জুমাদাল আখিরাহ-রজব ১৪৪০   ||   মার্চ ২০১৯

অপচয় নয়, চাই সম্পদের যথার্থ মূল্যায়ন

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

‘যে জন দিবসে মনের হরষে

জ্বালায় মোমের বাতি

আশু গৃহে তার দেখিবে না আর

নিশীথে প্রদীপ-ভাতি।’

ধনসম্পদ অপচয়ের এ এক সাধারণ বাস্তবতা। কাড়ি কাড়ি সম্পদের মালিক যখন নীতি-নৈতিকতা ভুলে গিয়ে নিজের সম্পদ দুই হাতে অযথা নষ্ট করে, অপব্যয় করে বেড়ায়, তার সম্পদের গরিমা শেষ হতে তখন সময় লাগে না। অপ্রয়োজনে দিনের বেলা কেউ যদি মোমবাতি জ্বালিয়ে শেষ করে দেয় তাহলে রাতের অন্ধকারে জ্বালানোর মতো সে কিছুই পাবে না-এটাই স্বাভাবিক।

কুরআনে কারীমে অপচয়কারীকে বলা হয়েছে শয়তানের ভাই। দেখুন-

وَ اٰتِ ذَا الْقُرْبٰی حَقَّهٗ وَ الْمِسْكِیْنَ وَ ابْنَ السَّبِیْلِ وَ لَا تُبَذِّرْ تَبْذِیْرًا.  اِنَّ الْمُبَذِّرِیْنَ كَانُوْۤا اِخْوَانَ الشَّیٰطِیْنِ، وَ كَانَ الشَّیْطٰنُ لِرَبِّهٖ كَفُوْرًا.

আত্মীয়কে তার প্রাপ্য দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরকেও; তবে কিছুতেই অপব্যয় করো না। সন্দেহ নেই, যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই, আর শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ! -সূরা বনী ইসরাঈল (১৭) : ২৬-২৭

এই তো অপচয়ের পরিণাম! আসলে ধনসম্পদ তো আল্লাহ তাআলার দেয়া এক বিশেষ নিআমত। তিনি সবাইকে সমানভাবে এ নিআমত দান করেন না। কাউকে বেশি দেন, কাউকে কম দেন। এ ব্যবস্থাপনাও আল্লাহর-

اَهُمْ یَقْسِمُوْنَ رَحْمَتَ رَبِّكَ، نَحْنُ قَسَمْنَا بَیْنَهُمْ مَّعِیْشَتَهُمْ فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ رَفَعْنَا بَعْضَهُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَتَّخِذَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا سُخْرِیًّا.

এরা কি তোমার প্রভুর করুণা বণ্টন করে? আমিই তাদের মধ্যে তাদের জীবিকা বণ্টন করি, পার্থিব জীবনে এবং একজনকে অপরের ওপর মর্যাদায় উন্নীত করি, যেন একে অপরের দ্বারা কাজ করিয়ে নিতে পারে। -সূরা যুখরুফ (৪৩) : ৩২

দুনিয়ার জীবনে চলতে গেলে এ সম্পদের প্রয়োজনীয়তাও অনস্বীকার্য। এটা আল্লাহর আরেক ব্যবস্থাপনা। তিনিই একে আমাদের এ জীবনের বাহ্যিক অবলম্বন বানিয়েছেন। এর সঠিক ও যথার্থ ব্যবহার যদি করা না হয় তাহলে একদিকে যেমন তাঁর দেয়া নিআমতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা হবে, আবার আমাদের পার্থিব জীবনের অবলম্বনও নষ্ট হবে। পবিত্র কুরআনের বাণী-

لَىِٕنْ شَكَرْتُمْ لَاَزِیْدَنَّكُمْ وَ لَىِٕنْ كَفَرْتُمْ اِنَّ عَذَابِیْ لَشَدِیْدٌ.

