জুমাদাল উলা ১৪৪০   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মিলাদ-কিয়াম প্রমাণে ভারতবর্ষের কয়েকজন আলেমের বক্তব্যের ভুল প্রয়োগ ও তার স্বরূপ

মাওলানা ইমদাদুল হক

একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, মিলাদ-কিয়াম নবীজী, সাহাবা, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনের কোনো আমল নয়; এটি অনেক পরের সৃষ্টি। একথা খোদ যারা মিলাদ-কিয়াম করে তারাও মানে। মিলাদ-কিয়ামের যারা প্রবক্তা তারা এর সমর্থনে কিছু আলেম-উলামার বক্তব্য পেশ করে থাকেন। ভারতবর্ষের বড় বড় কিছু আলেম-উলামার বক্তব্যও তারা তুলে ধরে থাকেন। বাস্তবে এসব দিয়ে দলীল পেশ করা সঠিক নয়। কেননা কোথাও মূল বক্তব্য না পড়ে শুধু কারো তরজমার উপর নির্ভর করা হয়েছে, কোথাও বক্তব্যের অর্থ সঠিক হয়নি, কোথাও আংশিক বক্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।

নিম্নে ভারতবর্ষের কয়েকজনের বক্তব্য নিয়ে পর্যালোচনা পেশ করা হল এবং ভুল চিহ্নিত করে দেওয়া হল।

 

এক : শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলবী রাহ. (মৃত্যু : ১০৫২ হি.)

শায়েখ আব্দুল হক দেহলবী রাহ. ‘আখবারুল আখইয়ার’ নামে ছুফিয়ায়ে কেরামের একটি জীবনীগ্রন্থ লেখেন। এ জীবনীর শেষে একটি দীর্ঘ মুনাজাত লিখে কিতাবটি সমাপ্ত করেন। এ কিতাবটি ফার্সি ভাষায়। এর উর্দূ অনুবাদ হয়েছে। উক্ত অনুবাদের ৬২৪ নং পৃষ্ঠায় আছে যে, তিনি মুনাজাতে বলেন-

اے الله ميرا كوئی عمل ایسا نہیں ہے جسےآپکے دربار میں پیش کرنے کے لائق سمجھوں ،  میرے تمام اعمال میں فساد نیت موجود رہتی ہے  البتہ مجھ حقیر فقیر کا ایک عمل صرف تیری ذات پاک کی عنایت کی وجہ سے بہت شاندار ہے  اور وہ یہ ہے کہ مجلس میلادکے موقع پر میںکھڑے ہو کر سلام پڑھتا ہوں اور نہایت ہی عاجزی و انکساری محبت وخلوص کے  ساتھ تیرے حبیب پاک صلی اللہ علیہ و سلم پر درود و سلام بھیجتا رہا ہوں۔

اے اللہ وہ کونسا مقام ہے جہاں میلاد مبارک سے  زیادہ تیری خیر وبرکت کا نزول ہوتا ہے؟ اسلئے اے ارحم الراحمین مجھے پکا یقین ہے کہ میرا  یہ عمل کبھی بیکار نہ جائیگا بلکہ یقینا تیری بارگاہ میں قبول ہوگا اور جو کوئی درود وسلام پڑھے اور اسکے ذریعہ دعاکرے وہ کبھی مسترد نہیں ہوسكتى  ۔

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই, যা আপনার দরবারে পেশ করার উপযুক্ত মনে করি, আমার সব আমলেই মন্দ নিয়ত থাকে। তবে আমার মত নগণ্যের একটি আমল আপনার তাওফীকে অনেক মহান, তা হল আমি মীলাদের মজলিসে দাঁড়িয়ে সালাম পড়ি এবং খুব কাতর হয়ে অত্যন্ত মহব্বত ও ইখলাসের সাথে আপনার হাবীবের উপর দরূদ-সালাম পাঠ করি। হে আল্লাহ! কোন্ জায়গা আছে, যেখানে মিলাদ মোবারক থেকে বেশি আপনার খায়র ও বরকত নাযিল হয়? এজন্য আমার নিশ্চিত বিশ্বাস আমার এ আমল কখনো নিষ্ফল হবে না, বরং আপনার দরবারে অবশ্যই কবুল হবে, আর যে কেউ দরূদ-সালাম পড়ে এবং তার ওসীলায় দুআ করে তার দুআ কখনো ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।’

