বহু আকাবিরের সোহবতধন্য মাওলানা আলী আহমাদ রাহ.
[মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব রাহ. আমার দাদা শ্বশুর, সে সুবাদে বিভিন্ন সময় তাঁর কাছে যাওয়ার সুযোগ হত। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতা সত্ত্বেও সর্বদা তাঁকে যিকির ও কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকতে দেখতাম। তিনি বড় দরদ ও আবেগ নিয়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ও আকাবিরে দেওবন্দের বিভিন্ন হেকায়েত ও হালাতের তাযকেরা করতেন। যার বেশ কিছু অংশ আমার মুসাজ্জিলায় সংরক্ষিত আছে। -যাকারিয়া আবদুল ওয়াহহাব]
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব, যিনি তাঁর সকল কর্মক্ষেত্রে ‘লাকসামের হুযূর’ নামে পরিচিত। প্রবীণ এই ব্যক্তিত্ব মাওলানা ইবরাহীম বলিয়াভী রাহ., শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহ., মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রাহ., কারী তৈয়্যব রাহ., মুফতী আমীমুল ইহসান রাহ., টুমচরের বড় হুযূর মাওলানা আশরাফ আলী ছাহেব রাহ., হাফেজ্জী হুযূর রাহ. ও হযরতজী ইউসুফ রাহ. প্রমুখ আকাবিরের সোহবত লাভ করেছেন। তাঁদের স্মৃতিচারণে তিনি আবেগাপ্লুত হতেন এবং তার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ত।
জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষা
তিনি ১১ বৈশাখ, ১৩৩৪ বঙ্গাব্দ (আনুমানিক ২৪ এপ্রিল, ১৯২৭ ঈসাব্দ) রবিবার, রাত প্রায় ১১ টার সময় কুমিল্লা জেলাধীন সদর দক্ষিণ থানার (জালগাঁও রোডে) খিলপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, ‘জন্ম-তথ্যটি আমার চাচা লিখে রেখেছিলেন।’
তিনি ১৯৩৭ ঈসাব্দের জানুয়ারি মাসে ৯ বছর বয়সে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে পড়াশুনার পাশাপাশি একজন কারী ছাহেবের নিকট মক্তবে সকালে কুরআন মাজীদ পড়তেন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ১৯৪২ ঈসাব্দে কুমিল্লা জেলাধীন লাকসাম থানায় অবস্থিত যুক্তিখোলা সিনিয়র মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিনি হাফতুম জামাত (বর্তমান অষ্টম শ্রেণি) পর্যন্ত পড়ালেখা করেন।
১৯৪৪ ঈসাব্দের জানুয়ারি মাসে লক্ষ্মীপুরস্থ টুমচর মাদরাসায় চার বছর পাঞ্জুম জামাত পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। পাঞ্জুম জামাতে (বর্তমান দাখিল শ্রেণি) তিনি নোয়াখালী জমিয়তের পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে বৃত্তি লাভ করেন।[1]১ মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব টুমচর মাদরাসা ও এলাকার প্রতি অনেক বেশি দুর্বল ছিলেন। ছাত্রজামানা, শিক্ষকতা ও মাদরাসা-পরিচালনার সময়কাল মিলিয়ে জীবনের প্রায় ষাট বছর তিনি সেখানে কাটিয়েছেন। বৃদ্ধ বয়সেও সেখানে গেলে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন।
টুমচর মাদরাসা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, ১৯২১ ঈসাব্দে মাওলানা সাআদুল্লাহ নামে এক ব্যক্তি টুমচর মাদরাসার সূচনা করেন। তখন এটি প্রাথমিক পর্যায়ের মাদরাসা ছিল। বড় হুযূর মাওলানা আশরাফ আলী রাহ.-এর আগমনের পরে এটা দ্রুত উন্নতি লাভ করে। তিনি ছারছীনার পীর মাওলানা নেছারুদ্দীন আহমাদ ছাহেবের খলীফা ছিলেন। কিন্তু পীর-মুরীদির কাজ করতেন না। তাঁর একজন মুরীদও ছিল না। তিনি মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রাহ.-এর কিতাবসমূহ প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ ও মুতালাআ করতেন এবং থানভী রাহ.-এর ইলমী তাহকীকের প্রতি তাঁর গভীর আস্থা ছিল।
তিনি বলেন, আমি ছোটবেলায় সেখানে ভর্তি হই। বড় হুযূর রাহ. ছিলেন ছাত্র-গড়ার প্রতি মনোযোগী একজন যোগ্য শিক্ষক। সবসময় এ ভাবনায় থাকতেন, কীভাবে ছাত্রদের যোগ্য করে গড়ে তোলা যাবে। রাতের বেলায়ও ছাত্রদের খোঁজখবর নিতেন, ছাত্ররা পড়াশুনা করছে কি না তদারকি করতেন। কখনো কোথাও দাওয়াতে গেলে সাথে একজন ছাত্র নিয়ে যেতেন। তাকে আগে থেকে বলে রাখতেন, তুমি অমুক কিতাবের যে পর্যন্ত পড়েছ, তা দেখে নিও। সারা পথে এই কিতাবের খুঁটিনাটি সকল বিষয় তাকে জিজ্ঞাসা করতেন। যাতে উক্ত কিতাব পথেই অনেকটা আত্মস্থ হয়ে যায়। তিনি মাদরাসার কুতুবখানায় থাকতেন। যখন গোসলের জন্য পুকুরে যেতেন, লুঙ্গি-গামছা ইত্যাদি সাথে নিয়ে একজন ছাত্র থাকত। যাওয়ার পথে মাদরাসার ছাত্রদের নেগরানীর পাশাপাশি উক্ত ছাত্রকে বিভিন্ন সীগাহ, মাসদার, গর্দান অর্থাৎ নাহু সরফ সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন।
তিনি সবসময় মাদরাসায় থাকতেন। বাড়ি মাদরাসার নিকটেই ছিল। শুধু আসরের সময় বাড়ি যেতেন। মাগরিবের পরে আবার চলে আসতেন।
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, বড় হুযূর রাহ. খুব ধীরস্থিরভাবে সবক পড়াতেন। কোনো মুদাররিস দরসে আসতে দেরি করলে খুব অসন্তুষ্ট হতেন। ছাত্রদের প্রতি নির্দেশনা ছিল, উস্তায আসতে দশ মিনিট দেরি হলে তাঁকে যেন জানানো হয়। কখনো এমন হয়েছে যে, বড় হুযূর রাহ. জ¦রের কারণে লেপ গায়ে দিয়ে শুয়ে আছেন; কোনো ছাত্র এসে বলল, আমাদের শিক্ষক এখনো আসেননি। জ্বর নিয়েই তিনি তখন লেপ গায়ে দিয়ে দরসে চলে যেতেন; যেন কোনো ঘণ্টা খালি না থাকে। টুমচর মাদরাসার বৈশিষ্ট্য ছিল; যেদিন মাদরাসা বন্ধ হবে সেদিনও বিকাল চারটা পর্যন্ত ক্লাস চলত এবং খোলার তারিখ ১ম ঘণ্টায় খুব গুরুত্বের সাথে ছবক হত। সকল ছাত্র-শিক্ষকের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক ছিল। কেউ অনুপস্থিত থাকতে পারত না।
উচ্চশিক্ষা
১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারিতে তিনি নোয়াখালী ইসলামিয়া আলিয়া মাদরাসায় চাহারুম জামাতে (বর্তমান আলিম জামাত) ভর্তি হন। সেখানে মোট চার বছর পড়ালেখা করেন।
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, সে বছর রমযান মাসে আমি মোমিনবাড়ীতে কারী ইবরাহীম ছাহেব রাহ.-এর নিকট কেরাত পড়ি। কারী ইবরাহীম ছাহেব সাহারানপুর মাদরাসা থেকে ফারেগ, তিনি বহুত বড় মুহাক্কিক কারী ছিলেন।
১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাসে ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় কামিল (ফিকহ বিভাগে) ভর্তি হয়ে ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে পড়াশুনা সম্পন্ন করেন। ঢাকা আলিয়া মাদরাসায় থাকাকালীন দুই বছর মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রাহ.-এর নিকট বুখারী ১ম খ- ও মুফতী আমীমুল ইহসান ছাহেবের নিকট বুখারী ২য় খ- পড়েন।[2]২
হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর সাথে ইসলাহী সম্পর্ক
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, ‘হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর সাথে আমার ইসলাহী সম্পর্ক ছিল। আমার বিভিন্ন অবস্থা জানিয়ে হযরতকে চিঠি লিখতাম; তিনি উত্তর দিতেন। চৈত্র-বৈশাখ মাসে গরমের সময়ে যখন দিন বড় হত তখন ঢাকা আলিয়া মাদরাসা ছুটি হলে আমি লালবাগ শাহী মসজিদে গিয়ে আসরের নামায পড়তাম এবং হাফেজ্জী হুযূরের মজলিসে বসতাম।
দারুল উলূম দেওবন্দ গমন
মাদরাসায়ে আলিয়া ঢাকা হতে পড়াশুনা শেষ করার পর তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভিসা না হওয়ায় হাফেজ্জী হুযূর রাহ. তাঁকে বর্তমান লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানাধীন ফতেহপুর আলিয়া মাদরাসায় যোগদান করার পরামর্শ দেন। তখন হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর সাথে সদরঘাট হতে লঞ্চযোগে চাঁদপুর যান। সেখানে হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর সাথে তাঁর এক ঘনিষ্ঠজনের বাড়িতে কয়েক দিন অবস্থান করেন। সেখান থেকে একই নৌকায় রায়পুরে আসেন। এ সময় তিনি প্রায় দশ দিন খুব কাছ থেকে হাফেজ্জী হুযূরের সোহবত লাভ করেন। তারপর তিনি ফতেহপুর মাদরাসায় যোগদান করেন। সেখানে থাকাকালীন হাফেজ্জী হুযূর রাহ. যতদিন বাড়িতে থাকতেন ততদিন নিয়মিত হাফেজ্জী হুযূর রাহ.-এর মজলিসে আসতেন।
ইতিমধ্যে তিনি দেওবন্দ যাওয়ার ভিসা পেয়ে যান এবং শাবান মাস পর্যন্ত ফতেহপুর মাদরাসায় পড়িয়ে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে দেওবন্দ মাদরাসায় ফুনূনাতে ভর্তি হন। সেখানে তিনি আল্লামা ইবরাহীম বলয়াভী রাহ., কারী তৈয়্যব ছাহেব ও শায়খুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহ. প্রমুখের নিকট পড়েন। মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, আমি দেওবন্দে আল্লামা ইবরাহীম বলয়াভী রাহ.-এর নিকট শরহে আকায়েদের হাশিয়া-‘খেয়ালী’ পড়ি। আর মুহতামিম কারী তৈয়ব ছাহেবের নিকট পড়ি ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’। তিনি মাগরিবের পরে কিতাবটি পড়াতেন। কারী তৈয়্যব ছাহেব রাহ.-এর বাসায় রাত্রে অনেক মজলিস হত, সেখানেও শরীক হতাম। আমি ভাবতাম, এসেছি মাত্র এক বছরের জন্য! যত বেশি ফায়েদা হাসিল করা যায়। শায়খুল ইসলাম মাদানী রাহ.-এর খানকার ইসলাহী মজলিসে শরীক হতাম। খানকার পাশে মসজিদ ছিল, অনেক সময় সেখানে নামায পড়েছি। বি-বাড়ীয়ার মাওলানা নূরুল্লাহ ছাহেব রাহ. সেখানের ইমাম ছিলেন।
শায়খুল ইসলাম মাদানী রাহ.-এর দরস ও ব্যক্তিগত বিষয়ের স্মৃতিচারণ
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, মাওলানা হুসাইন আহমাদ মাদানী রাহ. সাধারণত দুপুর ১২টার দিকে বুখারী শরীফের একটি দরস দিতেন আর রাতে এশার পর ৯/১০টা থেকে ১২/১টা পর্যন্ত প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা দরস দিতেন। এসময় মাঝে মাঝে ঘুম দূর করার জন্য ছাত্ররা মাদানী রাহ.-কে পরচা (চিরকুট) দিত। তিনি সে পরচাগুলো উচ্চ আওয়াজে পড়ে শোনাতেন। তাঁর দরসে শিক্ষণীয় অনেক মজার মজার কথা হত। মাদানী রাহ.-এর দরসে দারুল উলূম দেওবন্দের অনেক বড় বড় মুদাররিস শরীক হতেন।
মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, মাদানী রাহ. ফুল খুব পছন্দ করতেন। কেউ হযরতের সামনে ফুল পেশ করলে খুব খুশি হতেন। মাদরাসার সামনে ফুলবাগান ছিল। ফুলবাগানের পরিচর্যার জন্য দু’জন অভিজ্ঞ মালি ছিল।
কর্মজীবন
দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে দেশে ফিরে তিনি বরিশালের ঝালকাঠিতে এক মাদরাসায় কিছুদিন খেদমত করেন। তারপর তাঁর উস্তায টুমচর মাদরাসার ছোট হুযূর মাওলানা আব্দুস সুবহান ছাহেব রাহ.-এর বিশেষ অনুরোধে টুমচর মাদরাসায় সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ১৯৫৬ ঈসাব্দ হতে ১৯৬৯ ঈসাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর ছিলেন।
টুমচর মাদরাসায় থাকাকালীন মাওলানা লুৎফর রহমান ছাহেব রাহ.-এর মাধ্যমে তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত হন। ১৩৮৪ হিজরী মোতাবেক ১৯৬৫ ঈসাব্দে হযরতজী ইউসুফ ছাহেব রাহ. (মৃত্যু : ২৯ জিলক্বদ, ১৩৮৪ হি./২ এপ্রিল, ১৯৬৫ ঈ.) বাংলাদেশে আসেন। তখন নোয়াখালী ও চট্টগ্রামে সফরকালীন তিনি তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেন। এ ছাড়াও তাবলীগের মুরব্বী মাওলানা আলী আকবর ছাহেব রাহ. (জন্ম : ১৯০৮ ঈ.-মৃত্যু ১৯৯৩ ঈ.), নোয়াখালীর মাওলানা মুনীর ছাহেব ও মাওলানা আব্দুল আযীয ছাহেব রাহ. প্রমুখের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল।
পরবর্তী সময়ে তাঁদের অনুরোধে ১৯৬৯ ঈসাব্দে কুমিল্লার নূর মসজিদ (তাবলীগের মারকায মসজিদ) সংলগ্ন নূরুল উলূম মাদরাসায় কিতাব বিভাগের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে শরহে জামী জামাত পর্যন্ত নিয়মিত পড়ানো হত। কখনো বিশেষ ছাত্রদের অনুরোধে জালালাইন ও মেশকাত শরীফ পড়াতেন। তিনি ১৯৬৯ ঈসাব্দ থেকে ১৯৮২ ঈসাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর সেখানে ছিলেন।
১৯৮২ ঈসাব্দে টুমচর মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাফিজুল্লাহ ছাহেব রাহ. -এর বিশেষ অনুরোধে তিনি পুনরায় টুমচর মাদরাসায় যোগদান করেন এবং পরবর্তী সময়ে তিনি তাঁকে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে নিয়োগ দেন। ১৯৮৪ ঈসাব্দে মাওলানা হাফিজুল্লাহ ছাহেব[3]৩ রাহ.-এর ইন্তেকালের পর তিনি টুমচর মাদরাসার প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৮ ঈসাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৪ বছর উক্ত পদে দায়িত্ব পালন করে অবসর গ্রহণ করেন।
অবসর গ্রহণের পর বেশ কয়েক বছর তাঁর বাড়ির পার্শ্ববর্তী আহমেদাবাদ (চাউল ভা-ার) ‘হেমায়েতে ইসলাম কওমী মাদরাসা’ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।
ইন্তেকাল
এ মহান ব্যক্তিত্ব গত ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৩৯ হিজরী মোতাবেক ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ঈসাব্দ, রোজ মঙ্গলবার, দুপুর ১১ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আল্লাহুম্মাগফির লাহু ওয়ারহামহু।
মৃত্যুর সময় মরহুমের বয়স ছিল ৯১ বছর। তাঁকে হেমায়েতে ইসলাম মাদরাসা-মসজিদের উত্তর পাশে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়।
মরহুম ছিলেন পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যার পিতা। তিনি তাঁর সকল ছেলেকে যোগ্য আলেম হিসেবে গড়ে তোলেন। বর্তমানে সকল সন্তান দ্বীনী খেদমতের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ছাত্র ও শিক্ষকতার জীবন মিলিয়ে ষাট বছরের বেশি সময় মরহুম মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব রাহ. আলিয়া মাদরাসাতে কাটিয়েছেন। তা সত্ত্বেও চার ছেলেকে কওমী মাদরাসাতে লেখাপড়া করান এবং মেয়েদেরকে কওমী আলেমদের নিকট বিবাহ দেন।
তিনি যুগ ও সমাজসচেতন একজন আলিমেদ্বীন ছিলেন। সর্বদা তাকওয়া ম-িত জীবন-যাপন করতেন। নিয়মানুবর্তিতার সঙ্গে সবকিছু পালন করতেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক সুন্নাতের অনুসারী। তাঁকে দেখলে আল্লাহকে স্মরণ হত, তাঁর কথায় আখেরাতের ইয়াদ তাজা হতো। আল্লাহ তাআলা মরহুমকে মাগফিরাত করুন, জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন- আমীন।
[1] ১. মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, সে সময়ে দাখিল, আলিম ইত্যাদি শব্দের প্রচলন ছিল না।
[2]২. মাওলানা আলী আহমাদ ছাহেব বলেন, ‘মাওলানা যফর আহমাদ উসমানী রাহ. উর্দুতে পড়াতেন। ছাত্ররাও দরসে তাঁর সাথে উর্দুতে কথাবার্তা বলত। তৎকালীন আলিয়া মাদরাসাগুলোতে উর্দু-ফার্সীর ব্যাপক প্রচলন ছিল।’
[3] ৩. বড় হুযূর রাহ.-এর জামাতা এবং টুমচর মাদরাসার বর্তমান প্রিন্সিপাল হারুন আলমাদানী ছাহেব (হাফিযাহুল্লাহ)-এর পিতা