যিলহজ্ব ১৪৩৮   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৭

কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ড. আবদুল কাদীর খান

আজকের অবসরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরা যাক। সবার আগে ইসলাম সম্পর্কে কয়েকজন পশ্চিমা পণ্ডিত ও বিজ্ঞজনের অভিব্যক্তি পেশ করছি।

এক. ইসলাম অবশ্যই এক সময় গোটা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে। কেননা এটি জ্ঞান ও বুদ্ধির সমন্বিত এক ধর্ম। -লিও টলস্টয় (১৮২৮-১৯১০)

দুই. ইসলামের পুনর্জাগরণ পর্যন্ত অনেক প্রজন্ম হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকবে। এরপর হঠাৎ করেই গোটা বিশ্ব ইসলাম গ্রহণ করে নিবে। আর তখন সবাই খুশি হবে এবং দুনিয়ায় শান্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করবে। -হার্বার্ট জর্জ ওয়েলস (১৮৪৬-১৯৪৬)

তিন. আমি নিশ্চিত যে, মুসলমানরা এই উন্নতি, শান্তি ও নিরাপত্তা নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় করেছে, যা ইহুদিরা করতে পারেনি। ইসলামের মধ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের শক্তি আছে। -আলবার্ট আইনস্টাইন (১৮৭৯-১৯৫৫)

চার. আমাদের মধ্যে যে বিশ্বাস আছে এবং যা আমাদের চেয়ে অনেক উত্তম তা হল ইসলাম। আমরা যদি তা অনুধাবনের জন্য নিজেদের দিল-দেমাগ খোলা রাখি তবে আমাদের জন্য অনেক ভালো হবে। -হস্টন স্মিথ (১৯১৯-২০১৬)

পাঁচ. ইউরোপের রাষ্ট্রীয় ধর্ম হবে ইসলাম। আর এর প্রসিদ্ধ শহর হবে ইসলামী রাজধানী। -মাইকেল নস্ট্রাডামাস (১৫০৩-১৫৬৬)

ছয়. আমি ইসলাম সম্পর্কে যথেষ্ট অধ্যয়ন করেছি। আমার এই বিশ্বাস জন্মেছে যে, ইসলাম সমগ্র বিশ্বের এবং গোটা মানবজাতির ধর্ম হওয়া উচিত। গোটা ইউরোপেই ইসলাম বিস্তার লাভ করবে এবং ইউরোপেই ইসলামের বড় চিন্তাবিদ তৈরি হবে। আর এক সময়ে ইসলামই প্রকৃতপক্ষে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আশাব্যঞ্জক ও পথপ্রদর্শনকারী ধর্ম হবে। -লর্ড বারট্রান্ড রাসেল (১৮৭২-১৯৭০)

সাত. ইসলাম শুধু শান্তি ও সমঝোতারই দীক্ষা দেয়। খ্রিস্টানদেরকে আহ্বান জানাও- তারা যেন এই সংস্কারক ধর্মের মূল্যায়ণ করে।-গোস্টা লোবন (১৮৪১-১৯৩১)

আট. একদিন গোটা বিশ্বই ইসলামকে বরণ করে নিবে। ইসলাম নামটি ব্যবহার না করলেও তারা অবশ্যই রূপকভাবে তা গ্রহণ করবে। পশ্চিমা বিশ্বও একদিন ইসলাম গ্রহণ করবে। আর ইসলাম ঐসব লোকদের ধর্ম হবে, যারা দুনিয়াতে পড়াশোনা করে। ইসলাম বিশ্বের সবচেয়ে উত্তম ধর্ম। -জর্জ বার্নার্ড শ (১৮৫৬-১৯৫০)

নয়. আজ কিংবা কাল আমাদের সবাইকে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। এটিই সত্য ধর্ম। যদি কেউ আমাকে মুসলিম বলে ডাকে আমি মোটেই বিরক্ত হব না। আমি এই সত্য ধর্মকে গ্রহণ করছি। -জোহান গেইথ (১৭৪৯-১৮৩২)

 

। দুই।

পারস্পরিক বিষয়াদির সংশোধন ও শোধরানোর জন্য কুরআন মাজীদের নিম্নোক্ত নয়টি বাণী কতই না গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা তা পালনে যত্নবান হতাম!

