যে সকল আমল দ্বারা গোনাহ মাফ হয়
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আযান শুনে যে বলবে...
আযান। আল্লাহর ঘরের মিনার থেকে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা। তাওহীদ ও রিসালাতের সুউচ্চ আওয়ায। আল্লাহর দিকে আহ্বান। সালাতের দিকে আহ্বান। চির কামিয়াবির দিকে আহ্বান।
মুমিন আরাম নিদ্রায় থাক কিংবা থাক কর্মব্যস্ত- এ আহ্বান মুমিনকে জাগ্রত করে, এ আহ্বান মুমিনকে সচকিত করে; আরামের কম্বল থেকে বেরিয়ে আসে মুমিন, মাথার উপর উঁচু হওয়া কুঠার পিছনেই ছেড়ে দেয়। কারণ, এ যে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান- হাইয়া আলাস সালা-হ, হাইয়া আলাল ফালা-হ।
শত ব্যস্ততার মাঝেও মুমিন আযানের জবাব দেয়। আযান শেষে নবীজীর উপর দরূদ পাঠ করে, দুআ পড়ে এবং আল্লাহর ঘরে উপস্থিত হয়ে জামাতে নামাযের মাধ্যমে এ আহ্বানের দাবি পূরণ করে।
আযানের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে রয়েছে, তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষণা। তাওহীদের ঘোষণার মাধ্যমেই শেষ হয় আযান- লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ। তো তাওহীদ ও রিসালাতের ঘোষণা শোনার পর মুমিনও যদি তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকারোক্তিমূলক নিম্নোক্ত বাক্যগুলো বলে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দেন।
সা‘দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ الْمُؤَذِّنَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، رَضِيتُ بِاللهِ رَبّا وَبِمُحَمّدٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، غُفِرَ لَهُ ذَنْبُهُ.
আযান শুনে যে ব্যক্তি বলবে-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنّ مُحَمّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
رَضِيتُ بِاللهِ رَبّا وَبِمُحَمّدٍ رَسُولًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا.
(আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই। এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
আমি আল্লাহকে রব হিসাবে পেয়ে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসাবে পেয়ে এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট।) তার (সগীরা) গোনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৬
কাফফারাতুল মাজলিস : মজলিসের গোনাহগুলো মাফ হয়ে যাক
আমাদের মজলিসগুলোতে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কিছু অসংলগ্ন কথাবার্তা হয়ে যায়। কোনো কোনো সময় গোনাহের কথাও হয়ে যায়। তো মজলিসের এ গোনাহগুলো যেন মিটে যায়- এজন্য নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দুআ শিখিয়েছেন। মজলিস শেষে এ দুআ পড়লে আল্লাহ মজলিসে অসংলগ্ন কথার কারণে হয়ে যাওয়া গোনাহগুলো মাফ করে দেন।
আবু বারযা আসলামী রা. বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ، يَقُولُ بِأَخَرَةٍ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُومَ مِنَ الْمَجْلِسِ: سُبْحَانَكَ اللّهُمّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلّا أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিস থেকে উঠে যাওয়ার সময় এ দুআ পড়তেন-
سُبْحَانَكَاللّهُمّوَبِحَمْدِكَ،أَشْهَدُأَنْلَاإِلهَإِلّاأَنْتَ،أَسْتَغْفِرُكَوَأَتُوبُإِلَيْكَ.
এক সাহাবী এর কারণ জিজ্ঞেস করলে নবীজী বললেন-
كَفّارَةٌلِمَايَكُونُفِيالْمَجْلِسِ.
