তরুণদের প্রতি : জীবনের একটি লক্ষ্য আছে
[বিগত ১৯ জুমাদাল আখিরাহ ১৪৩৯/৮ মার্চ ২০১৮ তারিখে মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা-এর হযরতপুর প্রাঙ্গণে নবনির্মিত দাওয়াহ ভবনে অনুষ্ঠিত হয় এসএসসি পরীক্ষা সম্পন্নকারীদের নিয়ে দিনব্যাপী একটি দ্বীনশিক্ষা মজলিস। এই মজলিসে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন মাসিক আলকাউসারের সম্মানিত সহ-সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ যাকারিয়া আবদুল্লাহ। তাঁর মূল্যবান বয়ান আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের জন্য উপস্থাপিত হল। -সম্পাদক]
نحمده ونصلى على رسوله الكريم، أما بعد :
আলহামদু লিল্লাহ, আমরা মারকাযুদ দাওয়াহ্য় একটি সুন্দর মজলিসে একত্র হয়েছি। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সূত্রে একত্র হওয়ার তাওফীক দান করেছেন। মানুষ একে অপরের সাথে বিভিন্ন রকমের সম্পর্ক রাখে, বিভিন্ন কারণে একত্র হয়, বিছিন্ন হয়। আল্লাহ পাকের কাছে ঐ সম্পর্ক, ঐ সাক্ষাৎ, ঐ একত্র হওয়া পছন্দের, যা আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হয়। আল্লাহ পাকের মেহেরবানী, আমরা এখানে কিছু ভাই, বন্ধু একত্র হয়েছি, দ্বীনের সূত্রে, দ্বীন শেখা এবং দ্বীনী বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা গ্রহণের উদ্দেশ্যে; যেন আমাদের সামনের জীবনটা দ্বীন মোতাবেক অতিবাহিত করা সহজ হয়। পার্থিব কোনো উদ্দেশ্য এখানে নেই, দুনিয়াবী কোনো স্বার্থ এখানে নেই। শুধুমাত্র আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করাই আমাদের এখানে একত্র হওয়ার উদ্দেশ্য।
আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জন হচ্ছে সকল কাজের চূড়ান্ত লক্ষ্য, চূড়ান্ত নিয়ত। আমরা যখন আল্লাহ পাকের হুকুম-আহকামের জ্ঞান অর্জনের নিয়ত করেছি, ইসলামী চেতনা-বিশ্বাস সম্পর্কে জানার নিয়ত করেছি এবং এই নিয়তে দ্বীনী মজলিসে অংশগ্রহণ করেছি। এটাও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার নিয়ত হয়ে যাচ্ছে। কারণ এই সবগুলোই হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার বিভিন্ন উপায়। কাজেই আমাদের এখানে একত্র হওয়ার চূড়ান্ত উদ্দেশ্য হল আল্লাহ্র সন্তুষ্টি। কারণ আমরা এখানে দ্বীন শেখার জন্য, দ্বীন সম্পর্কে আলোচনা শোনার জন্য দ্বীনী দিকনির্দেশনা গ্রহণের জন্য একত্র হয়েছি। এর অনেক মূল্য। দুনিয়াতে স্থূল দৃষ্টিতে হয়ত এর মূল্য প্রকাশিত নয়, কিন্তু আখেরাতে আমরা যখন আমাদের রবের নিকটে ফিরে যাব তখন এই দ্বীনী কাজগুলোর, আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের প্রয়াসগুলোর মূল্য প্রকাশিত হবে। আর যদি আল্লাহ পাক তাওফীক দান করেন অন্তর্দৃষ্টি দান করেন- দুনিয়াতেও এর মূল্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হব।
ভালো লাগছে যে, এলাকার কিছু ভাই, বন্ধু আমরা একসাথে বসেছি, কিছু আলোচনা করছি, শুনছি, কিছু সময় একসাথে কাটাচ্ছি। শুধু দ্বীনের নিসবতে, দ্বীনের সূত্রে; দ্বীনী চেতনা আদান-প্রদানের উদ্দেশ্যে। এর চেয়ে সুন্দর ইজতিমা, সুন্দর বৈঠক, সুন্দর সাক্ষাৎ আর কী হতে পারে?