এ হল উর্দূ অন্বুাদ ও তার বাংলা অনুবাদ। উর্দূ অনুবাদে স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তিনি মিলাদ মাহফিলে কিয়াম করতেন এবং দাঁড়িয়ে সালাম পাঠ করতেন। আর মিলাদের মজলিশ থেকে উত্তম কোন জায়গা তার নিকট নেই, এ আমলটিই তার  শ্রেষ্ঠ আমল।

এ অনুবাদ হল মাওলানা সুবহান মাহমুদ ও মাওলানা মোহাম্মদ ফাযিল সাহেবের, এ অনুবাদটি ভারত, পাকিস্তান থেকে ছাপা হয়।

কিন্তু আমরা যখন মূল কিতাব দেখি সেখানে মিলাদ শব্দের অস্তিত্বও খুঁজে পাই না আর তা পাওয়ার কথাও না। কেননা তার বক্তব্যটি আরেক ক্ষেত্রের কিন্তু অনুবাদক নিয়ে গেছেন মিলাদের ক্ষেত্রে। শায়েখের বক্তব্য হল, শায়েখ যখন মদীনায় নবীজীর রওজায় যান এবং সেখানে দাঁড়িয়ে অন্যদের ন্যায় দরূদ-সালাম পাঠ করেন, সেটিই তার নিকট শ্রেষ্ঠ আমল। আর নবীজীর রওযা থেকে উত্তম কোন্ জায়গা আছে, যেখানে খায়র-বরকত অধিক নাযিল হয়। এবার আমরা শায়েখের হুবহু বক্তব্য পাঠ করি-  

خداونداہیچ عملے ندارم کہ شائستہ درگاہ تو بود ،ہمہ بعلت نقصان معلول وبمفسدات نیت مشمول جز یک عمل کہ ہر چند نسبت بایں جانب حقیر باشد ، ولیکن بذات پاک تو کہ بس عظیم و خطیر است  اگر چہ اعمال بندگان ہمہ نقصان وتقصیر موصوف است اما زبان ادب نیست تقصیر بآں عمل راضی نیست ، آں عمل کدام است ، قیام بندگان در حضرت حبیب تو باتحفۂ صلاۃ وسلام برآں حضرت صلی اللہ علیہ و آلہ وسلم بنعت تضرع وانکسار و عجز وافتقار، خداوندا! کدام موقف ومحل  باشد کہ افاضۂ خیر ونزول رحمت دروے زیادہ ازینجا باشد، خداوندا! یقین صادق است کہ ایں عمل مقبول درگاہ تو خواہد بود ورد وبطلان را بداں راہ  نہ۔ حاشا حاشا ومن جاء ہذا الباب لا یخشی الرد۔

‘হে আল্লাহ! আমার এমন কোনো আমল নেই, যা আপনার দরবারের উপযুক্ত। সব আমলই অসম্পূর্ণতা ও বদ নিয়তের দোষে দূষিত; শুধু একটি আমল ব্যতীত, যা আমি অধমের দিকে লক্ষ্য করলে একেবারে ক্ষুদ্র কিন্তু আপনার হিসেবে অনেক বড়। যদিও বান্দার সব আমলই দোষ-ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতায় ভরপুর। একদিকে আমার নিকট আদবপূর্ণ ভাষা নেই অপরদিকে এ মহিমান্বিত আমল ত্রুটিযুক্ত হওয়াও বাঞ্ছনীয় নয়। অর্থাৎ আপনার হাবীবের দরবারে দাঁড়িয়ে অত্যন্ত অনুনয়-বিনয় এবং আদব ও মিনতির সাথে সালাত ও সালামের তোহফা পেশ করা।  

কিন্তু হে আল্লাহ! কোন্ জায়গা আছে, যেখানে এ জায়গার তুলনায় অধিক রহমত ও কল্যাণ নাযিল হয়?

হে আল্লাহ আমার সত্যিই বিশ্বাস যে, এ আমল আপনার দরবারে কবুল হবে এবং তা ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’

আমাদের নিকট আখবারুল আখইয়ারের প্রাচীন দুইটি ছাপা আছে, একটি হল মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরীর মাতবাআয়ে আহমদী থেকে ১২১৭ হিজরী সনের ছাপা, তাতে উক্ত বক্তব্যটি ৩৬৫-৩৬৬ পৃষ্ঠায়, আরেকটি হল মাতবাআয়ে মুহাম্মদ দিল্লী থেকে ছাপা, তা এখানে স্পষ্ট এসেছে যে (در حضرت حبیب تو) আপনার হাবীবের দরবারে উপস্থিতিতে অর্থাৎ ‘মদীনায় নবীজীর রওযায়’। আর এমন কোন্ জায়গা আছে, যেখানে এ জায়গা থেকে অধিক খায়র ও রহমত নাযিল হয়? কেননা মদীনাতে যেহেতু স্বয়ং নবীজী বিদ্যমান তাই সেখানে খায়র ও বরকত বেশি নাযিল হয়। আর প্রচলিত মিলাদ মাহফিলে (তাদের কথা অনুযায়ী) যদি খায়র ও বরকত নাযিল হয়ও, তাহলেও তো তার থেকে অধিক রহমত নাযিল হয় এমন জায়গা আছে, আর তা হল যে স্বয়ং নবীজী শুয়ে আছেন।

