যিলহজ্ব ১৪৪০   ||   আগস্ট ২০১৯

ধর্মীয় আগ্রাসন : পৌত্তলিকতার এই আগ্রাসন রুখতেই হবে

সম্প্রতি চট্টগ্রামে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি সংগঠন ‘ইসকন’ (ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাসনেস) -এর উদ্যোগে যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটানো হয়েছে তা কারো অজানা নয়।  ইতিমধ্যে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে এবং সর্বস্তরের ধর্মপ্রাণ মুসলিম জনতার পক্ষ হতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। এদেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে শিরক ও পৌত্তলিকতা বিস্তারের নানাবিধ প্রকাশ্য প্রয়াসের দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে এটি একটি ঘৃণ্য দৃষ্টান্ত। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐ সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা উপলক্ষে গত ১১ জুলাই থেকে সপ্তাহব্যাপী ৩০টি স্কুলের প্রায় ৩০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে মন্ত্র পড়িয়ে প্রসাদ খাওয়ানো হয়েছে।  [দৈনিক নয়া দিগন্ত (অনলাইন) ২০ জুলাই ২০১৯] স্কুলের কোমলমতি শিশুদেরকে ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম’ জপ করানোর ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেখলে যে কোনো মুসলিমের গা শুলিয়ে উঠবে। এই ঘৃণ্য আগ্রাসী ঘটনাটা সংঘটিত হওয়ার পর স্বভাবতই মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও ঘৃণার উদ্রেক হয়েছে। এর প্রতিবাদ আসছে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হচ্ছে। এগুলো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এই সবকিছুর দায়ভার তাদেরই বহন করতে হবে, যারা ঐ ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক অপকর্মটি করেছেন।

যে কোনো মুসলিমই বিষয়টার ভয়াবহতা উপলব্ধি করেন। ‘রথযাত্রা’ একান্তই হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব। ‘সংসদ বাঙ্গালা অভিধানে’ এর অর্থ করা হয়েছে, ‘আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়ায় অনুষ্ঠিত জগন্নাথ দেবের রথভ্রমনোৎসব।’ ঐ অভিধানের ‘রথ’ ভুক্তিতে এ সংক্রান্ত আরো কথা আছে। এটি একান্তই হিন্দুধর্মীয় পৌত্তলিক বিশ্বাস ও সংস্কৃতির একটি অনুষঙ্গ, যাতে তাওহীদে বিশ্বাসী কোনো মুসলিমের শরীক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তেমনি রাম-কৃষ্ণ প্রভৃতি দেব-দেবীর নাম জপ করাও নিঃসন্দেহে শিরক। আমাদের কোমলমতি মুসলিম শিশু, যাদের বিশ্বাস- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তাদের দ্বারা মুশরিক সম্প্রদায়ের উপাস্য দেব-দেবীর মহিমা উচ্চারণ করানোর মত জঘন্য কাজ কি কোনো ঈমানদার মা-বাবা মেনে নিতে পারেন?

এই জাতীয় বিষয়কে কিছুতেই ‘নিছক উৎসবের ব্যাপার’ মনে করার সুযোগ নেই। উৎসবের ব্যাপার মনে করেও এসব শিরকী কথা উচ্চারণের অবকাশ নেই। আমাদের কালেমা- ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।’-আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। গোটা জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ। আমাদেরও স্রষ্টা আল্লাহ। একমাত্র আল্লাহই হলেন মাবুদ ও উপাস্য। পৌত্তলিক সম্প্রদায় আল্লাহ ছাড়া বিভিন্ন দেব-দেবীকে তাদের ‘মাবুদ’ ও উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে। ‘রাম’ ও ‘কৃষ্ণ’ তাদের দুজন উপাস্যের নাম। রাম, কৃষ্ণ বা অন্য কোনো দেব-দেবীর মহিমা প্রকাশক মন্ত্র উচ্চারণ করা মানে কালেমা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর বিপরীত কথা বলা। এ অবস্থায় কি ঈমান থাকতে পারে?