মানুষের জীবনটা তো খুবই ছোট, এই ছোট জীবনটাতে আমরা ভাই-বন্ধুরা যদি দ্বীনের সূত্রে কিছু সময় একসাথে কাটিয়ে যেতে পারি সেটাই তো এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের নির্মল সৌন্দর্য। উর্দু ভাষার এক কবি কত সুন্দর বলেছেন-
غنیمت جان لے مل بيٹھنے کو + جدائی کی گھڑی سر پر کھڑی ہے۔
অর্থাৎ, জীবনের সময়টুকু যেন মিলেমিশে থাকি। বিদায়ের সময় তো খুব দূরে নয়।
একটি বিষয়ে আজকে একটু আলোচনা করার ইচ্ছা করছি। আল্লাহ তাআলা সঠিকভাবে বলার ও সঠিকভাবে আমল করার তাওফীক দান করুন।
মানুষ আল্লাহ পাকের এক মর্যাদাবান সৃষ্টি। মানুষকে বলা হয় আশরাফুল মাখলুকাত। সৃষ্টির সেরা। মানুষকে আল্লাহ পাক যেসকল গুণ ও বৈশিষ্ট্য দান করেছেন অন্য কোনো সৃষ্টিকে তা দান করেননি। মানুষ চিন্তাভাবনা করতে পারে, উদ্ভাবন করতে পারে, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারে। মানুষ তার মনের ভাব পরিষ্কার ভাষায় প্রকাশ করতে পারে।
মানুষের জীবনযাত্রায়, জীবন যাপনের উপায়-উপকরণে কত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে ও হচ্ছে। আল্লাহপ্রদত্ত চিন্তাশক্তি ব্যবহার করে মানুষ উন্নত ব্যবস্থা, উন্নত উপকরণ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার এই বিকাশকে যদি অন্যান্য প্রাণীর জীবনযাত্রার সাথে তুলনা করি তাহলে কী দেখতে পাই? দেখতে পাই যে, এরকম কোনো ঘটনা সেখানে ঘটেনি। বাঘ, সিংহ এবং আরো কত বড় বড় প্রাণী আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন; এরা মানুষের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। মানুষও সেগুলোকে ভয় পায়। কিন্তু তাদের জীবনযাত্রা, জীবন যাপনের পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন নেই। আজ থেকে এক হাজার বছর আগে যেমন ছিল এখনো তেমন। এক হাজার বছর আগে বাঘ-সিংহ বনে-জঙ্গলে বসবাস করত এখনো বনে-জঙ্গলেই বাস করে। এমন তো নয় যে, এখন আধুনিক যুগ, বনে-জঙ্গলে বড় বড় অভিজাত এলাকা তৈরি হয়েছে। বাঘেরা ওখানে ফ্ল্যাটে বসবাস করছে। সোফায় বসে কফি পান করছে। ওদের শাবকেরা কাঁধে, পিঠে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যাচ্ছে!! না এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। এক হাজার বছর আগে বনে-জঙ্গলে গুহায় বসবাস করত, অন্যান্য প্রাণী শিকার করে করে খেতো এখনও এক হাজার বছর পরে এরকমই আছে। কিন্তু মানুষের বিষয়টা ভিন্ন। একসময় বিদ্যুৎ ছিল না, লাইট-ফ্যান ছিল না। বিদ্যুৎ এসেছে, বিদ্যুৎ দ্বারা চালিত নানা উপকরণ এসেছে। মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হয়েছে। এই যে যোগাযোগের উন্নত প্রযুক্তি অল্প কিছুদিন আগে পর্যন্তও ছিল না। আমাদের মনে আছে, এই পনেরো-বিশ বছর আগেও হাতে হাতে মোবাইল ছিলো না। কারো কারো বাসায় ল্যান্ড ফোন থাকত। যখন মোবাইল ফোন নতুন এল তখন মোটামুটি বিত্তবানেরাই তা ব্যবহার করত। ষাট হাজার, সত্তর হাজার, আশি হাজার টাকা দিয়ে একটা সীম কিনত। পল্লী এলাকাতে হয়ত গোটা গ্রামে একটা-দুইটা থাকত। কারো বিশেষ প্রয়োজন হলে ঐ মোবাইলওয়ালার কাছে গিয়ে চেয়ে নিত, ব্যবহার করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তা সহজলভ্য হয়েছে। এখন তো সবার হাতে হাতে। বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব যারা দূরের দেশে আছে; তাদের সাথেও যোগাযোগ করে খোঁজ-খবর নিতে এখন আর কষ্ট নেই। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে হয় না। সবার সঙ্গেই মোবাইল আছে, নেট আছে। দূরদেশের স্বজনদের সাথে কথাবার্তা বলতে, তাদের দেখতে বেগ পেতে হচ্ছে না।
তো এই যে জীবনযাত্রার উপায়-উপকরণের ক্রমোন্নতি, সহজতা, সহজলভ্যতা এখানে আমাদের চিন্তা করার বিষয় আছে। মানুষের জীবনযাত্রার উপকরণগুলোর এই প্রতিনিয়ত উন্নতি কীভাবে সাধিত হচ্ছে? এটা হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে এমন কিছু গুণ ও যোগ্যতা দান করেছেন, যা ব্যবহার করে মানুষ এক পর্যায় থেকে আরেক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। পশু-পাখির জগতে এমনটা ঘটছে না। একশ বছর, হাজার বছরেও ঘটছে না। মানুষের জীবনে ঘটছে। কেন ঘটছে? এইজন্য ঘটছে যে, আল্লাহ পাক মানুষকে বিশেষ কিছু গুণ ও যোগ্যতা দান করেছেন, যে গুণ ও যোগ্যতা আমাদের চারপাশের জগতের অন্যান্য পশু-পাখিকে দান করেননি। সেই গুণ ও যোগ্যতা ব্যবহার করে মানুষ অগ্রসর হচ্ছে। তো মানুষের এই গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কী কোনো দায় নেই? কোনো তাৎপর্য নেই?
আমরা দুনিয়াতেও দেখি, কেউ যখন কোনো সম্মানজনক পদ লাভ করে সেই পদের কিছু দায়-দায়িত্বও থাকে। পদ বিষয়টা শুধু এই নয় যে, সে সম্মান পেল, মর্যাদার অধিকারী হল; বরং এই পদের কারণে তার উপর কিছু দায়-দায়িত্বও বর্তায়। যদি সে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তাহলে এই পদ-প্রাপ্তি তার জন্য মর্যাদার ও কল্যাণের হয় অন্যথায় এটাই তার লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের কারণ হয়।
মনে কর, এই গ্রামের একজন বড় কোনো অফিসে চাকরি পেল। এখন সে যদি খুশি হয়ে যায় যে, আমি তো অনেক বড় পোস্টে চাকরি পেয়ে গেছি। আমার আর কিছু করতে হবে না। এখন শুধু এলাকায় ঘুরে ঘুরে বলে, আমি অমুক বড় পোস্টে চাকরি পেয়েছি। অফিসে একদিনও যায় না; বাসায় খালি নাকে তেল দিয়ে ঘুমায়। আর কারো সাথে দেখা হলেই বলে, আমি অমুক বড় পোস্টে চাকরি পেয়েছি। আমি এখন বড় অফিসার। তোমাদের কী মনে হয়, এই লোকের চাকরি থাকবে? পদমর্যাদা থাকবে? থাকবে না।
তো আল্লাহ পাক মানুষকে যে মর্যাদা দান করেছেন, যে গুণ ও যোগ্যতা দান করেছেন তা তাৎপর্যহীন নয়। সেই গুণ ও যোগ্যতার সাথে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্যও দিয়েছেন, যা তাকে পালন করতে হবে। সেই দায়িত্ব পালন করলে তার আশরাফুল মাখলুকাত হওয়া যথার্থ হবে। মর্যাদা স্থায়ী হবে। অন্যথায় সে এই মর্যাদা হারাবে। শুধু মর্যাদাই হারাবে না শাস্তিরও মুখোমুখি হবে। সূরায়ে ত্বীনে আল্লাহ তাআলা মানুষ সম্পর্কে বলেছেন-
لَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ فِیْۤ اَحْسَنِ تَقْوِیْمٍ .
আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি সর্বোত্তম গঠনে। -সূরা ত্বীন (৯৫) : ৪
মুফাসসিরগণ বলেছেন, গঠন মানে শুধু দৈহিক গঠন নয়। দৈহিক, মানসিক। সকল বিষয়ে সর্বোত্তম গঠনে আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।
তো এই মানুষ, যাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছেন, সেই মানুষ যদি আল্লাহকে না চেনে, তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য না বোঝে, কিংবা বুঝে-শুনেও আল্লাহ পাকের নাফরমানী করে তাহলে তার পরিণাম কী হবে? এর পরের আয়াতেই আল্লাহ পাক ইরশাদ করে দিয়েছেন-
ثُمَّ رَدَدْنٰهُ اَسْفَلَ سٰفِلِیْنَ ، اِلَّا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمْ اَجْرٌ غَیْرُ مَمْنُوْنٍ.
(মানুষকে সর্বোত্তম গঠনে সৃষ্টি করেছি।) এরপর তাদেরকে আমি হীনদের হীনতম পরিণত করব। -সূরা ত্বীন (৯৫) : ৫
পশু-পাখিদের মৃত্যু হলে তারা শেষ হয়ে গেল। এদের জিজ্ঞাসা করা হবে না যে, জীবনটা কীভাবে কাটিয়েছ? কিন্তু একজন মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তাকে আল্লাহ পাকের সামনে হাযির হতে হবে। জীবনের সকল কাজকর্মের হিসাব দিতে হবে। যদি সে ভালো কাজ করে থাকে, সেই ভালো কাজের পুরস্কার পাবে। আর যদি মন্দ কাজ করে থাকে তাকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। তাহলে আখেরাতের জীবন যদি শাস্তির জীবন হয় -আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন- তাহলে তো পশু-পাখির চেয়েও তাদের অবস্থা খারাপ হল। কেন খারাপ হল? এই জন্য যে, আল্লাহ পাক তাকে অনেক গুণ ও যোগ্যতা দান করেছিলেন, যে গুণ ও যোগ্যতা অন্যান্য পশু-পাখিকে দান করা হয়নি। এই জন্য মানুষের দায় বেশি, দায়িত্ব বেশি। তাকে তার চিন্তাশক্তি কাজে লাগাতে হবে। তার সৃষ্টিকর্তার পরিচয় পেতে হবে। তার মর্জিমতো জীবন যাপন করতে হবে। ইসলামের শিক্ষা, কুরআন মাজীদ বারবার এই বিষয়টা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে-
وَ اللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْۢ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَیْـًٔا.
‘আল্লাহ পাক তোমাদেরকে তোমাদের মায়ের পেট থেকে এমন অবস্থায় এনেছেন যে, তোমরা কিছুই জানতে না।’
একটি শিশু যখন পৃথিবীতে আসে তখন সে কিছুই জানে না, কিছুই বোঝে না। সে কিছুই বলতে পারে না। কাউকে চিনে না। এমনকি সে উঠে বসতেও পারে না। এমন অক্ষম, অসহায় অবস্থায় মানবশিশু পৃথিবীতে আসে। ধীরে ধীরে আল্লাহ পাক তার মাঝে গুণ ও যোগ্যতা বিকশিত করেন। সে মানুষকে চিনতে পারে। একটা একটা করে কথা বলতে পারে। অন্যের কথা বুঝতে পারে। এভাবে আস্তে আস্তে সে উঠে বসে, হামাগুড়ি দেয়, হাঁটতে শিখে, দৌড়াতে শিখে, তার প্রয়োজনগুলো ধীরে ধীরে পূরণ করতে শেখে। এভাবে ধীরে ধীরে তার গুণ ও যোগ্যতাগুলো বিকশিত হয়। কে তা বিকশিত করেছেন? আল্লাহ তাআলা বিকশিত করেছেন। আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে বলেন-
وَ اللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْۢ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَیْـًٔا، وَّ جَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْـٕدَةَ، لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.
