ওয়াজ মাহফিলের কর্তৃপক্ষের সমীপে সবিনয় কিছু নিবেদন
একটা সময় গ্রামবাংলার শীতের পরিবেশ মৌ মৌ করত খেজুরের রস আর হরেক রকমের পিঠার ঘ্রাণে। এখন দিন পাল্টেছে। বদলেছে সভ্যতা-সংস্কৃতিও। এখন শীতের পিঠার ঘ্রাণে চারপাশ আমোদিত হয়তো অতটা হয় না, কিন্তু শীত আসার সঙ্গে সঙ্গেই এখন আমাদের সমাজে এক উৎসবের ধারা শুরু হয়;বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের উৎসব। এই উৎসব আগেও ছিল, তবে এখনকার মতো এত ব্যাপক পরিসরে ছিল না। বড় বড় মাদরাসাকেন্দ্রিক কিছু মাহফিল হত। এখন মাদরাসার সংখ্যা যেমন বেড়েছে, বেড়েছে এর চেয়ে অনেক বেশি মাহফিলের পরিমাণ। মাহফিলের আয়োজন করা হয় মাদরাসার পক্ষ থেকে, মসজিদ কমিটি এবং মুসল্লিদের পক্ষ থেকে, গ্রামে-গঞ্জে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। কোথাও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে, এমনকি ব্যক্তি উদ্যোগেও আয়োজিত হয় ওয়াজ মাহফিল। ওয়াজ মাহফিলের এ বিস্তৃতি এবং তাতে ব্যাপকহারে শ্রোতাদের অংশগ্রহণ আমাদের ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক।
স্বভাবগতভাবেই মানুষ উৎসবপ্রবণ। যে নামাযগুলো উৎসবের মতো পালন করা হয়, যেমন জুমার নামায কিংবা ঈদের নামায, তাতে অংশগ্রহণও বেশি হয়। সামাজিকভাবে যদি আমাদের পাড়া-মহল্লায় এভাবে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা না হতো, তাহলে সেখানে হয়তো আয়োজিত হতো যাত্রা বা নাটকের আসর। আর আমাদের সমাজের অনেক মানুষই তো এমন, যারা ওয়াজের মাহফিল আর যাত্রার আসরে সমানতালে অংশ নেয়। অবশ্য শীতের রোগব্যাধির মতো বিভিন্ন মাজার কিংবা ‘দরবার শরীফ’ কেন্দ্রিক ওরসেরও আগমন ঘটে আমাদের সমাজে। এগুলো আমাদের সরলমনা মুসলমানদের ঈমান-আকিদাকে চরমভাবে আক্রান্ত করে। ঈমান বিধ্বংসী এসব ওরসের আক্রমণ ঠেকাতেও হক্কানী আলেমদের নিয়ে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলের বিকল্প নেই।
শুধু ভ- কিংবা বিদআতীদের আক্রমণ প্রতিহত করাই নয়, এসব ওয়াজ মাহফিল সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনী খোরাকও বটে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক নানান বিষয়ে ইসলামের নির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় এসব মজলিসে। এসবের মধ্য দিয়ে অনেক আলেমের সঙ্গে পরিচয়ও ঘটে আমাদের। অনেক আহলে দিল বুজুর্গকে দেখার সৌভাগ্য নসিব হয়। তাদের মুখনিঃসৃত কিছু কথা শোনার সুযোগ হয়। আলেম-উলামা-বুজুর্গদের নাম শুনে এসব মজলিসে সাধারণ মানুষের আসা, তাদের কথা শোনা-এটা তো তাদের প্রতি ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। এ ভালোবাসা সৃষ্টিও হয় এসব মজলিসে গিয়ে। আলেমদের প্রতি ভালোবাসা অর্জন-একজন মুসলমানের জন্যে এ প্রাপ্তিটুকুও কম নয়। এর পাশাপাশি কতজনের জীবনে কত পরিবর্তন সাধিত হয় কে জানে! দাড়িবিহীন কত মানুষ ওয়াজ শুনে দাড়ি রেখে দিয়েছে! কতজন ওয়াজ শোনার পর জীবনে আর কখনো নামায না ছাড়ার পাকাপোক্ত প্রতিজ্ঞা করে নিয়েছে! কতজনের জীবনে আরও কত আমূল পরিবর্তন ঘটেছে! এগুলো আমাদের চারপাশেরই বাস্তবতা।
কিন্তু কিছু অসতর্কতার কারণে এ মহৎ আয়োজনগুলোও কখনো কখনো নিষ্ফল হয়ে পড়ে। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে নামাযের প্রসঙ্গ। নামাযের গুরুত্ব, যথাসময়ে জামাতের সঙ্গে নামায আদায়ের ফযীলত ইত্যাদি এখানে নতুন করে বলার কিছুই নেই। যারা ওয়ায মাহফিলে শরিক হয় তারা নামাযের প্রস্তুতি নিয়েই যায়। এমনকি যদি অন্য সময় কেউ নামায নাও পড়ে, তবুও ওয়াজ শুনতে গেলে নামাযের প্রস্তুতি নিয়ে যায়। মাথায় টুপি দিয়ে যায়। এখন কেউ যদি মাহফিল কর্তৃপক্ষের কোনো অব্যবস্থাপনার কারণে নামায না পড়ে কিংবা জামাতে শরিক হতে না পারে, তাহলে এটাকে তো অসতর্কতা বলতেই হবে। যেমন ধরুন, এখন মসজিদগুলোতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সাধারণত ইশার নামাযের জামাত শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ যদি অনুষ্ঠান সাজাতে গিয়ে নামায এক ঘণ্টা পিছিয়ে দেয়, আর সন্ধ্যার পর থেকে দুই-আড়াই ঘণ্টা বয়ান শুনে কেউ চলে যায়, তাহলে তো ওই রাতের ইশার নামায আর তার পড়া হবে না। কিংবা সে নামায তাকে একাকী আদায় করতে হবে। এর বিপরীতে যদি স্বাভাবিক সময়েই মাহফিলের মাঠেও নামাযের ব্যবস্থা করা হতো, তাহলে যারা পাবন্দির সঙ্গে জামাতে নামায আদায় করেন, তারা যেমন সহজেই জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করতে পারতেন, যারা নিয়মিত নামায পড়েন না, তারাও মাহফিলে শরিক হওয়ার সুবাদে জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করতে পারতেন। কে জানে, হয়তো এর মধ্য দিয়ে এমন কারও জীবনে শুরু হয়ে যেতে পারে নামাযের ধারাবাহিকতা!
দ্বিতীয়ত, মাহফিলের যেখানে আয়োজন, এর আশেপাশের মসজিদগুলোর নির্ধারিত নামাযের সময় যদি বয়ান চলতে থাকে, তাহলে সেসব মসজিদে নামাযরত মুসল্লিদের নামাযেও ব্যাঘাত ঘটবে-এটাই স্বাভাবিক। এ সংকটের মাত্রা শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে বেশি। একে তো রাতের গ্রামের পরিবেশে আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে অনেক দূর, আবার গ্রামের ওয়াজগুলোতে অনেক দূর