জুমাদাল উলা ১৪৩৯   ||   ফেব্রুয়ারি ২০১৮

শরীয়া আইনে গণআকাঙ্ক্ষা : একটি জরিপ ও কিছু কথা

মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ

 

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার জরিপ করার একটা রেওয়াজ বর্তমানে চালু আছে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন কারণে জরিপের উপর মানুষের আস্থা সৃষ্টি হয় না। কারণ, অনেক সময় বিশেষ রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক গোষ্ঠীকে সুবিধা করে দেওয়ার চেষ্টা হয় জরিপের মাধ্যমে। কখনো বা বিশেষ কোনো পণ্যের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রেও তা ব্যবহার করা হয়। কখনো ব্যবহার করা হয় বিশেষ কোনো মত বা দর্শনের প্রচারের হাতিয়াররূপে। আবার কখনো তা বাস্তবেই মতামত যাচাইয়ের একটি প্রয়াসরূপেও ব্যবহৃত হয়।

জরিপের বিষয়বস্তুও হয় বিচিত্র। সম্প্রতি অনেকটা ভিন্নধর্মী একটি জরিপের ফল দেখা গেল একটি জাতীয় দৈনিকে। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭-এর দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত জরিপটির শিরোনাম ছিল, ‘গণতন্ত্র ও শরীয়া আইন : জনমত দুটিরই পক্ষে।’ সংবাদটি অনলাইন সংস্করণে পড়েই মনে হল, এ নিয়ে কিছু কথা আলকাউসারের পাঠকবৃন্দের সাথে বলা যেতে পারে।

প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী জরিপটি করেছে ‘রিজলভ নেটওয়ার্ক’ নামক একটি সংস্থা। যারা কিনা সহিংস উগ্রবাদ নিয়ে বিশ্বের ২৫টির বেশি দেশে গবেষণা করে থাকে। ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৬৭টি পরিবারে এরা জরিপ করেছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে এসব পরিবার বাছাই করা হয়। উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৫০ শতাংশ নারী। এদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতার বসবাস গ্রামে।

জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরীয়া আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।

এখানে আমরা দেখছি, জরিপে দুটি বিষয় : গণতন্ত্র ও শরীয়া আইন। আজকে গণতন্ত্র নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার ইচ্ছে নেই তবে একটি কথা না বললেই নয়। আর তা হচ্ছে, এখন তো দেশে-বিদেশে ‘গণতন্ত্র’ চলছে। জনগণ নিজেরা যেমন গণতন্ত্রের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতাও তাদের সামনে রয়েছে। একইসাথে গণতন্ত্রের সুবিধা ও সুফল নিয়ে গোটা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে প্রচার-প্রচারণা। কিন্তু এর পরও কেন ব্যাপক সংখ্যায় গণমানুষের বর্তমান ‘গণতন্ত্রে’র প্রতি আস্থা অটুট নেই? কী সেই শূন্যতা, যার কারণে এতকিছুর পরও সাধারণ মানুষ আরো কিছুর প্রত্যাশা করছে? যাদের ঈমানী বসীরত আছে এবং যারা আকিদায়ে তাওহীদকে যথাযথ উপলব্ধি করেছেন এবং তা পুরোপুরি মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছেন তারা জানেন, সেই শূন্যতা মূলত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামী শরীয়াতের অনুপস্থিতি এবং ইসলামী খেলাফতের বিলুপ্তি। দুনিয়ার কোনো ধর্ম এবং কোনো ইজম যে ইসলামী শরীয়াত ও ইসলামী খেলাফতের বিকল্প হতে পারে না- এটাই মূল কারণ। কিন্তু এতটুকু তো সবাই বুঝে যে, বর্তমানে দেশে দেশে পুঁজিবাদী ও বিভিন্ন শ্রেণীর প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজেরা গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকলেও ‘জনগণের সরকার’ কিন্তু খুব কম দেশেই কায়েম হচ্ছে। উল্টো বিশ্বব্যাপী ক্ষমতাবান পুঁজিপতিগণ প্রচারমাধ্যমগুলো নিজেদের দখলে নিয়ে রাত-দিন মানুষকে উন্নয়ন ও স্বাধীনতার কথা শুনিয়ে একতরফা শাসন করে যাচ্ছে। আর নিরীহ জনগণ সব কিছু বুঝেও ক্ষমতাবানদের জুলুমের ভয়ে চুপ থাকছে। আজ থাক সে কথা, তবে সে বিষয়টি খুব নির্মোহভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করি।

