দুআয়ে মাগফিরাতের আবেদন
এই শিরোনামে মাসিক আলকাউসারের পাতায় বহু দরখাস্ত ও দুআর আবেদন পেশ করা হয়েছে। কিন্তু আজকের আবেদনের ধরন একেবারেই ভিন্ন।
ব্যস, এটাই বাস্তবতা যে, আমাদের আব্বাজান হযরত মাওলানা শামছুল হক ছাহেব আজ দুনিয়ার বুকে নেই। গত ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪০ হিজরী বুধ-এর রাতে, বাংলা প্রকাশরীতি অনুসারে মঙ্গলবার দিবাগত রাত এগারটা চল্লিশ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
اَللّهُمّ اؤْجُرْنَا فِيْ مُصِيْبَتِنَا، وَاخْلُفْ لَنَا خَيْرًا مِّنْهَا.
إِنّ لِلهِ مَا أَخَذَ وَلَه مَا أَعْطَى، وَكُلّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِمِقْدَارٍ.
اَللّهُمّ لَا تَفْتِنّا بَعْدَهُ، وَلَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ.
হে আল্লাহ! আপনি আপনার ফযল ও করমে তার সাথে রহম ও করমের মুআমালা করুন! তাকে পুরোপুরি মাগফিরাত নসীব করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে তাকে জায়গা দান করুন।
হে আল্লাহ! আপনি নিজ ফযল ও করমে আমাদের সকল ভাই-বোনের পক্ষ হতে তাঁকে জাযায়ে খাইর দান করুন।
আর হে আল্লাহ! আমাদের আম্মাজানের ছায়াকে আমাদের উপর আরো প্রসারিত করুন। আফিয়াত ও সালামাত এবং সিহহাত ও কুওয়াতের সাথে তাঁকে দীর্ঘ নেক হায়াত দান করুন- আমীন।
পাঠকবৃন্দের কাছে প্রত্যাশা, তারা হযরত আব্বাজান ছাহেব রাহ.-কে নিজেদের দুআয় স্মরণ রাখবেন।
আব্বাজান রাহ.-এর সবচে’ বড় পরিচয় এই যে, তিনি ছিলেন ছাত্রগড়ার কারিগর শিক্ষক। আর মাদরাসাই ছিল তাঁর ওয়াত্ন, তার ঘর-বাড়ি।
তার জীবনে উলামা-তলাবার জন্য নসীহত গ্রহণের বহু উপকরণ রয়েছে। আশা করছি ইনশাআল্লাহু তাআলা তার বরকতপূর্ণ জীবন নিয়ে কিছু লেখা আলকাউসারের পাতায় প্রকাশিত হবে।
গত ২৩ রবিউল আখির ১৪৪০ হি./৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ঈ. সোমবার দিবাগত রাতে দারুল উলূম করাচীর একজন উদ্যমী ও কর্মনিষ্ঠ উসতায, ‘দরসে তিরমিযী’র সংকলক, হযরত শায়খুল ইসলাম হাফিযাহুল্লাহ-এর ভাগ্নে হযরত মাওলানা রশীদ আশরাফ সাইফীও আখেরাতের পথে রওয়ানা হয়ে গেলেন।
তাঁর ব্যাপারে শায়খুল ইসলামের বক্তব্য হল-
وہ دار العلوم کے قابل ومقبول استاذ تھے.