তোমরা যদি (আমার নিআমতের) কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আরও বাড়িয়ে দেব, আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে (জেনে রেখো,) আমার শাস্তি অবশ্যই অত্যন্ত কঠিন! -সূরা ইবরাহীম (১৪) : ৭

কৃতজ্ঞতা আদায়ের জন্যে এ বিশ্বাস ধারণ করা যেমন জরুরি-আমার এ সম্পদ আমার আল্লাহ আমাকে দয়া করে দান করেছেন, তেমনি এর ব্যয়ক্ষেত্রও হতে হবে আল্লাহ তাআলার বিধানমাফিক। অপ্রয়োজনে যেমন এ সম্পদ উড়ানো যাবে না, তেমনি অবৈধ প্রয়োজনেও তা ব্যয় করা যাবে না। নিআমতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হলে এ উভয় দিক অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। অযথা ও অবৈধ খরচ থেকে বেঁচে থাকতে হবে।

কুরআনে কারীমের আরেক নির্দেশনা-কারও হাতে যদি কোনো এতিম শিশুর সম্পদ থাকে, তাহলে সে যেন তা যথাযথ সংরক্ষণ করে এবং সে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগে যেন তার সম্পদ তার হাতে তুলে না দেয়। এতে যথেষ্ট আশংকা রয়েছে-সে বয়স ও অভিজ্ঞতার অভাবে তার এ সম্পদ অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ব্যয় করে নষ্ট করে ফেলবে, তার সম্পদের সে অপব্যবহার করবে। পড়–ন-

وَ لَا تُؤْتُوا السُّفَهَآءَ اَمْوَالَكُمُ الَّتِیْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ قِیٰمًا وَّ ارْزُقُوْهُمْ فِیْهَا وَ اكْسُوْهُمْ وَ قُوْلُوْا لَهُمْ قَوْلًا مَّعْرُوْفًا، وَ ابْتَلُوا الْیَتٰمٰی حَتّٰۤی اِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ ۚ فَاِنْ اٰنَسْتُمْ مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوْۤا اِلَیْهِمْ اَمْوَالَهُمْ.

তোমরা নির্বোধদের হাতে তোমাদের সম্পদ অর্পন করো না, যা আল্লাহ তোমাদের জন্যে টিকে থাকার মাধ্যম বানিয়েছেন; তা থেকে তাদের জীবিকা ও পোশাকের ব্যবস্থা করো এবং তাদের সঙ্গে সুন্দর কথা বলো। আর তোমরা এতিমদের পরীক্ষা করো, অবশেষে তারা যখন বিয়ের বয়সে পৌঁছে, তখন যদি তাদের মাঝে ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান উপলব্ধি কর তাহলে তাদের সম্পদ তাদের হাতে অর্পণ করো। -সূরা নিসা (৪) : ৫-৬

এতিম শিশুরা না বুঝে কিংবা দুষ্ট কারও প্ররোচনায় পড়ে যাতে তাদের সম্পদ হারিয়ে না ফেলে সেজন্যে কত দৃঢ় নির্দেশনা! বুঝ-বুদ্ধির অভাবে অযথা ও অপ্রয়োজনীয় খরচ তারা করতেই পারে। পরিণতিতে একসময় প্রয়োজনীয় খরচ করার মতো টাকা নাও থাকতে পারে। অপচয়ের এ দুয়ার তাই পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে এভাবে-তাদের ভালো-মন্দ বিচারের জ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত তাদের হাতে তাদের সম্পদ দেয়াই হবে না। এর পাশাপাশি, তারা যেন নিজেদের সম্পদের জন্যে অস্থির হয়ে না পড়ে সেজন্যে সান্ত¡নার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে এ বলে-তাদের তোমরা সুন্দর করে বুঝিয়ে বলো-এ সম্পদ তোমাদের, তোমরা বড় হলে তা অবশ্যই তোমাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে।