জরিপে শরীয়া আইনের প্রতি জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার প্রকাশ এই প্রথম নয়। এর আগে ২০১১-২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপেও এসেছিল, বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ৮২ শতাংশই শরীয়া আইনের পক্ষে। ওই জরিপে এসেছিল, এ দেশের ধর্মপালনকারী মুসলমানদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ এমন আইন চান। অন্যদিকে ধর্মপালনে নিয়মিত নন এমন ৭৯ শতাংশ ব্যক্তিও শরীয়া আইনের পক্ষে। লক্ষণীয় যে, দুটো জরিপই ভিন্ন মতের দুটি প্রতিষ্ঠানের, যাদের শরীয়া আইনের প্রতি দুর্বলতা থাকার সম্ভাবনা নেই। এ কারণে জরিপের ফল বাস্তবতার কাছাকাছি বলেই অনুমিত হয়।

শরীয়া আইন কী?

এ বিষয়ে লিখতে গেলে বিশদ আলোচনার প্রয়োজন। সংক্ষেপে বলতে গেলে সকল সৃষ্টির ¯স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জীবন চলার জন্য মানুষকে কুরআনুল কারীমে যে বিধিবিধানগুলো দিয়েছেন, আল্লাহর সর্বশেষ নবী রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসের মাধ্যমে যে হুকুম-আহকামগুলো জারী করে গেছেন এবং এ দু’ শাস্ত্র থেকে প্রাপ্ত নীতিমালাগুলোর ভিত্তিতে ফুকাহায়ে কেরাম কর্তৃক যেসব শাখাগত বিধানাবলী প্রস্তুত হয়েছে সেগুলোর নামই শরীয়াহ।

এ আইনের মাধ্যমেই পৃথিবীর বৃহৎ অঞ্চল হাজার বছরের অধিক কাল ইনসাফের সাথে শাসিত হয়েছে। গণমানুষ ভোগ করেছে ব্যক্তিগত ও সামাজিক নিরাপত্তা, পেয়েছে ন্যায়বিচার, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ও ঈমান নিয়ে জীবন যাপনের নিশ্চয়তা। যেখানে বিচারকেরা নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে শরীয়াভিত্তিতে রায় দিয়ে গেছেন। কোনো খলিফা-বাদশার তাতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ ছিল না। আইনের চোখে সবাই সমান, ধনী-গরীব ও শাসক-শাসিত নির্বিশেষে সকলের জন্য বিচারকদের চোখ একভাবেই কাজ করবে- এই কথাগুলো একমাত্র শরীয়া আইনের ক্ষেত্রেই বাস্তবিক অর্থে কার্যকরী ছিল শত শত বছর।

এরপরের ছন্দপতনের ইতিহাস সকলের জানা। একশ্রেণীর মুসলিম শাসকগোষ্ঠীর আল্লাহর পথ থেকে সরে যাওয়া, অন্যদের বহুবিধ ষড়যন্ত্র এবং আরো বহু কারণে বিজাতীয় আগ্রাসনের জাঁতাকলে পতিত হয় মুসলিম সমাজ। সাথে সাথে বিদায় করে দেয়া হয় অহী-ভিত্তিক শরীয়া আইনকে। চাপিয়ে দেয়া হয় মানবরচিত সংবিধান। আগ্রাসী শক্তি একসময় নামেমাত্র স্বাধীনতা দিয়ে বিদায় নিয়েছে; কিন্তু তাদের রেখে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থা, শাসনব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা ও তথাকথিত সভ্যতা-সংস্কৃতিতে এখনো দাবিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে মুসলিম সমাজকে। কিন্তু চাইলেই কি স্থায়ীভাবে দাবিয়ে রাখা সম্ভব? আলোচিত জরিপ তো ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দেয়। কৃত্রিমতা তো আর স্থায়ী হতে পারে না। তাই জরিপের ঐ ফল বিভিন্ন কারণে তাৎপর্যপূর্ণ।

