আ ম রা হ ব তাঁ দে র ম তো : ইলম অর্জনের পথে
হাফেযে হাদীস মুহাম্মাদ ইবনে তাহের মাকদিসী ইবনুল কায়সারানী রাহ. (৪৪৮-৫০৭) বলেন, ‘আমি ইলম অর্জনের জন্য কিছু সময় ‘তিন্নিস’ শহরে কাটিয়েছিলাম। তখন সেখানে ছিলেন আবু মুহাম্মাদ ইবনুল হাদ্দাদসহ তাঁর সমসাময়িক বিখ্যাত আলেমরা। তাঁদের কাছেই আমি রাতদিন ইলম অর্জন করছিলাম।
এভাবে দিন যাচ্ছিল, কিন্তু এক সময় আর্থিক সংকট দেখা দিল। দেখতে দেখতে আমার কাছে মাত্র একটি দিরহাম বাকি রইল। অথচ তখন আমার লেখার কাগজও ফুরিয়ে গেছে, খাওয়ার জন্যও রুটি দরকার।
অর্থের টানাপোড়েনে আমি ভাবনায় পড়ে গেলাম। শেষ দিরহামটি দিয়ে কাগজ কিনব, না রুটি? রুটি কিনতে পারি, কিন' তাহলে লিখব কী সে? পক্ষান্তরে কাগজ কিনলে লিখা ক্ষুধার তাড়নায় বাঁচব কীভাবে?
দ্বিধার দোলাচলে দুলতে দুলতে কেটে গেল তিন তিনটি দিন। দিরহামটি পড়ে রইল, না কেনা হল রুটি, না লেখার কাগজ। চতুর্থ দিনের ভোর হল। ভাবলাম, তিন দিন ধরে তো পেটে কিছুই পড়েনি। এখন দিরহামটি দিয়ে লেখার কাগজ হয়তো কিনতে পারি কিন্তু ক্ষুধার অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে লিখব কীভাবে?
অবশেষে সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম। আর রুটি কেনার আশায় দিরহামটি মুখে পুরলাম। পা বাড়ালাম বাজারে। মুখে রাখা দিরহামটি নিয়ে পথ চলছি। হঠাৎ হল কি, দিরহামটি চলে গেল পেটের ভেতর। নিজের অজান্তেই গিলে খাওয়া হল প্রায় চারদিনের ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুটি!
আশার শেষ সম্বলটি এভাবে হারিয়ে আমার খুব হাসি পেল।
শুষ্ক মলিন মুখের হাসিটি তখনও মিলিয়ে যায়নি, সাক্ষাত পেলাম এক বন্ধুর। সে বলল : বন্ধু! একা একা হাসছ যে?
আমি ঘটনা লুকোতে চাইলাম। বললাম, নাহ, এমনিই!!
কিন্তু বন্ধু তো নাছোড় বান্দা। তাকে শুনতেই হবে হাসির কারণ।
আমিও অনঢ়। কিছুতেই বলতে নারাজ। অবশেষে সে কসম দিয়ে বলল, সত্যটা তাকে বলতেই হবে!
আমি বন্ধুর কাছে হার মানলাম এবং ঘটনাটি তাকে খুলে বললাম।
শুনে সে আমার হাত ধরে বাড়ি নিয়ে গেল। সুস্বাদু অনেক খাবার পেট ভরে খাওয়াল।
খাওয়া-দাওয়া সেরে যোহরের নামায পড়তে গেলাম তাদের মসজিদে। সেখানে নামায পড়তেন তিন্নিসের গভর্ণর ইবনে কাদুসের একজন সচিব। অপরিচিত মুসল্লী দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে? বন্ধু বলল, মুহাম্মাদ ইবনে তাহের মাক্বদিসী।
নাম শুনেই সচিব বললেন, আরে! প্রায় এক মাস আগে গভর্ণর মহোদয় আমাকে আদেশ করেছিলেন, এই নামের ব্যক্তিকে প্রতিদিন দশ দিরহাম করে দিতে। আমি তা ভুলেই গিয়েছিলাম।
অতঃপর বিগত এক মাসের তিনশ দিরহাম তিনি আমার হাতে তুলে দিলেন।
আমি আল্লাহর শোকর গোযারী করলাম এবং দিরহামগুলি নিয়ে ফিরে এলাম। মেহেরবান আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য রিযিকের ‘বে-হিসাব’ দরজা খুলে দিলেন। ‘তিন্নিস’ ছেড়ে সিরিয়া যতদিন আসিনি, প্রতিদিন দশ দিরহাম করে পেতেই থাকলাম।
সূত্র : সিয়ার ১৯-৩৬৭; আলজামউ বাইনা রিজালিস সহীহাইন পৃ. ৬৩৬
অনুবাদ : ইবনে দানিশ