শায়েখ দেহলবী রাহ.-এর পুরো বক্তব্যে একবারও মিলাদ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি। কিন্তু উর্দূ তরজমায় দুই-দুই বার শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে এবং সেখান থেকে বাংলা অনুবাদেও তা লুফেফ নেওয়া হয়েছে। তো যাই হোক শায়েখ দেহলবী রাহ.-এর বক্তব্য হল নবীজীর রওযায় দাঁড়িয়ে সালাত-সালাম পাঠ করা সম্পর্কে, মিলাদ মাহফিলের কিয়ামে সালাত-সালাম পাঠ সম্পর্কে নয়।

আখবারুল আখইয়ারের আরেকটি তরজমা আছে, যা আনওয়ারে ছুফিয়া নামে লাহোর থেকে ছেপেছে, তাতে উক্ত বক্তব্যের তরজমা সঠিকভাবে এসেছে-

میرا کوئی عمل ایسا نہیں جو تیری درگاہ کے لائق ہو۔ سب علت نقصان وفساد نیت سے پر ہیں ، بجز ایک  عمل کے کہ ہر چند میری نسبت سے حقیر ہے لیکن تری ذات پاک کی قسم کہ بہت عظیم و خطیر ہے ،اگر چہ بندوں کےسب اعمال نقصان وتقصیر کے ساتھ موصوف ہیں مگر خاکم بدھن اس عمل کے ساتھ تقصیر پسندیدہ نہیں ، وہ کیا عمل ہے ، یعنی ترے حبیب (صلی اللہ علیہ وسلم) کے حضور میں بندوں کا قیام آنحضرت صلی اللہ علیہ پر بنعت تضرع وانکسار وعجزوفروتنی تحفۂ صلاۃ وسلام کے ساتھ ، خداوندا! وہ کونسا موقف ومحل ہوگا جہاں افاضۂ خیرونزول رحمت اس سےزیادہ ہوتا ہے؟ خداوندا! مجھ کویقین صادق ہے کہ یہ عمل تیری درگاہ میں مقبول ہوگا اور ہرگز باطل نہ ہوگا۔ حاشاحاشا ومن جاء ھذا الباب لایخشی الرد۔

আনওয়ারে সুফিয়া পৃ : ৫৭৬

 

দুই : ফুয়ূযুল হারামাইনে শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-এর বক্তব্য

১১৪৩-৪৪ হিজরীতে শাহ ওয়ালীউল্লাহ রাহ. হজ্বে গমন করেন। এ হজ্বে তিনি অনেক ইলহাম, দিলের নূরানী হালাত ইত্যাদি অর্জন করেন। এসব কিছু নিয়ে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেন। নাম দেন ফুয়ূযুল হারামাইন।

এ কিতাবের ৮০নং পৃষ্ঠার বরাতে শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-এর একটি বক্তব্য পেশ করা হয়, তাতে নাকি তিনি লিখেছেন, তিনি মক্কা শরীফে এক মিলাদ মাহফিলে উপস্থিত হয়েছেন এবং তাতে অনেক নূর ও বরকত প্রত্যক্ষ করেছেন।

আসলে এক হল ‘মীলাদুননবী’ (যা জনসাধারণের মাঝে প্রসিদ্ধ) আরেকটি হল ‘মাওলিদুন্নাবী’, যার অর্থ নবীজীর জন্মের স্থান অর্থাৎ নবীজী যে ঘরে জন্মগ্রহণ করেছেন। মক্কাতে এখনো সে স্থান সংরক্ষিত আছে, যেখানে নবীজী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাওলিদুন্নাবী নামে তা প্রসিদ্ধ। হাজ্বী সাহেবান অন্যান্য স্মৃতিময় স্থানসমূহের ন্যায় এ ঘরও দেখতে যান। দেখতে গিয়ে স্বীয় আবেগে সেখানে কেউ কেউ দরূদ পড়েন, কেউ তিলাওয়াত, যিকির-আযকার করেন। শাহ ওলিউল্লাহ রাহ.-ও তার সেই সফরে নবীজীর জন্মস্থানে যান, সেখানে মানুষ দরূদ পাঠ করছিল এবং তাঁর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়েও আলোচনা করছিল। শাহ ওলিউল্লাহ রাহ. এসব অবস্থা প্রত্যক্ষ করলেন এবং খুব আলোকময়তা অনুভব করলেন।

