যিলহজ্ব ১৪৪০   ||   আগস্ট ২০১৯

যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

বারবার হজ্ব-উমরা : দারিদ্র্য ও গোনাহ মিটিয়ে দেয়

হজ্ব-উমরা শব্দটা শুনলেই মুমিনের মন উড়াল দেয়- ঐ মক্কায়। যে মুসলিম কোনো দিন হজ্বে যায়নি, সে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয় আর যে একবার গিয়েছে সে আবার যেতে চায়, বারবার যেতে চায়। এই হল মুমিনের অবস্থা। সেই মুমিন কি সামর্থ্য হলে ঘরে বসে থাকবে?

হজ্ব-উমরার সুযোগ সবার জীবনে আসে না। যাদের আসে তাদের আবার সবাই বারবার হজ্ব-উমরা করতে পারেন না। কিন্তু কিছু মানুষ তো এমন, যাদের বারবার হজ্ব-উমরা করার সুযোগ থাকে। হয়ত আল্লাহ তাকে তাওফীক দিয়েছেন, বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী হওয়ার। কিংবা এমন সামর্থ্য দিয়েছেন যে, সেখানে যাওয়াটা তার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়ার চেয়েও সহজ ব্যাপার। ইচ্ছাটাই সবকিছু; অর্থ-কড়ি  কোনো বিষয় নয়।

তবে মনে রাখা চাই, বায়তুল্লাহর প্রতিবেশী হওয়া বা অঢেল অর্থের মালিক হওয়াই সব নয়; আসল হল ঈমানী জযবা এবং নেক আমলের অদম্য স্পৃহা।

তাই তো আমরা দেখি, বাহ্যিক সামর্থ্য নেই এমন কত মানুষ বারবার যাচ্ছেন। একবার হজ্ব বা উমরা করেছেন তো তার যেন পিপাসা আরো বেড়ে গেছে- আবার যেতে চায়, আবার যেতে চায়। সুযোগ খোঁজে আর চাতকের মত আকাশ পানে চায়- এই বুঝি ডাক এল।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে বারবার হজ্ব-উমরা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। শুনিয়েছেন এর ফযীলত। ইরশাদ হয়েছে-

تَابِعُوا بَيْنَ الحَجِّ وَالعُمْرَةِ، فَإِنّهُمَا يَنْفِيَانِ الفَقْرَ وَالذّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الكِيرُ خَبَثَ الحَدِيدِ، وَالذّهَبِ، وَالفِضّةِ، وَلَيْسَ لِلْحَجّةِ المَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلّا الجَنّةُ

তোমরা একের পর এক হজ্ব-উমরা করতে থাকো। কারণ তা দারিদ্র্য ও গোনাহকে এমনভাবে মিটিয়ে দেয়, যেমন কামারের হাপর লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা দূর করে। আর ‘হজ্জে মাবরূর’-এর প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কী! -জামে তিরমিযী, হাদীস ৮১০; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ২৫১২; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৩৬৯৩; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ২৬৩০; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৮৮৭

আসুন, সাধ্যমত বারবার হজ্ব-উমরার মাধ্যমে নেক আমলের ভা-ারকে সমৃদ্ধ করি আর গোনাহগুলো মুছে ফেলি।

 

তাহিয়্যাতুল ওযু : পূর্বের গোনাহ ধুয়ে দেয়

কারো সাথে সাক্ষাৎ হলে আমরা তাকে সালাম-মুসাফাহার মাধ্যমে অভিবাদন জানাই। তেমনি কিছু বিষয় আছে, যেগুলোকে আমরা একটি আমলের মাধ্যমে অভিবাদন জানাই। যেমন মসজিদে প্রবেশ করলে মসজিদকে তাহিয়্যা বা অভিবাদন জানাই দুই রাকাত নামাযের মাধ্যমে। বায়তুল্লাহকে অভিবাদন জানাই তাওয়াফের মাধ্যমে।

তেমনি পবিত্রতার জন্য আমরা যে ওযু করি এরও অভিবাদন পদ্ধতি রয়েছে, যা আমরা নবীজী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিখেছি। এটি রাসূলের সুন্নত। তো ওযুর তাহিয়্যা বা অভিবাদন হল, নামায। এর দ্বারা বান্দার গোনাহ মাফ হয় এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।

আমীরুল মুমিনীন উসমান রা. একদিন ওযুর পানি চাইলেন। তিন বার সুন্দর করে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর তিন বার কুলি করলেন ও নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। এরপর তিন বার চেহারা ধুলেন এবং দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে তিন বার ধৌত করলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন এবং টাখনু পর্যন্ত পা তিন বার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

مَنْ تَوَضّأَ نَحْوَ وُضُوئِي هَذَا، ثُمّ صَلّى رَكْعَتَيْنِ لاَ يُحَدِّثُ فِيهِمَا نَفْسَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.

