বিবিসির জরিপে আরব ধর্ম-বিশ্বাস : ভিত্তি কী? উদ্দেশ্য কী? বাস্তবতার প্রতিফলন কতটুকু?
বিবিসির উদ্যোগে পরিচালিত একটি জরিপ ও জরিপের ফলাফল কেন্দ্রিক প্রতিবেদন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। জরিপটি চালানো হয়েছে ফিলিস্তিনসহ আরব-আফ্রিকার ১০টি রাষ্ট্রে । প্রতিবেদনের ভেতরে সৌদিআরব-কুয়েতসহ আরো কোনো কোনো আরব রাষ্ট্রের নাগরিকদের বক্তব্যও উদ্ধৃত করা হয়েছে।
বিবিসি আরবী প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে গত ২৩ জুন। এরপর থেকে বিবিসির অন্যান্য ভাষার সাইট এবং অন্য কিছু গণমাধ্যমেও প্রচার করা হয়েছে। বিবিসির দাবি- জরিপটি চালানো হয়েছে ১১টি আরব রাষ্ট্রের ২৫,৪০৭ জন নাগরিকের ওপর। অর্থাৎ বিবিসির প্রশ্নগুলোর জবাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোকের উত্তর বা মতামত নেওয়া হয়েছে। যেসব রাষ্ট্রের নাগরিকদের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে সে রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে আলজেরিয়া, মিসর, ইরাক, জর্দান, লেবানন, লিবিয়া, মরক্কো, সুদান, তিউনিসিয়া, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিন।
এসব রাষ্ট্রের ২৫,৪০৭ জন ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে জরিপের ফলাফল সাজানো হলেও শিরোনামে বলা হয়েছে- ‘৩০০ মিলিয়নের বেশি আরব নাগরিক যা ভাবছেন’। জীবন ও চিন্তার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জরিপটি চালানো হলেও প্রতিবেদনের শিরোনামে একটি বিষয়কেই নেতিবাচকভাবে জোরালো ভাষায় উপস্থাপন করা হয়েছে। কোথাও শিরোনাম করা হয়েছে- ‘আরব যুবকরা ধর্মের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে’। কোথাও শিরোনাম করা হয়েছে- ‘আরব যুবকরা কি নাস্তিকতার দিকে ঝুঁকছে?’
এসব কারণে বিবিসির এই জরিপ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের মাঝে কৌতূহল ও বিরক্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই জরিপের ফলাফল সম্পর্কে আমাদের মতামত জানতে চেয়েছেন। অনেকে পাঠিয়েছেন প্রতিবাদী বক্তব্য ও মন্তব্য। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বিবিসির এই জরিপ ও প্রতিবেদন বহুসংখ্যক মানুষের মনে প্রশ্ন ও অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আমরা এজাতীয় খবর ও প্রতিবেদনের প্রতি গুরুত্ব দিতে চাইনি। প্রতিবেদনের শিরোনামটা দেখেই রেখে দিয়েছি। কারণ আমাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা হল, এজাতীয় জরিপ অনেক ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্যমূলক হয়ে থাকে। এছাড়া কয়েক হাজার লোকের বক্তব্য দিয়ে কয়েক কোটি মানুষের মতামত পরিমাপ করা ও সিদ্ধান্ত দেওয়া- এটাও অনেক ক্ষেত্রে বলতে গেলে বাস্তবসম্মত হয় না। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে বিভিন্নজনের পক্ষ থেকে বারবার প্রশ্ন, সংশয় ও উদ্বেগের প্রকাশ থেকে মনে হয়েছে, এ নিয়ে কিছু কথা হলেও আরজ করা দরকার।
প্রতিবেদনটি দেখেই বুঝতে পেরেছি, বিবিসি আরব অনলাইন থেকেই এ খবরটি বিভিন্ন ভাষায়, বিভিন্ন সাইটে অনূদিত হয়েছে। এজন্য বিবিসির আরবী সাইটটি খুলে একবার পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে নিয়েছি। সেখানে দেখা গেল, তাদেরই আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান অজঅই ইঅজঙগঊঞঊজ কর্তৃক জরিপটি চালানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে সে সাইটটিতেও ঢুকতে হয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী তাদের সার্ভে বা জরিপটি ছিল বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে। যেমন নারী অধিকার, জৈবিক স্বাধীনতা, ট্রাম্প-এরদোগান-পুতিন প্রসঙ্গ, ইউরোপ-আমরিকায় অভিবাসন, ইসরাইল ইত্যাদি। জরিপের মূল বিষয় বা প্রতিপাদ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও গণমাধ্যমগুলোতে শিরোনাম করা হয়েছে এভাবে- ‘আরব যুবকরা কি ধর্মের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে?/আরব যুবকরা কি নাস্তিকতার প্রতি ঝুঁকছে?’
