ভোগবাদ : নারীর উন্নতি
মেয়েদের ভাগ্য কি বদলাবে না? প্রজন্মের পর প্রজন্ম মেয়েরা কি এভাবেই প্রতারিত হতে থাকবে? ভোগবাদী ও পুঁজিবাদী সমাজ-ব্যবস্থা নিজেদের স্বার্থে মেয়েদের পরিণত করেছে ভোগ্য-পণ্যে। অল্প কিছু অর্থ আর প্রচুর প্রশংসা-বাক্যের জালে আটকা পড়ে গেছে মেয়েদের পবিত্রতা ও কমনীয়তা। স্বার্থান্বেষী মহলের মোহনীয় কথায় প্রতারিত হয়ে তাদের অনেকে অতি অল্পমূল্যে বিকিয়ে দিচ্ছে আপন জীবন-যৌবন, শান্তি-স্বস্তি, পবিত্রতা ও নির্মলতা। হারিয়ে ফেলছে আখিরাতের জীবনের মুক্তি ও সাফল্যের সাথে পার্থিব জীবনেরও শান্তি ও মর্যাদা। ভয়াবহ মাত্রায় তারা আজ শিকার ইভটিজিং ও যৌন হয়রানির, এমনকি হত্যা ও ধর্ষণের।
এই যখন দেশীয় ও বিশ্ব পরিস্থিতি তখন অনূর্ধ্ব ১৫ সাফ ফুটবলের নামে কিশোরী মেয়েদের ফুটবলের মাঠে নামিয়ে দেওয়া যে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করারই প্রয়াস- তা ব্যাখ্যা করে না বললেও চলে। সম্প্রতি বাংলাদেশে তথাকথিত বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের বাছাই নিয়ে যা কিছু হয়েছে তা কারো অজানা নয়। ঐ সময় আধুনিক ঘরানারও কোনো কোনো নারী এই প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন যে, আমাদের মেয়েদের শক্তি-সামর্থ্য ও সক্ষমতা প্রকাশের জন্য আমরা কি তাহলে অন্য কোনো মঞ্চ তৈরি করতে পারিনি? এই একই প্রশ্ন কি মেয়েদের ফুটবল খেলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য নয়? আমাদের মেয়েদের সক্ষমতার প্রমাণ দিতে হবে শত শত পুরুষের সামনে ফুটবল খেলে! আর এই অশ্লীলতাকে হজম করে আমাদের এই সমাজকে জাতে উঠতে হবে!! ধিক!
কে না জানে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যে খেলাধুলা তা নিছক খেলাধুলা নয়, পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর আয়-উপার্জনের এক বড় মাধ্যম। এটাকে নির্মল খেলা-ধুলা আখ্যা দেওয়া অন্ধকে হাইকোর্ট দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এই খেলাধুলার মধ্যে যদি খোলামেলা তরুণী-যুবতীদের অংশগ্রহণ করিয়ে বাড়তি উপাদান সরবরাহ করা যায় তাহলে তা হয়ে ওঠে একশ্রেণীর দর্শক আকর্ষণ ও আয়-উপার্জনের পক্ষে আরো বেশি সহায়ক। ভোগবাদী পুরুষের কাছে নারীর খেলাধুলা কি শুধু খেলা উপভোগ করা, না নারীর নারীত্বও উপভোগ করা?
এই বাস্তবতা মাথায় রেখে কেউ যদি আমাদের একশ্রেণির মিডিয়ার পিঠ চাপড়ানোর ভাষা ও ধরন লক্ষ্য করেন তখন এদের ঘৃণ্য মানসিকতার উপর থুথু নিক্ষেপ না করে উপায় থাকে না। সত্যিই কি এই সুবেশী পুরুষগুলো বিশ্বাস করেন, কিশোরী মেয়েদের ফুটবলের মাঠে নামিয়ে বিপুল করতালির মাধ্যমে তারা তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল করছেন? তাদের কি কর্তব্য নয় বিবেককে প্রশ্ন করা? এরা কি নিজের কিশোরী মেয়েটিকেও নামিয়ে দিতে পারবেন শত শত পুরুষের দৃষ্টির সম্মুখে ফুটবলের মাঠে?
