বার্সেলোনার ফুটবল তারকা লিওনেল মেসির বিয়ের ঘটনাটি এ দেশের পত্র-পত্রিকাতেও বেশ ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। মিডিয়ার এক উল্লেখযোগ্য অংশ জুড়ে ছিল এ সংক্রান্ত খবরাখবর। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা কোথায় সম্পন্ন হচ্ছে, অতিথি হয়ে কারা আসছেন, কারা আসছেন না, নাচ-গান কে করবেন, কে করবেন না, খাবারের মেনু কী হচ্ছে, বর-কনে কী পোষাক পরবেন, সেই পোষাক কোন ফ্যাশন ডিজাইনারের প্রস্তুতকৃত ইত্যাদি নানা খুঁটিনাটিতে এদেশের মিডিয়াও ছিল বেশ সরগরম। আর মিডিয়ার সরগরম হওয়ার অর্থ হচ্ছে দেশের এক বিপুলসংখ্যক জনতার ব্যস্ত হওয়া এবং তাদের বিপুল সময় এসবের পেছনে ব্যয় হওয়া। এ জাতীয় ব্যক্তিগত বিষয়কে ইস্যু বানিয়ে জনসমক্ষে প্রচারে ব্যক্তি ও সমাজের কী কল্যাণ রয়েছে তা আমাদের মতো বেরসিকদের সত্যিই বোধগম্য নয়।
এই প্রশ্ন তোলাটাও হয়তো অনেকের কাছে অদ্ভুত বলে বোধ হতে পারে। কিন্তু আসলেই কি তাই? সত্যিই কি বিষয়টি প্রশ্ন করার মতো নয়? আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, এই সমাজে এখনও এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা এই প্রশ্নের সাথে একমত, কিংবা অন্তত এই প্রশ্নটিকে একটি যৌক্তিক প্রশ্ন বলেই মনে করেন। সমাজের সকল মানুষ তো আর গড্ডলিকা প্রবাহে ভেসে যায় না। সব যুগেই সব সমাজেই থাকে প্রশ্ন করার মত কিছু হৃদয় ও মস্তিষ্ক। অন্যরা হুজুগে মাতলেও এরা অন্তত হুজুগে মাততে প্রস্তুত হন না।
যাই হোক লিওনেল মেসির সূত্রে আর্জেন্টিনার আর সেই সূত্রে বিশ্বকাপ ফুটবলের কথা মনে পড়ে গেল। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ছাড়া আর কোনো দেশের সমর্থক প্রায় পাওয়াই যেত না। বিশ্বকাপ শুরু হলে গোটা দেশ ছেয়ে যেত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায়। এখন অবশ্য আরো অনেক দেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। মিডিয়ার প্রচারণা আর জনগণের মাতামাতিতে এখন আরো ভয়াবহ অবস্থার তৈরি হয়। মিডিয়া অনেকখানি কোমল করে এর নাম দিয়ে থাকে ‘বিশ্বকাপজ্বর’। এখন ঢাকায় চিকুনগুনিয়া জ্বরের যে প্রকোপ বিশ্বকাপ-মওসুমে গোটা দেশে বিশ্বকাপ-জ্বরের প্রকোপও তার চেয়ে কোনো অংশে কম হয় না। কিন্তু কৌতুকের বিষয় হচ্ছে, ঐ সময় খোদ আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেও সম্ভবত এই পরিমাণ মাতামাতি হয় না। মনে পড়ছে গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার প্রধানমন্ত্রী বলে ফেললেন, ‘আর্জেন্টিনার সবগুলো ম্যাচ টিভিতে দেখার সুযোগ পাননি।’ অর্থাৎ মাঠে বসে দেখার জন্য সফরের তো প্রশ্নই আসে না, ঘরের টিভিতেও তিনি সবগুলো ম্যাচ দেখতে পারেননি। তাঁর এ কথায় ফুটবল-ফ্যানেরা অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। কেউ কেউ তাকে নিষ্ঠুর বলেও অভিহিত করেছেন। কিন্তু সেটা আসলে স্বাভাবিক ব্যাপারই ছিল। অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি সবকিছু ছেড়ে খেলা নিয়ে মত্ত হয়ে পড়বেন তা ভাবাই যায় না।