যেন তোমরা আল্লাহ্র শোকরগুযারি করো। এই لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ -এর আগ পর্যন্ত বিষয়গুলো মানুষ দেখে। প্রতিনিয়ত আমরা দেখছি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এগুলো লক্ষ করছি। শিশুদের আমরা কোলে নিই, আদর-সোহাগ করি। তার প্রয়োজনগুলো পূরণ করি। তার অক্ষমতা আমরা দেখি, বুঝি। আমাদেরও এই অবস্থা ছিল। আমাদের যারা বড়, আমাদের যারা গুরুজন তারা আমাদেরকে প্রতিপালন করেছেন। আমরা বড় হয়েছি। যারা পৃথিবীতে নতুন আসছে তাদেরকে দেখছি, তারা পৃথিবীতে এমন অবস্থায় আসছে যে, কিছুই জানে না। কিছুই পারে না। ধীরে ধীরে বড় হয় তখন সব জানে, সব পারে। এই গোটা অবস্থাটা আমরা দেখছি। কিন্তু যে বিষয়টা এখান থেকে বোঝার তা আমরা বুঝতে পারি না। যদি আল্লাহ পাক আমাদেরকে তাওফীক না দেন। বোঝার বিষয়টা হল, এই যে তার মাঝে বিভন্ন গুণ ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটছে, তা কে ঘটিয়েছেন? এই শিশুটাকে মাতৃগর্ভে কে সৃষ্টি করেছেন? কে তার মধ্যে এত গুণ ও যোগ্যতা দান করেছেন? আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে এই বিষয়টা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন-
وَ اللهُ اَخْرَجَكُمْ مِّنْۢ بُطُوْنِ اُمَّهٰتِكُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ شَیْـًٔا، وَّ جَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْـِٕدَةَ، لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.
আল্লাহ তোমাদেরকে দুনিয়াতে এনেছেন, কী অবস্থায় এনেছেন তা তোমরা দেখছো। এরপর কী হল, কীভাবে তোমাদের মাঝে গুণ ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটলো- এটাও তোমরা দেখছ। দুইটা বিষয় তোমরা দেখছ না, সেই দুইটা আল্লাহ পাক বিশেষভাবে এই আয়াতে ইরশাদ করেছেন, এক হল কে তোমাদেরকে দুনিয়ায় এনেছেন এবং তোমাদের মধ্যে গুণ ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটাচ্ছেন? এগুলো এমনি এমনি ঘটছে না, এর পেছনে এক সর্ব শক্তিমানের ইচ্ছা কার্যকর রয়েছে- وَ اللهُ اَخْرَجَكُمْ
আর দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে, কেন তিনি আমাদেরকে এই দুনিয়ায় আনলেন, কেন তিনি আমাদের মাঝে এই গুণ ও যোগ্যতার বিকাশ ঘটালেন, সেটাও আল্লাহ পাক এই আয়াতে ইরশাদ করেছেন- لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ যেন তোমরা শোকরগুযারি কর। এইজন্যই তোমাদেরকে দুনিয়ায় আনা হয়েছে, এইজন্যই তোমাদেরকে এইসকল গুণ ও যোগ্যতা দান করা হয়েছে। তাহলে কুরআন আমাদেরকে আমাদের পরিচয় দান করেছে। আমাদেরকে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য জানিয়েছে। আমরা এসেছি আল্লাহ্র কাছ থেকে; আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন, এটা আমাদের পরিচয়। আমাদের কর্তব্য তাঁর শোকরগুযারি করা। এটা জীবনের উদ্দেশ্য। لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ তো আমাদের এখানে যারা উপস্থিত আছে, আমি কথাগুলো এই সাহস নিয়ে বলছি যে, এই কথাগুলো বোঝার মতো যোগ্যতা আল্লাহ পাক তাদেরকে দান করেছেন। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই পর্যন্ত যাদের পড়াশোনা হয়েছে, একটা দীর্ঘ সময় পর্যন্ত তারা পড়াশোনা করেছে। এখন এই চিন্তাগুলো গ্রহণ করবার মতো যোগ্যতা তাদের হয়েছে। এই ভরসা নিয়ে আমি এই কথাগুলো এখানে পেশ করছি এবং আশা করি ইনশাআল্লাহ আমরা বুঝতে পারব।