আমরা মনে করি, সামান্য কিছু অর্থ আর প্রচুর প্রশংসার ফাঁকা বুলির শিকার না হয়ে আদর্শ ও পবিত্রতার আলোয় আলোকিত হওয়াই নারীর প্রকৃত শান্তি ও মর্যাদার পথ। বর্তমান পুঁজিবাদী ও ভোগবাদী সমাজ-ব্যবস্থায় নারীর পথ তাই অনেক পিচ্ছিল ও বিপদসঙ্কুল। বখাটে সন্ত্রাসীর চাপাতি-হুঙ্কার আর সুবেশী সুশীলের প্রলোভন থেকে তাকে রক্ষা করতে হবে নিজের জান-প্রাণ, বিশ্বাস-আদর্শ, পবিত্রতা ও নির্মলতা। এই কঠিন মুহূর্তে নারীর পাশে দাঁড়াতে হবে মুমিন পুরুষকেই। সোচ্চার হতে হবে বর্তমান জাহিলিয়াতের সন্ত্রাস আর ভণ্ডামির বিরুদ্ধে।
বিশ্বজুড়ে চলছে নারীকে বিচ্যুত ও ব্যবহার করার এক মর্মন্তুদ ধারা। এর কুশীলবেরাই নানা পন্থায় মুসলিম দেশগুলোতেও এই ধারার বিস্তার ঘটিয়ে চলেছে। ভোগবাদী এই সমাজের প্রয়োজন পুরানো প্রজন্মের পর নতুন প্রজন্মের নারী ভোগ ও ব্যবহারের ধারাকে অব্যাহত রাখবার জন্য। মুসলিম দেশগুলোতে একশ্রেণির সুবেশী ভদ্রলোক একদিকে যেমন উৎসাহিত করে ভোগবাদী এই ধারাকে, অন্যদিকে নারীর ইজ্জত-আব্রু রক্ষার পবিত্র ধারাটিকে আখ্যায়িত করে ‘কুসংস্কার’ ইত্যাদি শব্দে। মেয়েদের ফুটবল সংক্রান্ত দৈনিক প্রথম আলোর এক লেখায় বলা হয়েছে, ‘খেলাধুলায় মেয়েদের অংশগ্রহণ নিয়ে একটা সময় যে কুসংস্কার ছিল এলাকার মানুষের মধ্যে, সেটিও দূর হয়েছে তহুরাদের সৌজন্যে।’ (দৈনিক প্রথম আলো, ২৯-১২-২০১৭)
এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ দ্বীনদার মুসলমান ছেলে-মেয়েদের শালীন জীবনের ধারায় থাকার ও রাখার যে শুভকামনা হৃদয়ে লালন করেন তাকেই আখ্যায়িত করা হচ্ছে কুসংস্কার বলে? আর নগ্নতা, অশ্লীলতা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার ধারাটিকে সংস্কৃতিমনা বলে? শব্দ-বাক্যের এই প্রতারণার নামই কি সত্যের আলো? অথচ এই প্রথম আলোতেই প্রকাশিত একটি রিপোর্টের শিরোনাম ছিল ‘১৩ বছরেই হয়রানির শিকার নাতালি পোর্টম্যান।’ এই রিপোর্টের শুরুটা এইভাবে- যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে এবার মুখ খুললেন হলিউডের আরেক অভিনেত্রী নাতালি পোর্টম্যান। ... লিও; দ্যা প্রফেশনাল চলচ্চিত্রের সেটে ১২ বছরে পা দিয়েছিলেন নাতালি পোর্টম্যান। এটি ছিল তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র। এর এক বছর পর প্রথম বারের মতো ভক্তের কাছ থেকে চিঠি পান। সেটি ছিল এক পুরুষের লেখা তাঁকে ধর্ষণ কল্পনার আখ্যান’। ...
ওই হলিউড অভিনেত্রী আরো বলেন, ১৩ বছর বয়সে আমার সংস্কৃতির কাছ থেকে যে বার্তা পেয়েছিলাম, তা আমার কাছে ছিল পরিষ্কার। আমার শরীর ঢেকে রাখতে হবে এবং অভিব্যক্তি প্রকাশে সংযত হতে হবে। (দৈনিক প্রথম আলো ২২ জানুয়ারি পৃ. ৭) কাজেই আজ কিশোর মেয়েদের ফুটবলের মাঠে নামিয়ে দিয়ে হাত তালি দেওয়া সুবেশী লোকগুলোর মুনাফিকী সম্পর্কে আমাদের নারীদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি সর্বস্তরের মুসলিমদেরও সোচ্চার হতে হবে। আমাদের সাহস সঞ্চয় করতে হবে সত্যকে সত্য বলার এবং মিথ্যা ও অন্ধকারকে মিথ্যা ও অন্ধকার বলার।