জ্যোতির্বিজ্ঞানে মধ্যযুগের মুসলমানদের অবদান
ড. গোলাম কাদির লূন
প্রবন্ধটির প্রথম কিস্তি যিলহজ্ব ১৪৩৮ হিজরী/সেপ্টেম্বর ২০১৭ ঈসায়ী সংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। এখন ২য় কিস্তি ছাপা হচ্ছে। এ বিষয়টি সম্পূর্ণ শাস্ত্রীয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একাধিক শাস্ত্রের সাথে জড়িত। যদি কোনো শাস্ত্রজ্ঞের নজরে মূলে বা অনুবাদে কোনো ত্রুটি ধরা পড়ে তাহলে মেহেরবানী করে তা আমাদের অবহিত করার বিনীত অনুরোধ রইল। -সম্পাদক
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
[মুসলিম জ্ঞান-বিজ্ঞানের ইতিহাস সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন এমন ব্যক্তিমাত্রই অবগত আছেন যে, বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে মুসলমান পণ্ডিতগণ অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। অনেক কিছুর তো আবিষ্কারও তাঁরা করেছেন। এসব কাজে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন তৎকালীন মুসলিম শাসকগণ। জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণায় অকাতরে অর্থ বিলিয়েছেন তাঁরা। এসব গবেষণাকর্ম পরবর্তী যুগে বিজ্ঞানের উন্নতিতে ব্যাপকভাবে সহায়ক হয়েছে। খোদ পশ্চিমের অমুসলিম বিজ্ঞানী ও ঐতিহাসিকগণও এ বাস্তবতা বর্ণনা করেছেন এবং এই সত্যের সাক্ষ্য দিয়েছেন। যদিও একতরফা পড়াশোনা ও হীনম্মন্যতার কারণে অনেক মুসলমান আজ নিজেদের এই ঐতিহ্যের খবর রাখেন না বা স্বীকার করেন না। বিশিষ্ট গবেষক ড. গোলাম কাদির লূন-এর এ সংক্রান্ত একটি প্রামাণ্য নিবন্ধের (কিছু পরিমার্জনের পর) অনুবাদ করেছেন আমাদের স্নেহভাজন মাওলানা ওয়ালিউল্লাহ আবদুল জলীল। তরজমাটি বেশ প্রাঞ্জল হয়েছে। আশা করি পাঠক এতে চিন্তার ও আনন্দের খোরাক পাবেন। -তত্ত্বাবধায়ক]
জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা শাখা-প্রশাখায় আলবাত্তানীর অবদান ও আবিষ্কার অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি নিজ পর্যবেক্ষণের ধারা ২৬৪ হিজরী/৮৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে নিয়ে ৩০৬ হিজরী/৯১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত অব্যাহত রাখেন। সেসব পর্যবেক্ষণের আলোকে তিনি প্রসিদ্ধ গ্রিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমির ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করেন এবং তার বর্ণিত ভুল অনুমানগুলোর স্থানে সঠিক অথবা কমপক্ষে বর্তমানের গ্রহণযোগ্য পরিমাপের কাছাকাছি পরিমাপ আবিষ্কার করেন। এর কয়েকটি উদাহরণ হল :
১. টলেমি সূর্যের (Apogee) অপভূ ও (Eccentricity) উৎকেন্দ্রিকতাকে অপরিবর্তনশীল বলেছিলেন, আলবাত্তানি প্রমাণ করেন উভয়টিই পরিবর্তনশীল।
২. টলেমি বিষুববিন্দুর অগ্রচলনের (precession of equinoxes) পরিমাণ শত বছরে এক ডিগ্রি আবিষ্কার করেছিলেন। সাবেত ইবনে কুররা এর পরিমাণ ছেষট্টি বছরে এক ডিগ্রি আবিষ্কার করেন। আলবাত্তানী সাবেত ইবনে কুররার নির্ধারিত পরিমাণ সমর্থন করেন এবং টলেমির ভুল ধরে দেন। এ সমর্থিত পরিমাণ সঠিক মতামতের প্রায় কাছাকাছি। প্রকৃত পরিমাণ হল, বাহাত্তর বছরে এক ডিগ্রি।
৩. টলেমি ট্রপিক্যাল ইয়ার (সাধারণ্যে যা সৌরবর্ষ হিসেবে পরিচিত) এর দৈর্ঘ ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট ১২ সেকেন্ড বলেছিলেন। এটি প্রকৃত পরিমাণ থেকে ৬ মিনিট ২৮.৭ সেকেন্ড বেশি। আলবাত্তানী ট্রপিক্যাল ইয়ারের দৈর্ঘ ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আবিষ্কার করেন, যা প্রকৃত সময় থেকে শুধু ২ মিনিট ২৪.৭ সেকেন্ড কম।
