রবিউল আউয়াল ১৪৩৯   ||   ডিসেম্বর ২০১৭

অবিচার : পোল্যান্ডসীমান্ত-জুড়ে গণপ্রার্থনা

আব্দুল্লাহ নাসীব

গত ৭ অক্টোবর এক অভিনব গণপ্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে পোল্যান্ডে। ৩০০ পোলিশ চার্চের তত্ত্বাবধানে পোল্যান্ডের ২০০০ মাইলেরও অধিক দীর্ঘ সীমান্ত জুড়ে এই গণপ্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বিস্তৃত আকারে অনুষ্ঠিত এই সাড়ম্বর গণপ্রার্থনার সংবাদ আমাদের দেশের পত্র-পত্রিকার আন্তর্জাতিক পাতায় তেমন গুরুত্ব পায়নি। একে ‘শান্তির জন্য প্রার্থনা’ বলা হলেও সমালোচক ও বিশ্লেষকদের আলোচনায় উঠে এসেছে অন্য অনেক কিছু, যার মধ্যে আছে, ইসলামোফোবিয়া বিস্তারের প্রয়াস, আছে সিরিয়ার উদ্বাস্তু মুসলমানদের আশ্রয়দানে পোল্যান্ড সরকারের অস্বীকৃতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা এবং আছে ১৫৭১ সালে উসমানীদের বিরুদ্ধে খ্রিস্টান বাহিনীর এক যুদ্ধজয়ের বার্ষিকী উদযাপন। কাজেই বিষয়টি একেবারে ‘সরল ধর্মীয় ব্যাপার’ও নয়, আমাদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকও নয়। বিবিসির ভাষ্যমতে, “ক্যাথলিকদের উৎসাহিত করা হয়েছে দেশের সীমান্ত জুড়ে নির্ধারিত স্থানসমূহে উপস্থিত হয়ে ‘পোল্যান্ড ও গোটা বিশ্বকে রক্ষার জন্য’ এই গণ-প্রার্থনায় অংশ নিতে ।” এপি, এএফপি ও বিবিসির মতো সংবাদ-সংস্থাগুলোর রিপোর্টে ঐ প্রার্থনায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন বক্তব্য যেমন উদ্ধৃত হয়েছে তেমনি বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণও। কয়েকটি বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হল- Halina kotarska, 65, said she was expressing thanks for the survival of her son in a car crash but also praying for the survival of Christianity in Europe. "Islam wants to destroy Europe," She said, quoted by the asociated Press, "They want to turn us away from Christianity." অর্থাৎ ৬৫ বছর বয়সী ঐধষরহধ শড়ঃধৎংশধ এই প্রার্থনায় অংশ নিয়েছেন একটি কার দুর্ঘটনায় তার পুত্রের প্রাণ রক্ষা পাওয়ার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এবং ইউরোপে খ্রিস্টধর্মের সুরক্ষার জন্য। কারণ, তার মতে, ইসলাম ইউরোপকে ধ্বংস করতে চায় এবং খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের খ্রিস্টধর্ম ত্যাগে বাধ্য করতে চায়!! Krzysztof Januszewski, 45, told the AP he worries Christian Europe is under siege by Islamic Extremists. " In the past, there were raids by sultans and Turks and people of other faiths against us Christians," Januszewski said. "Today Islam is flooding us and we are afraid of this too. We are afraid of terrorist threats and we are afraid of people departing from the faith.' অর্থাৎ ৪৫ বছর বয়স্ক Krzysztof Januszewski তার দুশ্চিন্তা প্রকাশ করেছেন এইভাবে যে, ‘অতীতে (উসমানী) সুলতান, তুর্কী ও অন্যান্য ধর্মের লোকদের দ্বারা খ্রিস্টানেরা আক্রান্ত ছিল। এখন ইসলাম সকলকে প্লাবিত করে ফেলছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে এবং খ্রিস্টধর্মত্যাগের বিস্তারে তারা খুবই ভীত।’ বোঝাই যাচ্ছে, এই প্রার্থনামূলক অনুষ্ঠানের এক অনুষঙ্গ ছিল ব্যাপক ইসলাম-ভীতি ও মুসলিম-বিদ্বেষকে চাঙ্গা করে তোলা। বিশেষজ্ঞরাও গণপ্রার্থনার এই অনুষঙ্গটি স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন। Rafal Pankowski, an expert on xenophobia and extremism told the BBC the prayers seemed like a way to express Islam phobia. এখন আল্লাহর পথের দাঈদের কর্তব্য, শান্তি-সুরক্ষার মতো বহুলব্যবহৃত আন্তর্জাতিক পরিভাষাগুলোর সঠিক মর্ম উপলব্ধি করা। তাদের আরো কর্তব্য ‘শান্তির জন্য প্রার্থনা’ বা ‘দেশের জন্য প্রার্থনা’ শিরোনামে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের এক অনাহূত বিপদ বলে প্রচারের প্রয়াস সম্পর্কেও সচেতন হওয়া। এই সকল প্রচার-প্রচারণার জবাবে এখন শুধু ‘সরল শান্তি’র কথাই যথেষ্ট নয়, বরং এখন প্রয়োজন শান্তির সঠিক সংজ্ঞার আলোচনা, ‘শান্তি’ ও ‘অশান্তি’র ভুল প্রয়োগসমূহ দালীলিকভাবে চিহ্নিত করা এবং ইসলামের প্রকৃত শান্তি ও ন্যায়ের বার্তা, ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর প্রতি ইসলামের ন্যায়ানুগ অবস্থান ও ইতিহাস বিশ্বব্যাপী তুলে ধরা। এখানে একটি সাধারণ প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কি মুসলিমেরা বিশ্বের জন্য বিপদ, না বর্তমান বিশ্বই মুসলমানদের জন্য বিপদসঙ্কুল। বাস্তব ক্ষেত্রে বিষয়টি একদম স্পষ্ট হলেও অন্যায় ও বিরূপ প্রচারণার কারণে তা মানুষের মনে অস্পষ্ট থাকছে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, কাশ্মীরের জন্য কি মুসলিমেরা বিপদ, না কাশ্মীর উপত্যকাই মুসলিমদের জন্য বিপদসঙ্কুল? জিনজিয়াংয়ের জন্য মুসলিমেরা বিপদ, না জিনজিয়াং অঞ্চলটিই মুসলমানদের জন্য বিপদসঙ্কুল? আরাকানের জন্য মুসলিমেরা বিপদ, না আরাকান ভূখ-টিই মুসলমানের জন্য বিপদসঙ্কুল- এই প্রশ্ন যদি করা হয় তাহলে যে উত্তর আসবে তার সাথে কি উপরের প্রচারণার কোনো মিল আছে? বর্তমানে রোহিঙ্গা-মুসলিমেরা পৃথিবীর সবচেয়ে মাযলুম জনগোষ্ঠী, অথচ গোটা বার্মা জুড়ে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীরা এই প্রচারণাই চালিয়ে যাচ্ছে যে, মুসলমানেরা বার্মার জন্য বিপদ! ওরা বার্মা দখল করতে চায়!! সম্প্রতি ভারতের হিন্দু যুবা-বাহিনীর নেতা নাগেন্দ্র প্রতাপ তোমারও এ ধরনের বক্তব্য দিলেন। গত ২৯ অক্টোবর রোববার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে ভারতকে ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করতে মুসলিম সম্প্রদায় ষড়যন্ত্র করে জনসংখ্যা বাড়াচ্ছে! তিনি বলেন, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ষড়যন্ত্র। তারা ভারতকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ভারতের উত্তর প্রদেশে শ্রমিকদের একটি সমাবেশে তোমার বলেন, ‘মুসলমানেরা কেবল সন্তান লাভের জন্যই সন্তান ধারণ করে না, তারা পুরো দেশটা দখল করতে চায় ।’ উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১২ সালে এই সংগঠনটি তৈরি করেছিলেন। পাশাপাশি তিনি এই সংগঠনটির প্রধান পৃষ্ঠপোষকও।... (এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের সূত্রে দৈনিক নয়া দিগন্ত, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭) এ সকল অবাস্তব বক্তব্য যে মজলুম মুসলমানদের উপর জুলুম-অত্যাচারকে বৈধতা দেয়ার এবং কায়েমী স্বার্থবাদীদের বিদ্বেষ ও স্বার্থপরতারই এক উৎকট প্রকাশ তা যেমন আমাদের নিজেদের কাছেও স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন বিশ্ববাসীর সামনেও পরিষ্কার করে দেওয়া। গণপ্রার্থনার দ্বিতীয় যে তাৎপর্য বিশ্লেষকদের আলোচনায় উঠে এসেছে সম্ভবত সেটিই এখানে প্রধান বিষয়। ইটালি ও গ্রীস সিরিয়ার উদ্বাস্তু মুসলিমদের কিছুটা আশ্রয় দিলেও পোল্যান্ড দেয়নি। এর পেছনে পোল্যান্ডের খ্রিস্টান অধিবাসীদের