বুঝে শুনে ঐসব কথা বললে তো ঈমান চলে যাবে। আর না বুঝে বললেও একটি শিরকী কথা উচ্চারণ করা হল।

হরে কৃষ্ণ, হরে রাম মন্ত্র জপ করানোর সাথে সাথে শিশুদের ‘প্রসাদ’ খাওয়ানো হয়েছে। প্রসাদ হচ্ছে দেব-দেবীর জন্য নিবেদিত খাবার। (দ্র. সংসদ বাঙ্গালা অভিধান) ইসলামের বিধান অনুযায়ী দেব-দেবীর জন্য যে খাবার নিবেদন ও উৎসর্গ করা হয় তা খাওয়া হারাম। আমাদের অভিভাবকদের চিন্তা করা উচিত, যদি তাদের শিশুদের শুকরের গোশত বা মদ পান করানো হত তারা বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন কি না। দেব-দেবীর জন্য উৎসর্গকৃত খাবার ‘মদ’ ও ‘শুকরের গোশতে’র মতোই হারাম। এ হারাম খাবারই শিশুদের খাওয়ানো হয়েছে। আর তা খাওয়ানো হয়েছে শিরকী বোল উচ্চারণ করানোর সাথে।

যেসব স্কুলের মুসলিম শিশুদের এভাবে শিরকী বোল জপ করানো হয়েছে এবং হারাম খাবার খাওয়ানো হয়েছে ঐ স্কুলগুলোর শিক্ষকবৃন্দও এর দায় এড়াতে পারেন না। তাদেরও কর্তব্য, আগে বুঝে না থাকলে এখন বিষয়টির ভয়াবহতা ও জঘন্যতা উপলব্ধি করা এবং তাওবা-ইস্তিগফার করা। একইসাথে স্কুলের কোমলমতি শিশুদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট করে  দেওয়া। নতুবা তারা আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন।

আমাদের নেতৃস্থানীয় আলিমদের পক্ষ হতে এই উদ্যোগ নেয়া যেতে পারে যে, যে সকল স্কুলে ঐ ঘটনা ঘটেছে তারা ঐ সকল স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকদের নিয়ে অল্প সময়ের একটি দ্বীনী মজলিস করতে পারেন। ঐ মজলিসে স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থী শিশু-কিশোরদের বোধগম্য ভাষায় পরিষ্কারভাবে বিষয়টি যে শিরক ও বর্জনীয় তা বুঝিয়ে বলতে পারেন। এই ধরনের দাওয়াতী কাজের জন্য শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা আমাদের ভেবে দেখা কর্তব্য। নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পাশাপাশি ধর্মীয় আগ্রাসনের শিকার শ্রেণিটিকে মমতার সাথে জানানো-বোঝানোর দাওয়াতী কাজটিও এখন ব্যাপক পরিসরে হওয়া দরকার।

আমাদের ক্ষমতাসীনদের অপরিহার্য কর্তব্য, মুসলিম জনপদে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে এই শিরকী আগ্রাসনের পথ বন্ধ করা এবং কোমলমতি মুসলিম শিশুদের ঈমান-আকীদা রক্ষার ব্যবস্থা নেয়া।

এই দেশের মুসলিম জনগণ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাসী। কিন্তু এর অর্থ কখনো এই নয় যে, পৌত্তলিক ও মুশরিক সম্প্রদায়ের শিরকী আগ্রাসনকেও মেনে নিতে হবে। এই আগ্রাসন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

‘ইসকন’ যে ন্যক্কারজনক ঘটনাটি ঘটিয়েছে এটা যেমন ইসলামের বিধান অনুসারে অতি ঘৃণ্য কর্ম, তেমনি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সকল সম্প্রদায়ের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে নস্যাতকারী অপকর্মও বটে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের ধর্মীয় কাজকর্ম তাদের উপাসনালয়ে স্বধর্মের লোকদের নিয়ে করুক, এটা শিরকী কাজ হলেও ইসলামে যেহেতু জোর করে মুসলিম বানানোর বিধান নেই এজন্য মুসলিমগণ এতে আপত্তি করেন না। কিন্তু যখন তারা মুসলিম শিশু-কিশোরদের ছলে বলে কৌশলে শিরকী কর্মকাণ্ডে শামিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হবে তখন বলাই বাহুল্য যে, ক্ষোভ ও উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। একারণে রাষ্ট্রের দায়িত্বশীলদের কর্তব্য, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে এসকল উসকানীমূলক ও আগ্রাসী কর্মকা- নিয়ন্ত্রণের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

 

 

advertisement