৪. টলেমি সূর্যপথের ক্রান্তিকোণের নতি ২৩০-৫১′-২০” আবিষ্কার করেছিলেন। আলবাত্তানী এর পরিমাণ নির্ধারণ করেন ২৩০ ৩৫’ যা পুরোপুরি শুদ্ধ ও বিশুদ্ধ।
৫. টলেমি বলয়গ্রহণকে অসম্ভব বলেছিলেন, আলবাত্তানীর মতামত হল এটা সম্ভব।
এছাড়া আলবাত্তানী পাঁচটি তারকার গতি লিপিবদ্ধ করেন। নতুন চাঁদ দেখা ও চন্দ্রগ্রহণের পরিমাণ জানার পদ্ধতি বলে গেছেন। Anomalestic Month -এ সূর্য ও চন্দ্রের পরিবর্তনের ওপর আলোকপাত করেন। (معروف مسلم سائنسداں : ২৩৭-২৫৫)
জ্যোতির্বিজ্ঞানে তাঁর অনন্য সব আবিষ্কার এখানে তুলে ধরা সম্ভব নয়।
শতাব্দীর পর শতাব্দী পূর্ব পশ্চিমের বিজ্ঞানীরা আল-বাত্তানীর মর্যাদা স্বীকার করেছেন। আলকিফতীর ভাষায়ইসলামের ইতিহাসে অন্য কোনো জ্যোতির্বিজ্ঞানীর আলোচনা পাওয়া যায় না, যিনি তারকারাজির পর্যবেক্ষণ ও গতি যাচাই করে এ পর্যায়ে পৌঁছেন। ইউরোপ আমেরিকার লেখকরাও তার প্রশংসা করেছেন। ওয়েলডোরান তার প্রাজ্ঞতা স্বীকার করেছেন এভাবে- ‘দূরদর্শিতা ও নির্ভুলতায়’ তিনি অসাধারণ। (The Age of Faith P. 242)
ফিলিপ কে. হিট্টি বলেন,
Al-battani was an original research worker. He made several emendations to Ptolemy and Rectified the calculations for the orbits of moon and certain planets. He proved the possibility of annular eclips of the sun, determined with greater accuracy the obliquity of the ecliptic and presented original theories on the determination of the visibility of the new moon. (History of the Arabs P.376)
আলবাত্তানী ছিলেন একজন মৌলিক গবেষক। টলেমির তত্ত্বে বেশ কয়েকটি সংশোধনী তিনি যুক্ত করেন। চাঁদ ও অন্যান্য কয়েকটি গ্রহের কক্ষপথ নির্ণয়ের ভুলও সংশোধন করেন। তিনি সূর্যের বলয় গ্রহণ-এর সম্ভাবনা প্রমাণ করেন। সূর্যপথের ক্রান্তিকোণ অধিক নির্ভুলভাবে নির্ণয় করেন। এছাড়াও নতুন চাঁদ দেখার মৌলিক তত্ত্ব তুলে ধরেন।
মধ্যযুগ ও আধুনিক কালের ইহুদী-খ্রিস্টান জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আলবাত্তানীর অসাধারণ অবদানের আলোচনা অনেক করেন। ইহুদী বিজ্ঞানী ইবরাহীম ইবনে বরখিয়া (মৃত্যু : ১১৩৬ খ্রিস্টাব্দ) ইবরাহীম ইবনে আযর (মৃত্যু : ১১৬৭ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীর প্রসংশা করেছেন। মূসা ইবনে মায়মুন (১১৩৫-১২০৪ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীর আবিষ্কৃত মান ও পঞ্জিকা থেকে তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছেন। ল্যাটিন লেখকদের মধ্যে হেনরি বেট (১২৪৬-১৩১০ খ্রিস্টাব্দ) তার প্রস্তুতকৃত পঞ্জিকা ব্যবহার করে প্রশংসা করেছেন।
বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী কেপলার (১৫৭১-১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) গ্যালিলিও (১৫৬৪-১৬৪২ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীর গবেষণার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। কোপারনিকাস (১৪৭৩-১৫৪৩ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীর গবেষণা থেকে বেশ উপকৃত হন। পদে পদে তার উদ্ধৃতি দেন। ট্যুকোব্রাহে (১৫৪৬-১৬০১ খ্রিস্টাব্দ) এবং জিবি রিচুলী প্রচুর আলবাত্তানীর উদ্ধৃতি এনেছেন। ডি লেম্বার (De Lamber) (১৭৪৯-১৮২২ খ্রিস্টাব্দ) নিজ রচনায় আলবাত্তানীর পঞ্জিকার ৫৩ পৃষ্ঠাব্যাপী পর্যালোচনা করেন। কিন্তু পর্যালোচনা করতে গিয়ে বেশ ভুল-ভ্রান্তির শিকার হন। (معروف مسلم سائنسداں :২৪৯-২৫৩)
বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী লেপল্যস Laplace (১৭৪৯-১৮২৭ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