যেমন : এক. শরীয়া আইনের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা রয়েছে। এই আইনের ব্যাপারে জনমনে ভীতি ও অশ্রদ্ধা সৃষ্টির প্রয়াসও মোটেই কম নয়। প্রচলিত প্রায় সকল প্রচারমাধ্যম ব্যাপকভাবে এই প্রয়াসের সাথে যুক্ত। কিন্তু এরপরও গণমতের যে প্রতিফলন আলোচিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে এইসব প্রচার-প্রচারণাকারীদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক। বলা যায়, এই ব্যাপক প্রয়াস ও আগ্রাসন অনেকটাই ব্যর্থ। এটাই হচ্ছে সত্য-ন্যায়ের শক্তি। সত্য ও ন্যায়কে হয়ত সাময়িকভাবে চাপা দিয়ে রাখা যায়, কিন্তু নির্মূল করা যায় না; আরোপিত বাধা-নিষেধ অপসারিত হয়ে গেলেই সত্য তার আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে ওঠে। এ কারণে এই বিশ্বাস মোটেই অলীক বিশ্বাস নয় যে, শরীয়ার বিপক্ষশক্তি চূড়ান্ত পর্যায়েও হতাশ হবে- ইনশাআল্লাহ।

দুই. এখানে ক্ষমতাবানদেরও চিন্তা-ভাবনার খোরাক রয়েছে। এখন অনেক মুসলিম ভূখণ্ডের নেতৃত্বকেই দেখা যাচ্ছে, ইসলামী শিক্ষা ও আদর্শের বিপরীতে ভিন্ন মতাদর্শ অবলম্বন করে ক্ষমতা পাকা করার চেষ্টা করতে। তাদের বুঝতে হবে যে, বাহ্যিক প্রচার-প্রচারণায় যা-ই থাকুক, মুসলিম জাতির কাছে ইসলামই প্রথম ও শেষ কথা। কর্ম-জীবনে অন্যায়-অপরাধ থাকতে পারে কিন্তু মুসলিমের অন্তরের গভীরে রয়েছে ইসলামের প্রতি ভালবাসা, আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভালবাসা। এই বাস্তবতা উপলব্ধি করে অগ্রসর হতে পারলেই জনগণের কাছে যাওয়া যাবে। পক্ষান্তরে বাইরের প্রচারণার কারণে তারা যদি মনে করেন, বাস্তবেই শরীয়ার প্রতি বৃহত্তর জনগণ আস্থাশীল নন তাহলে এটা হবে তাদের ভুল ও অবাস্তব ধারণা, যা তাদেরকে জনগণ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।

তিন. ইসলামী দাওয়াতের সাফল্যপ্রত্যাশীদের জন্যও এখানে শিক্ষা রয়েছে। বর্তমান নানামুখী হতাশাজনক পরিস্থিতিতে হতোদ্যম হওয়ার এবং অতি উৎসাহী কিংবা হাতাশাগ্রস্ত হয়ে অবিবেচনা প্রসূত শক্তি প্রদর্শন বা অপাত্রে মূল্যবান জান বিলিয়ে দেয়াও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। ইসলাম আল্লাহর সত্য দ্বীন। মানবতার সর্বাঙ্গীন কল্যাণের ধারক এই দ্বীন, কাজেই পরিস্থিতি যা-ই হোক, পরিণামে এই দ্বীনই বিজয়ী হবে।

فَاَمَّا الزَّبَدُ فَیَذْهَبُ جُفَآءً وَّ اَمَّا مَا یَنْفَعُ النَّاسَ فَیَمْكُثُ فِی الْاَرْضِ كَذٰلِكَ یَضْرِبُ اللهُ الْاَمْثَالَ.

