হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রা. বর্ণনা করেন, একজনের ব্যাপারে আমি জানতে পারলাম যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে একটি হাদীস শুনেছেন। সঙ্গে সঙ্গেই আমি একটি উট কিনলাম এবং তার ওপর হাওদা লাগালাম। এরপর তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য এক মাস ব্যাপি সফর করে সরাসরি সিরিয়ায় গেলাম। তিনি হচ্ছেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস রা.। আমি তার বাড়িতে পৌঁছে দারোয়ানকে বললাম, গিয়ে বলুন, জাবের দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তিনি আমার নাম শুনেই জানতে চাইলেন, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ?’ আমি বললাম, জ্বী, হ্যাঁ।
তিনি তৎক্ষণাৎ বাইরে বেরিয়ে এলেন এবং আমার সঙ্গে গলাগলি করলেন। আমি তাকে বললাম, একটি হাদীস সম্পর্কে আমি শুনেছি যে, আপনি তা হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট থেকে শুনেছেন। আমার ভয় হচ্ছে, না জানি কখন আমার মৃত্যু এসে যায় এবং আমি সে হাদীসের ইলম থেকে মাহরূম থেকে যাই।’ আমার এ কথা শুনে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উনাইস রা. তখন ওই হাদীস বয়ান করলেন।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বর্ণনা করেন, হুযূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওফাতের পর আমি একজন আনসারী সাহাবীকে বললাম, হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তো ওফাত হয়ে গেছে। এখনও সাহাবায়ে কেরামের বড় জামাত জীবিত আছেন। আসুন, তাদের জিজ্ঞাসা করে করে আমরা মাসআলা শিখে নিই।
সেই আনসারী সাহাবী তখন বিস্মিত হয়ে বললেন, সাহাবায়ে কেরামের এই জামাত থাকতেও কি লোকেরা আপনার কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে আসবে?
মোটকথা, সেই আনসারী সাহাবী সাহস করলেন না, কিন্তু আমি মাসআলা সংগ্রহের পেছনে লেগে গেলাম। যার সম্পর্কেই আমি শুনতাম যে, তিনি অমুক হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছ থেকে শুনেছেন আমি তার কাছে ছুটে যেতাম এবং তাহকীক করতাম। এভাবে আনসারী সাহাবীগণের কাছ থেকে মাসআলার এক বিশাল ভাণ্ডার সংগ্রহ করলাম। কোনো কোনো ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে আমি জানতে পারতাম, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন আমি তার দরজার সামনে চাদর বিছিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম। বাতাসের ধাক্কায় আমার মুখে ও গায়ে ধুলোবালি এসে পড়ত। কিন্তু আমি সেখানেই বসে থাকতাম। যখন তিনি উঠতেন তখন তার কাছ থেকে যে বিষয়টি আমার জানার থাকত আমি তা জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতাম। তারা বলতেন, আপনি হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চাচাত ভাই হয়েও কেন এত কষ্ট করলেন? আমাদের ডেকে পাঠাতেন!’ আমি বলতাম-‘আমি ইলমের অন্বেষণকারী। এজন্য নিজে এসে উপস্থিত হওয়ার অধিক হকদার আমি।’
কোনো কোনো সাহাবী জিজ্ঞাসা করতেন, আপনি কতক্ষণ যাবত বসে আছেন?
আমি বলতাম, দীর্ঘক্ষণ যাবত।
তারা বলতেন, আপনি ভালো করেননি, আমাদের জানাতেন।
আমি উত্তরে বলতাম : আমার অন্তর চায়নি যে, আপনি আমার জন্য বাইরে বেরিয়ে আসবেন।
এভাবে আগ্রহ ও নিমগ্নতার সঙ্গে ইলমে দ্বীন হাসিলের ফল হয়েছে এই যে, হযরত ইবনে আব্বাস রা. সমকালের অনেক উঁচু স্তরের একজন মুফাসসির, মুহাদ্দিস ও আলেম হয়েছিলেন। আর এভাবে এক সময় সেই ক্ষণ ও পর্বটিও আসল যে, লোকেরা ইলম হাসিলের জন্য দূর দূরান্ত থেকে তাঁর কাছে এসে সমবেত হতে লাগলেন।