যে ব্যক্তি এভাবে (সুন্দর করে) ওযু করবে, তারপর দুই রাকাত নামায আদায় করবে, যাতে (দুনিয়ার) কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সকল (ছগীরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৬

শুধু গোনাহ মাফই নয়, এ আমলের দ্বারা মর্যাদাও বৃদ্ধি পায়। একদিন ফজরের নামাযের সময় বেলাল রা.-কে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বেলাল! আমাকে বল দেখি, ইসলামে দাখেল হওয়ার পর থেকে তোমার কোন্ আমলটি তোমার কাছে (সওয়াবের আশার দিক থেকে) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার চপ্পলের আওয়ায শুনেছি।

বেলাল রা. বললেন, তেমন কোনো আমল আমার নেই, যার দ্বারা আমি (বিশাল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিবা-রাত্রির যখনই ওযু করি তখনই উক্ত ওযু দ্বারা যে কয় রাকাত সম্ভব নামায আদায় করি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৪৫৮

 

কাছরাতুস সুজূদ : জান্নাতে নবীজীর সঙ্গ লাভ আর গোনাহ মাফ

কে না চায়- জান্নাতে নবীজীর সঙ্গ লাভ করতে? এর চেয়ে বড় চাওয়া আর কী হতে পারে? এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী থাকতে পারে?

রবীআ আসলামীর রা. তাই একটিই চাওয়া- জান্নাতে নবীজীর সঙ্গ লাভ। আর কী চাই হে রবীআ! নবীজীর জিজ্ঞাসা। উত্তর আগেরটাই- জান্নাতে আপনার সঙ্গ।

বিশেষ সুযোগে বড় কারো কাছে মানুষ বিশেষ কিছুই চায়। আর তিনি নিজেই যদি চাইতে বলেন, তাহলে তো কথাই নেই। তবে চাইতে তো জানতে হয়। আসুন রবীআ আসলামী রা. থেকে শিখি- কী চাইতে হয়। তিনি বলেন-

كُنْتُ أَبِيتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَأَتَيْتُهُ بِوَضُوئِهِ وَحَاجَتِهِ فَقَالَ لِي: سَلْ، فَقُلْتُ: أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنّةِ. قَالَ: أَوْ غَيْرَ ذَلِكَ، قُلْتُ: هُوَ ذَاكَ. قَالَ: فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السّجُودِ

আমি (কখনো কখনো) রাতে নবীজীর সাথে থাকতাম। এক রাতে(র ঘটনা,) আমি তাঁর জন্য ওযু-ইস্তিঞ্জার পানির ব্যবস্থা করলাম। তিনি (খুশি হলেন।) বললেন, রবীআ! তুমি যা খুশি চাইতে পার। রবীআ বলেন, তখন আমি বললাম, ‘জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই’। নবীজী বললেন, আর কী চাও? (এবারও রবীআর একই উত্তর। তিনি বলেন,) আমি তখন বললাম, আমার ওই একটাই চাওয়া। একথা শুনে নবীজী বললেন-

فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ.

তাহলে ‘কাছরাতুস সুজূদ’ তথা বেশি বেশি নফল নামাযের মাধ্যমে আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য কর। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮৯

মুমিনের চাওয়াও ওই একটাই। সাহাবীগণের চাওয়াও ছিল এটি। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. একদিন (নফল) নামায পড়ছিলেন। নবীজী এলেন। সেখানে আবু বকর রা. ও ওমরা রা.-ও ছিলেন। একপর্যায়ে ইবনে মাসউদ রা. দুআ করতে আরম্ভ করলেন। তখন নবীজী দূর থেকেই বললেন, ইবনে মাসউদ! চাও, তুমি যা চাইবে তোমাকে দেওয়া হবে।  তখন তিনি যে দুআগুলো করছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল-

اَللّٰهُمّ إِنِّي أَسْأَلُكَ إِيْمَانًا لَا يَرْتَدّ، وَنَعِيمًا لَا يَنْفَدُ، وَمُرَافَقَةَ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِي أَعْلَى جَنّةِ الْخُلْدِ.

হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে এমন ঈমান চাই, যার পর কুফরের দিকে প্রত্যাবর্তন নেই। এমন নিআমত চাই, যা ফুরোবার নয়। আর চাই- জান্নাতে তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গ।

ইবনে মাসউদ রা. তো নিজে থেকেই এ দুআ করেছেন। ‘ইবনে মাসউদ! চাও, তুমি যা চাইবে তোমাকে দেওয়া হবে’- নবীজীর এ বাক্য তো তিনি শোনেননি। ফলে ওমর রা. এ সুসংবাদ দেওয়ার জন্য তার কাছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন আবু বকর রা. আগেই সেখানে পৌঁছে গেছেন। বললেন, আপনি তো সকল ভালো কাজেই আগে থাকেন! (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪২৫৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ১৯৭০)

কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, ইবনে মাসউদ রা. বলেন, আমার অধিকাংশ দুআতেই আমি এ বাক্যগুলো দ্বারা দুআ করি। (দ্র. মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৩৬৬২)

হাঁ, এ চাওয়া তখনই বাস্তবে রূপ নেবে যখন মুমিন বেশি বেশি সিজদা তথা নফল নামায আদায় করবে। কারণ, হাদীস শরীফে এসেছে, বান্দা যখন সিজদা করে তখন বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তো বান্দা বেশি বেশি আল্লাহর নিকটবর্তী হলে তার মর্যাদা তো বৃদ্ধি পাবেই। আর আল্লাহ যে বান্দার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন তার গোনাহ কি বাকি রাখবেন? না, আল্লাহ তার গোনাহগুলো বাকি রাখবেন না। হাদীস শরীফে এসেছে, যে বান্দা বেশি বেশি নফল নামায আদায় করবে আল্লাহ তার গোনাহগুলো মিটিয়ে দিবেন।

মা‘দান ইবনে আবি তালহা রাহ. বলেন, আমি নবীজীর আযাদকৃত গোলাম ছাওবান রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ করে জিজ্ঞেস করলাম, আমাকে এমন আমলের কথা বলে দিন, যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে! তিনি বলেন, অথবা আমি বলেছি, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমলের কথা বলে দিন। এভাবে তিন বার জিজ্ঞাসা করার পর তিনি বললেন, আমিও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন-

عَلَيْكَ بِكَثْرَةِ السّجُودِ لِلهِ، فَإِنّكَ لَا تَسْجُدُ لِلهِ سَجْدَةً، إِلّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً.

তুমি বেশি বেশি সিজদা কর (নফল নামায পড়)। কেননা তোমার প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং একটি গোনাহ মিটিয়ে দিবেন।

মা‘দান বলেন, পরবর্তীতে আমি আবুদ দারদা রা.-এর সাথে সাক্ষাৎ হলে তাঁকেও এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনিও একই উত্তর দিয়েছেন। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৪৮৮

হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-

اعْلَمْ أَنّكَ لَا تَسْجُدُ لِلهِ سَجْدَةً إِلّا رَفَعَكَ اللهُ بِهَا دَرَجَةً وَحَطَّ عَنْكَ بِهَا خَطِيئَةً.

জেনে রাখ, তোমার প্রতিটি সিজদার বিনিময়ে আল্লাহ তোমার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং একটি গোনাহ মিটিয়ে দিবেন। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২২২২০

 

তাহাজ্জুদ নামায : পাপ মোচনকারী

তাহাজ্জুদ নামায। বান্দা ও রবের মাঝে একান্ত সাক্ষাৎ। সবাই ঘুমিয়ে। এখন আমি আর আমার রব। এ যেন আল্লাহর সাথে বান্দার বিশেষ সম্পর্ক, বিশেষ নৈকট্যের মাধ্যম। একে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘দা’বুস সালিহীনা কাবলাকুম’-‘পূর্ববর্তী উম্মতের নেককারদের শান-বৈশিষ্ট্য’ বলেছেন। এর মাধ্যমে বিশেষ নৈকট্য হাসিল হয়। তাই তো তা এই উম্মত ও পূর্ববর্তী উম্মতের সালিহীনদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল।

এশার নামায আদায় করার পর থেকে সুবহে সাদিক পর্যন্ত যে কোনো সময়ে তাহাজ্জুদের নামায পড়া যায়। কিন্তু রাতের শেষ ভাগই তাহাজ্জুদের জন্য বেশি উত্তম। তাছাড়া রাতের শেষ ভাগে আল্লাহ বান্দাদের ডাকতে থাকেন, কার কী চাওয়ার আছে, চাও, আমি দিব। ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি ক্ষমা করব।

আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

يَنْزِلُ رَبّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلّ لَيْلَةٍ إِلَى السّمَاءِ الدّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللّيْلِ الآخِرُ يَقُولُ: مَنْ يَدْعُونِي، فَأَسْتَجِيبَ لَهُ، مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ، مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ.

