জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩১   ||   জুন ২০১০

মেহ্‌রে নবুওয়ত

কাযী মুহাম্মাদ সুলায়মান সালমান মনসুরপুরী রাহ.

(পূর্ব প্রকাশিতের পর) ইলমের মাহাত্ম একটি দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন, ‘এবং যে ইলমের অন্বেষণে পথ চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’ [আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে ইমাম মুসলিম] ২. ‘যে ব্যক্তি ইলমের অন্বেষণে বের হল ফিরে আসা পর্যন্ত সে আল্লাহর রাস্তার মুসাফির।’ [আনাস রা.-এর সূত্রে ইমাম তিরমিযী] ৩. ‘যাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হল এবং সে জানা থাকা সত্ত্বেও গোপন করল তাকে কিয়ামতের দিন আগুনের লাগাম পরানো হবে।’ [আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে ইমাম তিরমিযী] ৪. ‘ইলমের প্রাচুর্য ইবাদতের প্রাচুর্য থেকে উত্তম।’ [হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান রা.-এর সূত্রে ইমাম তবারানী] দাস-দাসী ও খাদিম-নওকরের সাথে আচরণ ১. একটি দীর্ঘ হাদীসে ইরশাদ করেন, ‘‘তোমাদের ভাইগণই তোমাদের খাদেম, আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের করতলগত করেছেন। অতএব যার ভাই তার কতৃত্বাধীন হয় সে যেন তাকে তা-ই আহার করায় যা সে নিজে আহার করে, তা-ই পরিধান করায়, যা সে নিজে পরিধান করে আর তার সাধ্যাতীত কাজের বোঝা তার উপর চাপিয়ে না দেয়। যদি চাপাতে হয় তাহলে যেন সাহায্য করে।’ [আবু যর রা.-এর সূত্রে ইমাম বুখারী ] ২. ‘কোনো ব্যক্তি যদি কোনো ঈমানদার গোলামকে আযাদ করে তাহলে সে তার জাহান্নাম থেকে মুক্তির কারণ হবে।’ [উকবা ইবনে আমির রা.-এর সূত্রে ইমাম আহমদ ৪/১৪৭ হাদীস : ১৭৩২৬] ৩. এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা কতবার খাদিমকে ক্ষমা করব? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন। প্রশ্নকারী দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করল। নবীজী এবারও নিশ্চুপ রইলেন। তৃতীয় বার যখন প্রশ্ন করা হল তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘প্রতিদিন সত্তরবার ক্ষমা করবে।’ [আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর সূত্রে ইমাম তিরমিযী] দুআ ও মুনাজাত দুআ আল্লাহর সঙ্গে তাআল্লুক পয়দা করে, দুঃখের সময় সুকূন ও সান্ত্বনা দান করে এবং সুখের সময় গাফলত ও উদাসীনতা দূর করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে যেসব দুআ শিক্ষা দিয়েছেন সেগুলো থেকে ইসলামের বিশ্বাস ও আদর্শও ফুটে উঠে। এখানে কিছু দুআ লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। খুব ভালো হয় যদি এগুলো মুখস্থ করে ফেলা হয় এবং আল্লাহর কাছে দুআ করা হয়। আলী রা, বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাযে দাড়াতেন তখন বলতেন, (তরজমা) আমি আমার মুখ (সর্বসত্ত্বা) তাঁরই অভিমুখী করছি যিনি সৃষ্টি করেছেন সকল আসমান এবং যমীন। আর আমি নই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত।’ আমার সালাত ও ইবাদত (কোরবানী) এবং আমার জীবন ও মরণ আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত, যিনি রাব্বুল আলামীন। তাঁর কোনো শরীক নেই। এরই আদেশ আমাক করা হয়েছে আর আমিই প্রথম আত্মসমর্পণকারী। ইয়া আল্লাহ, তুমিই বাদশাহ, তুমি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। আমি তোমার বান্দা। নিজের উপর জুলুম করেছি এবং নিজের কৃত গোনাহসমূহ স্বীকার করছি। অতএব আমার সকল গোনাহ ক্ষমা কর। তুমি ছাড়া গোনাহসমূহ কেউ ক্ষমা করতে পারে না। আমাকে সর্বোত্তম আখলাকের দিকে চালিত কর। কারণ তুমি ছাড়া সে পথে কেউ চালিত করতে পারে না। আমার মন্দ আখলাক দূর কর, কারণ তুমি ছাড়া কেউ তা দূর করতে পারে না। আমি তোমার আহ্বানে হাজির। সকল কল্যাণ তোমারই হাতে, আর অকল্যাণ তোমার প্রতি নয়। আমি তোমারই দ্বারা (বেঁচে আছি) এবং তোমারই নিকটে (ফিরে যাব)! তুমি অতি বরকতময়, সমুচ্চ! আমি তোমার নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তোমার দিকেই প্রত্যাবর্তন করি। দুআটির আরবী পাঠ এই- وجهت وجهي للذي فطر السماوات والأرض حنيفا وما أنا من المشركين إن صلاتي ونسكي محياي ومماتي لله رب العلمين، لا شريك له وبذلك أمرت و أنا أول المسلمين اللهم أنت الملك لا إله ألا أنت أنا عبدك ظلمت نفسي واعترفت بذنبي فاغفرلي ذنبي جميعا لا يغفر الذنوب إلا أنت واهدني لأحسن الأخلاق لا يهدني لأحسنها إلا أنت واصرف عني سيئها لا يصرف عني سيئها إلا أنت لبيك وسعديك والخير كله في يديك والشر ليس إليك أنا بك وإليك تباركت وتعاليت أستغفرك وأتوب إليك

 

advertisement