শাওয়াল ১৪৩৯   ||   জুলাই ২০১৮

দু-টুকরো হল চাঁদ

সদ্য ভাজা একটি রুটি নিয়ে তুমি মাঝখান থেকে দুই হাত দিয়ে টান দাও- রুটিটা দু-টুকরো হয়ে যাবে। খাওয়ার জন্য চিনেমাটির প্লেট হাতে নিয়েছ, হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল; কয়েক টুকরো হয়ে গেল।

তো রুটি দু-টুকরো হয়েছে আর কাঁচের  প্লেট ভেঙে কয়েক টুকরো হয়েছে এমন কথা তো তুমি শুনেছ, কিন্তু আকাশের ঐ চাঁদটা দু-টুকরো হয়েছে এমন কোনো কাহিনী কি শুনেছ কখনো?

আজ আমি তোমাদের চাঁদ দু-টুকরো হওয়ার কাহিনী শোনাব। একেবারে সত্য কাহিনী। আমাদের নবীজীর কাহিনী। চল শোনা যাক-

নবীজী তখন মক্কায়। নবুওত লাভের প্রথম যামানা। মানুষকে এক আল্লাহ্র দিকে ডাকছেন। মূর্তির পূজা ছেড়ে এক আল্লাহ্র ইবাদতের দিকে আহ্বান করছেন। মানুষ কেন নিজ হাতে বানানো মূর্তির পূজা করবে? মাটি-পাথরের পুতুলের পূজা করবে? সে তো তার সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ্র ইবাদত করবে।

মক্কার কাফেররা মূর্তির পূজা করত। তারা নবীজীর কথা শুনল না। তারা জানতো মুহাম্মাদ সত্যবাদী, তিনি জীবনে কখনো মিথ্যা বলেননি। তারপরও তারা নবীজীর সত্য দাওয়াত মানতে চাইছিল না। নবীজীকে পাগল, জাদুগর এই ওটা বলতে লাগল। একবার এটা প্রশ্ন করে আরেকবার ওই প্রশ্ন। নবুওতের প্রমাণ স্বরূপ একবার এটা দেখাতে বলে, আরেকবার ওটা।

একবারের ঘটনা। ওরা নবীজীকে বলল, তোমার নবুওতের একটা নিদর্শন দেখাও আমাদের, তাহলে আমরা বিশ^াস করব তুমি সত্য নবী। নবীজী জানতেন, শত নিদর্শন দেখালেও ওরা ঈমান আনবে না। তারপরও আল্লাহর হুকুম হল, নবীজী তাদেরকে এক মহা নিদর্শন দেখালেন। আল্লাহ্র অনুগ্রহে আকাশের ঐ চাঁদ দু-টুকরো হয়ে গেল।

সকলে দেখল, আকাশের চাঁদটি দু-টুকরো হয়ে  এক টুকরো পাহাড়ের উপর দিকে চলে গেল। আরেক টুকরো পাহাড়ের আড়ালে চলে গেল। নবীজী সকলের উদ্দেশে বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন-

انْشَقّ الْقَمَرُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فِلْقَتَيْنِ، فَسَتَرَ الْجَبَلُ فِلْقَةً، وَكَانَتْ فِلْقَةٌ فَوْقَ الْجَبَلِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ: اللهُمّ اشْهَدْ.

নবীজীর সময় চাঁদ দু-টুকরো হল; এক টুকরো পহাড়ে ঢাকা পড়ল, আরেক টুকরো পাহাড়ের উপরের দিকে চলে গেল। নবীজী তখন বললেন, আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো! -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৮০০; সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৬৪

চাঁদ দু-টুকরো হল। সবাই স্বচক্ষে দেখল। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.-ও তাদের একজন, যারা চাঁদ দু-টুকরো হওয়ার ঘটনা স্বচক্ষে দেখেছেন। তিনি বলেন-

انْشَقّ القَمَرُ وَنَحْنُ مَعَ النّبِيِّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ فَصَارَ فِرْقَتَيْنِ فَقَالَ لَنَا: اشْهَدُوا اشْهَدُوا.

যখন চাঁদ দু-টুকরো হল তখন আমরা নবীজীর সাথেই ছিলাম। (আমরা সচক্ষে দেখলাম) চাঁদ দু-টুকরো হল। তখন নবীজী আমাদের উদ্দেশে বললেন, তোমরা সাক্ষী থেকো! তোমরা সাক্ষী থেকো! -সহীহ বুখারী, হাদীস ৪৮৬৫

কাফেররা বলেছিল, নিদর্শন দেখাও তাহলে ঈমান আনব। কিন্তু এত বড় নিদর্শন দেখার পরও তারা ঈমান আনল না। উল্টো নবীজীর এই মুজিযাকে জাদু বলে উড়িয়ে দিল। তখন তাদেরই কেউ কেউ বলল, আচ্ছা, মুহাম্মাদ আমাদেরকে না হয় জাদু করেছে, সারা পৃথিবীর মানুষকে তো আর জাদু করতে পারবে না। (কোনো কোনো বর্ণনায় পাওয়া যায়) তারা বলল, আচ্ছা, একটু অপেক্ষা কর। দূর-দূরান্তের মুসাফিররা এলে আমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখি- তারাও এটা দেখেছে কি না? পরবর্তীতে দূর-দূরান্তের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসাফিররা এলে তাদের জিজ্ঞেস করা হল, তোমরা কি অমুক রাতে চাঁদ দিখ-িত হতে দেখেছে? তারা বলল, হাঁ, আমরাও দেখেছি। (দ্র. জামে তিরমিযী, হাদীস ৩২৮৯; মুসনাদে আবু দাউদ তয়ালিসী, হাদীস ২৯৩)

 

 

advertisement