দ্বীনী মাদরাসার কর্তৃপক্ষ সমীপে
কোনও দ্বীনী মাদরাসা পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাওয়া যে কারও পক্ষে আল্লাহ জাল্লা শানুহুর বিরাট মেহেরবানী। মানুষ তো স্কুল বা কলেজ কমিটির মেম্বর হতে পারলেও গৌরবজনক মনে করে। অনঃস্বীকার্য যে, স্কুল-কলেজ পরিচালনায় যদি যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখা যায় এবং সেখান থেকে এমন সুনাগরিক গড়ে ওঠে, যারা সততার সাথে মানব সেবায় নিয়োজিত থেকে ¯স্রষ্টার সন্তুষ্টি বিধানের প্রত্যাশী হবে, তবে তাও একটি মহৎ কাজই গণ্য হবে। তবে দ্বীনী মাদরাসা পরিচালনা অন্য ব্যাপার। এখানে তো এমন মানুষ গড়ে তোলার মেহনত হয়, যারা নায়েবে রাসূল হিসেবে হয়ে থাকে কুরআন-সুন্নাহর বাহক ও সংরক্ষক, তার ব্যাখ্যাতা ও পথ-নির্দেশক, তার প্রচারক ও বাস্তব নমুনা। ফলে নিজেদের আত্মশুদ্ধি ও মানবিক বিকাশের জন্য, নিজেদের চিন্তা-ভাবনা নির্মাণের জন্য, নিজেদের আত্মিক খোরাক আহরণ ও মানসিক চাহিদা মেটানোর জন্য এবং জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও কলবের গতিমুখ নিরূপণের জন্য তাদেরই দ্বারস্থ হতে হয় সর্বশ্রেণীর মানুষকে। তো এরকম মানুষ গড়ার ব্যবস্থাপনার সাথে অন্য কোনও ব্যবস্থাপনা তুলনীয় হতে পারে না। এর মহিমা অনন্য ও অতুলনীয়। যারা এর সাথে জড়িত হওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেছে তারা কিভাবে শুক্র আদায় করবে? এর শুক্র আদায়ের হক তো কোনওভাবেই আদায় করা সম্ভব নয়। তবে নাশুক্রের কলঙ্ক থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা অবশ্যই করা উচিত। সবার আগে দরকার ইনাবত ইলাল্লাহ। আল্লাহর অভিমুখী হয়ে নিজ ক্ষুদ্রতা ও অক্ষমতার স্বীকারোক্তিপূর্বক তাঁর তাওফীক প্রার্থনা করা দরকার, যাতে সুচারুরূপে এ মহান দায়িত্ব আন্জাম দেওয়া সম্ভব হয় এবং যাতে কিয়ামতে যখন তাঁর হুযূরে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তখন এ যিম্মাদারি দুর্ভোগ-দুর্গতির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। যে কোনও দায়িত্ব পালন ও তার শুক্র আদায়ের জন্য সেই দায়িত্বের বোধ ও তার সীমানা সম্পর্কে সচেতন থাকা দরকার। তা না হলে অনেক সময় আসল কাজটুকু থেকে যায় অবহেলিত। সেইসংগে অনধিকার চর্চায় লিপ্ত হয়ে অন্যের কাজ বিঘ্নিত করা হয়। ফলে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হয় বাধাগ্রস্ত। বলাবাহুল্য, দ্বীনী মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য তো পূর্বোক্ত মানুষ গঠন। সে কাজের কারিগর মাদরাসার উসতাযবৃন্দ। উসতাযগণ যাতে তাদের সেই কারিগরিকর্মে আত্মনিবেদিত থাকতে পারেন; কর্তৃপক্ষ বা পরিচালনা পরিষদের কাজ কেবল তাতে সহায়তা করা। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ, সবরকম আর্থিক প্রয়োজন সমাধা ও পরিচালনাগত অন্যান্য দায়িত্ব পালন। এ দায়িত্ব পালনে তাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভংগি থাকবে সেবক ও খাদেমসূলভ। এ দৃষ্টিভংগিই আসল জিনিস। এর অভাবে যাবতীয় মেহনত ছাই-ভস্ম হয়ে যেতে পারে। কারণ মানসিকতা যদি হয় কর্তৃত্বপরায়ণ, তবে আচার-আচরণ হবে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অহমিকাচ্ছন্ন। উদ্ধত ও অহংকারী ব্যক্তির আচরণ কেবল প্রতিষ্ঠানের শান্তি-শৃংখলাই নষ্ট করে না, তার নিজ আমলের কবুলিয়াতও ব্যাহত করে। দ্বীনী মাদরাসার কর্তৃপক্ষের তাই কর্তৃত্বপরায়ণ হওয়ার সুযোগ নেই, বরং সেবাপরায়ণ মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হয়। হাঁ, সেবা করাই পরিচালনা পরিষদের কাজ। এরই জন্য তার অস্তিত্ব। না হয় সে তার কর্তৃত্বের ছড়ি কার উপর চালাবে? এমন এক জামাতের উপর, যারা জীবনের সূচনাতেই দুনিয়াকে তিন তালাক দিয়ে দিয়েছে? রঙীন দুনিয়ার হাতছানি তাদের সামনেও ছিল। কারও পারিবারিক, কারও বা পরিবেশের এবং কারও নিজ প্রবৃত্তিরও ফুসলানি ছিল- এসো অর্থের আসরে, এসো বিত্তের কোলাহলে। ছিল নানামুখী চাপও। জগৎ-সংসারের সাধারণ গতি-প্রবাহের বাইরে কদম সঞ্চালনে কতরকম চাপের মুখোমুখি হতে হয় তা কেবল ভুক্তভোগীই জানে। সমস্ত প্রলোভন ও ফুসলানি উপেক্ষা করে এবং সকল চাপ ও উস্কানি দলিত করে সকলের অবজ্ঞেয় এই অংগনে তারা আসন গেড়েছে। তাদের শৈশবের সঙ্গীরা আজ কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ এমপি, কেউ মন্ত্রী, কেউ সরকারি আমলা, কেউ বেসরকারি কোম্পানীর কর্মকর্তা। তাদের বসবাস অভিজাত এলাকার আলিশান বাড়িতে, চলাচল সর্বাধুনিক মডেলের জমকালো গাড়িতে। তাদের মাসের উপার্জন অনেকের স্বপ্নের অগোচর। নতুন বিশ্ব তাদের হাতের মুঠোয়। ইচ্ছেঘুড়ির মত তারা ঘুরছে আজ ঢাকায় তো কাল লন্ডন। দুনিয়ার স্বপ্নিল সব নগরে ঘুরে বেড়ায় কখনও প্রমোদ ভ্রমনে, কখনও চিকিৎসার ছলে কিংবা সরকারি-বেসরকারি কাজের বাহানায়। এর হাকীকত ও সারবত্তা কী এবং এর অর্জন ও প্রকৃত মূল্য কী- তা আলাদা কথা, কিন্তু এর বাহ্যিক যে চমক এবং এর যে আপাত উন্মাদনা তা কাকে না টানে! টানছিল এই জগদ্ভিন্ন জামাতটিকেও, যারা সেই টান উপেক্ষা করে রূহ ও রূহানিয়াতের টানে আত্মসমর্পিত, যারা কবূল করে নিয়েছে নির্মোহ জীবনের আলিঙ্গন, যাদের বছরের উপার্জন অন্যদের মাসিক আয়ের চেয়েও কম এবং তাতে কারও বিরুদ্ধে তাদের কোনও অভিযোগ-অনুযোগ নেই, কারও কাছে তাদের কোনও দাবি-দাওয়া নেই, তাদের প্রাণের উচ্চারণ হলে- إِنْ أَجْرِيَ إِلّا عَلَى اللّهِ ‘আমার যা প্রাপ্তি, তা কেবলই আল্লাহর কাছে’। আপন কর্তব্য পালনে নিবেদিত, অতি অল্প অর্থে সন্তুষ্ট ও পরিতুষ্ট এই কারিগরদের উপর কী কর্তৃত্ব চালাবে হে কর্তৃপক্ষ, তুমি তার সেবা করে ধন্য হওয়ার চেষ্টা কর। তোমার সেবা পাওয়ার জন্য লালায়িত তারা নয়। কোনও মাখলূক থেকেই তারা কিছু পাওয়ার ধার ধারে না। তা পাওয়ার অধিকার