আরো আগে যখন এই দেশে দিয়েগো ম্যারাডোনার পর্ব চলছে ঐ সময় এক জাতীয় দৈনিকে একটি সংবাদ প্রচারিত হয়েছিল যে, কোনো এক বাংলাদেশী সাংবাদিক তাঁর সামনে বাংলাদেশের কথা ওঠালে ম্যারাডোনা প্রশ্ন করেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কোন দেশের নাম?’ পরে অবশ্য বিত্তবান ভক্তদের কল্যাণে ম্যারাডোনাও এই দেশে এসেছেন, মেসিও প্রীতিম্যাচ খেলে গেছেন। কিন্তু একটু চিন্তা করুন, এই দেশে যখন একশ্রেণীর তরুণ-তরুণী মেসি-ম্যারাডোনার নামে পাগল ঐ সময় ঐ নায়কদের এটুকুও জানা নেই যে, পৃথিবীতে ‘বাংলাদেশ’ নামের একটি দেশ আছে! কিছুটা রূঢ় শোনালেও বাস্তবতা তো এমনটাই দাঁড়াচ্ছে যে, যে দেবতার চরণে এই বিপুল ভক্তির অর্ঘ্য, সেই দেবতাই ভক্তকুলের ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরাসক্ত। কবির ভাষায়-
كل يدعي حبا بليلى + وليلى لا تقر لهم بذاك
অর্থ : প্রত্যেকেই দাবিদার লাইলা- প্রেমের/কিন্তু লাইলা তো সে দাবি স্বীকার করে না।
যাই হোক, যে কথাটি বলতে চেয়েও বারবার অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছি, তা হচ্ছে, আর্জেন্টাইন একজন ফুটবলার লিওনেল মেসির বিয়ে নিয়ে যে ব্যাপক আয়োজন-আলোচনা, এটা এবং এ জাতীয় বিষয়বস্তু ব্যক্তি ও সমাজ এবং দেশ ও জাতির প্রয়োজন ও বাস্তব কল্যাণ বিবেচনায় কতটা যথার্থ? প্রয়োজন ও কল্যাণ তো দূরে এই সকল প্রচার-প্রচারণায় নতুন প্রজন্মের চিন্তা ও বিশ্বাসগত এবং আদর্শ ও জীবনাচারগত অবক্ষয়ের যে উপাদানগুলো রয়েছে তা বিস্মৃত হওয়াও কতটুকু যুক্তিসঙ্গত?
ঐ আপাত চাকচিক্যময় ভোগবাদী জীবনধারার সাথে তো আমাদের পবিত্র ও নির্মল জীবনধারার কোনোই সম্পর্ক নেই। পশ্চিমা জীবনধারার ভেতরের যে শূন্যতা ও অন্ধকার, তা যদি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা না যায় তাহলে এর বাহ্যিক ঝলকানিতে প্রতারিত হয়ে বিপথগামী হওয়ার এবং সর্বস্ব হারিয়ে রিক্ত-নিঃস্বে পরিণত হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে। শুধু সম্ভাবনাই নয় মুসলিম দেশগুলোতে পশ্চিমা ক্ষতিকর জীবনধারা বিস্তারের কুফল ইতিমধ্যে সমাজ ভুগতে আরম্ভ করেছে। কাজেই ঐ জীবনধারার দীনতা সম্পর্কে মুসলিম নর-নারীর, বিশেষত তরুণ-প্রজন্মের সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
আলোচ্য বিষয়টিতে দেখুন, লিওনেল মেসির বিয়ে নিয়ে এই যে প্রচার-প্রচারণা, কোনো কোনো গণমাধ্যম যাকে অভিহিত করছে ‘শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে’ বলে সেই বিয়েটার প্রকৃতি আসলে কী? মেসি কাকে বিয়ে করেছেন? ঐ নারীটিকেই, যার সাথে ইতোমধ্যে তিনি নয় বছর বসবাস করেছেন। এদের দুটো পুত্র সন্তানও রয়েছে। একজনের বয়স চার আর অপরজনের এক। হায়রে শ্রেষ্ঠত্ব! যে বিয়েতে কোনো নতুন বর-কনের দেখা মিলল না, যে দম্পতির কোনো প্রথম বা দ্বিতীয় সন্তান হবে না, যে বিয়েতে কোনো দরিদ্র তো দূরে থাক সাধারণ ধনীরও জায়গা হয়নি সেই বিয়েকেই বলা হচ্ছে শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ বিয়ে! প্রপাগান্ডা আর কাকে বলে! যাই হোক প্রশ্ন হচ্ছে, এত বছর একত্রে থাকার পর এখন বিয়ের প্রয়োজন কেন?