খোঁজ নিয়ে দেখলাম, বিভিন্ন গণমাধ্যমে এজাতীয় শিরোনাম করার কারণটি অন্য কিছু না, বিবিসির শিরোনামেই মূলত এ বিষয় ও প্রশ্নটিকে মুখ্য করে তোলা হয়েছে। আরবী বিবিসির শিরোনাম হল-
هل بدأ الشباب العربي يدير ظهره للدين؟
এ থেকে বোঝা যায়, জরিপকারীদের কাছে মুখ্য বিষয় ছিল এটাই। তা না হলে জরিপের প্রতিপাদ্য তো আরো বেশ ক’টি ছিল। কোথাও কোথাও মাত্র ৫% মানুষ ধর্মীয় বিষয়ে নেতিবাচক উত্তর দিয়েছে। কোনো কোনো দেশে আরো বেশিসংখ্যক লোক নেতিবাচক উত্তর দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জরিপে তিউনেসিয়া, লিবিয়া, আলজেরিয়াতে ধর্মের প্রতি বিমুখ হওয়ার উত্তর তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে বলে দেখানো হয়েছে। সার্বিক চিত্র সম্পর্কে বিবিসির এই জরিপ ও জরিপের ফলাফল-প্রতিবেদন নিয়ে আমরা কয়েকটি কথা পেশ করতে চাই।
প্রথম কথা হলো, ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি আরবের ভাবনার কথা বলা হলেও এটা মূলত ২৫ হাজার লোকের মতের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি জরিপ। এ ধরনের জরিপ যদি সঠিক উদ্দেশ্য এবং যথাযথ উপায়েও সম্পন্ন করা হয়, তারপরও প্রচলিত এই জরিপ দিয়ে গণমানুষের প্রকৃত মতের প্রতিফলন অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে না। এর অনেক উদাহরণ ও প্রমাণ রয়েছে। একটি প্রমাণ দেখুন। নির্বাচনে বুথফেরত জরিপ বলতে একরকম জরিপ প্রচলিত আছে। অনেক সময় দেখা যায়, সে জরিপের ফলাফলে গণমানুষের ভোট বা মতামতের প্রতিফলন ঘটে না। বুথফেরত জরিপের ফল একরকম হয়, ভোটের ফলাফল হয় আরেক রকম। ভারতে সাম্প্রতিক নির্বাচনের আগের নির্বাচনে বুথফেরত জরিপের ফল ও ভোটের ফলাফল উল্টো হয়েছিল। এবারও উল্টো না হলেও বুথফেরত জরিপের চেয়ে ভোটের ফলাফল বেশকম হয়েছে।
সুতরাং জরিপের ফল বা সংখ্যার সাথে বাস্তব ফল বা সংখ্যার গরমিল এখানেও পাবেন। যেসব রাষ্ট্রের নাগরিকদের মাঝে জরিপ চালানো হয়েছে সেসব রাষ্ট্রের নাগরিক-সংখ্যা জরিপ পরিচালনাকারীদের মতে ৩০০ মিলিয়ন বা ৩০ কোটি। অথচ জরিপে অংশ নিয়েছে মাত্র ২৫,৪০৭ জন। যার হার শূন্য দশমিক একের চেয়েও কম। অথচ জরিপ পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘আরব ব্যারোমিটার’ জরিপটির শিরোনাম দিয়েছে-
ما الذي يفكر فيه أكثر من ৩০০ مليون مواطن عربي.