পর্যন্ত ওয়াজ শোনানোর ব্যবস্থাও করা হয়। এমতাবস্থায় বক্তা যদি মিষ্টি সুরের অধিকারী হন, তাহলে তো মসজিদে নামাযরত মুসল্লিদের মনকেও টেনে নিয়ে যাবে ওয়াজের মাঠে। আর তা না হলেও, ওয়াজের শব্দে নামাযের একাগ্রতা তো বিনষ্ট হবেই। মাহফিল চলাকালীন নামাযগুলো যদি আশেপাশের মসজিদগুলোর সময়ের সঙ্গে মিলিয়ে স্বাভাবিক সময়ে আদায় করা হয় তাহলে সহজেই এই দুই সংকট থেকে বেরিয়ে আসা যেতে পারে।
আরেকটি অসতর্কতা-গভীর রাত পর্যন্ত ওয়াজ চালিয়ে নেয়া। সাধারণত এমন কাউকেই গভীর রাতে ওয়াজের মঞ্চে নিয়ে আসা হয়, যার কথা শ্রোতাদের গভীরভাবে আকৃষ্ট করতে পারে। অনেকক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কাছে জিম্মিও হয়ে পড়েন বক্তাগণ। আর এ রাতদুপুরে যারা ওয়াজ করেন তাদেরকে হয়তো প্রায়ই রাত জাগতে হয়। একারণে হয়তো তারা দিনের বেলায় কোনো একটা সময় বিশ্রামের জন্যে ঠিক করে নেন। কিন্তু যারা বছরে এক-দুইবার গভীর রাত জেগে ওয়াজ শোনেন, তারা তো আর রাত জাগতে অভ্যস্ত নন। এতে যে তাদের পরের দিনের নিয়মিত কাজগুলো বিঘ্নিত হবে কেবল তা-ই নয়, বরং একটু পরের ফজরের নামাযের জামাত ছুটে যাওয়ার, এমনকি নামাযটি কাজা হয়ে যাওয়ারও সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। যারা নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামায আদায় করেন, এ আশঙ্কা থেকে মুক্ত নন তারাও। শীতের রাতে ওয়াজের আকর্ষণে গভীর রাত পর্যন্ত জেগে থাকার পর যদি পরের দিনের ফজরের নামায ছুটে যায়, তাহলে এ ওয়াজের সার্থকতা কোথায়! তাই যতটুকু রাত জাগলে পরের দিনের ফজরের নামায আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না, ওয়াজ মাহফিল ততটুকু পর্যন্তই দীর্ঘায়িত করা উচিত, এর বেশি নয়। শ্রোতাদের কেউ কেউ হয়তো এমনিতেই ফজরের নামায পড়ত না, কিন্তু ওয়াজ শেষে গভীর রাতে কিংবা শেষ রাতে বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে যদি নামাযের সময় সজাগ হতে না পারে, তাহলে এর দায় তো মাহফিল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারেন না।
মাহফিলের সফলতার প্রশ্নটিও এখানে অনুপেক্ষ। অনেক টাকা ব্যয় করে যখন একটি মাহফিলের আয়োজন করা হয় তখন এর সফলতার প্রশ্ন তো থাকবেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, মাহফিলের সফলতা কীসে? সাধারণভাবে আমরা মনে করি-কোথাও যখন মাহফিলের আয়োজন করা হয়, পোস্টার ও মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হয় কয়েকদিন ধরে, বক্তা হিসেবে সাধ্যমতো বড় আলেমকে দাওয়াত করা হয়, তখন সেখানে এলাকার জনসাধারণ যদি