চাপ ছিল প্রধান কারণ। এই অমানবিক ও সংকীর্ণ অবস্থানকে আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে ইসলাম-ভীতির অস্ত্রটি ব্যবহার করে । এখন তো ‘জঙ্গিবাদ’ বড় কাজের জিনিস! এর দ্বারা যে কাউকে অভিযুক্ত করাও যেমন সহজ তেমনি সহজ সব ধরনের অমানবিকতার সাফাই দেওয়া। Many Poles see Islam as a threat. The conservative government, which enjoys the backing of a sizable portion of the population, refuses to welcome migrants to Poland, which has very few Muslims of its own. সীমান্ত জুড়ে এই গণপ্রার্থনায় যে ঐ অনুদার রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে তা আয়োজকেরাও প্রকাশ করেছেন। তবে হ্যাঁ, ‘উদ্বেগের সাথে’! Church leaders say the event is purely religious, but there are concerns it could be seen as endorsing the state's refusal to let in Muslim migrants. এখানে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ পোল্যান্ডের এই অনুদার অবস্থান যীশুর শান্তি ও উদারতার বাণীর সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। মুসলিম জনপদে খ্রিস্টধর্ম প্রচার করতে গিয়ে খ্রিস্টান মিশনারীরা স্বধর্মের শান্তি ও উদারতার যে চিত্র ফুটিয়ে তোলেন তার সাথে সিরিয়ান উদ্বাস্তু মুসলিমদের ব্যাপারে তাদের সাধারণ অবস্থানকে তো কোনোভাবেই মেলানো যাচ্ছে না। গণপ্রার্থনার তৃতীয় যে অনুষঙ্গ আলোচিত হয়েছে তা হচ্ছে, উসমানী সালতানাতের বিরুদ্ধে খ্রিস্টীয় ইউরোপের একটি বিজয় উদযাপন। বিবিসির মতে- The feast day marks the anniversary of a Christian victory over Ottoman Turks at the sea battle of Lepanto in 1571 লেপানটোর ঘটনাটি শুধু উসমানী সালতানাতের জন্যই নয় গোটা মুসলিম জাহানের জন্য এক দুঃখজনক ঘটনা। এটা আমরা অনেকে ভুলে গেলেও খ্রিস্টজগৎ ভোলেনি। লেপানটোর এই ঘটনাটি কোনো ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ঘটনা ছিল না; বরং তা ছিল খ্রিস্টীয় ইউরোপের পক্ষ হতে একটি প্রকাশ্য ‘ধর্মযুদ্ধ’। খ্রিস্টান চার্চগুলো কয়েক শতাব্দীর পুরানো ঘটনাগুলোকেও বিভিন্ন আয়োজন-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাগ্রত রাখছে। লেপানটো-যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত বিবরণ থেকে জানা যায়, উসমানী সালতানাতের ক্রমবিস্তারে ভীত হয়ে পোপ পঞ্চম পিয়াস তুর্কী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য স্পেন ও ভেনিসকে নিয়ে একটি ‘পবিত্র সংঘ’ গঠন করেন। স্পেনের রাজা ফিলিপের বৈমাত্রেয় ভাই অস্ট্রিয়ার রাজকুমার ডনজন-এর নেতৃত্বে এই খ্রিস্টজোট তুর্কীদের বিরুদ্ধে নৌবহর প্রেরণ করে। ১৫৭১ সালের লেপানটোর নৌযুদ্ধে তুর্কী নৌবহর চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। উসমানী সালতানাতের বিরুদ্ধে খ্রিস্টজোটের বিজয়ের তারিখেই পোল্যান্ড সীমান্ত জুড়ে এই গণপ্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা বিবিসির উপরোক্ত উদ্ধৃতিতেই বলা হয়েছে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে এই বাস্তবতা আবারো সামনে এল যে, আমাদের অনেক মুসলিম নিজেদের জাতীয় অতীত সম্পর্কে নিরাসক্ত হলেও অমুসলিমেরা তা নয়। ওরা বরং তাদের বর্তমানকে অতীতের সাথে যুক্ত রাখতেই আগ্রহী। অনেকে তো ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে ক্রুসেডীয় মনোভাবও প্রকাশ করে থাকে। এএফপি বলছে- Nationalist Catholic activist Marcin Dybowski told AFP before the event that "a religious war