وكنت قبل ذلك بمكة المعظمة في مولد النبي صلى الله عليه وسلم في يوم ولادته والناس يصلون على النبي صلى الله عليه وسلم ويذكرون إرهاصاته التي ظهرت في ولادته ومشاهدته قبل بعثته، فرأيت أنوارا سطعت دفعة واحدة، لا أقول إني أدركتها ببصر الجسد، ولا أقول أدركتها ببصر الروح فقط، والله أعلم كيف كان الأمر بين هذا وذلك، فتأملت تلك الأنوار فوجدتها من قبل الملائكة الموكلين بأمثال هذه المشاهد وبأمثال هذه المجالس، ورأيت يخالط أنوار الملائكة أنوار الرحمة.

অর্থ : আমি একবার নবীজীর জন্মের তারিখে মক্কা মুয়াযযামায় ‘মাওলিদুন্নাবী’-নবীজীর জন্মস্থানে ছিলাম। দেখলাম উপস্থিত মানুষেরা দরূদ পাঠ করছে। নবীজীর জন্মের সময় ও তার পূর্বে যেসব অলৌকিক ঘটনাবলী ঘটেছিল সেসবের আলোচনা করছে, আমি সেখানে অনেক নূর প্রত্যক্ষ করলাম, যেগুলো একইসাথে ঝলমল করে উঠেছিল। আমি বলি না যে, তা আমি চর্মচক্ষে দেখেছি এবং এও বলি না যে, আমি তা আত্মার দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করেছি, আল্লাহই ভালো জানেন, যেমনই হোক আমি নূরগুলো নিয়ে ভাবতে লাগলাম তখন দেখলাম এ নূরগুলো সেসব ফেরেশতাদের পক্ষ হতে, যেসব ফেরেশতাদের এসব স্থান ও এসব মজলিশের জন্য নিযুক্ত করা হয়। আর দেখেছি যে, ফেরেশতাদের নূরের সাথে রহমতের নূরও মিশ্রিত হচ্ছে। -ফুয়ূযুল হারামাইন, পৃ. ৮০ (মাতবায়ে সাঈদী, করাচী থেকে প্রকাশিত)  

তো শাহ ছাহেব গিয়েছেন ‘মাওলিদুন্নাবী’ তথা নবীজীর জন্মস্থানে, প্রচলিত ‘মীলাদুন্নবীতে’ নয়।

ফকীহুননাফ্স মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী রাহ.-এর নিকট ফুয়ূযুল হারামাইন-এর বক্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে তিনি বলেন-

فیوض الحرمین میں حاضری مولد النبی میں کہ مکان ولادت آپ علیہ السلام کا ہے  لکھا ہے وہاں ہر روز زيارت کے واسطے لوگ جاتے ہیں  يوم ولادت ميں بھی لوگ جمع تھے اور صلاۃ و ذکر کرتے تھے،  نہ وہاں تداعی سے اہتمام طلب کے  تھے نہ کوئی مجلس تھی بلکہ وہاں لوگ خود بخود جمع ہوکر کوئی درود پڑھتا تھا  کوئی ذکر معجزات کرتا تھا  نہ کوئی شیرہنی نہ چراغ نہ کچھ اورنفس ذکر کو کوئی منع نہیں کرتا واللہ تعالی اعلم ۔

ফুয়ূযুল হরামাইনে নবীজীর জন্মস্থানে উপস্থিতির কথা উল্লেখিত হয়েছে, (মীলাদ মাহফিল নয়)। সেখানে দেখার জন্য প্রতিদিন মানুষ যায়, নবীজীর  জন্মের তারিখেও লোকেরা একত্রিত হয়েছে এবং যিকির ও দরূদ পাঠ করেছে। এ একত্রিত হওয়ার পেছনে কোনো আয়োজন ছিল না, কেউ কাউকে ডাকেওনি; বরং প্রত্যেকে  ব্যক্তিগতভাবে এসেছে এভাবে একত্রিত হয়ে গেছে। এরপর কেউ দরূদ পাঠ করেছে কেউবা জন্মকালীন মুজিযা নিয়ে আলোচনা করেছে, সেখানে না কোন শিরনি ছিল, না আলোকসজ্জা না অন্য কোনো কিছু। তো শুধু জন্ম বৃত্তান্ত আলোচনা কে নিষেধ করে?