এক. হে মুমিনগণ! কোনো ফাসেক যদি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে তবে ভালোভাবে যাচাই করে দেখবে। যাতে তোমরা অজ্ঞতাবশত কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না বস। ফলে নিজেদের কৃতকর্মের কারণে তোমাদেরকে অনুতপ্ত হতে হয়।-সূরা হুজুরাত (৪৯) : ৬

দুই. প্রকৃতপক্ষে সমস্ত মুসলিম ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করে দাও।

তিন. মুসলিমদের দুটি দল আত্মকলহে লিপ্ত হলে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। অতপর তাদের একটি দল যদি অন্য দলের উপর  বাড়াবাড়ি করে তবে যে দল বাড়াবাড়ি করছে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো, যাবত না সে আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। সুতরাং যদি ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গতভাবে মীমাংসা করে দিও এবং (প্রতিটি বিষয়ে) ইনসাফ করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালবাসেন।

চার. হে মুমিনগণ! পুরুষগণ যেন অপর পুরুষদের উপহাস না করে। তারা (অর্থাৎ যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম হতে পারে।

পাঁচ. তোমরা একে অন্যকে দোষারোপ করো না।

ছয়. একে অন্যকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না।

সাত. হে মুমিনগণ! অনেক রকম অনুমান থেকে বেঁচে থাক। কোনো কোনো অনুমান গুনাহ।

আট. তোমরা কারো গোপন ত্রুটির অনুসন্ধানে পড়ো না।

নয়. তোমরা একে অন্যের গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে পছন্দ করবে? -সূরা হুজুরাত (৪৯) : ৯-১২

 

। তিন।

কাতার একটি ছোট্ট মুসলিম দেশ। সম্প্রতি কয়েকটি আরব দেশ এটিকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। প্রিয় পাঠক! এই ছোট্ট দেশটির কিছু বড় বড় বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।

এক. কাতার বিশ্নের সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশ। যার মাথাপিছু বার্ষিক আয় এক লক্ষ ছেচল্লিশ হাজার ডলার।

দুই. পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মিলিয়নিয়ারের দেশ। যেখানে আছে ৩০ হাজার মিলিয়নিয়ার।

তিন. আরব দেশগুলোর মধ্যে প্রথম এবং পৃথিবীর চতুর্থ দেশ, যে উন্নত শিক্ষা নিশ্চিত করে। জাপানের পরই এর অবস্থান।

চার. আরব বিশ্বে প্রথম এবং পৃথিবীর ষষ্ঠ দেশ, যে উন্নত চিকিৎসাসেবা প্রদান করে।

পাঁচ. আরব দেশগুলোর প্রথম এবং পৃথিবীর বিংশ দেশ, যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করে যাচ্ছে।

ছয়. পৃথিবীর দ্বিতীয় দেশ, যেখানে আছে পূর্ণ শান্তি ও নিরাপত্তা। আর বিশৃঙ্খলা, দাঙ্গা-সন্ত্রাস নেই বললেই চলে।

সাত. আরবের প্রথম এবং পৃথিবীর দ্বাদশ দেশ, যে উন্নতি-অগ্রগতির প্রতিযোগিতায় অগ্রসরমান।

আট. পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে কোনো বেকার নেই।

নয়. কাতারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক দশমিক এক ট্রিলিয়ন বা এগার শ বিলিয়ন কাতারী রিয়াল সমপরিমাণ।

দশ. কাতার ব্যাংক আরব দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ব্যাংক। যার মোট মূলধন পাঁচ শ বিশ বিলিয়ন রিয়াল।