(History of the Conflict Between Religion and science. P. 116)
তিনি নিজ রচনা Systeme De Mondi তে আলবাত্তানীর মহাকাশ গবেষণা কাজে লাগান।
(History of the Intellectual Development of Europe Vol. II, P. 49)
ফ্রান্সের একজন বিজ্ঞানী ল্যালেন্ড Lalande (১৭৩২-১৮০৭ খ্রিস্টাব্দ) আলবাত্তানীকে ইতিহাসের কীর্তিমান বিশ জ্যোতির্বিজ্ঞানীর একজন গণ্য করেছেন।
(خيرالدين الزركليথالأعلام، مصر، الطبعة الثانية : ১৩৭২-১৩৭৮)
ইতালীর প্রাচ্যবিদ সিএ নেলিনু (C.A. Nalino) ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে আলবাত্তানীর পঞ্জিকার আরবী সংস্করণ ও ল্যাটিন তরজমা প্রকাশ করেন। তা আপন বৈশিষ্ট্য ছাড়াও জ্যোতির্বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। (معروف مسلم سائنسداں :২৫৩)
মধ্যযুগে মুসলমানরা দু শরও বেশি জ্যোতির্বিজ্ঞানের পঞ্জিকা প্রস্তুত করেন। এর মধ্যে কিছু পঞ্জিকা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে উৎসের মর্যাদা লাভ করেছে। সেসবের একটি পঞ্জিকা বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে ইউনুস রচিত, যা الزيج الكبير الحاكمي নামে প্রসিদ্ধ।
(Encyclopaedia of Islam Vol. III, P. 969-970
اردو دائرہ معارف اسلامیہ : ১/৭৩৭)
আবুল হাসান আলী ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আহমাদ ইবনে ইউনুস আসসাদফী আলমিসরী ওরফে ইবনে ইউনুস হলেন মিশরের মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তিনি মিশরের ফুসতাতে ইন্তেকাল করেন। তিনি তার অগ্রজ জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বর্ণনা ও মতামত পর্যালোচনার মনস্থ করেন, যেন এমন একটি পঞ্জিকা তৈরি করতে পারেন, যা আব্বাসী যুগে ইয়াহইয়া ইবনে আবু মানসূরের রচিতالزيج الممتحن-এর স্থান অধিকার করতে পারে। এ উদ্দেশ্যে তিনি আলকুরাফার একটি মসজিদে, ফুসতাতের নিজ নানা বাড়ীতে এবং বারকাতুল হাবশে (ফুসতাতেরই একটি এলাকা) আকাশ পর্যবেক্ষণ করেন।
৩৮০ হিজরী/৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ইবনে ইউনুস الزيج الكبير الحاكمي ফাতেমী খলীফা আলআযীযের নির্দেশে রচনা শুরু করেন। মৃত্যুর ছয় বছর পূর্ব পর্যন্ত নিজ পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন। তার গবেষণা সংশ্লিষ্ট ছিল গ্রহগুলোর পারস্পরিক সংযোগ ও রেগুলাস তারকার সাথে এসবের সংযোগ এবং চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত। তিনি নিজ রচনায় কমপক্ষে চল্লিশটি গ্রহসংযোগের তাফসীল পেশ করেন। কিতাবে যেসব গ্রহণের বিশদ বিবরণ পেশ করেছেন তার সংখ্যা ত্রিশ। ইবনে ইউনুস পূর্বেকার পঞ্জিকাগুলো সামনে রেখে কিছু মান কিংবা পরিমাণ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু নিজ গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে তিনি যে মান লিপিবদ্ধ করেন তা আজকের হিসাবের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যায়। এর উদাহরণ ইবনে ইউনুস বর্ণিত একটি গ্রহসংযোগের বিবরণের মাধ্যমে দেওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ১৩ জুমাদাস সানী ৩৯০ হিজরী সোমবারের আগের রাতে সূর্যাস্তের পর মিথুন তারকাম-লে পশ্চিম আকাশের ওপর শুক্র ও বুধের মাঝে Conjunction (সংযোগ) ছিল। বুধ শুক্রের উত্তরে ছিল এবং অক্ষরেখায় ব্যবধান ছিল????ডিগ্রি। আধুনিক পঞ্জিকা অনুযায়ী হিসাব করে দেখা যায়, রবিবার ১৯ মে ১০০০ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যায় উভয় গ্রহের Conjunction ছিল। ব্যবধান বাস্তবেই ?????ডিগ্রি ছিল। (معروف مسلم سائنسداں : ৪৬০-৪৬১)