যা ফেনা, তা তো বাইরে পড়ে নিঃশেষ হয়ে যায় আর যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়...। -সূরা রা‘দ (১৩) : ১৭

আমাদের কর্তব্য, শরীয়তের সীমারেখার ভেতরে থেকে দাওয়াতী দায়িত্ব পালন করে যাওয়া। জনগণের কাছাকাছি যাওয়া, মানুষের মধ্যেকার ঈমানী চেতনা ও ইসলামপ্রীতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের ভুলত্রুটিগুলো প্রজ্ঞার সাথে শুধরে দেওয়ার চেষ্টা করা। সর্বোপরি কথা ও কাজে দ্বীনী দাওয়াতের কল্যাণকামিতার বৈশিষ্ট্য সর্বস্তরের মানুষের সামনে তুলে ধরা।

ইসলামের পাশাপাশি গণতন্ত্র চলতে পারে বলে সাধারণ জনগণের যে মত উক্ত জরিপে প্রকাশিত হয়েছে এর অর্থ- গণতন্ত্রের অতটুকুই নেয়া যাবে, যতটুকু শরীয়া অনুমোদন করে। এ বিষয়েও মুসলিম জনগণের সঠিক রাহনুমায়ী দাঈগণের কর্তব্য।

জরিপটিতে কিছু খুচরো বিষয়ও রয়েছে। যেমন, তাতে দেখা যাচ্ছে, শরীয়া আইনের প্রতি নারীদের দুর্বলতা বেশি। প্রায় ৭৮ শতাংশ নারী উত্তরদাতা বিশ্বাস করেন যে, শরীয়া আইন সবাইকে পর্দা, হিজাব-নেকাবে বাধ্য করবে তথাপি শরীয়া আইনই তাদের কাম্য। বিশ্বব্যাপী ইসলামী বিধি-বিধানের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার তার অন্যতম প্রধান হচ্ছে, ইসলাম নারীকে বঞ্চিত ও লাঞ্ছিত করেছে (নাউযুবিল্লাহ।) অথচ বাস্তবতা হচ্ছে একমাত্র ইসলামই হচ্ছে ঐ দ্বীন ও আদর্শ, যা সকল যুগের সকল জাহেলিয়াতের জুলুম-অত্যাচার থেকে নারীর মুক্তির একমাত্র উপায়। অতীতেও ইসলামই নারীকে মুক্তি ও মর্যাদা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও নারীর মর্যাদার নিশ্চয়তা ইসলামেই রয়েছে। ইসলামের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচারই হোক, দেখা যাচ্ছে, বাস্তবতা সম্পর্কে নারীসমাজ গাফিল নন। নানা মোহনীয় শ্লোগানের পাশাপাশি ঘরে-বাইরে লাঞ্ছনা ও নির্যাতনে অতিষ্ঠ নারী তথাকথিত নারী-স্বাধীনতা ও প্রগতিতে আস্থাশীল নন, তাঁদের আস্থা হিজাব-নেকাবের বিধানদানকারী শরীয়া আইনের প্রতি। তথাকথিত নারী-স্বাধীনতাবাদীদের এর চেয়ে বড় পরাজয় আর কী হতে পারে?

আরেকটি ব্যাপারও এই জরিপে আছে, তা হচ্ছে মতামত প্রদানকারীদের ৭৫ শতাংশ গ্রামের অধিবাসী। জানি না এই তথ্য ভিন্নভাবে দেয়ার উদ্দেশ্য কী, তবে একটি সাধারণ কথা হচ্ছে, গ্রামের মানুষ শহরের মানুষ অপেক্ষা সরলতা ও স্বাভাবিকতার কাছাকাছি হয়ে থাকে। শহুরে নাগরিকদের অনেকের মধ্যেই নানা অরোপিত মত ও দর্শনের প্রভাব দেখা যায়। চিন্তা-ধারা থেকে আচার-আচরণ পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই দেখা যায় আরোপিত অবস্থার ছাপ। এ কারণে প্রকৃতির অধিক সান্নিধ্য লাভকারী গ্রামবাসী সরলতা ও স্বাভাবিকতায় শহরের চেয়ে সাধারণত এগিয়েই থাকে। তবে হ্যাঁ, ব্যতিক্রম সবকিছুতেই আছে। কিন্তু ব্যতিক্রম তো ব্যতিক্রমই। কাজেই উপরোক্ত তথ্য যে উদ্দেশ্যেই প্রচার করা হোক এটা জরিপের ফলাফলের পক্ষে ইতিবাচকই বটে।

