নবীজীর দস্তরখানে
আবু আহমাদ
ছোট্ট বালক উমার ইবনে আবি সালামাহ। নবীজীর বাড়িতেই সে থাকে। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনেক আদর করেন। নবীজীর বাড়িতেই কাটে তার রাত-দিন। নাওয়া-খাওয়া সব এখানেই। একদিন সে খানা খাচ্ছিল নবীজীর সাথে, নবীজীর দস্তরখানে। ছোট্ট বালক বলে কথা; সে একবার পাত্রের এদিক থেকে খায় আরেকবার ওদিক থেকে। একবার নিজের সামনে থেকে খায় তো আরেকবার নবীজীর সামনে থেকে। নবীজী তার এ কা- দেখছেন, কিন্তু কিছু বলছেন না। ছোটরা তো এমন করবেই। তাদেরকে ধমক না দিয়ে কোমলভাবে শিখিয়ে দিলেই তারা শিখে নেয়। নবীজীও তা-ই করলেন। তাকে শেখালেন- কীভাবে খেতে হয়।
নবীজী আদর করে বললেন, বৎস! তুমি যখন খাবে তখন বিসমিল্লাহ বলবে। ডান হাতে খাবে এবং নিজের সামনে থেকে খাবে; পাত্রের এদিক ওদিক থেকে নয়।
উমার ইবনে আবি সালামাহ খুব বুদ্ধিমান বালক। সে নবীজীর কথা মন দিয়ে শুনল এবং শিখে নিল- কীভাবে খেতে হয়। তিনি বড় হয়ে যখন এই ঘটনা অন্যদের শোনালেন তখন বললেন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে শেখানোর পর থেকে আজ পর্যন্ত আমি ওভাবেই খাই, যেভাবে নবীজী আমাকে শিখিয়েছেন। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৩৭৬)
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে ওমর ইবনে আবি সালামাহ শিখলেন। তার ঘটনা শুনে আমরাও শিখে নিলাম। এই ঘটনা থেকে আমরা খানার কয়েকটি আদব শিখলাম :
১. খাওয়ার আগে বিসমিল্লাহ বলব।
২. ডান হাতে খাব।
৩. নিজের সামনে থেকে খাব; এদিক সেদিক থেকে নয়।
খাওয়ার আগে অবশ্যই বিসমিল্লাহ বলব। খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে খাবারে বরকত হয়। নইলে খাবারের বরকত চলে যায়। আর কখনো খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে বলতে হয়- ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার পাঁচজন সাহাবীকে নিয়ে খানা খাচ্ছিলেন। এমন সময় এক গ্রাম্য ব্যক্তি এল এবং তাঁদের সাথে খানায় শরীক হল। সে এসে কয়েক লোকমায় সব খাবার সাবার করে দিল। অন্যদের আর পেট ভরে খাওয়া হল না। তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে যদি বিসমিল্লাহ বলত তাহলে এ খাবারই সকলের জন্য যথেষ্ট হত। এরপর নবীজী বললেন,
فَإِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامًا فَلْيَذْكُرْ اسْمَ اللهِ، فَإِنْ نَسِيَ أَنْ يَذْكُرَ اسْمَ اللهِ فِي أَوّلِهِ فَلْيَقُلْ: بِسْمِ اللهِ أَوّلَهُ وَآخِرَهُ.
কেউ যখন খানা খায় সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তাহলে বলবে-
بِسْمِ اللّهِ أَوّلَهُ وَآخِرَهُ.
-মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২৫১০৬; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৫২১৪; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৩৭৬৭
এছাড়াও নবীজীর দস্তরখান থেকে সাহাবায়ে কেরাম খাওয়ার আরো অনেক আদব শিখেছেন এবং আমাদের শিখিয়েছেন, যা বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। আমরা সেগুলোও জেনে নিই।
আনাস রা. থেকে বর্ণিত -
أَنّ رَسُولَ اللهِ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ كَانَ إِذَا أَكَلَ طَعَامًا لَعِقَ أَصَابِعَهُ الثّلَاثَ، قَالَ: وَقَالَ: إِذَا سَقَطَتْ لُقْمَةُ أَحَدِكُمْ فَلْيُمِطْ عَنْهَا الْأَذَى وَلْيَأْكُلْهَا،وَلَا يَدَعْهَا لِلشَّيْطَانِ، وَأَمَرَنَا أَنْ نَسْلُتَ الْقَصْعَةَ، قَالَ: فَإِنَّكُمْ لَا تَدْرُونَ فِي أَيِّ طَعَامِكُمُ الْبَرَكَةُ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন খানা খেতেন আঙুল চেটে খেতেন। আনাস রা. বলেন, নবীজী বলেছেন, যদি কারো খাদ্য পড়ে যায় সে যেন পরিষ্কার করে তা খেয়ে নেয়। শয়তানের জন্য ফেলে না রাখে। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে পাত্র চেটে খেতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন, তোমাদের তো জানা নেই খাদ্যের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২০৩৪
হাঁ, খাবারের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে তা আমরা জানি না। সুতরাং খাবার সময় পরিষ্কার দস্তরখান বিছিয়ে নিব, যাতে খাবার পড়ে গেলে উঠিয়ে খেতে পারি এবং বরকত লাভ করতে পারি। কোনো সময় যদি খাবার পড়ে তাতে ময়লা লেগে যায় তাহলে পরিষ্কার করে খেয়ে নেব। আর খাবার শেষে অবশ্যই আঙুল ও বাসন চেটে খাব। কারণ আমাদের জানা নেই খাবারের কোন্ অংশে বরকত রয়েছে।
আগের ঘটনা থেকে আমরা খানার তিনটি আদব শিখেছিলাম আর এ হাদীসদুটি থেকে আরো কয়েকটি আদব শিখলাম। তা হল :
৪. খানার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলে বলব- بِسْمِ اللّهِ أَوّلَهُ وَآخِرَهُ.
৫. খাবার পড়ে গেলে তুলে খাব। ময়লা লেগে গেলে পরিষ্কার করে খাব।
৬. খাবার শেষে হাত চেটে খাব।
৭. পাত্র চেটে খাব।
এসো আমরা এ অনুযায়ী আমল করি। ইনশাআল্লাহ, আগামীতে আমরা খানার আরও কিছু আদব শিখব। আজ এখানেই ইতি।