উক্ত আয়াতে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এতিমদের যে সম্পদ অভিভাবকদের হাতে থাকে, তা এখানে উল্লেখিত হয়েছে অভিভাবকদের সম্পদ হিসেবে-তোমরা নির্বোধদের হাতে ‘তোমাদের সম্পদ’ অর্পণ করো না...। এ থেকে এ কথারও ইঙ্গিত মেলে-এ সম্পদ এখন যদিও এতিমদের মালিকানাধীন, কিন্তু এটা আসলে পুরো মানবজাতির জন্যেই আল্লাহর পক্ষ থেকে নিআমত। এ সম্পদকে জগতের সকলের জন্যেই আল্লাহ টিকে থাকার অবলম্বন বানিয়েছেন। একজনের হাতে থাকলেও এর উপকার ভোগ করে সকলে মিলে। তা আজ একজনের হাতে তো আগামীকাল আরেকজনের হাতে। অবুঝ কোনো শিশু যদি তার মূল্যবান একটি জিনিস নদীতে ফেলে দেয় তাহলে এতে কেবল তার একার সম্পদই হারাল এমন নয়, বরং এ ক্ষতি সকল মানুষের। এর সংরক্ষণের দায়িত্বও তাই সকলের।

দুইদিনের এই দুনিয়ার জীবনে আল্লাহ আমাদেরকে খুবই সামান্য কিছু সম্পদের মালিক বানিয়েছেন। জগতের সেরা ধনী যে, সেই-বা কতটুকু সম্পদের অধিকারী? দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান যত নিআমত আমরা ভোগ করি সচেতনভাবে ও অবচেতনভাবে, কারও পক্ষে কি এর এক ক্ষুদ্র অংশেরও বিনিময় আদায় করা সম্ভব? জগতের যা কিছু সবই তো আল্লাহর। তিনিই প্রকৃত মালিক-ঈমানদার যে কেউ এ বিশ্বাস পোষণ করে। অল্প সময়ের জন্যে তিনি কিছু সম্পদের বাহ্যিক মালিকানা আমাদের দান করেন। এ মালিকানা পরিবর্তনও হয়। এক হাত থেকে আরেক হাতে যায়। পথের ভিখারি রাজা হয়, রাজা সর্বস্ব হারিয়ে পথে নামে। চারপাশে এ বাস্তবতা দেখার পরও আমরা আমাদের মালিকানাধীন সম্পদকে প্রকৃত অর্থেই আমাদের সম্পদ মনে করে ভুল করি। এ থেকেই সৃষ্টি হয় অপচয়ের মানসিকতা-আমার টাকা আমি আমার ইচ্ছামতো খরচ করব, এতে কার কী বলার আছে! আলকুরআনে আল্লাহ সতর্ক করছেন আমাদের এ বলে-

وَ اٰتُوْهُمْ مِّنْ مَّالِ اللهِ الَّذِیْۤ اٰتٰىكُمْ .

তোমরা তাদেরকে (অর্থাৎ তোমাদের মালিকানাধীন দাস-দাসীদেরকে) আল্লাহর সম্পদ থেকে দান করো, যা তিনি তোমাদের দান করেছেন। -সূরা নূর (২৪) : ৩৩

এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ও আলোচ্য বিষয় ভিন্ন। আমরা শুধু এতটুকু বলতে চাচ্ছি, আল্লাহ মানুষকে যে সম্পদ দান করেছেন, উক্ত আয়াতে তা আল্লাহর সম্পদ বলে আলোচিত হয়েছে। কথায় কথায় আমরাও বলি-এসব আল্লাহর দান, আল্লাহর দেয়া সম্পদ। কিন্তু শুধু মৌখিক স্বীকার নয়, বরং মুমিন হিসেবে এর প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস থাকাও অপরিহার্য। এ সম্পদ একদিকে যেমন আল্লাহর নিআমত, আবার তা আমাদের হাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানতও। তাই এর যথাযথ ব্যবহার না করলে, অযথা-অপ্রয়োজনে তা নষ্ট করলে, অপচয় করে বেড়ালে এ আমানতের খেয়ানতকারী হিসেবে জবাবদিহিতার মুখেও পড়তে হবে। হাদীসের ভাষ্য খুবই স্পষ্ট এবং কঠিন! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

لاَ تَزُولُ قَدَمَا عَبْدٍ يَوْمَ القِيَامَةِ حَتّى يُسْأَلَ عَنْ عُمُرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ ، وَعَنْ عِلْمِهِ فِيمَ فَعَلَ ، وَعَنْ مَالِهِ مِنْ أَيْنَ اكْتَسَبَهُ وَفِيمَ أَنْفَقَهُ ، وَعَنْ جِسْمِهِ فِيمَ أَبْلاَهُ.

