সফর ১৪৪০   ||   নভেম্বর ২০১৮

দুর্ভোগ : ইন্দোনেশিয়ার ভূমিকম্প

আব্দুল্লাহ আবু মুহাম্মাদ

গত ২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় ইন্দোনেশিয়ার সুলায়েসিতে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্প ও  সুনামি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি রেখে গেছে সচেতনতা ও সতর্কতার এক বড় উপকরণ। ৭.৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পে শত শত ঘর-বাড়ি ও স্থাপনা বিধ্বস্ত হয়েছে। বহু ঘর-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাট মাটিতে দেবে গেছে। এই ভূমিকম্পের একটি ভয়াবহ বৈশিষ্ট্য ছিল মাটি নরম হয়ে পানির বৈশিষ্ট্য ধারণ করা। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় উদ্ধারসংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট তরলীকরণের কারণে সুলায়েসি দ্বীপের পালু শহরের শহরতলী বালারোয়াতে ১ হাজার ৭০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, পালুর বিমান বন্দরের কাছে পেটোবো এলাকায় একই কারণে প্রায় সব ঘরবাড়ি বিধস্ত হয়েছে। উদ্ধার সংস্থাটির মুখপাত্র সুটোপো পুরভো নুর্গোহো বলেন, যখন ভূমিকম্প আঘাত হানে তখন ভূমির উপরিভাগের নীচের স্তরটি কাদাময় হয়ে নরম হয়ে যায়। এগুলো যখন বড় আকারে নেমে যেতে থাকে তখন ভূমির উপরি অংশের ব্যাপক ক্ষতি হয়।

সংবাদ-মাধ্যমগুলো পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে বলছে, ভূকম্পনের সময় রাস্তাগুলো দুমড়ে মুচড়ে যায় এবং বাড়ি-ঘর দেবে যায়। অনেক ক্ষেত্রে ভূপৃষ্ঠের উপরের বস্তু ও অবকাঠামোগুলো মাটির নীচে চলে যায়। কোথাও এমনও হয়েছে যে, যেখানে কৃষকের ধানের জমি ছিল সেটি অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং সেখানে মাটি দ্বারা ভর্তি হয়ে গেছে। কোনো কোনো ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তার মধ্যে বড় বড় ফাটল তৈরি হয়েছে এবং তাতে ট্রাকসহ অন্যান্য গাড়ি পড়ে গেছে। আবার অনেক উপড়ানো গাছ দেখা গেছে, যেগুলো শিকড় আঁকড়ে ধরার মতো মাটি পায়নি। (দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৪ অক্টোবর ২০১৮)

ইতিপূর্বে ইন্দোনেশিয়ার আরো কয়েকটি ভূমিকম্পে, ২০১০ ও ২০১১ সালে নিউজিল্যান্ডে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পে এবং ১৯৬৪ সালে গ্রেট আলাস্কা ভূমিকম্পেও ভূমি তরলবৎ হয়ে যাওয়ার কথা জানা যায়।

এই সব ঘটনায় চিন্তা-ভাবনার অনেক বড় উপকরণ আছে। সাধারণত মানুষ জল ও স্থলের মাঝে পার্থক্য করে থাকে। জলের চেয়ে স্থলে বেশি নিরাপদ বোধ করে। কিন্তু উপরের ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, আল্লাহর হুকুমে স্থলও জলের বৈশিষ্ট্য ধারণ করতে পারে। কুরআন মাজীদে সূরাতুল ইসরায় আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-