(তিনশ মিলিয়ন আরব নাগরিক যা ভাবছেন)।
এটি একটি প্রশ্নবোধক শিরোনাম। এ সংখ্যা তারা কীভাবে দাঁড় করালেন! জরিপ করা হল ২৫ হাজার লোকের ওপর। তাদের উত্তরের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হল ৩০ কোটি মানুষের ওপর। এ শিরোনাম ও ফলাফল কতটুকু যুক্তিযুক্ত হতে পারে?
কেউ কেউ হয়ত জরিপের আধুনিক নীতি ও নিয়মের বরাত দিয়ে এজাতীয় সংখ্যার আকাশ-পাতাল সংকোচন-সম্প্রসারণের বিষয়টিকে যুক্তিযুক্ত বলতে চাইতে পারেন। কিন্তু তাদের মনে রাখতে হবে যে, এসব নিয়মও তাদেরই বানানো, যেটা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, জরিপের জন্য লোক বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও তারা তাদের পছন্দের সুযোগ নিতে পারেন। তাছাড়া ধর্মবিশ্বাসের প্রতি আস্থা-অনাস্থার মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে ৩০ কোটি লোকের প্রতিনিধিত্বের জন্য যদি অন্তত ৩০ লাখ লোকের মতামতও নেওয়া হতো- তবুও না হয় বিষয়টি কিছুটা গুরুত্ব বহন করত। এজন্যই ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে প্রশ্নবিদ্ধ কোনো প্রতিষ্ঠানের নেতিবাচক জরিপের ফলাফলের উপর মোটেও আস্থা রাখার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না।
দ্বিতীয় কথা হল, মুসলমানদের কেন্দ্রভূমি বলা হয় যে আরব রাষ্ট্রগুলোকে, সেসব রাষ্ট্রের মানুষের ধর্মবিশ্বাসে ‘অনীহা’র বিষয়ে বিবিসির মতো প্রতিষ্ঠানের আগ্রহ নিয়েও অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে। আরব সমাজের একটি অংশের ধর্মবিশ্বাসে ‘অনাস্থা’ নিয়ে জরিপ করার আগে পশ্চিমা সমাজে ধর্মবিশ্বাস ভেঙ্গে পড়া, ইউরোপ-আমেরিকায় মানবিক সম্পর্কের নানারকম অবক্ষয়, সন্তান-বাবা সম্পর্ক ও পরিচয়হীনতা- এসব নিয়ে জরিপ চালালে এবং সে খবর প্রচার করলে তারা আরও বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট পেশ করতে পারত। জরিপ চালালে তারা দেখাতে পারত, ইউরোপ-আমেরিকায় কেমন হারে গির্জা বিক্রি হয়ে সেখানে মসজিদ গড়ে উঠছে।
আর আরব রাষ্ট্রগুলোতে তাদের জরিপের বিষয় আরো প্রভাবক ও জীবনঘনিষ্ঠ হতে পারত, যদি তারা দেখতে চাইত সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরব রাষ্ট্রগুলোতে একনায়কতান্ত্রিক জুলুম কতটা বেড়েছে? নাগরিকরা এ নিয়ে কতটা উদ্বিগ্নতার মধ্যে রয়েছে? মিশরসহ যেসব রাষ্ট্রে ইসলাম পালনে রাষ্ট্রীয় জুলুম চলছে সেসব রাষ্ট্রে কতভাগ লোক কত কষ্টে ধর্মকর্ম পালন করছেন? কত কষ্টে কত মানুষ নিজের ধর্মের ওপর টিকে আছেন- এ নিয়েও বিবিসি জরিপ করতে পারত। তাদের জরিপের বিষয়বস্তু কিন্তু সেটা হয়নি। বিবিসি চাইলে দেখাতে পারত- ‘আরব বসন্তের’ ৫/৬ বছর পর আরবের কোন্ কোন্ দেশে স্থানীয় স্বৈরশাসনের উত্থানে জনসাধারণ কতটা কষ্টে আছে। এসব নিয়ে সেখানকার জনগণ কী ভাবছে? আরব-আফ্রিকান রাষ্ট্রগুলোতেই তো ‘আরব বসন্ত’ হয়েছিল। সেখানে স্বৈরশাসনের প্রশ্নটিই বেশি প্রাসঙ্গিক ছিল। জরিপে তারা সেদিকে যেতেই চাননি।