between Christianity and Islam is once again underway in Europe, just like in the past." "Poland is in danger. We need to shield our families, our homes, our country from all kinds of threats, including the de-Christianization of our society, which the EU's liberals want to impose on us," he said. এখন অনেক বড় দাওয়াতী প্রয়োজন, ইসলাম সম্পর্কে এই অন্যায় দৃষ্টিভঙ্গির ভ্রান্তি ধরিয়ে দেওয়া। আমাদের মুসলিম মনীষীগণ তা করেছেনও বটে। মুসলিমসমাজের আত্মরক্ষা ও ইসলামী দাওয়াতের সফলতার স্বার্থেই ইসলাম সম্পর্কে এই অমূলক ভীতি দূর করা কর্তব্য। নিঃসন্দেহে ইসলাম বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ও প্রচারিত হয়েছে, কিন্তু তা মোটেও জোরপূর্বক নয়। অন্যথায় আজ ঐ সকল ভূখণ্ডে একজন অমুসলিমও খুঁজে পাওয়া যেত না, যেখানে শত শত বছর পর্যন্ত ইসলামী শাসন কায়েম ছিল। ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সত্য ও আদর্শের শক্তিতে, তরবারীর শক্তিতে নয়। তবে হ্যাঁ, অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে ইসলামের তরবারী ঝলসেও ওঠেছে। কিন্তু ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা? না, এটা ইসলামে কখনোই ছিল না। ইসলাম গ্রহণে কাউকে বাধ্য করার সুযোগ ইসলামে নেই। তেমনি অমুসলিমদের প্রতিও ইসলামের উদারতা ও ন্যায়বিচার এমন এক বাস্তবতা, যা খোদ খ্রিস্টানেরাও স্বীকার করেছেন। এই সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে তো বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নেই, একজন খ্রিস্টান গবেষকের কিছু উদ্ধৃতি তুলে দিয়েই আলোচনা শেষ করব। খ্রিস্টধর্মাবলম্বী বৃটিশ গবেষক স্যার টমাস আর্নল্ডের The preching of Islam বইটি বিশ্ববিখ্যাত। এই বই থেকে উসমানী আমলে ইউরোপের কিছু কিছু ভূখণ্ডে ইসলাম প্রচারিত হওয়া কিছু টুকরো ইতিহাস তুলে দিচ্ছি। বসনিয়ায় ইসলাম বিস্তারের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, বসনিয়ার সংখ্যাগরিষ্ঠ অধিবাসী ছিল খ্রিস্টান Bogomiles সম্প্রদায়ের। এরা ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের দ্বারা চরম নির্যাতন ভোগ করে। ১৫ শতকে জুলুম অত্যাচার অসহনীয় হয়ে দাঁড়ালে এরা তুর্কিদের কাছে এই জুলুম নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা করার আবেদন জানায়। ১৪৬৩ সালে সুলতান মুহাম্মদ সানী বসনিয়ায় অভিযান পরিচালনা করলে খ্রিস্টান রাজাকে ফেলে প্রজারা সরে যায়। খোদ খ্রিস্টান অধিবাসীরাই প্রধান দুর্গের চাবি সুলতানের হাতে অর্পণ করে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে সত্তরটি শহর সুলতানের করতলগত হয়। The majority of the population belonged to a heretical Christian sect, called Bogomiles, who from the thirteenth century had been exposed to the persecution of the Roman Catholics and against whom Popes had on several occasions preached a Crusade...In the fifteenth century, the sufferings of the Bogomiles became so intolerable that they appealed to the Turks to deliver them from their unhappy condition, for the king of Bosnia and the priests were pushing the persecution of the Bogomiles to an extreme which perhaps it had never reached before... The following year, when Bosnia was invaded by Muhammad II., the Catholic king found himself deserted by his subjects: the keys of the principal