কিয়ামতের দিন এ বিষয়গুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হওয়ার আগে কোনো বান্দার পা-ই নড়বে না-তার জীবন সে কীসে ব্যয় করেছে, তার ইলম অনুসারে সে কী আমল করেছে, তার সম্পদ সে কোত্থেকে উপার্জন করেছে এবং কোথায় ব্যয় করেছে আর তার শরীর কীসে নষ্ট করেছে? -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪১৭

অর্থাৎ নিজে কষ্ট করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে শারীরিক আরাম বিসর্জন দিয়ে অর্থ উপার্জন করলেই তাতে নিজের যথেচ্ছ ব্যবহারের অধিকার সৃষ্টি হয় না। এ সম্পদ যেহেতু আমাদের হাতে আমানত, তাই এর পূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণও আমাদের দায়িত্ব। এখানে স্বেচ্ছাচারের কোনো সুযোগ নেই। খরচ করতে চাইলে যিনি এর প্রকৃত মালিক, তার অনুমতিক্রমেই তা খরচ করতে হবে। অন্যথায় আটকে যেতে হবে কিয়ামতের ময়দানের সেই প্রশ্নোত্তর পর্বে।

আরেক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

إِنّ اللهَ كَرِهَ لَكُمْ ثَلاَثًا قِيلَ وَقَالَ وَإِضَاعَةَ الْمَالِ وَكَثْرَةَ السّؤَالِ.

আল্লাহ তোমাদের জন্যে তিনটি বিষয়কে অপছন্দ করেন- ১. অপ্রয়োজনীয় প্রসঙ্গে আলোচনা করা/না জেনে আন্দাজে কথা বলা, ২. সম্পদ নষ্ট করা, ৩. অধিক প্রশ্ন করা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৪৭৭

বোঝা গেল, সম্পদ নষ্ট করা আল্লাহ তাআলার নিকট একটি ঘৃণ্য বিষয়। এ সম্পদ যখন তিনি মানুষকে আমানত হিসেবে দিয়েছেন, তা দিয়ে তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে বলেছেন, তা যদি নষ্ট করা হয়, অনর্থক খরচ করা হয়, তাহলে তিনি তা অপছন্দ করবেনই। মহান আল্লাহর ভালোবাসা পেতে হলে সম্পদরূপী এ নিআমতের কদর অবশ্যই করতে হবে।

অহেতুক ও অপ্রয়োজনীয় যে কোনো বিষয়ই ইসলাম অপছন্দ করে। অহেতুক কথা, অহেতুক কাজ, অহেতুক ব্যয়-বর্জনীয় সবই। হাদীস শরীফের ব্যাপক নির্দেশনা-

إِنّ مِنْ حُسْنِ إِسْلاَمِ الْمَرْءِ تَرْكَهُ مَا لاَ يَعْنِيهِ.

ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য-এর অনুসারী অনর্থক সব কিছু বর্জন করবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩১৮

প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাণীর মর্ম হচ্ছে-প্রয়োজন ছাড়া মুসলমান কোনো কাজই করতে পারে না। প্রয়োজনটা যেমনই হোক, দ্বীনি হোক, দুনিয়াবি হোক, নিজের হোক, অন্যের হোক, কম হোক, বেশি হোক, উপকারিতা এর থাকবেই। তবে আরেকটা শর্ত হল, প্রয়োজনীয় কাজ এবং এর পদ্ধতিটাও অবশ্যই শরীয়তের বিবেচনায় বৈধ হতে হবে। অবৈধ কাজ কিংবা অবৈধ পন্থা যত প্রয়োজনীয়ই হোক, তা করা যাবে না। আমাদের হাতে থাকা আল্লাহর দেয়া নিআমত ও আমানত এ ধনসম্পদ ব্যয় করতে গেলে এ দুই বিষয় অবশ্যই সামনে রাখতে হবে-ব্যয়ের খাতটা প্রয়োজনীয় কি না এবং প্রয়োজনটা বৈধ প্রয়োজন কি না। তাহলেই সম্ভব অপচয়ের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। আবার প্রয়োজন পূরণ হয় কতটুকুতে তাও অবশ্য  লক্ষণীয়। হাদীসের ভাষ্যানুসারে, নদীর পারে বসেও যদি কেউ ওজু করে তবুও অপ্রয়োজনীয় পানি ব্যয় করার অনুমতি তার নেই। এটাও অপচয়।

