আমিও জান্নাতে যাব
আম্মার। বেশ চটপটে ও কৌতূহলী। আম্মুর কাছেই নাযেরা শেষ করে হিফয শুরু করে দিয়েছে।
নানাজান এবার হিজাযের সফর থেকে তার জন্য নিয়ে এসেছেন কুরআনুল কারীমের সুন্দর একটি কপি। মখমল গেলাফে ঢাকা। কী সুন্দর দেখতে আর কী ঝকঝকে ছাপা! দেখতেই মন জুড়িয়ে যায়। বড় মামা সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন নানাজানের আনা এ হাদিয়া।
আম্মার এমনিতেই মামার ভক্ত। মামা কী সুন্দর সুন্দর গল্প বলেন! সঙ্গে থাকে মজার চিপ্স।
এবার মামার আনা চকোলেট-চিপ্স সব ভুলে গেল সে। নানাজানের পাঠানো হাদিয়া নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কুরআনের এত সুন্দর কপি সে আগে কখনও দেখেনি। আম্মার কুরআন শরীফ হাতে নিয়ে বলে- জানো মামা, আমি না কুরআন শরীফ মুখস্থ করতে আরম্ভ করেছি। আম্মু বলেছেন, আল্লাহর কালাম মুখস্থ করলে আল্লাহ তাআলা অনেক পুরস্কার দিবেন।
আল্লাহ তাআলা সত্যি সত্যি পুরস্কার পাঠিয়ে দিয়েছেন। এত সুন্দর কুরআন শরীফ! আমি আরো বেশি বেশি পড়ব, তাহলে আল্লাহ আমাকে আরো পুরস্কার দেবেন-তাই না?
কুরআন শরীফটা দুই হাতে বুকে জড়িয়ে এক দৌড়ে চলে গেল দাদুর কামরায়। দাদু আম্মারের আওয়ায পেয়েই বলে উঠলেন- কে রে! আমার দাদুভাই নাকি রে?
-দাদু, দাদু! দেখ, আমি যেইনা আল্লাহর কালাম মুখস্থ করা শুরু করেছি, আল্লাহ আমার জন্য পুরস্কার পাঠিয়ে দিয়েছেন। বাইতুল্লাহর সফর থেকে নানাজান আমার জন্য এ কুরআন শরীফ হাদিয়া এনেছেন।
-মাশাআল্লাহ, এত সুন্দর কুরআন শরীফ! তাহলে তো তোমাকে এর শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
-কীভাবে?
-তোমাকে এখন আরো বেশি বেশি পড়তে হবে।
-ও আচ্ছা।
বলেই ছুট দিল ছোট চাচ্চুর কাছে। নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, দেখ চাচ্চু, কত সুন্দর কুরআন শরীফ! নানাজান আমার জন্য হজ্ব থেকে এনেছেন।
-আরে, এত সুন্দর কুরআন শরীফ! দেখি তো একটু!
-এখন না। পরে পরে; বলে এক দৌড়ে চলে গেল আম্মুর কাছে। মামার জন্য আম্মু তখন নাশতা তৈরি করছেন।
-আম্মু আম্মু, তুমি না বলেছিলে, আল্লাহর কালাম পড়লে আল্লাহ পুরস্কার দেন। এই দেখ, আল্লহ পুরস্কার পাঠিয়ে দিয়েছেন।
-মাশাআল্লাহ, আল্লাহ তাআলা বরকত দান করুন। তুমি সুন্দরভাবে এর যত্ন করবে।
আম্মার কয়েকটি চুমু খেয়ে কুরআন শরীফটি সেলফে রেখে দিল। চলে আসল আবার মামার কাছে। এখন তার মনে পড়ল গল্প শোনার কথা।
-একটা গল্প বল না, মামা! মর্জি জুড়ে দিল।
-বলব, তবে তার আগে একটা সূরা শোনাও!
-আম্মার পড়া শুরু করল- সূরাতুশ শামসি, মাক্কিয়্যাহ... ছদাকাল্লাহুল আযীম।
-মাশাআল্লাহ, তাবারাকাল্লাহ।
মামা পকেট থেকে একটি আতরের শিশি বের করে দিলেন। আম্মার শিশিটি হাতে নিয়ে নাকের কাছে ধরল। চোখদুটো বন্ধ করে ভ্রæ উঁচিয়ে বলল- ওয়াহ, কী ঘ্রাণ! এটাও আমার জন্য! বলে পকেটে ভরল আতরের শিশিটি।
-আচ্ছা মামা, এবার গল্প বলো! বলো না!
মামা বলতে লাগলেন, তুমি যে কুরআন শরীফ পড়ছ, এতেই তো আছে অনেক সুন্দর সুন্দর গল্প। সত্য গল্প। নবী-রাসূলের গল্প। রাজা-রাণীর গল্প। পশু-পাখির গল্প। মেঘ-বৃষ্টির গল্প। নদী-সাগরের গল্প। মৌ-ভোমরার গল্প। ফল-ফুলের গল্প। হাতি-ঘোড়া-উটের গল্প। আরো কত কত গল্প...!