এ দুআ মজলিসে (অহেতুক বা অন্যায় কথা-বার্তার কারণে) হয়ে যাওয়া গোনাহের কাফফারা। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮৫৯
সৃষ্টির প্রতি দয়া : টেনে আনে স্রষ্টার দয়া ও ক্ষমা
সকল সৃষ্টিই আল্লাহর। আল্লাহর কোনো সৃষ্টির প্রতি যদি কেউ দয়া করে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন; তার প্রতিও দয়া করেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহ তাকে ক্ষমাও করে দেন। এ সংক্রান্ত কিছু ঘটনা হাদীস শরীফে উল্লেখ হয়েছে।
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
بَيْنَا رَجُلٌ يَمْشِي، فَاشْتَدّ عَلَيْهِ العَطَشُ، فَنَزَلَ بِئْرًا، فَشَرِبَ مِنْهَا، ثُمّ خَرَجَ فَإِذَا هُوَ بِكَلْبٍ يَلْهَثُ يَأْكُلُ الثّرَى مِنَ العَطَشِ، فَقَالَ: لَقَدْ بَلَغَ هَذَا مِثْلُ الّذِي بَلَغَ بِي، فَمَلَأَ خُفّهُ، ثُمّ أَمْسَكَهُ بِفِيهِ، ثُمّ رَقِيَ، فَسَقَى الكَلْبَ، فَشَكَرَ اللهُ لَهُ، فَغَفَرَ لَهُ.
হাঁটতে হাঁটতে একবার এক পথিকের খুব পিপাসা লাগল। সে একটি কূপে নামল। পান করে কূপ থেকে উঠছে এমন সময় একটি কুকুরকে দেখল পানির পিপাসায় তার জিহ্বা বের হয়ে গেছে। পানিযুক্ত কাদা চাটছিল। লোকটি মনে মনে বলল, আহা! কুকুরটিরও বুঝি আমার মত পিপাসা লেগেছে।
তার দয়া হল। সে কুয়ায় নেমে নিজ চামড়ার মোজায় পানি নিল। দাঁত দিয়ে মোজা কামড়ে ধরে কূপ থেকে উঠল এবং কুকুরকে পান করালো। আল্লাহ তার এ কাজে সন্তুষ্ট হলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৩৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২৪৪
সৃষ্টির প্রতি দয়ার আচরণ আল্লাহর কাছে এতই পছন্দনীয় আমল যে, এর দ্বারা আল্লাহ তাআলা পাপিষ্ঠা নারীকেও ক্ষমা করে দিয়েছেন। সে ঘটনাও হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
একবার এক পাপিষ্ঠা নারী পথ দিয়ে যাচ্ছিল। সে একটি কুকুরকে দেখল, পিপাসায় তার জিহ্বা বেরিয়ে এসেছে। মরণপ্রায় অবস্থা। কুকুরটি কুয়ার পাশ দিয়ে ঘুরছিল।
কুকুরটির এ অবস্থা দেখে তার দয়া হল। সে নিজের পায়ের চামড়ার মোজা খুলে ওড়নার সাথে বেঁধে কুয়া থেকে পানি ওঠালো এবং কুকুরকে পান করালো। তার এ কাজের কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৩২১
কাপড় পরিধানের দুআ : পূর্বের গোনাহ মাফ হয়
পোশাক আল্লাহ তাআলার অনেক বড় নিআমত। সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন সকল মানুষই পোশাক পরে। কোনো পশু পোশাক পরে না। কিন্তু মানুষ পরে। এটি মানবের বৈশিষ্ট্য। এর জন্য মানুষ অনেক অর্থ খরচ করে। এটা মানুষের স্বভাবজাত।
তবে পার্থক্য হয়ে যায় মানুষের রুচিবোধে। সৌন্দর্যের ধারণা সকল মানুষেরই আছে। কিন্তু সঠিক রুচিবোধ ও শালীনতা-অশালীনতার বিষয়ে মানুষ প্রভাবিত হয় নিজ প্রবৃত্তি ও পরিবেশ-পারিপার্শ্বিকতা দ্বারা। এ থেকে উত্তরণ ঘটে তাদের, যারা এক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধান মানে। সুতরাং যাদেরকে আল্লাহ তাআলা এক্ষেত্রেও তাঁর হুকুম মানার তাওফীক দিয়েছেন তাদের তো শুকরিয়া আদায় করাই উচিত-
الْحَمْدُلِلهِالّذِيكَسَانِيهَذَاالثّوْبَوَرَزَقَنِيهِمِنْغَيْرِحَوْلٍمِنِّي،وَلَاقُوّةٍ.