অপচয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার অর্থ এই নয় যে, আবার কার্পণ্যে জড়িয়ে যেতে হবে। অপচয়ের মতো কার্পণ্যও মানবচরিত্রের এক মন্দ দিক। স্বভাবধর্ম ইসলাম জীবনের সর্বক্ষেত্রে যেমন আমাদেরকে ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ শিক্ষা দেয়, তেমনি সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রেও ইসলামের নির্দেশনা-অপচয় ও কার্পণ্যকে দুই পাশে রেখে এর মাঝ দিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পবিত্র কুরআনের এক জায়গায় আল্লাহ তাআলার প্রকৃত বান্দাদের কিছু পরিচয় ও বৈশিষ্ট্য আলোচিত হয়েছে। সেখানে তাদের সম্পদ ব্যয়ের নীতি উল্লেখিত হয়েছে এভাবে-

وَ الَّذِیْنَ اِذَاۤ اَنْفَقُوْا لَمْ یُسْرِفُوْا وَ لَمْ یَقْتُرُوْا وَ كَانَ بَیْنَ ذٰلِكَ قَوَامًا.

যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করে না, কার্পণ্যও করে না, বরং তারা আছে এতদুভয়ের মাঝে মধ্যম পন্থায়। -সূরা ফুরকান (২৫) : ৬৭

তাই কেবল ব্যয়সংকোচন নয়, বরং ব্যয়ে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে হবে। যেখানে যা প্রয়োজন, তা ব্যয় করতে হবে। আর প্রয়োজন না হলে ছোট-বড় যে কোনো পরিমাণের ব্যয় থেকে বিরত থাকতে হবে।

যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, জীবনযাপন তার সে মানেরই হবে। বসবাসের জন্যে যার কেবল একটি কুড়েঘর বানানোর সামর্থ্য আছে, সে ততটুকুতেই ক্ষান্ত থাকবে। যে পাকাঘর নির্মাণ করতে পারে, করবে। কারও যদি আরও বেশি সামর্থ্য থাকে বাড়াবাড়ি না করে সাধ্যমোতাবেক সে এগুলোও করতে পারে। কিন্তু কারও উদ্দেশ্য যদি হয় লোকমুখে খ্যাতি অর্জন, তাহলে সন্দেহ নেই-এটা অপচয়ের অন্তর্ভুক্ত হবে। অমুকের বাড়িটি দেখার মতো, তার জামাটি চোখে লেগে থাকার মতো-এমন নাম কুড়ানো কোনো বৈধ প্রয়োজনের আওতায় পড়ে না। এতে না কোনো দ্বীনি কল্যাণ রয়েছে, না আছে পার্থিব কোনো উপকারিতা। তাই জীবনযাপনের সর্বক্ষেত্রে লোকদেখানো এ মানসিকতা পরিহার করাও অপচয় থেকে বেঁচে থাকার অনন্য মাধ্যম।

অপচয় যে শুধু টাকাপয়সার ক্ষেত্রেই হয় এমন নয়, বরং আল্লাহ মানুষকে যত রকম নিআমতের অধিকারী করেন, অপচয় হতে পারে সেসব নিআমতের ক্ষেত্রেও। আল্লাহর দেয়া প্রতিটি নিআমতকেই যথাস্থানে ব্যবহার করতে হবে। যে কোনো হারাম ও অবৈধ কাজে সেসবের ব্যবহার থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। বিরত থাকতে হবে অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার থেকেও। অপচয়ের কঠিন শাস্তি থেকে রেহাই পেতে হলে এভাবেই আমাদের পথ চলতে হবে।

 

 

advertisement