এ দু’টি ঘটনার পর একদিন রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক পালন করা হয়েছে এবং এরপর প্রায় মাস জুড়েই ঢাকার অলিতে-গলিতে বাড়িঘরের ঘিঞ্জি অবস্থান, ভূমিকম্পের আশঙ্কা, দুর্বল ভিত ও কাঠামোর বাড়ি চিহ্নিত করা, কয়েকটি বাড়ি ভেঙ্গে ফেলার খবর প্রকাশিত হয়েছে। এ যেন সেই পুরনো দৃশ্যেরই পুনঃপ্রচার। দুর্ঘটনা ঘটা, মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতি হয়ে যাওয়র পর তদন্ত দল গঠন করে কয়েকদিন খুব তৎপর থাকা। এরপর আবার সব চুপচাপ হয়ে যাওয়া। এরকম দুর্ঘটনা আগেও ঘটেছে, কিন্তু মহানগরী ও নগরীগুলোতে যথার্থ অগ্নিপ্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ কিংবা দুর্বল ভিতের উঁচু পাকা ভবন নির্মাণে বাধা দেওয়ার কোনো স্থায়ী ও কার্যকর উদ্যোগের কথা এখনো শোনা যায়নি। এটি অবশ্যই হতাশাজনক একটি বিষয়। যে কোনো সরকারের অন্যতম প্রধান কর্তব্য এই যে, নাগরিকদের জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোতে কার্যকর নিরাপত্তার ব্যবস্থা দেওয়া। অন্তত জীবন-মৃত্যুর ঝুঁকির ক্ষেত্রগুলোতেও যদি সরকারের কার্যকর উদ্যোগ না থাকে তাহলে নাগরিকদের সঙ্গে রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের নৈতিক সম্পর্কটা ফিকে হয়ে যায়। এজন্য এ বিষয়গুলোতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমাদের আহ্বান রইল।
এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। সেটি হচ্ছে, সব রকম দুর্ঘটনা ও দুর্বিপাকের জন্য কেবল বাহ্যিক কার্যকারণের সন্ধান ও তার প্রাপ্তিতে সন্তুষ্টি প্রকাশ মুমিনসুলভ চিন্তা ও আচরণ হতে পারে না। বস্তুর বাস্তবতা আছে, আল্লাহ তাআলা সেটা দিয়েছেন বলেই। বস্তুর স্বভাব, ভিত্তি ও বাস্তবতার ওপর ভর করে সর্বাত্মক বস্তুবাদী হওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে।
নিমতলী ও বেগুনবাড়ির দুর্ঘটনার পর প্রচারমাধ্যম ও সাধারণ প্রতিক্রিয়ায় আগুন ও ভবনধ্বসের বাহ্যিক কার্যকারণ নিয়ে যতটা আলোচনা ও চিন্তা-ভাবনা দেখা গেছে, তার সিকিভাগও দেখা যায়নি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হেফাযত প্রার্থনার বিষয়ে এবং অতীত কৃতকর্মের উপর অনুশোচনা ও অনুতাপ নিয়ে।
বিপদ-আপদ, দুর্ঘটনা-দুর্বিপাক থেকে বাঁচতে আমাদেরকে যেমন কার্যকর বাহ্যিক আয়োজন গ্রহণ করতে হবে তেমনি গ্রহণ করতে হবে আত্মিক প্রস্তুতি ও আত্মিক প্রত্যাবর্তনের দাস হিসেবে আমাদের মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে আত্মসমর্পণ, তওবা করে সাহায্য চাইতে হবে এবং ইসলামসম্মত জীবন যাপন করার মধ্য দিয়ে বাস্তব অর্থে বিপদমুক্তির পথে হাঁটতে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রত্যেকের মঙ্গল করুন।