আমাদের রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আছো, দুআ করবে আমি তার দুআ কবুল করব। কে আছো, আমার কাছে (তার প্রয়োজন) চাইবে আমি তাকে দান করব। কে আছো, আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১১৪৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৭৫৮

সুনানে ইবনে মাজাহ-এ রয়েছে, উক্ত বর্ণনা উল্লেখ করার পর রাবী বলেন-

فَلِذَلِكَ كَانُوا يَسْتَحِبّونَ صَلَاةَ آخِرِ اللّيْلِ عَلَى أَوّلِهِ.

একারণেই তারা প্রথম রাতের তুলনায় তাহাজ্জুদ শেষ রাতে পড়াকে বেশি পছন্দ করতেন। (দ্র. সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৬৬)

আমরা জানতে পারলাম, শেষ রাতে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য ডাকতে থাকেন। আর শেষ রাতের নামায তাহাজ্জুদের বিষয়ে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- তা পাপ মোচনকারী। আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

عَلَيْكُمْ بِقِيَامِ اللّيْلِ فَإِنّهُ دَأَبُ الصّالِحِينَ قَبْلَكُمْ، وَهُوَ قُرْبَةٌ إِلَى رَبِّكُمْ، وَمَكْفَرَةٌ لِلسّيِّئَاتِ، وَمَنْهَاةٌ لِلإِثْمِ.

তোমরা কিয়ামুল লাইল তথা তাহাজ্জুদের নামাযের প্রতি যত্নবান হও; এটি পূর্বসূরী সালিহীনের শান-তাঁদের আমল-অভ্যাস। এর মাধ্যমে রবের নৈকট্য হাসিল হয়, পাপ মোচন হয় এবং তা গোনাহ থেকে ফিরিয়ে রাখে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৫৪৯; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হাদীস ১১৩৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১১৫৬; শুআবুল ঈমান, বায়হাকী, হাদীস ২৮২৪

আল্লাহ আমাদের সকলকে নিয়মিত তাহাজ্জুদ আদায়ের তাওফীক দান করুন- আমীন।

মায়্যিতকে গোসল দেওয়া : গোসলদাতার গোনাহ ধুয়ে দেয়

কোনো মুসলিম ইন্তেকাল করলে সুন্দর মত তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুসলিমদের দায়িত্ব। কেউ এগিয়ে আসবে কবর খননের জন্য, কেউ ব্যবস্থা করবে কাফনের, কেউ বা গোসল দিবে মায়্যিতকে। এভাবে সকলে মিলে তার সুন্দর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করবে। জানাযায় শরীক হবে, তার জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে, দাফন পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে। এ সবই মুসলিমের উপর মুসলিমের হক। এসকল আমলের ভিন্ন ভিন্ন ফযীলত বর্ণিত হয়েছে হাদীস শরীফে। এর মধ্য থেকে মায়্যিতকে গোসল দেওয়ার ফযীলত বর্ণিত হয়েছে বিশেষ গুরুত্বের সাথে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

مَنْ غَسّلَ مُسْلِمًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ غَفَرَ اللهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرّةً، وَمَنْ حَفَرَ لَهُ فَأَجَنّهُ أَجْرَى عَلَيْهِ كَأَجْرِ مَسْكَنٍ أَسْكَنَهُ إِيّاهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ كَفّنَهُ كَسَاهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ سُنْدُس وَإِسْتَبْرَقِ الْجَنّةِ.

 যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমকে (মায়্যিতকে) গোসল দিবে এবং তার দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ চল্লিশবার তার গোনাহ মাফ করবেন। আর যে ব্যক্তি কবর খনন করবে এবং তাকে কবরে রাখবে আল্লাহ তাকে কিয়ামত পর্যন্ত তার বাসস্থানের ব্যবস্থা করার সওয়াব দান করবেন। আর যে ব্যক্তি কাফনের ব্যবস্থা করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে মিহি ও পুরু রেশমের কাপড় পরাবেন। -সুনানে কুবরা, বায়হাকী, হাদীস ৬৬৫৫; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৩৪০

 

 

advertisement