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাকে এ পোশাক পরিয়েছেন। এবং কোনো প্রকার কষ্ট-মেহনত ছাড়া আমাকে তা দান করেছেন।
সারাদিনে আমরা কতবার কাপড় পরি? চার-পাঁচ বার হবে। কাপড় পরিধান করার সময় যদি আমরা উপরোক্ত দুআ পড়ি তাহলে আল্লাহ আমাদের গোনাহ মাফ করে দিবেন।
হযরত মুআয ইবনে আনাস রা. তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ لَبِسَ ثَوْبًا فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلهِ الّذِي كَسَانِي هَذَا الثّوْبَ وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي، وَلَا قُوّةٍ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
যে ব্যক্তি পোশাক পরিধান করে বলবে-
الْحَمْدُلِلهِالّذِيكَسَانِيهَذَاالثّوْبَوَرَزَقَنِيهِمِنْغَيْرِحَوْلٍمِنِّي،وَلَاقُوّةٍ.
আল্লাহ তার পূর্বের গোনাহ মাফ করে দিবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০২৩; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ১৮৭০
...যদিও গোনাহ সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়
বান্দার গোনাহ আল্লাহ মাফ করেন। তাঁর মাফের কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। বান্দার গোনাহ কত হতে পারে? সব গোনাহ তিনি ক্ষমা করে দিবেন। এমন রবের বান্দা কি নিরাশ হতে পারে। শুধু প্রয়োজন তাঁর দুয়ারে ফিরে আসার।
কিছু হাদীসে উদাহরণ টানা হয়েছে তাঁর ক্ষমার প্রশস্ততার- কী পরিমাণ গোনাহ হওয়ার পরও তিনি ক্ষমা করেন। কোনো হাদীসে এসেছে, ...যদিও গোনাহ মেঘমালা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। কোনো হাদীসে এসেছে, ...যদিও বান্দা উপস্থিত হয় পৃথিবী-ভর্তি গোনাহ নিয়ে। কোনো বর্ণনায় এসেছে, ...যদিও গোনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
সমুদ্রের ফেনা কী পরিমাণ হয়? সমুদ্র যত বিশাল এর ফেনার পরিমাণও তেমন পরিমাপের ঊর্ধ্বে। কে পারে সমুদ্রের ফেনারাশি পরিমাপ করতে। তার অর্থ, বান্দা যত গোনাহ নিয়েই তাওবার দরজায় ধরনা দিক না কেন, আল্লাহ মাফ করে দিবেন।
সামনে আমরা কিছু আমলের কথা উল্লেখ করব, যেসবের ফযীলতে বলা হয়েছে- আল্লাহ মাফ করে দিবেন, যদিও গোনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়।
১. নামাযের পর ৩৩ বার...এবং
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَبّحَ اللهَ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَتلِكَ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ، وَقَالَ: تَمَامَ الْمِائَةِ: لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ.
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর তেত্রিশবার সুবহানাল্লাহ, তেত্রিশবার আলহামদু লিল্লাহ ও তেত্রিশবার আল্লাহু আকবার, বলবে। এই হল নিরানব্বই। এরপর একশ পূরণ করবে এই বলে-
لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
তার গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৯৭
২. দিনে ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْقَالَ: سُبْحَانَاللهِوَبِحَمْدِهِ،فِييَوْمٍمِائَةَمَرّةٍ،حُطّتْخَطَايَاهُ،وَإِنْكَانَتْمِثْلَزَبَدِالبَحْرِ.
যে ব্যক্তি দিনে একশত বার-
سُبْحَانَاللهِوَبِحَمْدِهِ (সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী) বলবে। তার পাপসমূহ মিটে যাবে যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪০৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯১
৩. ফজর নামাযের পর তাসবীহ ও তাহলীল ১০০ বার
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ سَبّحَ فِي دُبُرِ صَلَاةِ الْغَدَاةِ مِائَةَ تَسْبِيحَةٍ، وَهَلّلَ مِائَةَ تَهْلِيلَةٍ، غُفِرَتْ لَهُ ذُنُوبُهُ، وَلَوْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْر.