তো আমরা যে দুনিয়াতে এসেছি, এই আসার একটা উদ্দেশ্য আছে। মানুষ হিসাবে যে আল্লাহ পাক আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এই সৃষ্টির একটা উদ্দেশ্য আছে। আমাদের জীবনটা উদ্দেশ্যহীন নয়, লক্ষ্যহীন নয়। কিন্তু বড় দুঃখজন বিষয় হল, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, আমাদের সমাজব্যবস্থা, আমাদের চারপাশের পরিবেশ আমাদের মাঝে এই বোধ জাগ্রত করে না। আমাদেরকে অনেক কিছু শেখায়, কিন্তু এই বিষয়টা শেখায় না যে, তোমার জীবনের একটা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য আছে। তোমার একটা বিশেষ পরিচয় আছে। আমাদের পরিচয় কী? আমাদের পরিচয় আমরা মুসলিম, আল্লাহ পাক আমাদেরকে ঈমান ও ইসলামের দৌলত নসীব করেছেন, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য- জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ পাকের হুকুম মোতাবেক চলা, আল্লাহ পাকের ফরমাবরদারী করা। আমাদের গন্তব্য জান্নাত। জাহান্নাম থেকে বেঁচে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। দুনিয়া এবং আখেরাত উভয় জাহানে সফল ও কামিয়াব হওয়া। আমাদেরকে অনেক কিছুই শেখানো হয়। কিন্তু এই কথাটা শেখানো হয় না যে, হে তরুণ, হে যুবক, হে কিশোর, তোমার পরিচয় হল তুমি একজন মুসলিম। তোমার এই জীবন তোমরা এই গুণ ও যোগ্যতা- এসবের একটা উদ্দেশ্য আছে, তাৎপর্য আছে। সেই উদ্দেশ্য এই নয় যে, তুমি দুনিয়াতে শুধু পশু-পাখির মতো উদরপূর্তি করবে। প্রয়োজনগুলো পূরণ করবে, চাহিদাগুলো পূরণ করবে; এরপর কীট-পতঙ্গের মতো মৃত্যুবরণ করে দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটা তো পশু পাখির জীবন হতে পারে, কীট-পতঙ্গের জীবন হতে পারে। তারা পৃথিবীতে আসে, খায়-দায়, প্রয়োজন পূরণ করে, চাহিদা পূরণ করে এরপর মরে বিলুপ্ত হয়ে যায়। মানুষ তো পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফা। সে আল্লাহ পাকের বিধান মোতাবেক চলবে, অন্যদেরও তাঁর বিধান মোতাবেক পরিচালিত করবে। যে গুণ ও যোগ্যতা আল্লাহ তাকে দান করেছেন তা ব্যবহার করে পৃথিবীতে সত্য-ন্যায়ের পতাকা উড্ডীন করবে। আর আখেরাতের জীবনে চিরস্থায়ী শান্তি ও সফলতা অর্জন করবে। এটা একজন মুসলিমের জীবন, মুমিনের জীবন, একজন মানুষের জীবন। কিন্তু পশ্চিামারা মুসলিম দেশগুলোতেও এই চিন্তা সরবরাহ করেছে যে, পার্থিব জীবনই তোমাদের একমাত্র জীবন; ব্যস, খাও দাও ফূর্তি করো, জীবনকে ভোগ করো, উপভোগ করো।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রব্যবস্থা এই চিন্তার দ্বারাই প্রভাবিত। এ কারণে তা আমাদের বলে না- তুমি একজন মুসলিম, তোমার জীবনের এক মহান লক্ষ্য আছে, তোমার একটি কালজয়ী আদর্শ আছে, সেই আদর্শ তোমার জীবনে প্রতিফলিত হতে হবে। তোমাকে ন্যায়ের পথে চলতে হবে, অন্যায়ের পথ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। যা ইচ্ছে তাই করা যাবে না; বরং যা করণীয় তাই করতে হবে। যে কোনো চাহিদা যে কোনো উপায়ে পূরণ করা যাবে না; বরং যে কাজটা তোমার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ, যে উপায় তোমার সম্মান ও মর্যাদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটা তোমাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সফলতার অধিকারী করবে, তোমাকে সেই কর্ম, সেই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। এই শিক্ষাগুলো আমাদেরকে দেওয়া হয় না।
তো কুরআন ও সুন্নাহ এজন্যই এসেছে যে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে পরিচিত করিয়ে দিবে, মানুষকে তার জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সন্ধান দান করবে।
কুরআন নাযিল হয়েছে কেন? মানুষকে সরল পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য।
الٓمّٓ .ذٰلِكَ الْكِتٰبُ لَا رَیْبَ فِیْهِ، هُدًی لِّلْمُتَّقِیْنَ.
কুরআন মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত। হিদায়াত মানে পথনির্দেশ। কুরআন আল্লাহভীরুদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। সঠিক পথের সন্ধান দান করে। এই কুরআনের প্রথম সূরায় সূরাতুল ফাতিহায় আল্লাহ পাক এই দুআ শিখিয়েছেন-
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ، صِرَاطَ الَّذِیْنَ اَنْعَمْتَ عَلَیْهِمْ غَیْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّیْنَ.