পশ্চিমা জীবনধারায় আইনগতভাবে বিয়ের প্রয়োজন নেই। পরস্পর সম্মতির ভিত্তিতে নারী-পুরুষ একত্রে এক ছাদের নিচে বসবাস করতে পারে। সন্তানও নিতে পারে। সামাজিকভাবে ও আইনগতভাবে এতে তেমন কোনো বাধা নেই। বাধ্যবাধকতার কোনো ব্যাপার নেই। এরপরও বিয়ের প্রয়োজন কেন? দৈনিক যুগান্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে-
‘চার বছরের থিয়াগো এবং এক বছরের মাতেওকে নিয়ে মেতে আছেন তারা সুখের সংসারে। সেই সুখ পরিপূর্ণ করতে প্রায় নয় বছরের ঘরণি আন্তোনেল্লা রোকুজ্জোকে বিয়ে করছেন মেসি।’ (দৈনিক যুগান্তর, ২৯ জুন ২০১৭)
অর্থাৎ একসাথে বসবাস এবং সন্তান-সন্ততি সত্ত্বেও এই যুগলের সুখ পূর্ণতা পায়নি। সেই পূর্ণতার সন্ধানেই অবশেষে বিয়ে। এক সাক্ষাৎকারে তারা বলেছেন, নিজেদের সম্পর্ক স্থায়ী করার জন্যই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন।
মনে পড়ছে কয়েক বছর আগের এমনি আরেকটি বিয়ের কথা। পশ্চিমের আরেক বয়স্ক ধনাঢ্য যুগলের বিয়ের খবর ঐ সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। সে যুগল বিবাহ ছাড়াই বহু বছর একত্রে বসবাস করার পর এবং তাদের সন্তানেরা যৌবনে পদার্পণ করার পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, সন্তানগণের আবদার হল তাদের মা-বাবার মধ্যে যেন বিবাহিত জীবন তারা দেখতে পায়। অর্থাৎ অবিবাহিত মা-বাবার সন্তান পরিচয় দিতে তাদের সংকোচ হচ্ছিল।
এই যে ‘সুখের পূর্ণতা’ কিংবা ‘স্থায়ী সম্পর্কের নিশ্চয়তা’ অথবা ‘বিবাহিত পিতা-মাতার সন্তান বলে পরিচিত হওয়ার আগ্রহ’ এগুলো আসলে কেন? এ কীসের অভাববোধ? আজ দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম সমাজের একটি অংশ যেসবের জন্য লালায়িত সেই অর্থ, যশ-খ্যাতি ও চাকচিক্য সবই তো ওদের আছে। এরপরও কীসের অভাব, কীসের শূন্যতা?
এটা বুঝতে হলে পশ্চিমা সমাজের শুধু বাইরের দিকটা দেখলেই চলবে না। তাদের ভেতরেও একটু উঁকি দিতে হবে। এদের পরিবার, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, সন্তান ও মা-বাবা, ওল্ডহোম- এই সবগুলো একটু ঘুরে আসতে হবে। এরপর এদের মনের ভেতরে উঁকি দিয়ে তাদের অতৃপ্তি ও অস্থিরতারও কিছু তত্ত্ব নিতে হবে। তাহলেই পুরো চিত্রটা আপনার সামনে উপস্থিত হবে। আপনি তখন উপলব্ধি করবেন, যে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তিনি তাকে একটি ফিতরত ও স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। এই যে চাহিদা এটা মানুষের সেই সনাতন স্বভাবেরই চাহিদা। স্বভাবের সাথে মানুষ যতই বিদ্রোহ করুক, তাকে আবার স্বভাবের কাছেই ফিরে আসতে হবে।
দ্বীনে ফিতরত-স্বভাব-ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে জীবনের যে স্বাভাবিকতা আল্লাহ আমাদের দান করেছেন এর কারণে বাইরের শত অপূর্ণতা ছাপিয়ে মুসলিম পরিবারগুলোতে বিরাজ করে এক অপার্থিব পূর্ণতা। মুসলিমসমাজের অতি স্বাভাবিক এই বিষয়গুলো অর্থাৎ পারিবারিক বন্ধন, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, মায়ের মমতা, বাবার বাৎসল্য, সন্তান-সন্ততির সেবা ও আনুগত্য এবং একে অপরের কাছে থাকার আকাক্সক্ষা, যা স্বাভাবিক হওয়ার কারণেই প্রায়শ আমাদের চেতনারও বাইরে, এগুলো যে পশ্চিমা সমাজেও অতি কাম্য ও আরাধ্য তা নানা সময় নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়ে পড়ে।
অব্যাহত মিথ্যা প্রচারণা, ইসলামোবোফিয়ার বিস্তার এবং শত ষড়যন্ত্রের মধ্যেও পশ্চিমা দেশগুলোতে নওমুসলিমের সংখ্যা তো আর এমনি এমনিই বাড়ছে না।
ইসলাম যে বিয়ের বিধান দান করেছে তা কেন? ইসলামে বিয়ের বন্ধন শুধু নারী-পুরুষের জৈবিক চাহিদা পূরণের উপায় নয়। এটি একটি চুক্তি ও অঙ্গিকার, যার দ্বারা সাব্যস্ত হয় কিছু কর্তব্য, কিছু অধিকার, সাব্যস্ত হয় দুনিয়া ও আখেরাতে জবাবদিহিতা। আর এসব কারণে এটি পারস্পরিক আস্থা-ভালবাসা এবং পূর্ণতা ও নির্ভরতার এক উপায়। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ ثُمَّ اِذَاۤ اَنْتُمْ بَشَرٌ تَنْتَشِرُوْنَ وَ مِنْ اٰیٰتِهٖۤ اَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ اَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوْۤا اِلَیْهَا وَ جَعَلَ بَیْنَكُمْ مَّوَدَّةً وَّ رَحْمَةً اِنَّ فِیْ ذٰلِكَ لَاٰیٰتٍ لِّقَوْمٍ یَّتَفَكَّرُوْنَ.
তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদেরকে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন। তারপর এখন তোমরা মানুষ, সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছ।
আর তাঁর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের স্ত্রীদিগকে, যাতে তোমরা তাদের নিকট শান্তি পাও। আর তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে। -সূরা রূম (৩০) : ২০-২১
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
يٰا اَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ مِّنْ نَّفْسٍ وَّاحِدَةٍ وَّ خَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا وَ بَثَّ مِنْهُمَا رِجَالًا كَثِیْرًا وَّ نِسَآءً وَ اتَّقُوا اللهَ الَّذِیْ تَسَآءَلُوْنَ بِهٖ وَ الْاَرْحَامَ اِنَّ اللهَ كَانَ عَلَیْكُمْ رَقِیْبًا.
হে মানব! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদিগকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রী এবং তাদের দুজন থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নর ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের কাছে যাচ্ঞা কর আর সতর্ক থাক জ্ঞাতি-বন্ধন বিষয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। -সূরা নিসা (৪) : ৪-১
বস্তুত আল্লাহর নামের মাঝেই রয়েছে মানুষের হৃদয়-মনের প্রশান্তি ও স্থিরতা। আর একমাত্র আল্লাহর ভয়ই হচ্ছে মানুষের সকল কর্ম ও আচরণের নিয়ন্ত্রক। কাজেই নারী-পুরুষের এবং সমাজের সকল শ্রেণির পারস্পরিক হক ও অধিকার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা এবং পরস্পরের জুলুম-অবিচার থেকে আত্মরক্ষার রক্ষাকবচ হচ্ছে আল্লাহর ভয়।
যে বন্ধন আল্লাহর নামে হয় সেই বন্ধনেই মানুষের হৃদয়-মন প্রশান্তি লাভ করে। কুরআন মাজীদের ইরশাদ-
أَلَا بِذِكْرِ اللهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
শোনো, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয়সমূহ প্রশান্ত হয়। -সূরা রা‘দ (১৩) : ২৮
আর আল্লাহর বিধান পালনের মাঝেই মানব জীবনের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও নিরাপত্তা। এই বোধ মানুষের স্বভাবের ভেতর গচ্ছিত রাখা আছে। কাজেই এটা মানুষের ফিতরত। আর মানুষকে তার ফিতরতের দিকেই ফিরে আসতে হবে।
যারা পশ্চিমের ভোগবাদী জীবনের বাহ্যিক ঝলকানিটুকুই দেখেন তাদের কর্তব্য এই সকল দৃষ্টান্তের ভেতরের সত্যটিও উপলব্ধি করা। তখন ঐ জীবনধারার শূন্যতা ও হাহাকারটুকু আবিষ্কার করা সম্ভব হবে। আর তখনই ইসলাম আমাদের যা দান করেছে তার মর্ম ও মাহাত্ম্যও আমাদের সামনে ফুটে উঠবে।
رفعتوں كى جستجو ميں ٹهوكريں تو كها چكے + آستان يار پر اب سر جهكا كر ديكهئے
অর্থ : গৌরবের অন্বেষায় অনেকবারই তো হোঁচট খেয়েছ/এবার একবার দেখ বন্ধুর সমীপে শীর নত করে।