সফর ১৪৪১   ||   অক্টোবর ২০১৯

নবীজীর দস্তরখানে

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

৪৪. খাবারের মাঝে মাঝে ভালো কথা বলা যায়

রাশেদের পরিবারের সবাই রাতের খাবার খেতে বসেছে। দস্তরখানে বাবা আছেন, তাই রাশেদ কোনো কথা বলছে না, তেমনি ছোটবোন সুমাইয়াও না। সবাই চুপচাপ খাবার খেয়ে চলেছে। পিনপতন নীরবতা।

রাশেদের বাবা বিষয়টি খেয়াল করলেন। তিনি বললেন, কী ব্যাপার, সবাই একেবারে চুপ যে! দস্তরখানে একেবারে চুপ থাকা কাম্য নয়। ভালো কথা বলা যায়। দস্তরখানের আদব নিয়ে আলোচনা করা যায়। শুকরিয়া আদায় করা যায়, খাবারের প্রসংশা করা যায়, দ্বীনী কথা বলা যায় ইত্যাদি।

একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার খাচ্ছিলেন। নবীজীর সামনে বকরির রানের অংশ পেশ করা হল। নবীজী রান পছন্দ করতেন। তিনি রান খেতে খেতে বললেন-

أَنَا سَيِّدُ القَوْمِ يَوْمَ القِيَامَةِ، هَلْ تَدْرُونَ بِمَ؟ يَجْمَعُ اللهُ الأَوّلِينَ وَالآخِرِينَ فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ.

কিয়ামতের দিন আমি (সকল মানুষের) সর্দার হব। তোমরা কি জানতে চাও- এটা কীভাবে? পূর্বাপর সকল মানুষকে একটি স্থানে জমা করা হবে।...

এভাবে শাফাআতের দীর্ঘ বর্ণনাটি নবীজী শোনালেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৩৪০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৪)

আরেকবার নবীজী খাবার খাচ্ছিলেন। তাঁর সাথে ছোট্ট বালক উমার ইবনে আবি সালামাও খাচ্ছিল। সে একবার পাত্রের এদিক থেকে খাচ্ছিল আরেকবার ওদিক থেকে। ছোট্ট বলকেরা যা করে। তা দেখে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে খাওয়ার আদব শেখালেন, বললেন-

يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللهَ، وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمّا يَلِيكَ.

বৎস! তুমি যখন খাবে তখন বিসমিল্লাহ বলবে। ডান হাতে খাবে এবং নিজের সামনে থেকে খাবে; পাত্রের এদিক-ওদিক থেকে নয়। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৭৬)

আরেকবার নবীজী রুটি খাবেন। ঘরে তেমন কোনো তরকারি ছিল না; কারণ, নবীজীর জীবন ছিল একেবারে সাদাসিধা। তো নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, ঘরে কোনো তরকারি আছে কি? উত্তর দেওয়া হল, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কোনো তরকারি নেই।

নবীজী বললেন, সিরকাই দাও। রুটি খাওয়ার জন্য নবীজীর সামনে সিরকাই পেশ করা হল। তখন নবীজী সিরকা দিয়ে রুটি খেতে খেতে বললেন-

نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلّ ، نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلّ

সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি, সিরকা তো অনেক ভালো তরকারি! (দ্র. সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৫২)

 

 

advertisement