চেতনা : স্মৃতির কণিকা
মরহূম সৈয়দ আলী আহসানের একটি বিনোদনমূলক পংক্তি মনে পড়ছে। কোথাও বেড়াতে গিয়ে এক বিশেষ উপলক্ষে তিনি লিখেছিলেন- ‘বালুকা বেলায় স্মৃতির কণিকা জ্বলে, নামটি কাহার জাগে রে হৃদয়তলে।’ তিনি যে অর্থেই পংক্তিটি বলে থাকুন, আমার তা মনে পড়েছে এক নতুন অর্থে, সংবাদপত্রের একটি শিরোনাম পড়ে। শিরোনামটি হচ্ছে- ‘চলচ্চিত্রের মানুষ আল্লাহকে বেশি ডাকে।’ দুর্লভ একটি শিরোনাম। বেশি হোক বা কম, চলচ্চিত্র জগতেরও কিছু মানুষ যে কখনো কখনো আল্লাহকে ডাকেন- এ বিশ্বাস আমাদেরও ছিল, আছে।
‘আল্লাহ’ নামটিই এমন যে, না ডেকে পারা যায় না। প্রতিটি মানুষের হৃদয়ের গহীনে অঙ্কিত এই নাম। চারপাশের নানা আবিলতায় তার উপর ধুলোর আস্তরণ পড়ে মাত্র; কিন্তু যখনই এক পশলা বারিবর্ষণ হয় সেই ধুলির আস্তরণ সরে গিয়ে মহামহিমের জ্যোতির্ময় নামটি ঝকঝক করে ওঠে। এটাই সত্য। আর এই সত্যই আমাদের আশার জায়গা। সবার আশার জায়গা।
সংবাদটি পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছে ১৩ই ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার। এর আগের দিন বুধবার বিকেলে এফডিসিতে জামে মসজিদের পুনর্নির্মাণের কাজের উদ্বোধন হয়। সংবাদের বৃত্তান্ত অনুসারে মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সমাজসেবক আব্দুল কাদির মোল্লার অর্থায়নে এই মসজিদটির আধুনিকায়ন হচ্ছে। নির্মাণকাজের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চিত্রনায়ক ফারুক বলেছেন, ‘বাইরের মানুষ মনে করেন, চলচ্চিত্রে যারা কাজ করেন তারা ধর্মভীরু নয়, ধার্মিক নয়। কিন্তু এটা পুরোপুরি ভুল ধারণা; বরং চলচ্চিত্রের মানুষ আল্লাহকে বেশি ডাকে, ধর্ম পালনে সচেতন থাকে।’
এই বক্তব্যের মূল কথাটি ইতিবাচক। সেই ইতিবাচকতাটুকু গ্রহণ করেই কিছু কথা বলতে চাই।
মানুষ যে অবস্থাতেই থাকুক তাকে বুঝতে হবে, সে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক স্বয়ংসম্পূর্ণ সৃষ্টি। প্রত্যেকেরই যেমন নিজের জীবন-মৃত্যু আছে তেমনি আছে মৃত্যুর পরের জীবন ও জবাবদিহিতাও। মানুষ কখনো অন্য সব পশু-পাখীর মতো নয় যে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ শীতল হল আর জীবনের গল্প ফুরোল। মানুষের অনন্য যোগ্যতা- মেধা, বুদ্ধি, সৃজনশীলতা দায়হীন ও তাৎপর্যহীন নয়। এই প্রাপ্তির দায় আছে, দায়িত্বও আছে। সেই দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহকে স্মরণ করা। যে জ্যোতির্ময় নাম হৃদয়ের গহীনে মিটিমিটি জ্বলছে সেই নামের জ্যোতিতে গোটা জীবনটিকে উদ্ভাসিত করে তোলা। চলচ্চিত্রের কোনো কোনো মানুষের আল্লাহকে ডাকা যেমন সত্য তেমনি চলচ্চিত্রের জগৎ যে আল্লাহ-বিস্মৃতির এক পঙ্কিল জগৎ তা-ও মিথ্যে নয়। আমরা ইতিবাচকতায় বিশ্বাসী বলেই প্রত্যাশা করি, ঐ বন্ধুদের জীবনেও অবশেষে ইতিবাচকতাই বিজয়ী হবে, যেমন এ অঙ্গনের আরো অনেকের জীবনেই তা হয়েছে।
মেধা ও সৃজনশীলতার এমন অনেক অঙ্গনও তো আছে, যা আল্লাহর নামের জ্যোতিতে জ্যোতির্ময়। সেই জ্যোতির্ময় ভুবনে কেন নয়? কেন আবিলতার পাঁকে আটকে থাকা?
আমাদের দায়ীদের জন্যেও এখানে আছে আশাবাদের উপকরণ। কোনো মানুষকেই বাদ দেওয়া নয়, কারো নাম কেটে দেওয়া নয়, সবার জন্যেই কল্যাণকামিতা ও আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা কাম্য। হেদায়েত তো আল্লাহরই হাতে। মানুষের অন্তরও তাঁর ‘দুআঙ্গুলের মাঝে’; যখন ইচ্ছে হেদায়েতের দিকে ফিরিয়ে দিতে পারেন। আমাদের কর্তব্য শুধু সঠিক পন্থায় চেষ্টা করে যাওয়া। এই মানুষগুলো যেন নির্মল ও পবিত্র জীবনের অধিকারী হতে পারেন, আল্লাহ নামের জ্যোতির্ময়তায় যেন তাদেরও জীবন ও কর্ম উদ্ভাসিত হতে পারে সেই চেষ্টা আমাদেরও করা প্রয়োজন। তবে হাঁ, সেটা হতে হবে সঠিক পন্থায়, নিজেকে রক্ষা করে। এক্ষেত্রে ভালো ও অনুসরণীয় কিছু নমুনা যেমন আছে তেমনি আছে দুঃখজনক কিছু দৃষ্টান্তও।
আল্লাহ তাআলা সবাইকে হেদায়েত দান করুন। আলমে আরওয়াহে তিনি যে আমাদের সকলের কাছে তাঁর রব হওয়ার স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন সেই স্মৃতি কি কখনো ভোলা যায়?
স্মৃতির সেই কণিকা জ্বলবেই; তাঁর নাম হৃদয়ের গহীনে জাগবেই। আমাদের হৃদয়ে তাঁর পবিত্র নাম চির ভাস্বর হোক!! আমীন।