তাদের আছে। কিন্তু সেই অধিকারের পেছনে তারা ছুটে বেড়ায় না। ছুটে বেড়ানোকে তারা শোভন মনে করে না। তারা তাদের অন্তরে এক ইসতিগনা, এক অনপেক্ষতা লালন করে, যা কোনও মাখলূকের কাছে তাদের আশাবাদী হওয়ার অনুমতি দেয় না। তাদের সব চাওয়া পাওয়া এই একই জায়গায়- সব মাখলূকের খালেক আল্লাহর কাছে। কিন্তু তুমি কর্তৃপক্ষ, যখন পরিচালনা পরিষদের সদস্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছ, তখন তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকা তোমার কর্তব্য হয়ে গেছে। ‘তুমি’ বলছি প্রিয়ভাষণে। অশ্রাব্য বোধ হলে ‘আপনি-ই’ বলছি। কিন্তু বাধছে এ কারণে যে, কিছুটা সংশ্লিষ্টতা এ অর্কমণ্যেরও রয়েছে। সুতরাং সম্বোধন নিজেরও প্রতি। তো উলামা গড়ার কারিগর মাদরাসা-শিক্ষকদের প্রতি সশ্রদ্ধ আচরণ ও তাদের যথোচিত সেবা করে যাওয়াই কর্তৃপক্ষের আসল কাজ। দৃষ্টিকে প্রসারিত করতে হবে। দেখুন নিজের জীবনমান। আপনি কেমন ঘরে থাকেন? কেমন বাজার করেন? আপনার খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক, চিকিৎসা ইত্যাদিতে কী পরিমাণ ব্যয় হয়? তারা কৃচ্ছ্রতায় সন্তুষ্ট, কিন্তু আপনার শরাফত ও ভদ্রতা, আপনার উচ্চ মানসিকতা ও মানবিকতা এবং আপনার নৈতিকতা ও ঈমানী মূল্যবোধ কী বলে? বলে না কি এই কথা যে, দ্বীন ও ঈমানের অঙ্গনে নিবেদিতপ্রাণ উলামার জীবনযাত্রায় আপনারও কিছুটা ভূমিকা থাকুক? সে ভূমিকা রাখাটা মূলত তাদের জন্য নয়। নিজেরই জন্য। নিজের দ্বীন ও ঈমানের ভূবনে তারা যে আমার অস্তিত্বের অংশ। তাই তাদের জন্য কিছু করা মূলত নিজেরই জন্য করা। অন্যথায় নিজ অস্তিত্ব, মানবিক ও ঈমানী অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে, অন্তত অপূর্ণ তো থেকেই যাবে আর সে অপূর্ণতার জন্য নিজ বিবেকের দংশনে জর্জরিত হতে হবে; সত্যিকারের বিবেক বলে যদি কিছু থাকে। আরও স্পষ্ট করে যদি বলি- মাদরাসাগুলোতে উসতাযম-লীর অজীফা (বেতন) কি উল্লেখ করার মত? নিশ্চয় উল্লেখ করার মত নয়। তাও কি মাসের টা মাসে আদায় করা হয়? এবং সে আদায়ও কি সম্মানজনকভাবে করা হয়? অনেকে হয়ত বলবেন, যথেষ্ট বেতনই দেওয়া হয়। যারা এ কথা বলবেন তাদের মানসিকতার জন্য কেবল আফসোস ও দু‘আই করতে পারি। কারণ উলামায়ে কেরামকে মানুষ গণ্য করার মত মনুষ্যত্ব তারা অর্জন করতে পারেনি। যারা বলবে উপযুক্ত অজীফা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাদের কাছে প্রশ্ন- সামর্থ্য অর্জনের চেষ্টা ঠিক কতখানি করা হয়? তার চেয়েও গোড়ার প্রশ্ন, উপযুক্ত অজীফা দেওয়ার গরজ কতটুকু লালন করা হয়? মাদরাসার ইমারত ও ক্লাশ বাড়ানোর প্রতি যতটা দৃষ্টি তার আংশিক দৃষ্টিও উসতাযগণের অজীফার দিকে দেওয়া হয়? আকছার তা দেওয়া হয় না- এটাই সত্য। অথচ অধিকাংশ মাদরাসায় অর্থ সংগ্রহের কাজেও উসতাযদেরই লাগানো হয়। বিভিন্ন উপলক্ষে তাদেরকে কালেকশনে বাধ্য করা হয়। এমনকি তাতে ত্রুটি ঘটলে অনেক সময় চাকরী (?)