জুমাদাল উলা ১৪৩৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৮

আমাদের রাজ্য শাসন-২৩

মাওলানা আবদুস সালাম কিদওয়ায়ী

বনী উমাইয়ার খেলাফত

হযরত মুআবিয়া রা.

রাষ্ট্রব্যবস্থা

হযরত হাসান রা.-এর সাথে সমঝোতা চুক্তির পর পূর্ণ শাসনব্যবস্থা হযরত মুআবিয়া রা.-এর হাতে চলে আসে। ২৫ রবিউল আওয়াল ৪১ হিজরী তাঁর হাতে বাইআত গ্রহণ করা হয়। এতে করে মুসলমানদের মাঝে দীর্ঘ সময় পর আবার ঐক্য সূচিত হয়। এরপর দীর্ঘদিন পর্যন্ত তাঁর বংশধরদের হাতেই খেলাফতের দায়িত্ব অব্যাহত থাকে। হযরত মুআবিয়া রা. অত্যন্ত বিচক্ষণ ও যোগ্য শাসক ছিলেন। প্রজাদের সাথে তাঁর আচরণ ছিল খুবই নম্র ও আন্তরিক। একেবারে বাধ্য না হলে কাউকে শাস্তি দিতেন না। তাঁর এই কৌশল ও কর্মপন্থার ফলে গোটা দেশেই শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপিত হয়। অবশ্য ইরাকে তখনো কিছু বিশৃঙ্খলা চলছিল। তিনি ভাবলেন, নম্রতার সাথে সুরাহা হয়ে গেলেই ভালো। কিন্তু ইরাকিরা ছিল দুষ্ট প্রকৃতির। তাদের দুষ্টুমির কিছু নমুনা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তাদেরকে যত সুযোগ দেওয়া হয় এবং যতই সমীহ করা হয় তাদের আশকারা বেড়ে যায় এবং দুষ্টুমিতে মেতে ওঠে। অগত্যা যখন কোনোভাবেই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা গেল না তখন হযরত মুআবিয়া রা. যিয়াদকে তাদের শাসক হিসেবে প্রেরণ করলেন। বসরা পৌঁছে যিয়াদ এক কঠোর ভাষণ দিলেন। তিনি সবাইকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বললেন- প্রত্যেকের উচিত নিজ পরিবার ও গোত্রের লোকদেরকে অনিষ্ট ও মন্দ আচরণ থেকে বিরত রাখা। অন্যথায় অপরাধীর পরিবর্তে নিরপরাধ লোককেও শাস্তি পেতে হবে। অপরাধ করে কেউ পালিয়ে গেলে উপস্থিত লোকদেরকে ধরা হবে। রাতে চলাফেরা করলে হত্যা করে দেওয়া হবে। কেউ কারো বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করলে আমি তাকে জ্বালিয়ে দেব। কারো ঘরে সিঁথ কাটলে আমি তার কলিজা ছিঁড়ে নেব। কেউ কাফন চুরি করলে ওই কবরেই তাকে জীবিত পুঁতে রাখব। কেউ জাহিলিয়াতের কোনো কথা বললে তার জিহ্বা ছিঁড়ে ফেলব। তবে আইন-কানুন মেনে চললে ভালো আচরণ করা হবে। অভাবী ও বিপদগ্রস্তদের জন্য আমার দরজা সবসময় খোলা। দিনরাত যে কোনো সময় আসতে পারে। আমি তাদের প্রয়োজন পূরণে সদা প্রস্তুত। যিয়াদ শুধু ভাষণ দিয়েই বসে থাকেননি। পরিপূর্ণভাবে তার বাস্তবায়নও করেছেন। যার ফলে অল্পদিনের ব্যবধানেই সব ধরনের ফেতনা-বিশৃঙ্খলা শেষ হয়ে যায়। দেশের শান্তি ও নিরাপত্তা এই স্তরে উন্নীত হয় যে, ঘরবাড়ি ও দোকানপাটের দরজা খোলাই থাকত। কেউ চোখ তুলে তাকানোরও সাহস করত না। রাস্তায় কারো কিছু পড়ে গেলে তা সেভাবেই থাকত। অন্যদিকে খারেজীদের শক্তিও ধীরে ধীরে শেষ হয়ে যায়।

বিজয়সমূহ

হযরত মুআবিয়া রা.-এর শাসনামলে রোমকদের সাথে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সবক’টি যুদ্ধেই মুসলমানরা জয়লাভ করে। তবে শেষ দিকে কুসতুনতুনিয়ার উপর শক্তিশালী আক্রমণ করলেও মুসলমানরা সফলতা পায়নি। আফ্রিকা শাসনের দায়িত্ব ছিল উকবা ইবনে নাফে‘-এর উপর। তাঁর নিরলস চেষ্টায় আশপাশের বর্বর অঞ্চলগুলোও মুসলমানদের দখলে আসে। এর ফলে মিসর থেকে মরক্কো পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় ইসলামের পতাকা উড্ডীন হয়। উকবা ইবনে নাফে‘ এতদঞ্চলে কায়রাওয়ান শহরের গোড়াপত্তন করেন এবং একটি সেনানিবাস নির্মাণ করেন। উকবা ইবনে নাফে‘র সাহসিকতার নজির হল, যখন স্থলভাগ জয় করতে করতে মৃত সাগরে গিয়ে পৌঁছলেন তখন সমুদ্রের বুকেও ঘোড়া ছুঁটিয়ে দিলেন। কিন্তু স্থলভূমি না পেয়ে নিবৃত্ত হলেন এবং বলতে লাগলেন- ‘‘হে আল্লাহ! সমুদ্রের এই জলরাশি না হয়ে যতদূর স্থলভূমি পাওয়া যেত আপনার পথে লড়াই করে যেতাম।’’ (চলবে ইনশাআল্লাহ) (অনুবাদ : আবদুল্লাহ ফাহাদ)

 

 

advertisement