ইবনে ইউনুস তার অগ্রজ মুসলিম বিজ্ঞানীদের মতো সূর্যের পরিক্রমণ পথের ক্রান্তিকোণের যে কৌণিক মান নির্ধারণ করেন তা ছিল- ২৩০ ৩৫’′, যা পুরোপুরিই সঠিক।
তারকারাজির গতিবিধির যে মাপ ও পরিমাণ ইবনে ইউনুস আবিষ্কার করেন তা সমস্ত মুসলিম বিজ্ঞানীদের চেয়ে সঠিক। টলেমি বলেছিলেন এর পরিমাণ ১০০ বছরে এক ডিগ্রি। আলবাত্তানী বলেছিলেন, ৬৬ বছরে এক ডিগ্রি। ইবনে ইউনুস বলেছেন এর পরিমাণ ৭০.২৫ বছরে এক ডিগ্রি, যা প্রকৃত পরিমাণের (বাহাত্তর বছরে এক ডিগ্রি)র খুবই কাছাকাছি। এটাকে ইবনে ইউনুসের গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মনে করা হয়।
ইউরোপে ইবনে ইউনুস আঠারো শতাব্দী পর্যন্ত ছিলেন অখ্যাত। ১৮০৪ সালে Perceval তার গবেষণা ও পঞ্জিকা পরিচিতি ফ্রেঞ্চ ভাষায় প্রকাশ করেন। তারপর পশ্চিমা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তার রচনার প্রতি মনোনিবেশ করেন, যার ফলে জ্যোতির্বিজ্ঞানে ইবনে ইউনুসের অবদান দৃশ্যপটে আসতে শুরু করে। উধারফ অ করহম জ্যোতির্বিজ্ঞানে ইবনে ইউনুসের অবদান বিষয়ে পিএইচডি করেন, যা ণধষব ইউনিভার্সিটি থেকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়।
(David A. king: The Astronomical works of lbn Yunus Ph. D. dissertation Yale University 1972)
ইবনে ইউনুসের পঞ্জিকার মাধ্যমে পশ্চিমের যে বিজ্ঞানীরা নানাভাবে উপকৃত হয়েছেন তাদের মধ্যে লেপল্যসের মতো বিশিষ্ট বিজ্ঞানীরাও আছেন। ড্রেপার সে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-
The treatise of albategnius on "The science of the stars" is spoken of by Laplace with respect. He also draws attention to an important fragment of Ibn-junis, the astronomer of Hakem, the khalif of Egypt, A.D.1000, as containing a long series of observations from the time of Almansor, of eclipses. equinoxes, Solsties, Conjunctions of planets, occultations of stars- observations which have cast much light on the great variations of the system of the world.
(History of the Conflict Between Religion and Science. P. 116)
জ্যোতির্বিজ্ঞানে রচিত আলবাত্তানীর রচনার আলোচনা করতে গিয়ে লেপল্যস প্রশংসাসুলভ বাক্য ব্যবহার করেছেন। তিনি খলীফা আলহাকেম মিসরীর (১০০০ খ্রিস্টাব্দ) জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে ইউনুসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যাতে মনসূরের সময়কাল থেকে গ্রহণ (Eclipses), মহাবিষুব (Equinoxes), সংক্রান্তি (Solsties), গ্রহসংযোগ (Conjunction of planets), নক্ষত্রের সাময়িক অদৃশ্যকরণ (occultations of Stars. যেমন চাঁদের পেছনে দূরের কোনো তারা বা নিহারিকা বা গ্রহের সম্পূর্ণ ঢাকা পড়ে যাওয়া)-সংক্রান্ত নানা পর্যবেক্ষণের দীর্ঘ আলোচনা রয়েছে, যা সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন পরিবর্তনের উপর যথেষ্ট আলোকপাত করে।
ড্রেপারের বর্ণনা মতে লেপল্যস নিজ রচনা Systeme du Monde-এর পঞ্চম টীকায় পৃথিবীর কক্ষপথের উৎকেন্দ্রিকতার diminution-এর সমর্থনে ইবনে ইউনুস, আলবাত্তানী ও অন্যান্য মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের গবেষণাকে চূড়ান্ত প্রমাণ হিসাবে এনেছেন। তিনি ইবনে ইউনুসের একটি গবেষণা (১০০০ খ্রিস্টাব্দ) ফলাফলকে মূলের অনেক কাছাকাছি বলে উল্লেখ করেছেন। ৩১ অক্টোবর ১০০৭ ইবনে ইউনুস কৃত একটি পর্যবেক্ষণকে এ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলেছেন যে, এর মধ্যে বৃহস্পতি ও শনির বেশ inequality ইনইক্যুয়ালিটির কথা আছে। (History of the Intellectual Development of Europe vol. II, P. 49)
