যিলকদ মাস কেন্দ্রিক কিছু ভিত্তিহীন আমল ও ফযীলত
বার চান্দের আমল বিষয়ে বাজারে বেশ কিছু বই প্রচলিত রয়েছে। এসব বইয়ের কোনো কোনোটা তো এমনও রয়েছে যে, লেখকের নামের স্থানে কভারের উপরে লেখা- ‘হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.’ আর ভেতরে আসল লেখকের নাম! এসব বই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মাঝে বেশ প্রচলিতও বটে। এগুলোর কোনো কোনোটিতে যিলকদ মাসের আমল কেন্দ্রিক বেশ কিছু ভিত্তিহীন কথাবার্তা ও বানোয়াট বর্ণনা রয়েছে। সেখান থেকে কিছু বর্ণনা নি¤েœ উল্লেখ করা হল :
যিলকদ মাসের রোযা কেন্দ্রিক বানোয়াট বর্ণনা :
১. যে ব্যক্তি যিলকদ মাসে এক দিন রোযা রাখবে, এর প্রতিটি মুহূর্তের বিনিময়ে আল্লাহ তার আমলনামায় মকবুল হজ্বের সওয়াব লিখবেন।
২. যে ব্যক্তি যিলকদ মাসের সোমবার দিন রোযা রাখে, তার আমলনামায় এক হাজার বছর নফল ইবাদতের নেকী লেখা হয়।
যিলকদ মাসের নফল নামায কেন্দ্রিক বানোয়াট বর্ণনা :
১. যে ব্যক্তি এ মাসের প্রথম রাতে দুই দুই রাকাতের নিয়ত করে চার রাকাত নফল নামায আদায় করে, তার প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর ২৩ বার সূরা ইখলাস পাঠ করে, সে ব্যক্তির জন্য বেহেশতে চার হাজার মনোমুগ্ধকর ভবন নির্মাণ করে রাখা হয়। প্রতিটি ভবনে লোহিত বর্ণের ইয়াকুত পাথর দ্বারা নির্মিত বহু মূল্যবান মণি-মুক্তা খচিত সিংহাসন পাতা থাকবে। প্রত্যেক সিংহাসনে একজন করে হুর উপবিষ্ট থাকবে। এই হুরদের কপাল সূর্যের আলোর চেয়েও বেশি দীপ্তিমান হবে।
২. যে ব্যক্তি যিলকদ মাসের প্রত্যেক রাত্রে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে, প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস তিন বার পাঠ করে, তাহলে আল্লাহ পাক তাকে একজন হাজীর নেকী ও একজন শহীদের নেকী দান করবেন এবং সে হাশরের দিন আল্লাহ পাকের আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।
এজাতীয় আরো কিছু বর্ণনা এসব পুস্তিকার কোনো কোনোটিতে রয়েছে। এ সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বর্ণনা। এসকল বর্ণনা সহীহ হওয়া তো দূরের কথা, জাল হাদীস বিষয়ক কিতাবাদিতেও তা পাওয়া যায় না।
এজাতীয় বর্ণনার ব্যাপারে মৌলিক কথা সেটিই, যা লখনবী রাহ. বলেছেন। তাঁকে আশুরার বিশেষ নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-
لم ترد فِي رِوَايَة مُعْتَبرَة صَلَاة مُعينَة كَمَا وكيفاً فِي هَذَا الْيَوْم وَغَيره من أَيّام السّنة المتبركة، وكل مَا ذَكرُوهُ فِيهِ مَصْنُوع وموضوع.
আশুরা এবং বছরের অন্যান্য বরকতপূর্ণ দিনে নির্দিষ্ট রাকাতে বিশেষ নিয়মের কোনো নামায নির্ভরযোগ্য কোনো রেওয়ায়েতে আসেনি। এ সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করা হয়, সবই বানোয়াট ও জাল। -আলআসারুল মারফূআ ৮
যিলকদ মাসের ফযীলত হল, এটি ‘আশহুরে হুরুম’ তথা সম্মানিত চার মাসের অন্তর্ভুক্ত এবং হজ্বের মাসসমূহের একটি। এটি যেহেতু সম্মানিত মাস তাই এর সম্মান রক্ষা করা উচিত; গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক আমলে যতœবান হওয়া উচিত। যেমনটি আল্লাহ কুরআনে নির্দেশ করেছেন-
فَلَا تَظْلِمُوْا فِیْهِنَّ اَنْفُسَكُمْ.
(...তন্মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত) ...সুতরাং এ মাসসমূহে তোমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করো না। -সূরা তাওবা (৯) : ৩৬
সুতরাং গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এ মাসের প্রথম কাজ, সাথে সাথে নেক আমলেও যতœবান হওয়া দরকার। সে হিসেবে নফল নামায, নফল রোযা করা যেতে পারে। কিন্তু জানা থাকা দরকার, এর জন্য বিশেষ কোনো পদ্ধতি, বিশেষ কোনো দিন বা ফযীলত বর্ণিত হয়নি।
আসল কথা হল, যেহেতু যিলকদ মাসের বিশেষ কোনো আমল নেই, এমনকি এ মাসের আমলের বিষয়ে জাল বর্ণনাও পাওয়া যায় না, ফলে এসকল কিতাবের লেখকগণ বছরের অন্যান্য সময়ের বানোয়াট ও ভিত্তিহীন আমলের সাথে মিল রেখে নিজে থেকে বিভিন্ন আমল আবিষ্কার করেছেন- এত রাকাত পড়তে হবে, এতবার সূরা ইখলাস পড়তে হবে, এতবার এটা পড়তে হবে, অতবার ওটা পড়তে হবে। অমুক দিন রোযা রাখতে হবে, তার এই ফযীলত, ওই ফযীলত।
আল্লাহ তাআলা এসব লেখক-প্রকাশককে ক্ষমা করুন। উম্মতকে এর অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন।