গোসতাখির সমুচিত সাজা
[ দৈনিক জঙ্গ পত্রিকা থেকে গৃহিত ও অনুদিত। অনুবাদক : ইবনে নসীব]
কথায় বলে, ‘ব্যবহারে বংশের পরিচয়। কথাটা মিথ্যা নয়। অন্তত ডেনমার্কের কুখ্যাত কার্টুনিস্ট লার্স ভিল্কস সম্পর্কে যে সর্বাংশে সত্য- এতে কোনো সন্দেহ নেই। ভক্তি ও ভালবাসার প্রতি তাঁর চরম বিরাগ, বিশেষত জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মুসলিম উম্মাহর ভালবাসা তার সীমাহীন বিরক্তি ও মর্মপীড়ার কারণ। তার বিশ্বাসই হয় না যে, দর্শন ছাড়াও ভালবাসা হয় এবং স্পর্শ ছাড়াও প্রেমাষ্পদের সান্নিধ্য পাওয়া যায়। ভালবাসার এই জগত সম্পর্কেই সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বস্তুত প্রবৃত্তির স্থুল চাহিদা পূরণ করা ছাড়া জগতের আর সকল বিষয় তার কাছে অবাস্তব।
এই কার্টুনিস্টের ‘অপকর্ম’গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, কুকুর-প্রীতিতে সে তার সমগোত্রীয়দের চেয়েও অগ্রসর। বুঝতে কষ্ট হয় না, সারমেয়-চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্যটি তার কাছে সর্বাধিক আকর্ষণীয়!
গত মঙ্গলবার তাকে সুইডেনের আপশালা ইউনিভার্সিটিতে বক্তৃতা করতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। হতভাগা সেখানেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অবমাননা করল। সে হয়তো ভেবেছিল, এবারও বাকস্বাধীনতার ধুয়া তুলে পার পেয়ে যাবে, কিন' তার দুর্ভাগ্য, কিছু ‘বেরসিক’ যুবক ঐ হলে উপস্থিত ছিল। তারা বিদ্যুৎগতিতে মঞ্চের উপর উঠে এল এবং মুহূর্তের মধ্যে তার চেহারার মানচিত্রটাই বদলে দিল। কৌতুকের বিষয় হচ্ছে, ইতিপূর্বে সে ঘোষণা দিয়েছিল যে, মুসলমান ‘সন্ত্রাসী’দেরকে সে থোড়াই কেয়ার করে, এমনকি ঐ ‘সন্ত্রাসীদের’কে শায়েস্তা করার জন্য তার সঙ্গে নাকি সবসময় একটি চাইনিজ কুড়াল থাকে। কিন্তু এই বীরপুরুষ কয়েকজন নিরস্ত্র যুবকের কিল ঘুষি খেয়ে এমনভাবে স্টেজের পিছনে লুকিয়েছিল যে, সেখান থেকে বের করে আনতে গার্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকজনকে অনেক কসরত করতে হয়েছিল।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষেরও টনক নড়েছে। তারা ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে যে, ভবিষ্যতে এই ব্যক্তিকে কোনো ধরনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। কারণ তার বিতর্কিত আচরণের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়েছে।
অন্যদিকে মুহাম্মাদ আলমানী যিনি সর্বপ্রথম স্টেজে উঠে ঐ হতভাগাকে পাকড়াও করেছিলেন, জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাসূলের অবমাননাকারী লার্স ভিল্কসের সমুচিত সাজা হয়েছে। আমার নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে কোনোরূপ গোসতাখি বরদাশত করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাই আমার প্রতিক্রিয়া জানতে না চেয়ে ঐ হতভাগাকে জিজ্ঞাসা করুন, কেন সে এমন কাজ করল।’’
হযরত আলী রা.কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি আপনাদের মহব্বত কেমন ছিল? তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘আল্লাহর কসম! তিনি আমাদের সহায়-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি এবং পিপাসার সময় ঠাণ্ডা পানির চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন।’
হযরত বিলালের মৃত্যুর সময় তাঁর স্ত্রী নিকটে ছিলেন। বেদনার আতিশয্যে তার যবান থেকে বের হল, ‘ওয়া হুয্নাহ!’ (হায়! তোমার বিচ্ছেদ-যাতনা!) তখন হযরত বিলাল বললেন, এমন বলো না; বরং বল-‘ওয়া তরাবাহ! গাদান আলকাল আহিব্বাতা, মুহাম্মাদান ওয়া আসহাবাহ’ (আহ! কী আনন্দ! এখনই আমি মিলিত হব আমার সর্বাধিক প্রিয়জন-মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের সাথে!
এক নারী উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রা.-এর খিদমতে হাজির হয়ে আবেদন করলেন, অনুগ্রহ করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর মোবারক থেকে চাদরখানা সরিয়ে দিন। উম্মুল মু’মিনীন যেই মাত্র চাদর সরালেন সঙ্গে সঙ্গে সেই নারী জার জার হয়ে কাঁদতে আরম্ভ করলেন। এবং এত কাঁদলেন যে, সেখানেই তাঁর ইন্তেকাল হয়ে গেল।
এই হল নবী-প্রেম। ইতিহাসের পাতা থেকে এমন দৃষ্টান্ত যদি লিখতে থাকি তাহলে কলমের কালি ফুরিয়ে যাবে, কিন্তু সে ইতিহাস লিখে শেষ করা যাবে না।
সভ্যতার তকমাধারী ঐসব দু’ পেয়ে জানোয়ার এই পরম সত্য কীভাবে অনুধাবন করবে, যাদের জীবন-যৌবনের পরম প্রাপ্তিই হল প্রবৃত্তির অনুগামিতা? তাই চিন্তা ও হৃদয়ের ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত ঐসব নরাধমের ততক্ষণ পর্যন্ত বোধোদয় ঘটে না যতক্ষণ তাদের পিঠে বর্ষিত না হয় শাস্তির তাযিয়ানা।