মুহাররম ১৪৪১   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৯

দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন

জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার উস্তাযুল হাদীস, বাংলাদেশের প্রাচীন কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড ইত্তিহাদুল মাদারিসের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হযরত মাওলানা রহমাতুল্লাহ কাউসার নেযামী ছাহেব গত ১১ যিলহজ্ব ১৪৪০ হি./ ১৩ আগস্ট ২০১৯ ঈ. মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তিনি জামিয়ার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। কুতুবখানার নাযেম ছিলেন। ইন্তেকালের সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তার জানাযা ও দাফন জামিয়াতেই হয়েছে।

তার ইন্তেকালের কয়েকদিন পর ২১ যিলহজ্ব ১৪৪০/ ২৩ আগস্ট ২০১৯ জুমাবার পটিয়ার ক্বেরাত বিভাগের সাবেক প্রধান ও আনোয়ারা বখতিয়ার পাড়া তারতীলুল কুরআন মাদরাসার পরিচালক মাওলানা ক্বারী আবদুল গণী ছাহেবেরও ইন্তেকাল হয়ে গেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। কত বড় খোশ কিসমত কুরআনের এই খাদেমগণ!

 

এই যিলহজ্ব মাসেই শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কান্ধলবি রাহ.-এর সম্মানিত ছাহেবযাদা শায়েখ তালহা কান্ধলবী রাহ.-এরও ইন্তেকাল হয়ে গেছে। এর আগে গত রমযান মাসের শেষ দিকে এই খান্দানেরই বহুত বড় বুযুর্গ হযরত মাওলানা ইফতিখারুল হাসান রাহ.-এরও ইন্তেকাল হয়ে গেছে। তাঁদের জীবনী নিয়ে অবশ্যই হিন্দুস্তানের উলামায়ে কেরাম লিখবেন। আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের জন্যও আমরা কিছু না কিছু পেশ করার চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ।

 

গত শাওয়াল মাসের প্রথম দশকে আমাদের দেশের একজন বুযুর্গ আলেম হযরত মাওলানা মুফতী শামসুল হক ছাহেবেরও ইন্তেকাল হয়ে গেছে। তিনি দীর্ঘদিন মাদরাসায়ে নূরিয়া আশরাফাবাদ-এ দ্বীনী খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। একসময় তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর মুফতী বোর্ডের ছদরও ছিলেন। আহলে বিদআতের সঙ্গে মুনাযারা তাঁর দ্বীনী খেদমতের একটি বিশেষ দিক ছিল। এ বিষয়ে তার কিছু রিসালাও রয়েছে।

 

গত ১৫ যিলহজ্ব ১৪৪০ হি./ ১৭ আগস্ট ২০১৯ শনিবার সকালে কুষ্টিয়া মদীনাতুল উলূম মাদরাসার সাবেক উস্তায মাওলানা মাসউদুর রহমান ছাহেব আখেরাতের পথে রওয়ানা হয়ে গেলেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

তিনি তারবিয়াতুস সালেক, সুওয়ারুম মিন হায়াতিস সাহাবা, সুওয়ারুম মিন হায়াতিত তাবিঈনসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কিতাবের বেশ ভালো অনুবাদ করেছেন। তিনি কুষ্টিয়ার কয়েকটি মসজিদে ইমাম-খতীবের দায়িত্ব পালন করেছেন। খেতাবাতের ক্ষেত্রে তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল, তিনি হক প্রকাশে স্পষ্টভাষী ছিলেন। এজন্য জীবনে তাকে বেশ ত্যাগ শিকার করতে হয়েছে। দুনিয়াবিমুখতা ছিল তাঁর বিশেষ গুণ।

তিনি মাদরাসায়ে নূরিয়া আশরাফাবাদের ছাত্র ছিলেন। তার কর্মজীবন শুরু হয় মাদরাসাতুল মদীনায়- নিজ উস্তায আদীব হুযূর দামাত বারাকাতুহুমের কাছে থেকে।

তিনি ৬ জুমাদাল উলা ১৩৮৮ হি. মোতাবেক ১ আগস্ট ১৯৬৮ ঈ. সনে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাড়ি পাবনা জেলায়। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল (হিজরী সন হিসেবে) ৫২ বছর সাত মাস। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে ও তিন ছেলে রেখে যান। আল্লাহই তাদের উত্তম অভিভাবক!

 

গত ১৭ যিলহজ্ব ১৪৪০ হি. মোতাবেক ১৯ আগস্ট ২০১৯ ঈ. সোমবার তিউনিশিয়ার সাবেক প্রধান মুফতী শায়েখ মুহাম্মাদ মুখতার সালামী রাহ.-এর ইন্তিকাল হয়ে গেছে। তিনি জেদ্দা ফিকহ একাডেমীর বিশেষ রোকনদের একজন ছিলেন। ফিকহ-ফতোয়ার ক্ষেত্রে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা ও পরিচিতি ছিল।

মালেকী মাযহাবের গুরুত্বপূর্ণ কিতাব ‘শরহুত তালকীন’-এর তাহকীকও তাঁর ইলমী খেদমতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।  ইন্তেকালের সময় তার বয়স হয়েছিল চুরানব্বই বছর।

আল্লাহ তাআলা আপন ফযল ও করমে দ্বীনের এই খাদেমগণের সাথে রহম ও করমের মুআমালা করেন! পুরোপুরি মাগফিরাত নসীব করেন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা দান করেন। তাদের সকল দ্বীনী খেদমতকে সদকায়ে জারিয়া হিসাবে কবুল করেন- আমীন।

আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের কাছে আমরা তাদের জন্য এবং আখেরাতবাসী সকল মুমিন-মুসলিমের জন্য দুআর দরখাস্ত করছি।

 

-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক

২৭ যিলহজ্ব ১৪৪০ হি.

 

 

advertisement