এগার. বিভিন্ন দেশে কাতারের বিনিয়োগকৃত অর্থের পরিমাণ তিন শ বিলিয়ন রিয়াল।

বার. ইউরোপের প্রসিদ্ধ বার্কলেইজ ব্যাংক ও সুইস ব্যাংকের বড় অংশীদার কাতার।

তের. লন্ডনের বিশ্বখ্যাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হেরোডস (ঐবৎৎড়ফং)-এর মালিক কাতার।

চৌদ্দ. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণার জন্য কাতার প্রতি বছর ছয় বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়ে থাকে।

পনের. কাতার এয়ারওয়েজের আছে নতুন ও উন্নতমানের ১৭০টি এয়ারক্রাফট।

ষোল. কাতার টেলিকম বিশ্বের সতেরটি দেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। যার গ্রাহক সংখ্যা ১০৭ মিলিয়ন।

সতের. লন্ডনের একটি ঐতিহাসিক টাওয়ারের ২৮ শতাংশের মালিক কাতার।

আঠার. কাতারের সকল নাগরিককে দেশে ও দেশের বাইরে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।

উনিশ. কাতার পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে নাগরিকদেরকে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ করা হয়।

বিশ. কাতারের হামাদ বিমান বন্দর বিশ্বের অন্যতম উন্নত বিমান বন্দর।

একুশ. পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে কোনো ট্যাক্স নেই।

বাইশ. পৃথিবীর প্রথম ফাইবার অপটিক স্থাপনকারী দেশ কাতার।

তেইশ. উদ্বৃত্ত অর্থনীতির বিচারে বিশ্বের ১নং দেশ কাতার।

চব্বিশ. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও ধ্বস-ক্ষয় থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ দেশ কাতার।

পঁচিশ. আরব দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির ইন্টারনেটের দেশ কাতার।

ছাব্বিশ. খাদ্যদ্রব্যের সহজলভ্যতা ও মজুদের দিক থেকে আরব দেশগুলোর মধ্যে ১নং দেশ কাতার।

সাতাশ. মানব উন্নয়ন সূচকে কাতার ১ নম্বর দেশ।

আঠাশ. ক্যাপিটাল মার্কেট সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে আরব দেশগুলোর মধ্যে সবার উপরে  কাতার।

উনত্রিশ. আরব দেশগুলোর মধ্যে উন্নত মানের বিমান সংস্থা কাতারের।

ত্রিশ. এলপিজি গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ কাতার। (পাকিস্তানকে সরবরাহ করে আসছে।)

একত্রিশ. পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক জাহাজের বহর রয়েছে কাতারের, যা গ্যাস ট্রান্সপোর্টের কাজে ব্যবহৃত হয়।

বত্রিশ. কাতারের ১৫ বিলিয়ন ব্যারল তেলের মজুদ রয়েছে। যা প্রায় ৪০ বছরের জন্য যথেষ্ট।

তেত্রিশ. ৯০০ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফুট গ্যাসের মজুদ আছে কাতারে, যা প্রায় ১৫০ বছরের জন্য যথেষ্ট।

চৌত্রিশ. পেট্রো কেমিক্যাল উৎপাদনকারী পৃথিবীর চতুর্থ দেশ কাতার।

পঁয়ত্রিশ. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় কাতার বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও গবেষণাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

ছত্রিশ. মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সবচেয়ে বড় বিমান ঘাঁটি আছে কাতারে। অথচ বর্তমানে আমেরিকাই কাতারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

এটি একটি বাস্তব সত্য এবং ইতিহাসও এর সাক্ষী যে, মুসলিম জাতিকে সব সময় একশ্রেণীর মুসলমানদের হাতেই ধ্বংসযজ্ঞের মুখোমুখি হতে হয়েছে।

 

একটি বিদেশী দৈনিক থেকে অনূদিত

অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ

 

 

advertisement