যিলহজ্ব ১৪৩৮   ||   সেপ্টেম্বর ২০১৭

ওছিয়তের বিধান

মাওলানা ইউসুফ লুধিয়ানবী রাহ.

عَنْ ابن عمر، أَنّ رَسُولَ اللّهِ صَلى الله عَلَيه وَسَلم، قَالَ: مَا حَقّ امْرِئٍ مُسْلِمٍ لَهُ شَيْءٌ يُوصَى فِيهِ يَبِيتُ لَيْلَتَيْنِ، إِلّا وَوَصِيّتُهُ مَكْتُوبَةٌ عِنْدَهُ.

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে মুসলিমের  ওছিয়ত করার মত কোনো বিষয় রয়েছে, তার জন্য উচিত নয়, ওছিয়ত অলিখিত অবস্থায় দু’রাত অতিবাহিত করা। -সহীহ বুখারী, হাদীস ২৭৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৬২৭

ফায়দা : হাদীসের দাবি হল, মুসলমানকে তার প্রতিদিনের কাজ-কারবার ছাফ রাখতে হবে। কারো সাথে কোনো দেনা-পাওনা থাকলে তা লিখে ওছিয়ত করে রাখবে। একজন মুসলিম পার্থিব জীবনে এমনভাবে থাকবে, যেভাবে একজন সিপাহী সীমান্তচৌকিতে পাহারারত থাকে। যে কোনো মুহূর্তে তার প্রস্থানের নির্দেশ আসুক সে এর জন্য প্রস্তুত থাকে।

তো এখানে ওছিয়ত সংক্রান্ত কিছু মাসায়েল উল্লেখ করা মুনাসিব মনে হচ্ছে।

 

এক. ঋণ পরিশোধের ওছিয়ত

যে সকল হক আদায় করা ওয়াজিব তার জন্য ওছিয়ত করাও ওয়াজিব। যেমন, একজন ঋণ নিয়েছে। এখন তার কর্তব্য হল, এই ওছিয়ত করে রাখা যে, তার সম্পদ থেকে যেন এ ঋণ পরিশোধ করে দেওয়া হয়।

অনেক সময় দেখা যায়, ঋণের  খবর ঘরের লোকদেরও জানা থাকে না। এমতাবস্থায় তার মৃত্যুর পর জানা না থাকার কারণে কাছের লোকেরাও তা পরিশোধ করতে পারে না। ফলে এ হক তার যিম্মায় থেকেই যায়। ঋণও শোধ হয় না। সেও দায়মুক্ত হতে পারে না।

 

দুই. নামায-রোযার ফিদয়ার ওছিয়ত

কারো জীবনে কোনো নামায-রোযা কাযা হয়ে থাকলে জীবদ্দশাতেই তা আদায় করে ফেলা উচিত। খোদানাখাস্তা যদি কাযা আদায়ের সুযোগ না পাওয়া যায় তাহলে এমর্মে ওছিয়ত করে যাওয়া ফরয যে, আমরা যিম্মায় এত নামায, এত রোযা কাযা রয়েছে। এগুলোর ফিদয়া যেন আদায় করা হয়। যদি কেউ এমন ওছিয়ত না করে তাহলে যে কঠিন গুনাহগার হবে।

 

তিন. যাকাত আদায়ের ওছিয়ত

কারো উপর কয়েক বছরের যাকাত ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও সে আদায় করেনি। তার কর্তব্য বিগত বছরগুলোর হিসাব করে যাকাত আদায় করা। জীবদ্দশায় সম্পূর্ণ আদায় করতে না পারলে মৃত্যুর পূর্বে অন্তত ওছিয়ত করে যাবে যে, আমার এ পরিমাণ যাকাত অনাদায়ী রয়েছে। তা যেন আদায় করা হয়। অন্যথায় গুনাহগার হবে।

 