‘আমাদেরকে সরল পথে পরিচালিত করুন, ঐসকল মানুষের পথে, যাদের উপর আপনার নিআমত, আপনার দান, আপনার রহমত বর্ষিত হয়েছে। ঐসকল লোকের পথে নয়, যাদের উপরে আপনার গযব অবতীর্ণ হয়েছে; ওদের পথেও নয়, যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।’
কুরআন মাজীদের একেবারে শুরুতেই সূরাতুল ফাতিহা এই শিক্ষাটা আমাদের দান করে। এই দুআ করতে শেখায়; বরং আমাদের উপর ফরয করে দিয়েছে যে, প্রতি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে তোমরা এই সূরা পড়ো। এই সূরার মাঝে আল্লাহ্র কাছে এই দুআ করো।
এটা হিদায়াতের প্রার্থনা। এই আয়াতে আল্লাহ পাক শিখিয়েছেন- হিদায়াতের প্রার্থনা করতে; এর মানে হল, হিদায়াত অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। হিদায়াতের প্রয়োজন কেন? হিদায়াতের প্রয়োজন বোঝার জন্য ছোট্ট একটা দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। মনে কর, দুইটা কাফেলা-কাফেলা মানে পথিকদল, মুসাফিরদের জামাত; দুইটা কাফেলা পথ চলতে আরম্ভ করেছে। উভয় দলেরই উদ্দেশ্য, গন্তব্যে পৌঁছা। কিন্তু এক কাফেলা সঠিক পথের সন্ধান পেয়েছে এবং গন্তব্যের উদ্দেশ্যে সঠিক পথে চলতে আরম্ভ করেছে। আরেক কাফেলা সঠিক পথ পরিত্যাগ করে অন্য পথ অবলম্বন করেছে। এখানে উভয় কাফেলাই পথ চলছে, উভয়েরই সময় যাচ্ছে, পথ চলায় পরিশ্রম হচ্ছে, উভয় দলই পথ চলার জন্য যে পরিশ্রম করা দরকার করছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ দুই কাফেলাই কি গন্তব্যে পৌঁছবে? পৌঁছবে না। কোন্ কাফেলা গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে? যে কাফেলা সঠিক পথে চলছে। কিন্তু যে কাফেলা ভুল পথে চলছে তারা গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে না কেন? ওরাও তো পথ চলছে? ওরাও তো পথ চলার শ্রম স্বীকার করছে? কারণ, তারা গন্তব্যের সঠিক পথ ধরেনি।
তাহলে শুধু পরিশ্রম করলেই চলে না, পরিশ্রমটা সঠিক পথে হতে হয়। পথচলাটা সঠিক পথে হলে মানুষের চলৎশক্তি তাকে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। অন্যথায় সে চলার শক্তি ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। এই সঠিক পথ পেয়ে যাওয়াকে বলে ‘হিদায়াত’।
এজন্য হিদায়াত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ যদি হিাদায়াত পেয়ে যায় তাহলে তার গুণ ও যোগ্যতা তাকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। যদি সে হিদায়াত না পায় তাহলে তার জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, অর্থ, বিত্ত, সময়, জীবন সবকিছু সে ব্যবহার করবে, কিন্তু সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে না। হিদায়াত যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, হিদায়াত পেলে মানুষের সকল গুণ ও যোগ্যতা অর্থপূর্ণ হয়, হিদায়াত না পেলে মানুষের সকল গুণ ও যোগ্যতা অর্থহীন হয়ে পড়ে, ব্যর্থ হয়ে পড়ে, এজন্য আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদের প্রথম সূরায় তাঁর বান্দাদের হিদায়াত প্রার্থনা করতে শিখিয়েছেন-
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ.
‘আমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, সঠিক পথের সন্ধান দান করুন।’
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ.