ড্রেপার সময় নির্ণয়ে মুসলমানদের সফলতার আলোচনা করতে গিয়ে লেখেন, এ জন্য সর্বপ্রথম পেন্ডুলাম- দোলক ব্যবহার ইবনে ইউনুসই করেন। তিনি লেখেন-
In their measures of time they were more successful; they had several kinds of clepsydras. A balance clepsydra is described in the work from which I am quoting. but it was their great astronomer, Ebn junis who accomplished the most valuable of all chronometric improvements, He first applied pendulum to the measure of time. (History of the Intellectual Development of Europe Vol. II P. 49)
সময় নির্ণয়ে মুসলমানরা সবচেয়ে বেশি সফলতা লাভ করে। তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের জলঘড়ি ছিল। যে বই থেকে এ তথ্য নিচ্ছি তার মধ্যে একটি জলঘড়ির বর্ণনা আছে। তাদের মধ্যে ছিলেন মহান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ইবনে ইউনুস, যিনি সময় নির্ণয়ের বিষয়টি সংশোধন করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখেন। সময় নির্ণয়ের জন্য সর্বপ্রথম তিনিই পেন্ডুলাম ও দোলক ব্যবহার করেন।
মধ্যযুগে স্পেনের মুসলমানরাও জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে যেসব নামকরা বিজ্ঞানী জন্মলাভ করেন, তাদের অন্যতম হলেন, আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইবনে ইয়াহইয়া আননাক্কাশ আযযারকালী। যার রচিত الزيج الطليطلي ইউরোপে Toledian Tables নামে প্রসিদ্ধ। আবূ ইসহাক ইবরাহীম আযযারকালী ৪২০ হিজরী/১০২৯ খ্রিস্টাব্দে কর্ডোভার এক কারিগর বংশে জন্মগ্রহণ করেন। নিজস্ব যোগ্যতা ও প্রচেষ্টায় জ্যোতির্বিজ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। টলেডোর বিচারপতি ইবনে সায়েদের নিজ গবেষণাগারের জন্য একটি যন্ত্র তৈরির প্রয়োজন দেখা দিলে তার সঙ্গে আযযারকালীর কাজ করার সুযোগ আসে। সেখানে তিনি ৪৫২ হিজরী/১০৬০ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। الزيج الطليطلي সে বছরগুলোরই স্মৃতি। ৪৭০ হিজরীর অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তিনি টলেডো ছেড়ে কর্ডোভা চলে যান। আজীবন সেখানেই থাকেন। ৪৯৩ হিজরী/১১০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন।
আযযারকালী একটি মহাকাশযন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা صفيحه زرقالية নামে খ্যাত। এ যন্ত্রটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার মনে করা হয়। খোদ যারকালী এ যন্ত্রের মাধ্যমে যে পর্যবেক্ষণ করেন তার ফলাফল আধুনিক সময়ের পরিমাপের প্রায় কাছাকাছি। কর্ডোভা এসে যারকালী সিংহরাশির সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র রেগুলাসের দ্রাঘিমা রেখা আবিষ্কার করেন। এ আবিষ্কারের এক বছর পর তিনি নক্ষত্রের Culmination (কোনো জ্যোতিষ্ক বা খণ্ডবস্তুর সর্বোচ্চ উন্নতিকে Culmination তথা মধ্যগমন বলে) আবিষ্কার করেন। (معروف مسلم سائنسداں : ৬২২)
الزيج الطليطلي -এর মধ্যে বর্ণিত পরিমাণ বাস্তবতার খুব কাছাকাছি। টলেমি ভূমধ্যসাগরের দৈর্ঘ ৬২০ বলেছেন। খাওয়ারযেমী ৫২০ বলেছেন। কিন্তু الزيج الطليطلي এর মধ্যে এর দৈর্ঘ আনুমানিক ৪২০ বলেছেন। যা প্রকৃত মানের প্রায় কাছাকাছি।
(History of the Arabs P. 571)
যারকালীর গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের একটি হল, তার সে অভিমত, যার মধ্যে তিনি বলেছেন, নক্ষত্ররাজির বিপরীতে সূর্যের অপভূবিন্দুর গতি রয়েছে। তিনি এর দ্বারা সৃষ্ট পরিবর্তনের পরিমাণও নির্ণয় করেছেন। তার বর্ণনা মতে এ পরিবর্তনের পরিমাণ ২৯৯ বছরে এক ডিগ্রি, যা বার্ষিক ১২.০৪”। আধুনিক বিজ্ঞান এর পরিমাণ ১১.৮” বলেছে। (معروف مسلم سائنسداں : ৬২৪)
