শা‘বান-রমযান ১৪৩৮   ||   মে-জুন ২০১৭

প্রচার : বিজ্ঞাপনে কিসের বিজ্ঞাপন?

আশিক বিল্লাহ তানভীর

প্রতিদিনের মত আজও অল্প সময়ের জন্য খবরের কাগজটি হাতে নিলাম। হঠাৎ চোখ আটকে গেল একটি বিজ্ঞাপনে। বিজ্ঞাপনের নীচে বামদিকে স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লি.-এর নাম ও লোগো। ডানদিকে একটি নারী মুখের অবয়বের সাথে লেখা- রাঁধুনী কীর্তিমতী সম্মাননা ২০১৬। মাঝামাঝিতে বড় অক্ষরে রয়েছে বিজ্ঞাপনের মূল বক্তব্য-নির্ভীক যে সব নারী লিখেছেন নতুন ইতিহাস।এর উপরে কাত হয়ে থাকা যেন চলমান একটি ঝর্ণা কলমের নিব। এই কলমের ছবিটিই এখানে সবচেয়ে বড়- বিজ্ঞাপনের প্রায় অর্ধেকটা জায়গাজুড়ে। বেশ শিল্পসম্মত দৃষ্টিনন্দন একটি বিজ্ঞাপন।

প্রিয় পাঠক! আপনি কি ঝর্ণা কলমের নিব কল্পনা করেছেন? বর্শার ফলা উল্টো করলেই হয়ে গেল কলমের নিব। নিবের মাঝ থেকে মাথা পর্যন্ত একটি রেখা টানলেই ছবিটি তৈরি হয়ে গেল। এবার একটু বুদ্ধি খাটিয়ে বলুন তো কেউ যদি এখানে ক্রুশের চিহ্ন স্থাপন করতে চায় তাহলে তাকে কী করতে হবে? জী! লম্বা রেখাটির মাথার দিকে কিছুটা নীচে শুধু একটি আড়াআড়ি রেখা টেনে দিতে হবে। ব্যস কলমের নিবে স্পষ্ট দেখা যাবে ক্রুশের চিহ্ন। কলমের নিবের জন্য আড়াআড়ি রেখাটি প্রয়োজন নেই, তবে ক্রুশ স্থাপনের জন্য তা অতি প্রয়োজন। জী, এই ক্রুশসম্বলিত নিবের ছবিই ঐ বিজ্ঞাপনে রয়েছে!

এবার প্রিয় পাঠক! বিজ্ঞানের মূল বক্তব্যটি আরেকবার স্মরণ করুন। নির্ভীক যে সব নারী লিখেছেন নতুন ইতিহাস।প্রশ্ন কি দাঁড়িয়ে যায় না যে, নির্ভীক যেসব নারী ইতিহাস লিখেছেন তারা কি ক্রুশ সম্বলিত কলমদ্বারা ইতিহাস লিখেছেন? যদি তা না হয় এবং নিঃসন্দেহে তা নয়, তাহলে কি অন্যায় হবে এই কথা বলা যে, এটি একটি চমৎকার শৈল্পিক মিথ্যা?

কারো মনে হতে পারে, এটা হয়ত তুলির খেয়ালিপনা। ছোট্ট একটি রেখাই তো। তুলির আঁচড়ে যখন দীর্ঘ একটি রেখা তৈরি হয়েছে তখন আড়াআড়ি একটি রেখাও তো হয়েই যেতে পারে, তবে চলুন এই রকম আকস্মিক তুলির আঁচড়ে সঠিক মাপের আড়াআড়ি রেখা তৈরি হয়ে যাওয়ার আরেকটি গল্প শোনাই।

এই সেদিন রাতে বাসে বসে ছিলাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম একটি দীর্ঘ ভবনজুড়ে শুধু ক্রুশ আর ক্রুশ। রাতের অন্ধকারে ভবনের ভেতর থেকে আসা আলোতে সারিবদ্ধ ক্রুশের প্রতিকৃতিগুলো জ্বলজ্বল করছে। চমকে উঠলেন? তবে শুনুন, এগুলো আসলে ঐ বিশাল ভবনটির জানালা। জানালার নকশাই করা হয়েছে ক্রুশের আদলে। কাজেই একেকটি জানালা একেকটি ক্রুশ। দিনের আলোতে খুব একটা চোখে পড়ে না। রাতের আঁধার নেমে এলেই সাদা সাদা ক্রুশগুলি মুসলিম পথিককে দৃষ্টিতে  ডাকতে থাকে। না, এটি কোনো গীর্জার ভবন নয়। দেশের প্রথম সারির একটি কলেজের ভবন।

বলুন তো ভালো মানুষ! এই ইট সিমেন্টের স্থাপনায় সারি সারি ক্রুশের আদলও কি তুলির খেয়ালিপনা! না ভেতরের এক ধর্মীয় প্রেরণার বহিঃপ্রকাশ! শুধুই বহিঃপ্রকাশ, না পরোক্ষ আহ্বানও?

দেখুন, প্রতারিত হওয়া মুমিনের শান নয়। বাস্তবতা সঠিকভাবে উপলদ্ধি করতে পারাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য।

এখন কি তবে প্রশ্ন আসতে পারে না যে, একটি কলেজের গোটা ভবনেই যদি সারি সারি ক্রুশ থাকতে পারে তাহলে কোনো শিক্ষালয়ের মনোগ্রামে বা কোনো ভবনের শুধু নামে কেন ইসলাম শব্দটি বা ইসলামের কোনো প্রতীক থাকতে পারবে না? ওরা তো এই নামের ইসলামকেও তুলির খেয়ালমনে করে না।

বোঝা যাচ্ছে, থাকা এবং না থাকা কিংবা রাখা এবং না রাখা কোনোটাই খেয়ালি ব্যাপার নয়। পরিকল্পিত ব্যাপার। এবং সুচিন্তিত ধাপসমূহের একেকটি ধাপ।

 

আজ শুধু এটুকু নিবেদন, আমরা যেন আমাদের দ্বীন-ধর্মের বিষয়ে সচেতন ও সংবেদনশীল হই। অচেতন ও উদাসীন না হই। আমাদের প্রতিপক্ষ মোটেই ঘুমিয়ে নেই।

 

 

advertisement