যিলকদ ১৪৩৯   ||   আগস্ট ২০১৮

দু    র্নী    তি : ভুতের উপদ্রব, ওঝা আছেন?

গোলাম এলাহী

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ঘটে যাওয়া ভূতুড়ে কা-টি নিয়ে জনমনে তোলপাড় চলছে। সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে ঘটনাটির যে বিবরণ পাওয়া গেছে তা হচ্ছে- ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করে শুল্ক-গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। সাধারণত শুল্ক-গোয়েন্দা, কাস্টমসসহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার হাতে আটক হওয়া স্বর্ণ নিয়মানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা করা হয়। কাস্টমস হাউজের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন স্বর্ণ জমা রাখা হয় তখন ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্বর্ণকার দিয়ে পরীক্ষা করে স্বর্ণের মান নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংক, এনবিআর এবং সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওইসব স্বর্ণের মান নির্ধারণ পূর্বক ব্যাংক গ্রহণ করে রশিদ দেয় সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে এ সম্পর্কিত প্রতিবেদন পাঠিয়ে দেয়।

তো ২০১৭ সালের ঐ পরিদর্শনের প্রতিবেদন গত জানুয়ারিতে অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর জমা দেওয়া হয়। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি তা পাঠানো হয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে। পরিদর্শন দলটি তাদের প্রতিবেদনে যে পর্যবেক্ষণগুলো দিয়েছে তার প্রথমটি ছিল একটি স্বর্ণের চাকতি ও স্বর্ণের আঙটি নিয়ে। ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টমস হাউজের গুদাম কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত একটি স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই চাকতি এবং আঙটি যথাযথ ব্যক্তি দিয়ে পরীক্ষা করে ৮০ শতাংশ (১৯ দশমিক ২ ক্যারেট) বিশুদ্ধ স্বর্ণ হিসেবে গ্রহণ করে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পর পরিদর্শন দল ওই চাকতি ও আঙটি পরীক্ষা করে তাতে পেয়েছে ৪৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ (১১ দশমিক ২ ক্যারেট) স্বর্ণ। আঙটিতে পেয়েছে ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ স্বর্ণ (৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট)। ধারণা করা হচ্ছে, ভল্টে রাখার পর এগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, পরিদর্শন দল প্রতিটি রশিদের অনুকূলে জমা হওয়া স্বর্ণ যাচাই করেছে। তাতে দেখা গেছে, স্বর্ণের অলংকার ও স্বর্ণের বারে ক্যারেটের তারতম্য করা হয়েছে। ২৪ থেকে ২০ ক্যারেটের ৯৬০ কেজি স্বর্ণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভল্টে ১৮ ক্যারেট হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ বলেছেন, এটি অকল্পনীয়। তিনি বলেন, ব্যাংকে কাজ করার সূত্রে আমি জানি, এসব ক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকেন হাতেগোনা কয়েকজন। পরিদর্শন-প্রতিবেদনে যে তথ্য এসেছে, ঘটনার সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের এর ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব বের হয়ে আসবে। এই ঘটনাকে ছোট ভাবার কোনো কারণ নেই। ভল্টের মতো উচ্চ গুরুত্বের জায়গায় এমন অনিয়মকে গুরুত্ব না দিলে আরো বড় ঘটনা ঘটতে পারে।  (দৈনিক নয়া দিগন্ত , ২৩ জুলাই ২০১৮)

প্রশ্ন হচ্ছে, আসলেই কি এই গুরুতর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হবে? ইতিমধ্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ৪০ শতাংশ ও ৮০ শতাংশের সমস্যা হয়েছে, এটি ক্লারিক্যাল ইরর। লেখার মধ্যে ইংরেজি-বাংলা মিশ্রণ হয়ে গেছে। কিছু ব্যাপার আমরা করি, মান্ধাতা আমলের সোনা মাপার কষ্টিপাথর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, এখন সর্বশেষ কিছু সিস্টেম ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে সোনার ক্যারেট মাপা হয়। এর মধ্যে চুল পরিমাণ কিছু বেশকম হতে পারে। (প্রাগুক্ত)

কিন্তু এতে সব প্রশ্নের উত্তর আসছে না, তা ছাড়া ক্লারিক্যাল ইরর, না অন্য কিছু সেটাও প্রমাণসাপেক্ষ।

যাই হোক, এটা অনেক বড় একটি ব্যাপার। এখানে যদি বাস্তবিকই কিছু ঘটে থাকে তবে এটা জাতি হিসেবে আমাদের অনেক বড় লজ্জা, ব্যর্থতা ও আশঙ্কার বিষয়। পিছনের বড় বড় অর্থ কেলেঙ্কারিগুলোর যথাযথ তদন্ত ও বিচার না হওয়াতেই এজাতীয় ব্যাপারের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কাজেই এই ভয়াবহ ধারা রোধ করতে আইনের শাসন কার্যকর করার কোনো বিকল্প নেই। এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার হওয়া অতি প্রয়োজন। নতুবা আরো ভয়াবহ ঘটনার আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। একইসাথে এই সত্যও সামনে এসে যাচ্ছে যে, সর্বস্তরে নৈতিকতা ও খোদাভীতির চর্চা কত জরুরি। এই চর্চা হতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের উপর-নীচ সব পর্যায়ে। কারণ শর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে সেই ভূত তাড়াবে কে? হ

 

 

advertisement