চার. বদলি হজ্বের ওছিয়ত

কারো উপর হজ্ব ফরয হয়েছে। কিন্তু আদায় করতে পারেনি। তার কর্তব্য হল, বদলি হজ্বের ওছিয়ত করে যাওয়া। ওছিয়ত না করলে দ্বিগুণ গুনাহ হবে। প্রথমত ফরয আদায় না করার গুনাহ। দ্বিতীয়ত মৃত্যুর পূর্বে ওছিয়ত না করে যাওয়ার গুনাহ।

ওছিয়ত পূরণে জীবিতদের করণীয়

জীবিতদের কর্তব্য, মৃতব্যক্তির জায়েয ওছিয়ত পুরা করা। তবে মৃতব্যক্তি কোনো নাজায়েয ওছিয়ত করলে তা পুরা করা হারাম।

কোনো ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি তার ঋণ পরিশোধের ওছিয়ত করে গেলে জীবিতদের ঐ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর জন্য মৃতের সমস্ত সম্পত্তির প্রয়োজন হলেও।

কেউ যদি কোনো নেক কাজে সম্পদ ব্যয় করার ওছিয়ত করে যায়; যেমন, আমার সম্পত্তি দিয়ে মসজিদ নির্মাণ করবে, কোনো মাদরাসায় ব্যয় করবে, কুরআন মাজীদ বিতরণ করবে, বিধবা-এতিমের জন্য এই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করবে, এমতাবস্থায় তার কাফন-দাফনের পর অবশিষ্ট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা সম্পন্ন করা জরুরি। ওয়ারিছগণ তা সম্পন্ন না করলে গুনাহগার হবে। তবে এ ওছিয়ত পুরা করতে যদি এক-তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তির প্রয়োজন পড়ে, তাহলে অতিরিক্তটা ব্যয় করা আবশ্যক নয়। ওয়ারিসগণের ইচ্ছা। চাইলে স্বেচ্ছায় ব্যয় করবে, নইলে না। অবশ্য কোনো ওয়ারিস যদি নাবালেগ হয়, তাহলে তার অংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশের অধিক গ্রহণ করা কোনোভাবেই জায়েয হবে না।

কারো যিম্মায় নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত কাযা রয়ে গেছে। মৃত্যুর আগে যদি সে ওছিয়ত করে যায়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে ওছিয়ত পুরা করতে হবে। যদি তা পুরা করতে আরো বেশি সম্পদের প্রয়োজন হয় তাহলে তা পুরা করা যদিও ওয়ারিসদের উপর ওয়াজিব নয়, কিন্তু সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক ওয়ারিসগণের কর্তব্য, নিজেদের অংশ থেকে তা আদায় করে দেওয়া।

 

গায়রে ওয়ারিসের জন্য ওছিয়ত করতে হলে

ওয়ারিস নয় এমন কাউকে নিজের সম্পত্তি থেকে কিছু দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের মধ্য থেকে ঐ ব্যক্তির জন্য ওছিয়ত করা যাবে। উদাহরণস্বরূপ, এক ব্যক্তির চার ছেলে। জীবদ্দশায় তার এক ছেলের ইন্তেকাল হয়ে গেছে। বাকি তিন ছেলে তার মৃত্যুর সময় জীবিত ছিল। তো তার মৃত্যুর পর তিন ছেলের মাঝে বণ্টন হবে। শরীয়ত তার মৃত ছেলে বা মৃত ছেলের সন্তানদের জন্য কোনো অংশ নির্ধারণ করে দেয়নি। এখন এ ব্যক্তি যদি তার মৃত ছেলের সন্তানদেরকে সম্পত্তি থেকে ভাগ দিতে চায়, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি থেকে তাদের ব্যাপারে ওছিয়ত করে যাবে যে, আমার সম্পদের এই পরিমাণ তাদেরকে দেওয়া হবে। তবে কোনো ওয়ারিসের ক্ষেত্রে এরকম ওছিয়ত কার্যকর হবে না।

[লেখকের প্রবন্ধ সংকলন ‘মুআশারাতী বিগাড় কা সাদ্দে বাব’ থেকে।

ভাষান্তরে : মুহাম্মাদ আশিক বিল্লাহ তানভীর]

 

 

advertisement