এবং ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের মুখে ছাই

কয়েকবছর আগে আমাদের দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় কলুষিত হয়েছিল একটি রায়ের মাধ্যমে, যার দ্বারা বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ‘মহান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ বাক্যটি ছুঁড়ে ফেলে সেখানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ বসানো হয়েছে। আমরা মনে করি এটি এবং এজাতীয় ধর্মবিদ্বেষী অন্য রায়গুলো দ্বারা আল্লাহর বান্দাদের কষ্ট দিতে সক্ষম হলেও চূড়ান্ত বিচারে সংশ্লিষ্ট রায়দাতাগণই কলঙ্কিত হয়েছেন এবং এ দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মাঝে তারা সর্বদাই কুখ্যাত হয়ে থাকছেন। মানুষ সুযোগ পেলেই তার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছে। যেমন দেখা গেছে আলোচিত জরিপে।

এদেশে কিছুলোক মিথ্যা বুলি আওড়িয়ে থাকে যে, ধর্মনিরপেক্ষতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশ ছিল। দাবি যে সম্পূর্ণ অসত্য ও অবাস্তব তা আমরা এর আগেও বিভিন্ন সময় তথ্য ও যুক্তি দিয়ে লিখেছি। আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে এ-ও বলেছিলাম, এখনো যদি এদেশে সত্যিকার অর্থে গণভোট করা হয় যে, ‘দেশের মানুষ ধর্মনিরপেক্ষতা চায় না ইসলাম চায়’ তাহলে অবশ্যই দ্বিতীয়টির পক্ষে মত আসবে।

আলহামদু লিল্লাহ, ভিন্নমতের সংস্থার জরিপেও বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সে জবাবই দিয়েছেন। সুতরাং সংশ্লিষ্টদের উচিত, মানুষকে মনগড়া ধর্মনিরপেক্ষতার কথা না শুনিয়ে ইসলামের সত্য-ন্যায়ভিত্তিক শরীয়া আইনের দিকে ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হওয়া।

সবশেষে যে কথাটি আবারো বলতে চাই, তা হচ্ছে- হতাশার কোনো কারণ নেই। ইসলামের দাওয়াতের জন্য এই ভূখ- উর্বর। আমাদের কর্তব্য হচ্ছে, মুসলিম জনগণের আরো কাছে যাওয়া। আলিম-উলামা, ইমাম-খতীব, দাঈ-মুবাল্লিগ সবারই কর্তব্য, আল্লাহর উপর ভরসা রেখে পূর্ণ উদ্যম ও আশাবাদিতার সাথে দাওয়াত, তালীম ও তাবলীগের কাজে আত্মনিয়োগ করা। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে, বিশেষত সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত জনগণের মাঝে দ্বীনী বোধ-চেতনা ও শিক্ষার বিস্তার ঘটানো, যাতে যে চেতনার প্রতিফলন এখন জরিপের মধ্য দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে তা যেন দৃষ্টিগ্রাহ্য ও শ্রুতিগ্রাহ্য হয়ে ওঠে। আল্লাহর বান্দারাই যেন আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নের আওয়াজ তোলে। মানুষ যখন ইসলামী জীবনব্যবস্থার বিশদ পরিচয় লাভ করবে, দুনিয়া-আখেরাতে এর সুফল সম্পর্কে সচেতন হবে তখন এরাই সর্বপ্রকার কৃত্রিম ও জুলুমের ব্যবস্থা থেকে, মানবরচিত আইন থেকে আল্লাহর আইনের দিকে, ইসলামের পবিত্র ও কল্যাণময় জীবনব্যবস্থার দিকে ফিরে আসবে।

 

 

 

advertisement