এই কথা বলার পর আল্লাহ পাক তিন প্রকারের মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, কুরআন শুধু নীতি বা দর্শন নয় যে, এটা শুধু মানুষের মস্তিষ্কে বসবাস করে, বা লাইব্রেরীর কোণায়, বইয়ের পাতায় বসবাস করে; বরং কুরআন ও ইসলাম এক আদর্শ, যা মানুষের কর্ম ও জীবনে বাস্তবায়িত হবে। কুরআন ও ইসলাম হল ঐ আদর্শ, যে আদর্শ মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে এবং বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে হবে; আর তখনই সে সুফল লাভ করবে।
তো আল্লাহ পাক اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَকথাটা বলার পরে তিন শ্রেণির মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এক শ্রেণি সম্পর্কে প্রার্থনা করতে বলেছেন। হে আল্লাহ আমাদেরকে ওদের মতো বানান, আর দুই শ্রেণি সম্পর্কে বলেছেন, হে আল্লাহ আমাদেরকে ওদের মত বানাবেন না।
اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِیْمَ. صِرَاطَ الَّذِیْنَ اَنْعَمْتَ عَلَیْهِمْ ... .
আমাদেরকে তাদের পথে পরিচালিত করুন, যাদের উপর আপনার দান, আপনার করুণা বর্ষণ করেছেন। তারা কারা? কুরআন মাজীদ বলছে-
النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیْقِیْنَ وَ الشُّهَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیْنَ
নবী, ছিদ্দীক, শহীদ, ছালেহ এককথায় হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর ছাহাবায়ে কেরাম এবং যারা ছাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করেছেন।
وَ السّٰبِقُوْنَ الْاَوَّلُوْنَ مِنَ الْمُهٰجِرِیْنَ وَ الْاَنْصَارِ وَ الَّذِیْنَ اتَّبَعُوْهُمْ بِاِحْسَانٍ رَّضِیَ اللهُ عَنْهُمْ وَ رَضُوْا عَنْهُ .
হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং যুগে যুগে যারা আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করেছেন, এরা হলেন ঐ জামাত, যাদের উপর আল্লাহ্র দয়া হয়েছে। আল্লাহ পাক দয়া করে যাদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দান করেছেন। তাদের পথে চললেই জীবন সুন্দর হবে, অর্থপূর্ণ হবে। যে উদ্দেশ্যে তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
আর দুই শ্রেণি; এই দুই শ্রেণি সম্পর্কে আল্লাহ পাকের নিকট আশ্রয় চাও
غَیْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ وَ لَا الضَّآلِّیْنَ الْمَغْضُوْبِ عَلَیْهِمْ.
‘যাদের উপর আপনার ক্রোধ নিপতিত হয়েছে।’ হাদীস শরীফে আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে- এরা হল, ইয়াহুদ-ইহুদী।
وَ لَا الضَّآلِّیْنَ ‘এবং যারা গোমরাহ হয়েছে।’ হাদীস শরীফে এসেছে- এরা হল, নাসারা-খ্রিস্টান।
তো কুরআন মাজীদ যেরকম সূরাতুল ফাতিহায় আমাদেরকে সীরাতুল মুস্তাকীমের-সরল-সঠিক পথের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবে সেই সরল পথের উপর কারা ছিলেন তাদের বাস্তব উদাহরণও আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। তাহলে একজন মুসলিম হিসাবে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পথে চলতে হবে। যারা সাহাবায়ে কেরামের অনুসারী, দ্বীনের ধারক-বাহক, উলামা- মাশায়েখ তাদের পথে চলতে হবে। তাহলে আমাদের জীবন সফল হবে।
তো মুসলিম হিসাবে, একজন মানুষ হিসাবে আমাদের জীবনের মূল্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা প্রয়োজন। যদি আমরা আমাদের জীবনের মূল্য সম্পর্কে চিন্তা করি তাহলে কুরআন ও সুন্নাহ্র মাধ্যমে আল্লাহ পাক আমাদেরকে যে সঠিক পথের সন্ধান দান করেছেন তার মূল্যও আমাদের বুঝে আসবে এবং সেই পথে চলা আমাদের জন্য সহজ হবে। আমাদের তরুণ বন্ধুদের জীবনটা হোক আলোকিত জীবন, জীবনের এই প্রারম্ভেই পেয়ে যাক সঠিক গন্তব্যের চেতনা এবং সেই গন্তব্যে পৌঁছার সঠিক পথের সন্ধান। এই শুভ কামনা নিয়ে কথা এখানেই শেষ করছি।
وآخر دعوانا أَنِ الْحَمْدُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.