এজন্যই বিবিসির এই জরিপ এবং জরিপের আংশিক একটি ফলকে কেন্দ্র করে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন। তাই বিবিসির এই জরিপের উদ্দেশ্য ও ফলাফল দুটিই প্রশ্নবিদ্ধ বলা যায়।
বিশেষত যখন আমরা বিভিন্ন সময়ে বড় বড় গণমাধ্যম ও অন্যান্য প্রচার মাধ্যমকে এ জাতীয় প্রচার-প্রচারণায় অতি উৎসাহী হতে দেখি, কোথায় কোন্ মুসলিম ঈমান থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে, কোন্ মুসলিম নামধারী ব্যক্তি ইসলামী তাহযীব-তামাদ্দুন নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেছে এসব যারা খুঁজে বেড়ায় তাদের নিয়ে বেশি কিছু না বললেও হয়।
এ প্রসঙ্গে কয়েক মাস আগের সৌদী কিশোরী রাহাফের কথা মনে করা যেতে পারে, যাকে রক্ষার (!) জন্য পুরো পৃথিবীর ক্ষমতাধরগণ তৎপর হয়ে উঠেছিলেন। মেতে উঠেছিল বিশ্ব মিডিয়া। কী হয়েছিল মেয়েটির? তাকে কি কেউ আঘাত করেছে? না, কারণ একটিই ছিল, মেয়েটি তার সমাজ ও ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছিল, তার পরিবার থেকে সে পালিয়ে এসেছিল। অথচ সে তাদের ভাষায় তখন নাবালিকা। জাতিসংঘ, বিভিন্ন দেশের দুতাবাস, মানবাধিকার সংস্থা এমনকি বৃহৎ রাষ্ট্রের একাধিক সরকার প্রধান কত বড় বড় কর্তাকেই তো তখন ব্যস্ত দেখা গেছে। এসব কারণে অনেকেই এ জাতীয় জরিপের পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখতে পান।
তৃতীয় কথাটি হল, আফ্রিকান-আরব রাষ্ট্রগুলোর অতি অল্পকিছু মানুষের ওপর বিবিসি যে জরিপ চালিয়েছে এবং সে জরিপের ভিত্তিতে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে- যদি তার কিছুটা পরিমাণ বাস্তবতাও সত্যি হয় তাহলে মুসলমানদের জন্য বিশেষত ইসলামের দাঈদের জন্য তা অত্যন্ত চিন্তাজাগরূক ও ভাবনা উদ্রেককারী একটি বিষয়। কারণ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের একজন মুসলমানেরও দ্বীন থেকে বিচ্যুত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ২৫ হাজার মুসলমানের ওপর জরিপ চালানো হয়েছে। তাদের মতামতে যদি বোঝা যায়, কয়েক শ মানুষও ইসলাম থেকে সরে গেছে, তবে সেটাও অত্যন্ত আক্ষেপ ও বেদনার ঘটনা। এ বিষয়ে দরদের সঙ্গে ভাবা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা দ্বীনের দাঈদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বিবিসির জরিপে অবশ্য ধর্ম থেকে কিছু মানুষের সরে যাওয়ার বিস্তারিত কারণ উল্লেখ করা হয়নি। শুধু এমন কিছু বিষয় সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে, যাতে বোঝা যায়- আরব মুসলমানরা পশ্চিমা সভ্যতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এজন্যে তাদের অনেকে ইউরোপ-আমেরিকাতেও পাড়ি জমাতে আগ্রহী। এর দ্বারা একথা পরিষ্কার হয় যে, মূলত পার্থিব জৌলুস ও ভোগবাদী জীবনই তাদেরকে ধর্মবিমুখ করে তুলেছে। পশ্চিমা সমাজের প্রতি অনুরক্ত করে তুলেছে।