رَبُّكُمُ الَّذِیْ یُزْجِیْ لَكُمُ الْفُلْكَ فِی الْبَحْرِ لِتَبْتَغُوْا مِنْ فَضْلِهٖ  اِنَّهٗ كَانَ بِكُمْ رَحِیْمًا، وَ اِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِی الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ اِلَّاۤ اِیَّاهُ، فَلَمَّا نَجّٰىكُمْ اِلَی الْبَرِّ اَعْرَضْتُمْ  وَ كَانَ الْاِنْسَانُ كَفُوْرًا،  اَفَاَمِنْتُمْ اَنْ یَّخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ اَوْ یُرْسِلَ عَلَیْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ وَكِیْلًا، اَمْ اَمِنْتُمْ اَنْ یُّعِیْدَكُمْ فِیْهِ تَارَةً اُخْرٰی فَیُرْسِلَ عَلَیْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّیْحِ فَیُغْرِقَكُمْ بِمَا كَفَرْتُمْ ، ثُمَّ لَا تَجِدُوْا لَكُمْ عَلَیْنَا بِهٖ تَبِیْعًا.

তোমাদের রব তিনিই, যিনি তোমাদের জন্য সমুদ্রে নৌযান পরিচালিত করেন, যেন তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার। তিনি তো তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।

সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন শুধু তিনি ছাড়া অন্য যাদের তোমরা ডেকে থাক তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়। এরপর তিনি যখন তোমাদের উদ্ধার করে স্থলে আনেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

তোমরা কি নির্ভয় হয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকেসহ কোনো অঞ্চল ধ্বসিয়ে দিবেন না? অথবা তোমাদের উপর শিলা বর্ষণকারী ঝঞ্ঝা প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা তোমাদের কোনো কর্মবিধায়ক পাবে না।

অথবা তোমরা কি নির্ভয় হয়েছ যে, তিনি তোমাদেরকে আর একবার সমুদ্রে নিয়ে যাবেন না এবং তোমাদের বিরুদ্ধে প্রচ- ঝটিকা পাঠাবেন না এবং তোমাদের কুফরীর কারণে তোমাদেরকে নিমজ্জিত করবেন না? তখন তোমরা এ বিষয়ে আমার বিরুদ্ধে কোনো সাহায্যকারীও পাবে না। -সূরা ইসরা (১৭) : ৬৭-৬৯

মানুষের কর্তব্য, সর্বাবস্থায় আল্লাহর অনুগত থাকা। তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা।

তাঁরই হুকুমে জল-স্থল স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে স্থির থেকে মানুষের সেবা করে চলেছে। আবার তাঁরই হুকুমে এসবের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তিতও হয়ে যেতে পারে, যার কিছু নমুনা এ ঘটনাতেও দেখা গেল।

ইন্দোনেশিয়ার এই ভূমিকম্পের পর প্রচ- সুনামিও হয়েছে। সাগরের ঢেউ প্রায় ২০ ফুট উচ্চতা নিয়ে শহরে আছড়ে পড়েছে এবং শত শত মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

সংবাদ-মাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে যে, সুনামি যখন আঘাত হানে তখন বহু মানুষ সমুদ্র সৈকতে ছিল। কেন ছিল? ‘বিচ ফ্যাস্টিভ্যাল’ উদ্যাপনের জন্য তারা সৈকতে জড়ো হয়েছিল!

মৃত্যু তো যেকোনো সময় আসতে পারে। আল্লাহ তাআলা যখন যার মৃত্যুর সময় নির্ধারণ করেছেন ঐ সময়ই তা আসবে, কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, ঐ সময় বান্দা কী অবস্থায় রয়েছে- আল্লাহ তাআলার ফরমাবরদারীতে না নাফরমানীতে?  নাচ-গান-নাফরমানীতে মত্ত অবস্থায় যদি কারো মৃত্যু এসে যায় তাহলে এর চেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার আর কী হতে পারে?

আমরা যেন নির্ভয় না হই, আল্লাহর দিকে রুজু করি, তাঁর ফরমাবরদারীর মাঝে থাকি। যেন আমাদের ব্যাপারে কুরআন মাজীদের এই বাণী সত্য হয়-

وَ لَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَ اَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ.

‘তোমাদের মৃত্যু যেন এই অবস্থায় হয় যে, তোমরা আল্লাহর ফরমাবরদার।’

 

 

advertisement