‘সাবধান, হে আমার প্রিয় আরবজাতি!’
[জাযীরাতুল আরব গোটা মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ের স্পন্দন। এখানেই অবস্থিত মক্কা মুকাররমা ও মদীনা মুনাওয়ারা। এখান থেকেই উৎসারিত হয়েছে হেদায়েতের নূর এবং আলোকিত করেছে গোটা জাহান। এই ভূখণ্ডের সাথে তাই বিশ্ব মুসলিমের আত্মা ও হৃদয়ের সম্পর্ক। এই ভূখণ্ডের শাসন-ক্ষমতায় যারা আসেন তাদের পরিচয় তো ‘খাদিমুল হারামাইন আশ-শারীফাইন’। তাদের কর্তব্য, এই খিদমতের মর্ম সঠিকভাবে উপলব্ধি করা এবং একে এক মহা আমানত ও গুরুভার দায়িত্ব বিবেচনা করা। এই বোধ ও উপলব্ধি তাদেরকে এই আমানত রক্ষায় পার্থিব পদ-পদবি, প্রাণ ও সম্পদের চ্যালেঞ্জ হাসিমুখে বরণ করতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান সৌদি আরবে এমন কিছু বিষয় ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যা কিছুতেই হারামাইনের খিদমতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। আল্লাহর দ্বীনের নুসরতের পথে দৃঢ়পদে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে জাহিলিয়াতের কাছে আত্মসমর্পণ হবে খোদ দায়িত্বশীলদের জন্যেই চরম আত্মঘাতী।
এই প্রেক্ষাপটে আরবের বৈশিষ্ট্য, মর্যাদা, ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং এই ভূখণ্ডের নেতৃত্ব ও নাগরিকদের দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে এই উপমহাদেশের একজন দায়ী ইলাল্লাহ হযরত মাওলানা সায়্যেদ আবুল হাসান আলী নাদাভী রাহ.-এর প্রজ্ঞাপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী কিছু আলোচনা আলকাউসারের পাঠকদের জন্য উপস্থাপিত হচ্ছে। এখানে রয়েছে একটি প্রবন্ধ, একটি বক্তৃতা ও একটি চিঠি।
প্রবন্ধটি তাঁর বিখ্যাত ‘মা-যা খাসিরাল আলামু বিনহিতাতিল মুসলিমীন’ গ্রন্থের শেষ পরিচ্ছেদ। পরবর্তীতে এটি
كيف يستعيد العرب مكانتهم اللائقة بهم، وكيف يحافظون عليها؟
নামে আলাদা রিসালারূপেও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা প্রবন্ধটি গ্রহণ করেছি মাওলানা আবু তাহের মিসবাহ দামাত বারাকাতুহুম অনূদিত ‘মুসলিম উম্মাহর পতনে বিশ্বের কী ক্ষতি হল’ গ্রন্থ থেকে।
‘বস্তুবাদী সভ্যতা এক মর্দে মুমিনের দৃষ্টিতে’ শীর্ষক নিবন্ধটি
نظرة مؤمن داع إلى المدنيات المعاصرة الزائفة
শীর্ষক রিসালার অনুবাদ। ৩ মুহাররম ১৩৯৭ হিজরী (২৩-১২-১৯৭৬ ঈ.) আবুধাবীর এক সুধী সম্মেলনে হযরত মাওলানা এই বক্তৃতাটি করেছিলেন। পরে তা আলমাজমাউল ইসলামী আলইলমী থেকে পুস্তিকারূপে প্রকাশিত হয়।
আর ‘হিজাযের মর্যাদা, স্বাতন্ত্র্য ও তা রক্ষার অপরিহার্যতা’ শিরোনামে উপস্থাপিত হয়েছে হযরত মাওলানা রাহ.-এর একটি চিঠি, যা তিনি ১৩৮১ হিজরীর কাছাকাছি সময়ে তৎকালীন যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী আমীর ফয়সাল বিন আব্দুল আযীযের উদ্দেশে লিখেছিলেন। পত্রটি ড. শামস তিবরীয খান অনূদিত ‘হিজাযে মুকাদ্দাস আওর জাযীরাতুল আরব : উমীদোঁ আওর আনদেশোঁ কে দরমিয়ান’ গ্রন্থ থেকে তরজমা করা হয়েছে।
এই সংক্ষিপ্ত আয়োজনে আমরা পেতে পারি একজন ঈমানদারের চিন্তা ও দৃষ্টি। আপন আদর্শ ও মূল্যবোধ সম্পর্কে মুমিনের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে, কেমন হবে ভোগবাদী ও বস্তুবাদী সভ্যতা সম্পর্কে তার মূল্যায়ন- এখানে তার নির্দেশনা রয়েছে। তেমনি উপমহাদেশের দায়ী ইলাল্লাহগণ জাযীরাতুল আরবকে কোন্ দৃষ্টিতে দেখেন এবং ঐ ভূখণ্ডের কর্ণধারদের সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার কী গভীর প্রত্যাশা পোষণ করেন, শুধু প্রত্যাশাই নয়, বাস্তব কর্মক্ষেত্রেও তাদের কর্ম ও তৎপরতা কীরূপ ছিল এরও একটি সংক্ষিপ্ত চিত্র এখানে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে কবুল করুন এবং সকলকে ঈমান ও আমলের পথে এগিয়ে যাওয়ার তাওফীক দান করুন- আমীন। -উপস্থাপক]