চিকিৎসক নির্বাচনে বিচক্ষণতার পরিচয় দিন
ইবনে নসীব
হাদীস শরীফে মু’মিন সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, ‘মুমিন প্রতারণা করে না এবং প্রতারিতও হয় না।’ অর্থাৎ ঈমানদার নারী-পুরুষ যেমন মুত্তাকী ও খোদাভীরু হবে তেমনি সতর্ক ও বিচক্ষণও হবে। তাকওয়া ও খোদাভীতির কারণে সে অন্যের সঙ্গে প্রতারণা করবে না আর বিচক্ষণতার কারণে অন্যের প্রতারণারও শিকার হবে না। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাআলাই মানুষের রক্ষাকারী, তবে আত্মরক্ষার বিভিন্ন উপায় স্বয়ং আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন এবং তা অবলম্বন করারও নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব দু’টোর মাঝে সমন্বয় সাধন করাই হল ইসলামের শিক্ষা।
এখন সমাজের পরিবেশ এত অবক্ষয়গ্রস্থ যে, সকল ক্ষেত্রে অনেক বেশি বিচক্ষণতার পরিচয় দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষত দ্বীনদার নারীদের জন্য তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই যেসব সংবাদ চোখে পড়ে তাতে পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে উদাসীন থাকার অবকাশ নেই। নীচে একটি সংবাদ হুবহু তুলে দেওয়া হল।
বহাল তবিয়তে অভিযুক্ত ডাক্তার!
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন নারী। অভিযুক্ত ডাক্তার সাইফুল করিম এর আগেও এমন অভিযোগে কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা পর্যন্ত দিয়েছিলেন। তাঁর এসব অপকর্মের বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগী নারীরা।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য
আদাবর এলাকার গৃহবধু সাহিদা জামান বলেন, ‘পায়ে ব্যথা নিয়ে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। তখন কর্তব্যরত ডাক্তার সাইফুল করিম আমার ব্যথা পরীক্ষার নামে অশালীন আচরণ করেন। এ ছাড়া ইনজেকশন দেওয়ার নামে বিশেষ কক্ষে নিতে চান। ডাক্তারের কৌশল বুঝতে পেরে কথা বলার এক ফাঁকে আমি পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করি।’ প্রায় একই ধরনের অভিযোগ আগারগাঁও এলাকার ফারিয়া ইসলাম নামের এক কলেজছাত্রীর। তিনি বলেন, ‘গত ২৩ মার্চ সন্ধ্যায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে চিকিৎসার জন্য এলে ডাক্তার সাইফুল করিম চিকিৎসার নামে অশালীন আচরণ করেন এবং আমাকে কয়েক দফা জড়িয়ে ধরেন। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে টয়লেটে যাওয়ার কথা বলে আমি পালিয়ে যাই।’
দুজনই ডাক্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। এ ব্যাপারে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। (দৈনিক কালের কণ্ঠ, ২২ জুন মঙ্গলবার ’১০)
এই অবস্থায় প্রধান কর্তব্য পুরুষের। নিজের মা-বোন ও স্ত্রী-কন্যাকে তাদের সময় দেওয়া উচিত এবং যে কোনো চিকিৎসকের কাছে নেওয়া উচিত নয়। অভিজ্ঞ মহিলা চিকিৎসক পাওয়া গেলে পুরুষ চিকিৎসকের কাছে নেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বিশেষত যেসব চিকিৎসায় দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসকের সান্নিধ্যে থাকতে হয়। এ প্রসঙ্গে দাঁতের চিকিৎসার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। মহিলা চিকিৎসক যদি পাওয়া না যায় এবং পুরুষ চিকিৎসককেই দেখাতে হয় তাহলে অবশ্যই দ্বীনদার, পরহেযগার চিকিৎসক নির্বাচন করা উচিত।
এরপর শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান এই যে, যে কোনো বে-গানা পুরুষের সাথে নারীর একান- অবস্থান সম্পূর্ণ না-জায়েয। এজন্য কোনো পুরুষ চিকিৎসককে দেখানোর সময় স্বামী বা কোনো মাহরাম পুরুষ, যেমন পিতা, ভাই, ছেলে অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে। হাদীস শরীফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিষ্কার বলেছেন, ‘কোনো নারী যেন কোনো (বে-গানা) পুরুষের সাথে একানে- অবস্থান না করে।’
সত্যিকথা এই যে, আমাদের দুনিয়া-আখেরাতের সকল সমস্যার মূলে রয়েছে শরীয়তের আহকাম সম্পর্কে ইলম না থাকা কিংবা শরীয়তের আহকাম পালন না করা।
অনেক সময় পুরুষরা স্ত্রী-কন্যাকে সময় দেন না। এটা ঠিক নয়। প্রয়োজনের মুহূর্তে মা-বোন ও স্ত্রী-কন্যাকে সময় দেওয়া পুরুষের কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দিন ও হেফাযত করুন।