ও নট করে দেওয়া হয়। এ অধঃপতন ও অবক্ষয়ের কি কোনও জবাব আছে? আমাদের আকাবিরে দ্বীনের তো কথা মাদরাসার কোনও উসতাযকে দিয়ে যেন অর্থ কালেকশন করানো না হয়। কেননা তাতে উসতাযের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। সমাজ-চোখে তার ওজন থাকে না। ফলে তার দ্বীনী মেহনত ওয়াজ-নসীহত, তা‘লীম-তারবিয়ত এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের তাছীর থাকে না। সেই অনুচিত কাজও আজ ব্যাপকভাবে করানো হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তারই বেশি গুরুত্ব। যেই উসতায যত বেশি টাকা বা কুরবানীর চামড়া কালেকশন করতে পারেন তার তত বেশি কদর, তাতে তার তালীম ও তারবিয়াতের মান যেমনই হোক না কেন। আমি বলছি না যে, কোনও উসতায অর্থসংগ্রহের কাজ আদৌ করবেন না। মাদরাসার খেদমতের লক্ষ্যে তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে যতটুকু পারেন করবেন এবং তা কমবেশ নিজ ভাবমূর্তি রক্ষা করে। তাতেই বরকত। কোনও অবস্থায়ই কমিটি তাকে চাপ দেবে না; যদি উসতায দ্বারা তা‘লীম ও তারবিয়াতের কাক্সিক্ষত খেদমত নেওয়ার আশা থাকে। একজন উসতাযের কাজ অনেক। তিনি দরস ও তাদরীসের পাশাপাশি তারবিয়াতের কাজ করে থাকেন। তাদরীসের জন্য প্রস্তুতি অনেক বড় ব্যাপার। তার জন্য অনেক সময় দিতে হয়। তারবিয়াত মানে তালিবে ইলমের আমল-আখলাক এবং চিন্তা-ভাবনা ও মানসিকতার পরিচর্যা অর্থাৎ একজন তালিবুল ইলম যাতে ইলমী দক্ষতার পাশাপাশি আমল আখলাকে অনুসরণীয় ব্যক্তি তথা কুরআন-সুন্নাহর প্রতিচিত্র হয়ে উঠতে পারে এবং উম্মতের জন্য নববী দরদ ও তাদের কলব ও চিন্তার রোখ বদলের ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বরূপে গড়ে ওঠতে পারে- সেই সাধনায় ব্যাপৃত থাকাই একজন উসতাযের কাজ। সেই কাজে নিবেদিত থাকা তার পক্ষে তখনই সম্ভব, যখন প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ-সংগ্রহের চাপ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকার পাশাপাশি নিজ পারিবারিক ব্যয়-নির্বাহের পেরেশানি থেকেও ফারেগ থাকবে। সেই ফারাগাত আকছার মাদরাসার আসাতিযায়ে কিরামের নেই। তা সত্ত্বেও কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অধিকাংশ উসতায তা‘লীম ও তারবিয়াতের কাজে যথাসম্ভব নিবেদিত থাকেন। তাদের সেই আত্মনিবেদনের মূল্যায়ন ঠিক কতখানি করা হয়। মানসম্মত অজীফা প্রদানও সেই মূল্যায়নের একটা অংশ নয় কি? স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, উপযুক্ত অজীফা দেওয়া খুব সহজ নয়। কারণ ফান্ডের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু সেই সীমাবদ্ধতাকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখা তখনই সম্ভব যখন তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা ও সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হবে। যে