শাবান-রমযান ১৪৪০   ||   এপ্রিল-মে ২০১৯

সাধারণ শিক্ষিত নারীদের দ্বীন শেখার পরিবেশ তৈরি হোক

মাসুমা সাদিয়া

কয়েক বছর আগে আলকাউসারের পর্দানশীন বিভাগে আমার একটি লেখা ছাপা হয়েছিল। সেটা ছিল একটা উর্দূ লেখার অনুবাদ। লেখার শিরোনাম- ‘মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.-এর দুই মেয়ে’।

ঐ লেখা পড়ে সাধারণ শিক্ষিত এক নারী চিঠি পাঠিয়েছিলেন।

“জনাব, আপনাদের মার্চ ২০১৫ সংখ্যার পর্দানশীন বিভাগে ‘মুফতী ফয়যুল্লাহ রাহ.-এর দুই মেয়ে’ লেখাটি পড়ে অনুপ্রাণিত হয়েছি।

আমি আমাদের  কোনো এক নারী বিষয়ক অনুষ্ঠানে একটি বাচ্চা মেয়ের কুরআন পড়া শুনেছিলাম। অনুষ্ঠান শুরু করার সময় তাকে কুরআন পড়ার জন্য আনা হয়েছিল। আমি তার পড়া শুনে অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম। ঘটনাক্রমে আমার মেয়ে সাদিয়া তখন আমার গর্ভে। যাই হোক, ঐ বাচ্চা মেয়েটার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সে হাফেযা। তখন আমার কেন জানি ইচ্ছা হল, আমার মেয়ে হলে হাফেযা বানাব।

ঐ লেখাটি পড়ে আমার মেয়েটির কথা মনে পড়েছে এবং আমার সেই পবিত্র ইচ্ছাটিও নতুনভাবে জেগে উঠেছে। তাছাড়া এ প্রবন্ধের লেখিকার নাম আর আমার মেয়ের নামও এক।

আমার মেয়ের বয়স এখন পাঁচ বছর। তাকে কি এখনি কোনো মাদরাসায় দিব, না আরো আপেক্ষা করব; আরেকটু বড় হলে দিব। কোথায় ভালো পরিবেশ পাওয়া যাবে, যেখানে আমার মেয়েটাকে একজন ভালো হাফেযা বানাতে পারব।

এমনিভাবে আমার চারপাশের এমন কিছু নারী আছেন, যারা জেনারেল শিক্ষায় শিক্ষিত। কলেজ ভার্সিটিতে পড়েন। এখন তারা দ্বীন শিখতে চান। কুরআন শুদ্ধ করতে চান, কুরআন ও হাদীসের ভাষা বুঝতে চান। কিন্তু তারা উপযুক্ত পরিবেশ খুঁজে পান না।

মেয়েদের দ্বীনী ইলম শিক্ষা করার জন্য বর্তমানে অনেক মহিলা মাদরাসা গড়ে উঠেছে এবং সেখানে অনেক মেয়েরা দ্বীন শিখছে। কিন্তু আমার মত জেনারেল শিক্ষিত মা-বোন যারা আছেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে মাদরাসায় পড়ার সুযোগ যাদের হয়ে ওঠে না; তাদের জন্য ঘরোয়াভাবে কুরআন-হাদীস শেখার পরিবেশ তৈরি করা জরুরি।”

কিছু নারীর দ্বীন শেখার অনেক আগ্রহ দেখা যায়, কিন্তু তারা সাংসারিক ঝামেলা বা পরিবেশ অনুকূল না হওয়ায় দ্বীনী ইলম শিখতে পারেন না। কিছু নারী তো এমন আছেন, যাদের দ্বীনের অনেক মৌলিক বিষয়ও জানা নেই; পাক-পবিত্রতা, জরুরি মাসআলা-মাসায়েল, শরীয়াতের হুকুম-আহকাম ইত্যাদি। সেদিন একজন বললেন, রমযানের ভাংতি রোযা যে কাযা করতে হয় তা তিনি জানেন না, অথচ তিনি নিয়মিত নফল রোযা রাখেন।

এতেই বুঝা যায়, কিছু কিছু নারীর শরীয়তের মৌলিক হুকুম-আহকামের ব্যাপারে জানাশোনা কত কম।

কারো কারো মাঝে দ্বীনী ব্যাপারে অনাগ্রহ ও উদাসীনতাও লক্ষ্য করা যায়। অনেক বোনকে যদি বলি, আসুন আমরা কিছুক্ষণ কুরআন শিখি, দ্বীনী বিষয়ে আলোচনা করি, তখন তাদের অজুহাত- সাংসারিক ঝামেলা বেশি, দৈনন্দিন কাজ-কর্ম অনেক।

কিন্তু এসবের ভিতর দিয়ে তো আমার কিছু সময় বের করতে হবে। আমার রান্না-বান্না কি কোনোদিন বাদ যায়? কিংবা সাংসারিক কোনো কাজ-কর্ম বন্ধ থাকে? সবই হয়, কিন্তু দ্বীন শেখার সময় হয় না- এটা কেমন কথা! অনেকে তো এমনও আছে, সময় পেলেও শেখার আগ্রহ নেই। কেউ আবার শিখতে চাইলেও সময় বের করতে পারেন না। আমার অবস্থা যাই হোক না কেন, আমাকে তো দ্বীন শিখতে হবে, আমল করতে হবে।

নারীদের জন্য ঘরোয়া তা‘লীম এর উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন একটা সময় বের করে কিছু তা‘লীম করা। মাসআলা নিয়ে আলোচনা করা। আমলের ফাযায়েল বলা। এতে আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ঘর থেকে বদদ্বীনী দূর হয়।

দ্বীনী বই-পুস্তক পড়া। তেমনি মহীয়সী মুসলিম নারীদের জীবনী পড়া। আগের দিনের নারীরা কীভাবে দ্বীন শিখেছেন, আমলে অগ্রগামী হয়েছেন, দ্বীনের মেহনত করেছেন সেগুলো জানলে আমাদের মাঝেও আগ্রহ তৈরি হবে। যেমন আমার এই লেখাটি পড়ে একজনের মনে কুরআন শেখার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

আসুন চেষ্টা করি, আমার ঘরটাই যেন একটা মাদরাসা হয়ে যায়। যেখানে সর্বদা কুরআন শিক্ষা দেয়া হবে। হাদীসের কিতাবসমূহ পড়া হবে। তাহলে আমার সন্তানের এবং পাড়া-প্রতিবেশীর মাঝেও দ্বীনের আলো ছড়িয়ে পড়বে।

 

 

advertisement