তুমি যে সূরাটি তিলাওয়াত করে শোনালে তাতেই রয়েছে হযরত ছালেহ আলাইহিস সালাম ও তার মুজেযার উটনীর গল্প। ভারি চমৎকার সে গল্প।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তাআলা বার বার যে গল্পটা বলেছেন, তা হল জান্নাতের গল্প। আহা, জান্নাত যে কত মজার!
-মামা, আজকে তবে জান্নাতের গল্পটা শোনাও!
-জান্নাতের গল্প তো অনেক বড়। সবটুকু বলে শেষ করা যাবে না। ভালোভাবে পড়ালেখা কর। একটু বড় হলে তুমি কুরআন পড়তে থাকবে, হাদীস পড়তে থাকবে আর নিজে নিজেই সবকিছু জানতে থাকবে, বুঝতে থাকবে। তখন দেখবে তোমার কত খুশি লাগছে!
-আচ্ছা, এখন অল্প একটু বল!
-জান্নাত খুব সুন্দর জায়গা। সেখানে শুধু সুখ আর সুখ! কোনো প্রকারের দুঃখ নেই। শান্তি আর শান্তি! কোনো ধরনের অশান্তি নেই।
কী সুন্দর সুন্দর বাগান! বিরাট বিরাট গাছ। রঙ-বেরঙের ফুল। থোকায় থোকায় ফল। আঙ্গুর-বেদানা-আপেল-কলা... আরো কত কী! কী মধুর স্বাদ তাতে! একেকটার স্বাদ একেক রকম। তুমি যেটা খেতে চাইবে তোমার মুখের সামনে তা চলে আসবে।
-তাই নাকি, মামা!
-শুধু কি তাই! সেখানে আরো আছে সুন্দর সুন্দর পাখি। কী মায়াবী সেগুলো! তোমাকে কোনো পাখি ধরতে হবে না। সে এসেই ধরা দেবে তোমার হাতে। তুমি খেতে চাইলে তোমার সামনে ভুনা হয়ে হাজির হবে। খাওয়া দাওয়া শেষ। পাখি আবার ফুড়–ত উড়ে যাবে।
আম্মারের ভেতরে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। চোখদুটো বড় বড় করে ঘনঘন পলক ফেলতে লাগল সে।
মামা বলতে লাগলেন- সেখানে আছে বিরাট বিরাট প্রাসাদ। সোনা-রূপা ও দামি দামি পাথর দিয়ে সাজানো। সেখানে বিছানো আছে আরামদায়ক বিছানা। মখমল রেশমের গালিচা।
সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ঝর্ণা। স্বচ্ছ পানি, সুস্বাদু শরাব, বিশুদ্ধ দুধ ও খাঁটি মধুর নহর। যখন যত ইচ্ছা শুধু পান করতে থাকবে।
-আচ্ছা মামা, আমরা সেদিন রাঙামাটি বেড়াতে গেলাম। তুমি আমাদের সাথে গেলে না কেন? কত সুন্দর সুন্দর জায়গা সেখানে! কিন্তু জান্নাতের মত এত সুন্দর না!
-হাঁ, দুনিয়ার এসব জায়গায় গেলে আল্লাহ পাকের কুদরত দেখা যায়। যাতে মানুষ চিন্তা করে, দুনিয়া এত সুন্দর হলে জান্নাত কত সুন্দর হতে পারে? জান্নাত এত সুন্দর যে, দুনিয়ার কোনো কিছু দিয়ে তা বোঝানো যাবে না।
এককথায়, জান্নাত এত আনন্দের ও সৌন্দর্যের জায়গা যে, কোনোদিন কেউ তা দেখেনি। কেউ কোনোদিন তার পূর্ণ বিবরণ শোনেনি। আর কেউ কল্পনা করে করেও এর সৌন্দর্য অনুধাবন করতে পারবে না। জান্নাতে গেলেই দেখা যাবে- জান্নাত কত সুন্দর।
আরও খুশির কথা কি জানো, সেখানে একবার গেলে আর বের হওয়া নেই। সেখানে তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
-ওউফ মামা, তাহলে আমি জান্নাতে যাব। আমরা সবাই যাব। তুমি কিন্তু এবার ফাঁকি দিবে না। আমাদের সাথে থাকবে।
শ্বাস টেনে বলল আম্মার।
মামা মিটিমিটি হাসছেন আম্মারের কথা শুনে। এরই মধ্যে আম্মুর ডাক শোনা গেল- আম্মার, মামাকে নিয়ে দস্তরখানে আসো।
-আম্মু, আমি আর মামা জান্নাতে যাব। জান্নাতে অনেক মজা আছে। সেখানে গিয়েই খাব। আম্মার বায়না ধরে বসল।
-এখন খেয়েদেয়ে শক্তি অর্জন কর। বেশি বেশি পড়াশোনা কর। কুরআন শরীফেই বলে দেওয়া আছে- জান্নাতে কীভাবে যেতে হয়?
আম্মার তো শুনে অবাক। মামার দিকে ফিরে জিজ্ঞাসা করে- সত্যি তা-ই?
মামা মাথা নেড়ে বলেন, হাঁ-
أَمَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ فَلَهُمْ جَنَّاتُ الْمَأْوَى نُزُلًا بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ.
যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদের স্থায়ী বাসস্থান হবে জান্নাত- তাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ তাদের আপ্যায়নের জন্য। -সূরা সাজদাহ (৩২) : ১৯