কিন্তু এর সাথে সাথে যদি আরেকটি ব্যাপার লক্ষ করি যে, আরবের বিভিন্ন দেশে যেভাবে পশ্চিমা আগ্রাসন ও গৃহযুদ্ধ চলছে এবং ক্ষমতাধর পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো বিভিন্ন ছুতায় আরবের একনায়কদের যেভাবে পরিচর্যা-পরিচালনা করছে- সেটাও অনেক মজলুম আরবকে হতাশ করে তুলছে। তারা তাদের কাক্সিক্ষত আশ্রয় অনেক ক্ষেত্রে পাচ্ছে না। এমন লোকেরাও হয়ত এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে রয়েছে। ফলে হতাশা ও হীনম্মন্যতা থেকেও অনেকে আপন ধর্ম ও ধর্মীয় সমাজের প্রতি একধরনের ‘হতাশার অনীহা’ ব্যক্ত করেছে।
কারণ কিংবা ঘটনা যাই হোক, খুব সামান্যসংখ্যক মুসলিমও যদি কোনো কারণে দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয় তবে দেশে দেশে আলেম ও ইসলামের দাঈদের সচেতন ও সতর্ক হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। ইসলামের সৌন্দর্যের বাণী মুসলিম-অমুসলিম সবার কাছে পৌঁছাতে হবে। বারবার পৌঁছাতে হবে। ইসলামে প্রদত্ত পারস্পরিক হক আদায়ের বিধান মানুষের মধ্যে তুলে ধরতে হবে। আখলাকের নীতি চর্চা করতে হবে। নারীর অধিকার, গরিবের অধিকার, শ্রমিকের অধিকার, স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকার ও সম্পর্কের বিষয়গুলো যথাযথ চর্চা ও বাস্তবায়নের মধ্যে আনতে হবে। হতাশাগ্রস্ত লোকদের মধ্যে দ্বীন ও দ্বীনী যিন্দেগির প্রতি আস্থা দৃঢ় করার মেহনত বাড়াতে হবে। তেমনিভাবে দরিদ্র ও প্রান্তিক শ্রেণির মুসলিম জনগোষ্ঠীর আর্থিক, মানবিক ও শিক্ষা-দীক্ষার উন্নয়নে ধনিক শ্রেণির লোকদের এগিয়ে আসা এবং যথাযথ দায়িত্ব পালন করা অতিব জরুরি।
একইসঙ্গে মুসলমানদের সর্বস্তরের মাঝে দ্বীন-ঈমানকে মুখ্য মনে করার চেষ্টা জোরদার করতে হবে। দ্বীনের প্রতি কিছু মুসলিমের দূরত্বের অনুভূতি বা হতাশাগ্রস্ত অনীহার সংকটকে কোনো একটি অঞ্চলের সংকট মনে করে হাত গুটিয়ে বসে থাকা কিছুতেই সমীচীন নয়; বরং সব দেশের সব মুসলমানদের অন্তর থেকেই এ সংকট যেন দূর হয়ে যায় সেজন্য সবারই উদ্যমী হওয়া উচিত। দেশে দেশে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়ছে- এ খবর অবশ্যই সত্য। প্রায়ই এমন সব খবর আমরা পাচ্ছি। কিন্তু এ জাতীয় খবরের কারণে আত্মমুগ্ধতায় ভুগতে থাকার কোনো অবকাশ নেই। ঈমানের মেহনত, দাওয়াতের মেহনত, দ্বীনী আখলাক ও হক প্রতিষ্ঠার মেহনত সবসময় বজায় রাখতে হবে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলমানকে দ্বীন ও ঈমানের ওপর অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।