যে ব্যক্তি ফজর নামাযের পর একশ বার সুবহানাল্লাহ এবং একশ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ বলবে, তার গোনাহগুলো মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়। -সুনানে নাসায়ী, হাদীস ১৩৫৪
৪. যে এই দুআ পড়বে...
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا عَلَى الأَرْضِ أَحَدٌ يَقُولُ: لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوّةَ إِلّا بِاللهِ، إِلّا كُفِّرَتْ عَنْهُ خَطَايَاهُ وَلَوْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ.
যে ব্যক্তিই এই দুআ পড়বে-
لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوّةَ إِلّا بِاللهِ.
তার পাপগুলো মিটে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। -জামে তিরমিযী, হাদসি ৩৪৬০
সদাকা : গোনাহের আগুন নিভিয়ে দেয়
কোনো মানুষই পৃথিবীতে সম্পদ নিয়ে আসে না; আসে খালি হাতে। অতপর আল্লাহ অনুগ্রহ করে সম্পদ দান করেন। সুতরাং আমার যত সম্পদ সব আল্লাহর দান। এ থেকে আমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য খরচ করব- এতে আবার সংকোচ কীসের! সূরা বাকারার শুরুতে আল্লাহ মুত্তাকীদের কিছু গুণ বলেছেন, তার মধ্যে-
وَ مِمَّا رَزَقْنٰهُمْ یُنْفِقُوْنَ.
এবং আমি তাদেরকে যা কিছু দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। [সূরা বাকারা (২) : ২]
সুতরাং আল্লাহর দেওয়া সম্পদ আল্লাহর জন্য ব্যয় করতে কোনো সংকোচ-কার্পণ্য নেই।
আবার তাঁর দেওয়া সম্পদ থেকে দান-সদকা করলে তিনি খুশি হন এবং মাফ করেন-
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ .
তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে কর এবং অভাবগ্রস্তকে দাও তা তোমাদের জন্য আরো ভালো। এবং তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। তোমরা যা কর আল্লাহ তা সম্যক অবহিত। -সূরা বাকারা (২) : ২৭১
আর সদাকা শুধু পাপ মোচনই করে না; পাপের আগুন একেবারে নিভিয়ে দেয়, যেমন পানি দাউদাউ আগুন নিভিয়ে দেয়। এক দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় সাহাবী মুআয ইবনে জাবাল রা.-কে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন-
...وَالصّدَقَةُ تُطْفِئُ الخَطِيئَةَ كَمَا يُطْفِئُ المَاءُ النّارَ.
...আর সদাকা পাপ (নিভিয়ে দেয়) মোচন করে, যেমন পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬১৬
১০০ নকী লাভ ১০০ গোনাহ মাফ
বিভিন্ন দুআর মাধ্যমে আল্লাহ গোনাহ মাফ করেন। তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য দুআ এ শিরোনামের অধীনে উল্লেখ করব। এর দ্বারা শুধু যে নেকী লাভ আর গোনাহ মাফ হয় তা নয়, বরং এর দ্বারা ব্যক্তি সারাদিন শয়তান থেকে হেফাযতে থাকবে এবং শ্রেষ্ঠ আমলকারী বলে গণ্য হবে। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلّا اللهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرّةٍ، كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتّى يُمْسِيَ، وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمّا جَاءَ بِهِ، إِلّا أَحَدٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ.
যে ব্যক্তি দিনে একশ বার এই দুআ পড়বে-
لاَإِلَهَإِلّااللهُ،وَحْدَهُلاَشَرِيكَلَهُ،لَهُالمُلْكُوَلَهُالحَمْدُ،وَهُوَعَلَىكُلِّشَيْءٍقَدِيرٌ.
তার আমলনামায় দশটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব লেখা হবে। একশ নেকী লেখা হবে এবং একশ গোনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে ঐ দিনের সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তান থেকে হেফাযতে থাকবে। (যে ব্যক্তি এই আমল করল) তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ আমল আর কেউ করেনি; তবে ঐ ব্যক্তি, যে তার মতো বা তার চেয়ে বেশি আমল করেছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩২৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৬৯১ হ