মুহাররম ১৪৪০   ||   অক্টোবর ২০১৮

নবীজীর দস্তরখানে

মুহাম্মাদ ফজলুল বারী

৩৯. রাতে পাত্র ঢেকে রাখব

রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে যায় তখন পোকা-মাকড় স্বাধীন রাজ্য লাভ করে। তেলাপোকা, টিকটিকি স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ায়; যেখানে খুশি সেখানে যায়, যাতে ইচ্ছা মুখ দেয়। কথার কথা, একটি পাত্রে পিঠা রেখে তুমি ঘুমিয়ে গেলে, ঢেকে রাখলে না। এখন বাথরুমের তেলাপোকা এসে পিঠার উপর দিয়ে দশবার হেঁটে গেল। কোনো এক কোণা থেকে সামান্য খেল। সকালে উঠে তুমি সেই পিঠা খেলে। অথচ পিঠার পাশ দিয়ে তেলাপোকা হেঁটে যেতে দেখলেই তুমি সেই পিঠা খেতে না। অথবা একটি গøাসে দুধ রেখে তুমি ঘুমিয়ে গেলে, ঢেকে রাখলে না। রাতে তেলাপোকা দুধের মধ্যে পড়ল এবং দুধে ডুব দিয়ে উঠে গেল। তুমি কিছুই দেখলে না। সকালে উঠে সেই দুধ পান করলে। অথচ পাত্রটি বা গ্লাসটি ঢেকে রাখলে এমনটি ঘটত না। সুতরাং রাতে শোয়ার সময় সকল পাত্র রেখে রাখব।

তাই তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

غَطّوا الْإِنَاءَ، وَأَوْكُوا السِّقَاءَ، وَأَغْلِقُوا الْبَابَ.

(রাতে শোবার সময়) পাত্র ঢেকে রাখ, মশকের মুখ বন্ধ কর, দরজা বন্ধ কর। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০১২

 

৪০. খাওয়ার আগে জেনে নেব

তোমার সামনে খাবার পেশ করা হল। সুুন্দর একটা পাত্রে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে পরিবেশন করা হল। দেখেই জিভে পানি এসে যাচ্ছে। তোমার জানা নেই, এটা কী জিনিস- হালাল কোনো প্রাণীর গোস্ত নাকি হারাম। দেখতে খুব সুন্দর লাগছে এবং মনে হচ্ছে- খাবারটা খুব সুস্বাদু হবে। এখন কি তুমি কিছু না জেনেই খাওয়া শুরু করে দিবে? পরে আফসোস করবে- আরে এটা তো একটা হারাম প্রাণীর গোস্ত ছিল!

বিশেষ করে যখন তুমি দেশের বাইরে, কোনো অমুসলিম রাষ্ট্রে রয়েছ। সুতরাং যে খাবারের ব্যাপারে আমার জানা নেই খাওয়ার আগে জেনে নেব। খালীদ ইবনুল ওয়ালীদ রা. বলেন-

وَكَانَ قَلّمَا يُقَدِّمُ يَدَهُ لِطَعَامٍ حَتّى يُحَدّثَ بِهِ وَيُسَمّى لَهُ.

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাবার সম্বন্ধে না জেনে কোনো খাবারে হাত দিতেন না। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৯১

 

৪১. বছরের প্রথম ফল সামনে এলে

এ বছর কেবল আম পাকা শুরু করেছে। বাজারে কিছু কিছু আম পাওয়া যাচ্ছে বা নিজেদের গাছের আমও দু-একটা করে পাকা শুরু করেছে। এ বছর এখনো আম খাওয়া হয়নি। তোমার সামনে এ বছরের প্রথম আম উপস্থিত। তুমি আল্লাহর নাম নেয়া ছাড়াই তাঁর এ নিআমত খাওয়া শুরু করে দিলে। এমনটি করা যাবে না। এ ফল তো আল্লাহর নিআমত, যা বান্দার প্রতি অনুগ্রহ করে তিনি দান করেছেন। সুতরাং বছরের প্রথম ফল সামনে এলে আল্লাহর নাম নিব এবং বরকতের দুআ করব।

হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে যখন বছরের প্রথম ফল উপস্থিত করা হত তখন তিনি বলতেন-

اللّهُمّ بَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا، وَفِي ثِمَارِنَا، وَفِي مُدِّنَا، وَفِي صَاعِنَا، بَرَكَةً مَعَ بَرَكَةٍ.

(আয় আল্লাহ! আমাদের মদীনায় বরকত দান করুন, আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দান করুন। আমাদের ‘মুদ’, আমাদের ‘ছা’(একটি পরিমাপ)-এ বরকত দান করুন; ধারাবাহিক বরকত দান করুন।)

এরপর নবীজী সবার আগে পাশে থাকা কোনো শিশুকে ঐ ফল খেতে দিতেন (তারপর নিজে খেতেন)। -সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ৩৩২৯

 

 

advertisement