ফিলিপ কে. হিট্টি লিখেছেন,
Al-zarqali was evidently the foremost astronomical observer of his age. He devised an improved type of astrolab, called the Safihah, and was the first to prove the motion of the solar apogee with reference to the stars. according to the measurements it amounted to 12.04′′, whereas its real value is 11.8′′. (History of the Arabs PP. 571-572)
যারকালী নিজের যুগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাকাশ গবেষক ছিলেন। তিনি এ্যাস্ট্রল্যাবের একটি উন্নত সংস্করণ তৈরি করেন, যা সফীহা নামে খ্যাত আর তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি নক্ষত্ররাজির বিপরীতে সূর্যের অপভূবিন্দুর গতি প্রমাণ করেন। তার নির্ণয় হিসাবে এর পরিমাণ ১২.০৪ সেকেন্ড, এর প্রকৃত পরিমাণ হল, বার্ষিক ১১.৮ সেকেন্ড।
যারকালীর আবিষ্কৃত মান এবং আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কারের মধ্যে পার্থক্য শুধু বার্ষিক ০.২৪ সেকেন্ড। যা বার্ষিক এক সেকেন্ডের এক চতুর্থাংশেরও কম। যারকালীর আবিষ্কার এবং যথার্থতার বিচারে তার বর্ণিত পরিমাণ বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে বিস্ময়কর।
যারকালীর প্রতিভার শেষ এখানেই নয়, তিনি কিছু বিরোধপূর্ণ ভাবনাও উপস্থাপন করেছেন। তার একটি রচনা Tratodo De Lalamina De Lossiete planetas নামে তরজমা হয়েছে। এ কিতাব ইউরোপের রেনেসাঁর প্রথম সারির কিতাব Aequatorium Planetarium -এর অগ্রজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। যারকালী এ কিতাবে অক্ষরেখাকে উপবৃত্তাকার বলেছেন। আলফানসু দশমের নির্দেশে ক্যাস্টিলার ভাষায় এর অনুবাদ করা হয়েছিল। এ অনুবাদেও বুধের অক্ষরেখা গোল নয়। এর ভিত্তিতে বলা যায় যারকালী জোহান্স কেপলারের (১৫৭১-১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ) পূর্বেই বলেছিলেন, অক্ষরেখা উপবৃত্তাকার। (معروف مسلم سائنسداں : ৬২৭)
কেপলার নিজ রচনায় Astronomia Nove (আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান) তার তিন নিয়মের দুটি নিয়ম বর্ণনা করেছেন। প্রথম নিয়ম হল, এক জায়গায় স্থির সূর্যের পাশে নক্ষত্রপুঞ্জ উপবৃত্তাকার অক্ষরেখায় প্রদক্ষিণ করে।
১০৮১ খ্রিস্টাব্দে যারকালী এ কিতাব রচনা করেন। এর ৫২৮ বছর পর কেপলার রচিত আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান জনসম্মুখে আসে। কেপলার নিজ কিতাবে বৃহস্পতিকে এভাবে অনুমান করেছেন যেভাবে যারকালী বুধকে অনুমান করেছেন। একটি মতামত হল এই, কেপলার অক্ষরেখা উপবৃত্তাকার হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভেবে চিন্তে প্রথম নিয়মটি বানিয়ে থাকবেন। কেননা, এটা জানা নেই তিনি যারকালীর কিতাব সম্পর্কে অবগত ছিলেন কি না।
মুসলমানদের জ্যোতির্বিজ্ঞানে অবদান সংক্রান্ত আলোচনা তাদের জীবন চরিতের আড়ালেই থেকে যায়। সাধারণত মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানের চেয়ে বেশি জীবন চরিতের প্রতিই মনোযোগ দেওয়া হয়। তাদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কারের জ্ঞানগত বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয় না। জরুরি ছিল তাদের উদ্ভাবন ও জ্ঞানগত অবদানকে সর্বাগ্রে রাখা, এ কাজটি কষ্টসাধ্য কিন্তু অসম্ভব নয়। ইউরোপ আমেরিকার লেখকরা মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের এমন সব আলোচনা করেছেন, যেগুলো সম্পর্কে মুসলমানরা বেখবর। জ্যোতির্বিজ্ঞানও এমন উদ্ভাবন ও জ্ঞানগত অবদান শূন্য নয়, এখানেও মুসলমানদের আশ্চর্য রকমের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। ওই সবের কিছু হল :