fortress, the royal city of Bobovatz, were handed over to the Turks by the Bogomile governor ; the other fortresses and towns hastened to follow this example and within a week seventy cities passed into the hands of the Sultan, and Muhammad II. added Bosnia to the number of his numerous conquests. P.198-199,The preaching of Islam by T. W. Arnold M. A. C. I. E. professor of Arabic, University of London, University College. Second Edition, Revised and Enlarged. London, Constable and Company Ltd 1913) এরপর টমাস আর্নল্ড লেখেন, Bogomiles সম্প্রদায়ের কথা এরপর আমরা আর বেশি শুনিনি। সম্ভবত উসমানী বিজয়ের পর তাদের সিংহভাগই স্বেচ্ছায় ইসলাম কবুল করে। From this time forth we hear but little of the Bogomiles ; they seem to have willingly embraced Islam in large numbers immediately after the Turkish conquest...ibid.P.199 স্যার টমাস আর্নল্ড আরো বলেন, ‘উসমানীগণ বসনিয়ার অধিবাসীদের প্রতি চূড়ান্ত উদারতা প্রদর্শন করতেন, বসনিয়ার মুসলিমদের তারা তাদের আঞ্চলিক জাতীয়তা রক্ষায় পূর্ণ উদারতা দেখিয়েছেন। তারা নিজেদের ভাষায় কথা বলতেন। এরই সাথে তাদের নতুন দ্বীনের প্রতি তাদের ছিল অপরিমেয় উচ্ছ্বাস। তাদের ইসলামপ্রিয়তা ও শৌর্য-বীর্যের কারণে অতি অল্প সময়ের মাঝেই ইস্তাম্বুলে উচ্চ আসন অধিকার করেন। এমন কি ১৫৪৪ থেকে ১৬১১ সময়কালে উচ্চ মন্ত্রীত্বের পদে বসনিয়ার বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরাই সমাসীন ছিলেন। The Turks, as was their usual custom, offered every advantage to induce the Bosnians to accept their creed. All who embraced Islam were allowed to retain their lands and possessions,... The Bosnian Muhammadans retained their nationality and still for the most part bear Serb names and speak only their national tongue ; at the same time they have always evinced a lively zeal for their new faith, and by their military prowess, their devotion to Islam and the powerful influence they exercised, the Bosnian nobility rapidly rose into high favour in Constantinople and many were entrusted with important offices of state, e.g. between the years 1544 and 161 1 nine statesmen of Bosnian origin filled the post of Grand Vizier. ibid.P.200-201 প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম সম্পর্কে এখন যে ভীতি ছড়ানো হচ্ছে, তা উপরোক্ত ইতিহাসের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ? টমাস আর্নল্ড ‘ক্রীট’ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ঐ অঞ্চলের অধিবাসীদের ইসলাম গ্রহণের বৃত্তান্ত, এরপর বাইজেন্টাইন শাসনামলে সকলকে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার ইতিহাস বর্ণনার পর উসমানী সালতানাতের বিজয় সম্পর্কে বলেছেন, ভেনেসীয়রা যখন নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে গ্রীক বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তখন জুলুম অত্যাচার দ্বারা ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে এটা কীভাবে বলা যায়? সুতরাং একথাই বলতে হবে যে, এটা উসমানীদের সাম্য ও উদারতার ফল...। It is not improbable that the same patriotism as made them cling to their old faith under the foreign domination of the Venetians who