আল্লাহ তাআলা হযরতের ভরপুর মাগফিরাত নসীব করুন। জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা দান করুন। পরিবার-পরিজনকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন।
ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল আনুমানিক ৬২ বছর। তাঁর জীবনী জানতে ‘মাসিক আলবালাগ’ ও অন্যান্য উর্দু পত্র-পত্রিকা দেখা যেতে পারে।
এই সময়ের সবচেয়ে বড় ঘটনা হল, কিছুদিন পূর্বে দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামা লখনৌ-এর নাযেমে তালীমাত হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ওয়াযেহ রশীদ হাসানী নদভীর ইন্তেকাল। ৯ জুমাদাল উলা ১৪৪০ হি./১৬ জানুয়ারি ২০১৯ ঈ. বুধবার ফজরের সময় পরপারের ডাকে সাড়া দিয়ে সকলকে শোকসাগরে ভাসিয়ে আখেরাতের পথে রওয়ানা হয়ে গেছেন।
দূরের লোকেরা তো হযরত রাহ.-কে একজন বড় আদীব-সাহিত্যিক হিসেবে জানে। কিন্তু যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন -হযরতের নাতীর লেখা থেকে যে বিষয়গুলো সামনে এসেছে- তাদের দৃষ্টিতে হযরত বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল-
১. কুরআনে কারীমের সাথে গভীর মহব্বত ও ভালোবাসা।
২. মসজিদের সাথে লেগে থাকা দিল।
৩. হাদীস ও সুন্নাহর সাথে গভীর সম্পর্ক।
৪. প্রশস্ত দানের হাত।
৫. অতি বিনয় ও ন¤্রতা।
আর এ সবই পূর্বসূরি উলামায়ে কেরামের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
আল্লাহ তাআলা হযরত রাহ.-কে জান্নাতুল ফিরদাউসে উঁচু মাকাম দান করুন। পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের তাওফীক দান করুন এবং তাঁর ইন্তিকালে যে বিরাট শূন্যতা সৃষ্টি হল আপন ফযল ও করমে তা পূর্ণ করে দিন ও হেফাযত করুন- আমীন।
আমরা আশা করি, ‘আলবাছুল ইসলামী’, ‘আররায়েদ’ ও ‘তামীরে হায়াত’ ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর জীবনীর উপর বিস্তারিত প্রবন্ধ-নিবন্ধ ছাপা হবে; বরং তাঁর উপর ইনশাআল্লাহ কোনো ‘বিশেষ সংখ্যা’ প্রকাশিত হবে।
গত ১৩ জুমাদাল উলা ১৪৪০ হি./২১ জানুয়ারি ২০১৯ ঈ. সোমবার ফজরের আযানের সময় জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা-এর প্রবীণ উস্তায হযরত মাওলানা সিদ্দীকুর রহমান ছাহেব (লালবাগের হুজুর) ইন্তেকাল করেছেন।
তিনি ২রা জানুয়ারি ১৯৫৩ ঈ. সনে পিরোজপুরের কলাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ ঈ. সনে জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগ থেকে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করেন এবং ১৯৮১ ঈ. সনে দারুল উলূম দেওবন্দে পুনরায় দাওরায়ে হাদীসে অধ্যয়ন করেন।
কর্ম জীবনের শুরুতেই তিনি জামিয়া কুরআনিয়া আরাবিয়া লালবাগে তাদরীসের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেন। পরবর্তীতে ১৯৮৩ থেকে প্রায় ৩৫ বছর জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ ঢাকা’য় তাদরীসের খেদমত আঞ্জাম দেন। সাথে সাথে তিনি খিলগাঁও শাহী মসজিদেও নিষ্ঠার সাথে প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর ইমাম ও খতীবের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ছাত্রদের খুব প্রিয় উস্তায ছিলেন। সবসময় তাঁর মুখে হাসি লেগেই থাকত। ছাত্রদের খুব আদর করে পড়াতেন এবং অনেক কঠিন বিষয় খুব সহজে বুঝিয়ে দিতেন। হাসিমুখে সাক্ষাৎ, মেহমানদারি ও রোগীর খেদমত ছিল তাঁর বিশেষ গুণ।
তিনি মুহাদ্দিস ছাহেব হুজুর হযরত মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ রাহ. ও শাইখুল হাদীস আজিজুল হক রাহ.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ এবং উপমহাদেশের বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মাওলানা যফর আহমদ উসমানী রাহ.-এর হাতে বাইআত ছিলেন। তিনি হযরত মাওলানা মুফতী আব্দুর রউফ (ঢাকার হুজুর) দা. বা.-এর জামাতা।
আল্লাহ তাআলা হযরতের ভরপুর মাগফিরাত নসীব করুন। জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা দান করুন। পরিবার-পরিজনকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন- আমীন।
[হুযুরের ব্যাপারে এ তথ্যগুলো আমাদের দিয়েছেন আমাদের ছাত্র মাওলানা আব্দুল্লাহ মাসুম]
-বান্দা মুহাম্মাদ আবদুল মালেক
১৯ জুমাদাল উলা ১৪৪০ হি.
২৬-০১-২০১৯ ঈ.