১. মুসলিম বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সঠিক পরিধি জানার চেষ্টা করেন। আব্বাসী শাসনামলে খলীফা মামুনুর রশীদ আলফারগানী ও তার সহকর্মী বিজ্ঞানীদের নির্দেশ দেন- টলেমির মতবাদ যাচাই করা হোক এবং ভূপৃষ্ঠের পরিধি জানার ব্যবস্থা করা হোক। মুসলিম বিজ্ঞানীরা ভূপৃষ্ঠ দু’বার ভিন্ন ভিন্ন পন্থায় পরিমাপ করেন। আলফারগানীর হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর পরিধি ২৫০০৯ মাইল বের হয়। ভূপৃষ্ঠের প্রকৃত পরিধি ২৪৮৫৮ মাইল। তারপর আলবেরুনী ভূপৃষ্ঠের পরিধি জানার চেষ্টা করেন, যা আলফারগানীর মতামতের চেয়ে বেশি সঠিক প্রমাণিত হয়। আলবেরুনীর আবিষ্কৃত পরিধি ছিল ২৪৭৭৯ মাইল। আলফারগানী নির্ণিত পরিধি এবং আজকের গ্রহণযোগ্য পরিধির মধ্যে শুধু ১৫১ মাইল তফাৎ। আলবেরুনীর নির্ণিত পরিধি আর আজকের পরিধির মধ্যে পার্থক্য আরো অনেক কম।
২. জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানদের আরেকটি অবদান হল, ক্রান্তিবৃত্তের ক্রান্তিকোণ (obliquity of the Ecliptic)-এর সে মান তারা নির্ণয় করেন, যা গ্রিকদের আবিষ্কৃত মানের চেয়েও বেশি শুদ্ধ ও বাস্তব সম্মত। মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এ ব্যপারে যে গবেষণা করেছেন তার তাফসীল ড্রেপার এভাবে দিয়েছেন,
৮৩০ খ্রিস্টাব্দ আল-মামুন ২৩০ ৩৫’ ৫২”
৮৭৯ খ্রিস্টাব্দ আলবাত্তানী, রাক্কা ২৩০ ৩৫’ ০০”
৯৮৭ খ্রিস্টাব্দ আবুল ওয়াফা, বাগদাদ ২৩০ ৩৫’ ০০”
৯৯৫ খ্রিস্টাব্দ আবূ রায়হান আলবেরুনী ২৫ ফিট অর্ধবৃত্ত যন্ত্রের সহায়তায় ২৩০ ৩৫’ ০০”
১০৮০ খ্রিস্টাব্দ আযযারকালী ২৩০ ৩৪’ ০০”
(History of Intellectual Development of Europe Vol. II, P.41)
মামুনুর রশীদের অনুসন্ধান করানো পরিমাণে ৫২ সেকেন্ড অতিরিক্ত, আয-যারকালী বর্ণিত মান মূল মান থেকে এক মিনিট কম। আল-বাত্তানী এবং আল-বেরুনী আবিষ্কৃত পরিমাণ সঠিক। এছাড়া ইবনে ইউনুসও ক্রান্তিবৃত্তের ক্রান্তিকোণের মান ২৩০ ৩৫ আবিষ্কার করেছিলেন। তাকে গণনায় ধরলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, চার জন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী এমন আছেন, যাদের আবিষ্কৃত মান সঠিক।
৩. নক্ষত্রপুঞ্জের বার্ষিক গতিও মুসলমানদের মনযোগের কেন্দ্র ছিল। সমরকন্দের মানমন্দিরে প্রস্তুতকৃত জ্যোতির্বিজ্ঞানের পঞ্জিকা زيچ جرجانی (উলুগ বেগের আমলে প্রস্তুতকৃত) এ সংক্রান্ত অবাক করা ফলাফল জনসম্মুখে আনে। উলুগ বেগের নামে নামকরণকৃত এই পঞ্জিকায় মুসলিম বিজ্ঞানীদের মেধার যথার্থ প্রকাশ ঘটে। পঞ্জিকায় পাঁচটি উজ্জ্বল তারকার বাৎসরিক গতির পরিমাণ এবং আধুনিক কালের পরিমাণের সঙ্গে কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধান সত্ত্বেও এতটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ যে অবাক না হয়ে পারা যায় না।
৪. মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা টলেমির ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করেন। যার ফলে আধুনিক বিজ্ঞানীদের পথচলা সহজ হয়। আলবাত্তানীর সংশোধনের পর অ্যাল-ম্যাজেস্টের সংশোধনের কাজ স্পেনে হয়। যেখানে জাবের ইবনে আফলাহ এবং আবূ ইসহাক আলবাতরুজী টলেমির সমালোচনা করেন। ওয়েল ডোরান লিখেন-
The Giralda of seville (1190) was an observatory as well as a minaret; there Jabir ibn Aflah made the observations for his Islsh-al-magesti, or correction of the Almagest (1240) The same reaction against ptolemaic astronomy marked the works of Abu Ishaq al-Bitrugi (Alpetragius) of Cordova, who paved the way for Copernicus by destructively criticizing the theory of epicycles and eccentrices through which ptolemy sought to explain the paths and motions of the stars. (The Age of Faith P.329)