kept them at arm's length and regarded any attempt at assimilation as an unpardonable indignity, and always tried to impress on their subjects a sense of their inferiority—may have led them to accept the religion of their new masters, which at once raised them from the position of subjects to that of equals and gave them a share in the political life and government of their country. ibid. P. 204 আলবেনিয়া সম্পর্কে স্যার টমাস অর্নল্ডের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এ অঞ্চল পূর্ণরূপে বিজিত হয় ১৫৭১ সালে। উসমানীগণ এ অঞ্চলের খ্রিস্টান অধিবাসীদের সহায়সম্পদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও উপসনালয়সমূহের সংরক্ষণ ও সংস্কারের নিশ্চয়তা দান করেন। আলবেনিয়ায় উসমানীদের আগমন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আলবেনিয়ায় সম্পর্কে স্যার টমাস আর্নল্ডের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, এ অঞ্চল ইসলাম প্রচার হয়েছে খুব ধীর গতিতে। খোদ আলবেনীয়দের মাধ্যমে; বাইরের কোনো চাপে নয়।’ it appears to have been propagated very gradually by the people of the country themselves, and not under pressure of foreign influences. ibid.P.179 সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ সম্পর্কে তিনি বলেনÑ সুলতান মুহাম্মাদ ফাতিহ কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর নিজেকে গ্রীক চার্চের রক্ষক বলে ঘোষণা দেন। এবং খ্রিস্টানদের উপর যে কোনো ধরনের জুলুম নির্যাতন করাকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। One of the first steps taken by Muhammad II., after the capture of Constantinople and the re-establishment of order in that city, was to secure the allegiance of the Christians, by proclaiming himself the protector of the Greek church. Persecution of the Christians was strictly forbidden. ibid. P. 145-146 সুলতান বায়েজীদ ইয়ালদারেম সম্পর্কে বলেনÑ সুলতান বায়েজীদ ইয়ালদারেম ছিলেন খুবই উদার ও মহানুভব। খ্রিস্টানদের মাঝে তার জনপ্রিয়তার কারণ হল তিনি তাদেরকে স্বাধীনভাবে তার সভায় আসা যাওয়ার সুযোগ দিতেন। the impetuous Bayazid was liberal and generous to his Christian subjects, and made himself extremely popular among them by admitting them freely to his society... ibid, P.148 তিনি আরো বলেন, খ্রিস্টান প্রজাগণ উসমানী সুলতানদের জন্য প্রার্থনা করত, হে আল্লাহ! তুর্কীদের শাসন চিরস্থায়ী করুন। তারা কেবল আরোপিত জিযয়াই গ্রহণ করে। প্রজাদের ধর্মীয় ব্যাপারে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা খ্রিস্টান হোক কিংবা ইহুদী। God perpetuate the empire of the Turks for ever and ever! For they take their impost, and enter into no account of religion, be their subjects Christians or Nazarenes, Jews or Samaritans... ibid,P.156-157 এরকম বহু উদ্ধৃতি উপস্থিত করা যায়, যা এতদঞ্চলে ইসলাম বিস্তার লাভ করার ইতিহাস এবং এ সকল অঞ্চলের অমুসলিমদের সাথে উসমানীদের উদারতা ও ন্যায়বিচারের এক অনন্য চিত্র উপস্থাপন করে। পাঠক! একটু বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের সম্পর্কে যে বিরুদ্ধ-প্রচার, যে অমূলক ভীতি ছড়িয়ে দেয়ার নানা প্রয়াস, তা এই উজ্জ্বল আদর্শের প্রতি অবিচার নয় কি?

 

 

advertisement