ব্যাপক অংশগ্রহণ করে তাহলেই আয়োজনটি সফল ও সার্থক হল। যাদেরকে শোনানোর জন্যে দূর-দূরান্ত থেকে দাওয়াত করে বক্তা হিসেবে আলেমদের নিয়ে আসা হয়, তাদের আগমন যত বেশি পরিমাণে হবে, খোলা চোখে দেখলে মাহফিল ততটাই সফল। শ্রোতাদের উপস্থিতি যদি কম হয় তাহলে সে মাহফিলকে সফল মাহফিল বলা হয় না। কিন্তু আসলেই কি দ্বীনী মাহফিলের সফলতা অধিক পরিমাণ শ্রোতার অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করে? দ্বীন সম্পর্কে সচেতন কেউ আশা করি এতে দ্বিমত করবেন না-মাঠভর্তি শ্রোতা আর রাতভর ওয়াজ হওয়ার পরও যদি শ্রোতাদের জীবনে তা গভীর রেখাপাত করতে না পারে, আর অল্প কজন শ্রোতার উপস্থিতিতে অল্পসময়ের ওয়াজে যদি জীবনে পরিবর্তন আসে, শ্রোতাদের শুধু মন প্রভাবিত হয় এমন নয়, বরং তাদের জীবনও প্রভাবিত হয়, তাহলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনে এ ছোট আয়োজনটিই সার্থক, সফল, বড়টি নয়। তাই কেবল জনসাধারণের মন আকৃষ্ট করা নয় বরং সামনে থাকা উচিত তাদের জীবন পরিবর্তনের লক্ষ্য। মাহফিলের সফলতা নির্ণয় করা উচিত এ মানদ-কে সামনে রেখে, উপস্থিত শ্রোতাদের সংখ্যা দিয়ে নয়। উপস্থিতির সংখ্যাকে সফলতার মানদ- বিবেচনা করার ফলে কখনো এমন বক্তাকেও অতিথির চেয়ারে দেখা যায়, যার সাথে আয়োজকদের চিন্তাচেতনায় এমনকি আকিদা-বিশ্বাসেও অমিল থাকে। ওয়াজ মাহফিলের সফলতা যদি আমরা এভাবে শ্রোতাদের জীবনের পরিবর্তন দিয়ে বিবেচনা করতে পারি, তাহলে আমাদের এ আয়োজনগুলো আরও অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে নিঃসন্দেহে।
হযরত শাহ ইসমাঈল শহীদ রাহ. আমাদের এ উপমহাদেশীয় অঞ্চলে একজন বিখ্যাত আলেম ও মহান ব্যক্তিত্ব। তাঁর ঘটনা। তিনি একদিন দিল্লির জামে মসজিদে ওয়াজ করেছিলেন। দীর্ঘ ওয়াজ। ওয়াজ শেষে যখন তিনি সিঁড়ি ভেঙ্গে নামতে যাচ্ছেন, এমন সময় দেখা গেল, গ্রাম্য এক লোক দৌড়ে এসে হাঁপাতে লাগল। হযরত শাহ সাহেবকেই লোকটি জিজ্ঞেস করল, মৌলভী ইসমাঈলের ওয়াজ কি শেষ হয়ে গেছে? তিনি উত্তরে জানালেন, হাঁ ভাই, শেষ। লোকটি তখন আক্ষেপ করে বলল, আমি তো তার ওয়াজ শোনার জন্যেই দৌড়িয়ে এসেছি। হযরত ইসমাঈল শহীদ রাহ. তখন লোকটির কাছে নিজের পরিচয় দিয়ে বললেন, আপনি আমার সামনে এই সিঁড়িতে বসে পড়ুন, আমি আপনাকে পূর্ণ ওয়াজ শুনিয়ে দিচ্ছি। এরপর তিনি সেই দীর্ঘ ওয়াজ আবার এই একজনকে শুনিয়ে দিলেন। উপস্থিত লোকেরা অবাক হয়ে জানতে চাইল, শুধু একজনের জন্যে এত দীর্ঘ ওয়াজ করলেন? তিনি উত্তরে বললেন, প্রথমবার যে ওয়াজ করেছিলাম তা তো ‘একজনের’ জন্যেই করেছিলাম, এখন যা করেছি তাও ‘একজনের’ জন্যেই করেছি!