ইশবিলিয়ার জেরাল্ড টাওয়ার (১১৯০) মানমন্দির ও মিনার উভয়টির কাজ দিত। এখানে জাবের ইবনে আফলাহ اصلاح المجسطي (অ্যালম্যাজেস্ট সংশোধন) রচনার জন্য গবেষণা করতেন। টলেমির জ্যোতির্বিজ্ঞান দর্শনের বিপরীতে এমন গবেষণা কর্ডোভার আবূ ইসহাক আলবাতরুজীর রচনার বিশেষ অনুষঙ্গে পরিণত হয়। টলেমি epicycles I Eccentricity তত্ত্বের মাধ্যমে তারকার গতিপথ ও গতিবিধি স্পষ্ট করার চেষ্টা করেন। ইবনে ইউনুস তার এ তত্ত্বের কঠোর সমালোচনা করে কোপারনিকাসের জন্য পথ প্রস্তুত করে দেন।
আলবাতরুজীর পর মারাগার মানমন্দিরে নাসিরুদ্দীন তূসী টলেমির দর্শনের সমালোচনা করেন। তিনি তার রচনা تذكرة -এ টলেমির দর্শনের ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে গ্রহের গতি সংক্রান্ত এক নতুন ভাবনা উপস্থাপন করেন, যা স্ব-যুগে আধুনিক অঙ্কশাস্ত্রের একমাত্র মডেল ছিল। তূসীর পর কুতবুদ্দীন শীরাজী গ্রহের মডেল তৈরি করেন। (معروف مسلم سائنسداں : ৮৫৫-৯০৯)
গ্রহের চলাচলের বিষয়টি সমাধান করতে গিয়ে যে ব্যক্তি শীরাজীর চেয়েও বেশি সফলতা লাভ করেন তিনি দামেশকের জ্যোতির্বিজ্ঞানী আলাউদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবনে ইবরাহীম, তিনি ইবনুশ শাতের নামে প্রসিদ্ধ (মৃত্যু : ৭৭৭ হিজরী/১৩৭৫ খ্রিস্টাব্দ) তিনি টলেমির দর্শনে পরিবর্তন এনে দুটি জটিল গ্রহ বুধ ও চাঁদের এমন মডেল তৈরি করেন, যার দ্বিতীয় রূপ কোপারনিকাসের রচনায় আসে। ইবনে শাতেরের দর্শন নিয়ে গবেষণা শুরু হয় ১৯৫০ এর দশকে। এরপর অনেকগুলো প্রবন্ধ এমন প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলোতে বলা হয়েছে, কোপারনিকাস ইবনে শাতেরের দুশো বছর পর নিজ রচনায় বুধ ও চাঁদের ওই মডেলই চূড়ান্ত করেন। এসব প্রবন্ধে বেশ কিছু প্রশ্নের উদ্রেক করে। কেননা, এ পর্যন্ত ধারণা ছিল ইবনে শাতেরের মতামত সম্পর্কে ইউরোপীয়রা অনবগত ছিল। মজার কথা হল, এখন পর্যন্ত জানা যায়নি কোপারনিকাস এ মডেল পর্যন্ত পৌঁছলেন কী করে? ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ইসলামে D.pingree-এর বর্ণনা হল-
The accomplishment of Ibn al-shatir shares many features with the models proposed by Copernicus two centuries later; in particular, their models of the Moon and Mercury. are identical, they both employ the Tosi-I-couple, and they both eliminate the equants in essentially the same way. There can be little doubt, then that Copernicus knew of Ibn al-Shatir’s work, the details of the transmission however remain obscure. (Encyclopaedia of Islam V. III P. 1137)
ইবনে শাতেরের এ বিষয়টি ছাড়া আরও কিছু বিষয় আছে, দুই শতাব্দী পর কোপারনিকাস সেসবের ধারণা দিয়েছিলেন। বুধ ও চাঁদের মডেল উভয়ে একই রকম বর্ণনা করেছেন। তাই বলে এ সন্দেহের অবকাশ নেই, কোপারনিকাস ইবনে শাতেরের আবিষ্কার সম্পর্কে অবগত ছিলেন। অবশ্য এখনও এটা জানা যায়নি, কোপারনিকাস এ ব্যপারে কী করে জানতে পেরেছিলেন।
টলেমির বর্ণিত গ্রহের গোলকায়নের পরিবর্তন করা ছাড়াও মুসলমানরা তার বর্ণিত পরিমাণগুলো বদলে দেয়। তারা নিজস্ব পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে নতুন ও উত্তম মান আবিষ্কার করে গ্রহের নতুন পঞ্জিকা প্রস্তুত করে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)