ফাতাওয়া রশিদিয়া, পৃ. ২৩৬

তো একটি হল ‘মীলাদুন্নবী’ আরেকটি হল ‘মাওলিদুন্নাবী’। শাহ ছাহেব রাহ.-এর বক্তব্যে এসেছে দ্বিতীয়টি আর এটাকে মনে করা হচ্ছে ‘মীলাদুন্নবী’।

 

তিন : মুজাদ্দিদে আলফে সানী (মৃত্যু: ১০৩৪ হি.)

এ প্রসঙ্গে মুজাদ্দিদে আলফে সানীর মাকতুবাত থেকেও একটি বক্তব্য পেশ করা হয়। তাঁর নিকট তাঁর এক মুরিদ পত্র প্রেরণ করে। তাতে মিলাদ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করা হয়, জবাবে মুজাদ্দিদ রাহ. লিখেন-

نفس قرآں خواندن بصوت حسن و درقصائد نعت ومنقبت خواندن چہ مضائقہ است ممنوع تحریف وتغییر حروف قرآن است والتزام رعایت مقامات نغمہ وتردید صوت بآں طریق الحان بالتصفیق مناسب آں کہ درشعر نیزغیر مباح است اگر برنہجے خوانند کہ تحریفے در کلمات قرآنی واقع نشود و در قصائد خواندن شرائط مذکورہ متحقق نگردد و آں راہم بغرض صحیح تجویز نمایند چہ مانع است؟

সুমিষ্ট স্বরে কুরআন পড়া এবং নবীজীর প্রশংসায় কবিতা পাঠে দোষের কী আছে? নিষিদ্ধ তো হল কুরআনের বিকৃতি, অক্ষর পরিবর্তন ইত্যাদি। আর সুরের পথ ধরে গানের ন্যায় ছন্দময় সুর তোলা ও সে অনুযায়ী তালি বাজানো, যা কবিতার মধ্যেও নাজায়েয। আর যদি কুরআনের অক্ষর ও শব্দ বিকৃত না হয় এবংনবীজীর প্রসংসায় কবিতা পাঠে উল্লেখিত বিষয় না থাকে। সাথে সাথে নিয়তও সহীহ হয় তাহলে তাতে নিষিদ্ধতার কী আছে?। -মাকতুবাত, দফতর ৩, মাকতুব নং ৭২

মুজাদ্দিদ রাহ.-এর উদ্দেশ্য হল, মিলাদে যদি সুন্দরভাবে কুরআন পাঠ হয় আর তাতে অন্যান্য শরয়ী সমস্যাবলী না থাকে তাহলে তা পাঠে অসুবিধা নেই।

যারা মুজাদ্দিদ রাহ.-এর বক্তব্যটি উদ্ধৃত করে থাকে তারা শুধু এতটুকুই উদ্ধৃত করে থাকে। অর্থাৎ তাঁর পূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরে না। মুজাদ্দিদ রাহ. এটুকু বলার পর আরো যা বলেন, সেটিই হল বিবেচ্য বিষয়। তিনি এরপর বলেন,

مخدوما بخاطر فقیر میرسد ایں باب مطلق نکنند، بو الہوسان ممنوع نہ میکردند اگر اندک تجویز کردن بتجربہ بسیار خواہد شد قلیلہ یفضي الی کثیرہ قول مشھور ست۔

অধমের মন বলে, এ পথ যেন না খোলা হয়, তা না হলে পেট-পূজারীদের পথ বন্ধ হবে না, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, যদি সামান্যও ছাড় দেওয়া হয় তাহলে অনেক বেশিতে পৌঁছে যাবে, ‘এর সামান্যও অনেক বেশির দিকে নিয়ে যাবে’। -প্রাগুক্ত

অর্থাৎ সুর তরঙ্গ, কুরআন বিকৃতি, ইত্যাদি থেকে মুক্ত হলেও এ ধরনের মিলাদের পথ খোলা যাবে না। কেননা এটুকু যদি খোলা হয় তাহলে  সেটি অনেক ফাসাদের দিকে নিয়ে যাবে।

তাহলে সারকথা দাঁড়াল, যেসব মিলাদকে শরীয়াবিরোধী বিষয় থেকে মুক্ত বলা হয় এবং বিদআতে হাসানা আখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা হয় সেগুলোর ব্যাপারেও তিনি নিজ মুরীদদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন।

তারিখ : ২৩-১২-১৪৩৯ হি.

 

 

advertisement