ওই ‘একজনের’ সন্তুষ্টিই ছিল তাঁদের কাছে ওয়াজের সফলতার মানদ-। তাই শ্রোতার সংখ্যা নিয়ে তাদের কোনো পরোয়া ছিল না। দীর্ঘ বয়ান শেষে নামতে গিয়ে সিঁড়িতেই একজন মানুষকে সামনে রেখে সেই ওয়াজের পুনরাবৃত্তি কি আমরা কল্পনা করতে পারি! আমাদের ওয়াজ মাহফিলগুলোকে সফল করতে চাইলে এই মানসিকতা আমাদের ধারণ করতেই হবে।
মাহফিল চলাকালে এর আওয়াজ কতদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া হবে-তাও একটি বিবেচনার বিষয়। আয়োজনের কথা যখন নানানভাবে জানিয়ে দেয়া হল, মাইকিং পোস্টার তোরণ ইত্যাদি সম্ভাব্য সকল পদ্ধতিতে, তখন যার মনে ওই ওয়াজ শোনার আগ্রহ সৃষ্টি হবে সে তো মাহফিলেই শরিক হবে। আগত শ্রোতাদের উপস্থিতি যতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, মাইকের সংযোগও ততদূর পর্যন্ত দেয়া যেতে পারে। কিন্তু যারা মাহফিলে আসেনি, হয়তো আসার ইচ্ছাই করেনি, কিংবা আসতে চেয়েও পারেনি- অসুস্থতা জাতীয় কোনো ওজরের কারণে, এমনকি কারও ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে-পরদিন সকালে তাকে বসতে হবে পরীক্ষার টেবিলে, মাহফিল কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে উপস্থিত-অনুপস্থিত সকলের জন্যেই ওয়াজ শোনার ব্যবস্থা করে এবং দূর-দূরান্ত পর্যন্ত মাইক ছড়িয়ে দেয়, তাহলে কতজন যে কতভাবে কষ্টের শিকার হয়-তাও ভেবে দেখতে হবে। এখনকার উঁচু আওয়াজের যুগে যদি কেবল মাহফিলের মাঠেই মাইক সীমিত রাখা হয়, তবুও হয়তো তা ছড়িয়ে যাবে আশপাশের কিছু এলাকাজুড়ে। হয়তো তাতেও কারও কষ্ট হবে। সেটা না হয় উপস্থিত শ্রোতাদের প্রয়োজন-বিবেচনায় মেনে নেয়া গেল। কিন্তু অনুপস্থিত যারা, তাদের জন্যে কেন অন্যকে কষ্টে ফেলার আয়োজন? ইসলাম যেখানে পশু-পাখির অধিকারের বিষয়েও আমাদের সতর্ক করেছে, সেখানে কোনো অসুস্থ মুসলমান কিংবা অমুসলমানকে কষ্ট দেয়া, কারও ব্যক্তিগত কাজে ব্যাঘাত ঘটানো কীভাবে বৈধ হতে পারে?
দিন যাচ্ছে, বাড়ছে মাহফিল। বাড়ছে মাহফিলের জন্যে তহবিল সংগ্রহের কৌশলও। ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে কাউকে চাপে ফেলে যেমন টাকা আদায় করা হয়, তেমনি সুযোগমতো সম্পূর্ণ অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও নেয়া হয় চাদা। সিএনজি অটোরিকশার মতো যানবাহন যেসব রাস্তায় চলে, এর আশপাশে যদি কোনো মাহফিল হয়, কখনো দেখা যায়, রাস্তার পাশে মাইক বাজছে, টাকা নেয়ার জন্যে কয়েকজন বসেও আছে। কিন্তু সমস্যার কথা হল, ওই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে এমন প্রতিটি যানবাহনকে তারা আটকিয়ে দিচ্ছে। এরপর চলে মাহফিলের জন্যে টাকা আদায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, যাত্রীদের কেউ টাকা না দেয়া পর্যন্ত ওই গাড়িটিকেও ছাড়া হচ্ছে না। কথা হল, কেউ যদি স্বেচ্ছায় টাকা দিয়ে অংশগ্রহণ না করে, তার কাছ থেকে যদি চাপাচাপি করে টাকা আদায় করা হয়, এ টাকা ব্যবহার করা কি বৈধ হবে?
যাইহোক, সমাজের মানুষের দ্বীনী চেতনা জাগ্রত করার ক্ষেত্রে ওয়াজ মাহফিলের ভূমিকা অনেক। সুতরাং এর আয়োজকগণ আযর ও সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ। তবে সাথে সাথে ঐ বিষয়গুলোও লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন, যা মানুষকে কষ্টে ফেলে; তাহলেই আমাদের ওয়াজ মাহফিলগুলো হবে আরো সুন্দর, আরো সার্থক।