একটি ভিত্তিহীন কাহিনী
নবীজীর বাড়িতে দুষ্ট মেহমান
একবার নবীজীর কাছে কিছু মেহমান এল। সাহাবীগণ এক একজন করে নিজ নিজ বাড়িতে নিয়ে গেলেন মেহমানদারির জন্য। এক ব্যক্তি রয়ে গেল। (কেউ কেউ বলে, সে ছিল একজন ইহুদী) তাকে নবীজী নিজ বাড়িতে নিলেন। সে ছিল দুষ্ট প্রকৃতির লোক। তার সামনে রাতের খাবার পেশ করা হল। সে মনে মনে ফন্দি আঁটলÑ সব খাবার সে একাই খেয়ে নেবে আর বাড়ির সকলকে ক্ষুধার্ত রাখবে। ফন্দিমত পেট ভরে যাওয়ার পরও ইচ্ছা করে সব খাবার একাই খেয়ে নিল। তার জন্য আরামদায়ক বিছানার ব্যবস্থা করা হল।
এত খাবার একা খাওয়ার কারণে বদহজমী হল। ফলে রাতে সে বিছানা নষ্ট করে ফেলল। সকালে উঠে পালাল।
নবীজী যখন মেহমানের খোঁজ নিতে এলেন তো দেখলেন, মেহমান নেই আর বিছানার...। তাঁর আফসোস হল, বেচারার মনে হয় অনেক কষ্ট হয়েছে। এরপর নিজ হাতে তিনি বিছানার কাপড় ধুইতে গেলেন।
এদিকে সে নিজের দামি তরবারি ফেলেই পালিয়েছিল। পথিমধ্যে যখন তরবারির কথা মনে হল ফিরে এল। ফিরে এসে দেখল, নবীজী নিজ হাতে সেই কাপড় পরিষ্কার করছেন। তাকে দেখে নবীজী রাগ করলেন না; বরং তার হালপুরছি করলেন এবং তরবারি দিয়ে দিলেন। এ আচরণ দেখে সে যারপরনাই মুগ্ধ হল এবং কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করল।
নবীজীর মহানুভবতা ও মেহমানের প্রতি সদাচার বিষয়ে কিছু অসতর্ক বক্তার মুখে এটা শোনা যায়; এমনকি কোনো কোনো পাঠ্যবইয়েও তা রয়েছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এ ঘটনা পাওয়া যায় না। সহীহ বর্ণনায় কিছু ঘটনা পাওয়া যায়, যাতে মেহমানের বেশি খাওয়ার বর্ণনা রয়েছে এবং একারণে নবী পরিবার ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাত্র যাপনের কথাও রয়েছে। নি¤েœ দুটি ঘটনা উদ্ধৃত করা হল :
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ ضَافَهُ ضَيْفٌ وَهُوَ كَافِرٌ، فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِشَاةٍ فَحُلِبَتْ، فَشَرِبَ حِلَابَهَا، ثُمّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ، ثُمّ أُخْرَى فَشَرِبَهُ، حَتّى شَرِبَ حِلَابَ سَبْعِ شِيَاهٍ، ثُمّ إِنّهُ أَصْبَحَ فَأَسْلَمَ، فَأَمَرَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِشَاةٍ، فَشَرِبَ حِلَابَهَا، ثُمّ أَمَرَ بِأُخْرَى، فَلَمْ يَسْتَتِمّهَا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: الْمُؤْمِنُ يَشْرَبُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَشْرَبُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ.
একবার এক কাফের নবীজীর মেহমান হল। নবীজী তার জন্য বকরির দুধ দোহন করতে নির্দেশ দিলেন। একটি বকরির দুধ দোহন করে তার সামনে পেশ করা হল। সে সব দুধ পান করল। তারপর আরেকটি বকরির দুধ পেশ করা হল, সে তাও পুরোটা পান করল। তারপর আরেকটি; সে তাও শেষ করে দিল। এভাবে সে সাতটি বকরির দুধ সাবার করল।
সকালে সে ইসলাম গ্রহণ করল। এবার তার জন্য একটি বকরির দুধ দোহন করে আনা হল, সে তা পান করল। এরপর আরেকটি বকরির দুধ পেশ করা হল; কিন্তু এবার সে (দ্বিতীয় বকরির দুধই) পুরোটা শেষ করতে পারল না। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনÑ
الْمُؤْمِنُ يَشْرَبُ فِي مِعًى وَاحِدٍ، وَالْكَافِرُ يَشْرَبُ فِي سَبْعَةِ أَمْعَاءٍ.
মুমিন এক উদরে পান করে আর কাফের পান করে সাত উদরে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৬৩; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৮১৯; মুসতাখরাজে আবী আওয়ানা, হাদীস ৮৪২০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৬২; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ৫২৪৪
কোনো কোনো বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, নবী পরিবার ঐ রাত ক্ষুধা পেটেই কাটিয়েছেন। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৭২২৬; মুসনাদে ইবনে আবি শায়বা, বর্ণনা ৬০৫)
এজাতীয় আরেকটি ঘটনা উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা বিনতে হারেছ রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, একবার খুব দুর্ভিক্ষ হল। লোকেরা গ্রাম থেকে মদীনায় আসত এবং সাহাবীগণ একজন একজন করে মেহমানদারি করতেন। এক রাতে এক গ্রাম্য ব্যক্তি এল। (সে নবীজীর বাড়িতে মেহমান হল) এবং বাড়িতে সামান্য যা খাবার ও দুধ ছিল সে একাই সব খেয়ে ফেলল; নবীজীর জন্য কিছুই রাখল না।
আমি বললাম, হে আল্লাহ এই গ্রাম্য ব্যক্তির মাঝে কোনো বরকত দিবেন না; সে রাসূলুল্লাহর খাবার (সব) খেয়ে নিল!
এরপর দ্বিতীয়বার (ইসলাম গ্রহণের পর) আরেক রাতেও সে এল; কিন্তু খাবার ও দুধ থেকে সামান্যই খেল। আমি আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহর রাসূল! এ কি সেই ব্যক্তিই? তিনি বললেন, হাঁ; কাফের সাত উদরে পান করে আর মুমিন পান করে এক উদরে। (দ্র. আলমুজামুল কাবীর, তবারানী, হাদীস ১০৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাদীস ৭৯৬৯)
যাইহোক, মেহমানের প্রতি নবীজীর সদাচার বিষয়ে নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসকল বর্ণনা পাওয়া যায়। কিন্তু আলোচ্য বর্ণনা কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না। সুতরাং আমরা তা বলব না।