অর্থের সমাগম আপনিই হয়, কর্তৃপক্ষকে যদি তাতেই ক্ষান্ত থাকতে দেখা যায়, তখন সীমাবদ্ধতার বিষয়টা গৌণ হয়ে যায়। সেই সংগে দেওয়ার সদিচ্ছাও বিবেচ্য। উপযুক্ত সম্মানী দেওয়ার সদিচ্ছা যাদের থাকবে তাদের আচরণ অবশ্যই সে সদিচ্ছার সাক্ষ্য দেবে। তারা অপারগতার ক্ষেত্রে লজ্জিত থাকবে এবং তাদের আচরণ হবে বিনীত। তাদের ভাব-ভঙ্গি ও কথাবার্তায়ই প্রকাশ পাবে উপযুক্ত অজীফা দিতে না পারার কারণে তারা কতটা ব্যথিত। পক্ষান্তরে হাবভাব যদি হয় ঔদ্ধত্যপূর্ণ, তবে সদিচ্ছা থাকার দাবি আদৌ সত্য মনে হবে কি? বস্তুত আচার-আচরণের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। কমিটির সেক্রেটারি বা চেয়ারম্যান যদি কোনও উস্তাযকে নিজ কক্ষে ডেকে পাঠান বা কোনও উসতাযকে হুকুম দেন যে, অমুককে ডেকে দিন কিংবা কর্তৃত্বের সুরে তার সাথে কথা বলেন, তবে অন্তত দ্বীনী মাদরাসার কমিটিতে তাকে মানায় না। কুরআন-সুন্নাহর দরসদাতাকে যিনি সম্মান-শ্রদ্ধা করতে জানেন না; মাদরাসা কমিটির সদস্য হন তিনি কোন্ অধিকারে? উস্তাযের প্রতি অসদাচরণ যেমন তার নিজ মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে, তেমনি এর মধ্য দিয়ে তিনি শিক্ষার্থীদের অন্তরে হীনম্মন্যতার বীজ বপন করেন। এহেন আচরণ কি মাদরাসা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে, না মাদরাসার প্রাণবস্তু নির্মূলে সহায়তা করে- ভেবে দেখা দরকার। ভদ্রোচিত আচরণ মুসলিম মাত্রেরই চর্চার বিষয়। মাদরাসা পরিচালনার সাথে যারা জড়িত তাদের এ ব্যাপারে অধিকতর সচেতনতা জরুরি। উল্লেখ্য, পরিচালনা পরিষদের সদস্য যদি হন উলামায়ে কিরাম, তবে মাদরাসার আসাতিযায়ে কিরাম এসব বিষয়ে তাদের কাছে একটু বেশিই আশাবাদী থাকবেন বৈকি! কোনও মাদরাসার মুহতামিম বা পরিচালক আলেমদের কাছে মুদাররিসগণ যদি সেই প্রত্যাশিত আচরণ না পান, তা কতই না দুঃখজনক! আমি বলতে চাই না যে, মুহতামিমগণ বা তাদের অধিকাংশজন আপন আপন মাদরাসার আসাতিযায়ে কিরামের সংগে দুঃখজনক আচরণ করে থাকেন। কিন্তু নিজ আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে তো কোনও দোষ নেই। কিংবা বলি, নিজ স্বার্থেই নিজ আচরণ উন্নত থেকে উন্নততর করার প্রয়োজন সকলেরই আছে। শিক্ষক, কর্মচারী, কর্মকর্তাগণের কর্তব্য- প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি মেনে চলা। ছাত্রদের তালীম-তরবিয়তে আন্তরিকভাবে নিয়োজিত থাকা। পরিচালকবৃন্দের কর্তব্য, তাদের সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করা। মাদরাসা যেহেতু এ বিষয়ে সকলের শিক্ষাকেন্দ্র তাই এর সংগে সংশ্লিষ্ট সকলের বিশেষত পরিচালকবৃন্দের এক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনই কাম্য। আর তখনই মাদরাসা থেকে দ্বীনের যে খেদমত আমরা আশা করি, তা পাওয়া সম্ভব। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।