মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা : ‘মাহাদুদ দাওয়াহ’ বিষয়ে কিছু কথা
الحمد لله وسلام على عباده الذين اصطفى، أما بعد :
মারকাযুদ দাওয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা’র প্রধান তিন বিভাগের প্রথমটি হচ্ছে ‘আদদাওয়াহ’। আল্লাহ তাআলার তাওফীকে এ বিভাগের কিছু কিছু কাজ যদিও বিভিন্নভাবে হচ্ছিল, কিন্তু সর্বাধিক প্রয়োজনীয় হওয়া সত্ত্বেও নানা কারণে দাওয়াহ বিভাগটি নিয়মিত শুরু করা যাচ্ছিল না। আল্লাহ তাআলার শোকর, এখন মশওয়ারার পর আল্লাহর নামে এ বিভাগের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
فالله أكبر كبيرا، والحمد لله حمدا كثيرا، وسبحان الله بكرة وأصيلا.
দাওয়াহ বিভাগ অতি বিস্তৃত এক বিভাগ। এ বিভাগের সম্পর্ক উম্মাহর সব শ্রেণীর মানুষের সাথে। আলহামদু লিল্লাহ বিভাগটির গুরুত্ব ও বিস্তৃতি বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন কর্ম-পরিকল্পনা প্রস্তুত হয়েছে এবং হচ্ছে। এ মুহূর্তে তলাবায়ে কেরামের খিদমতে যে বিষয়টি নিবেদন করার তা এই যে, এ বিভাগে তলাবায়ে কেরামেরও অংশগ্রহণ ও ইস্তিফাদার বিভিন্ন আয়োজন থাকছে আলহামদু লিল্লাহ।
আপাতত ‘মাহাদুদ দাওয়াহ’য় দুইভাবে দাখেলা নেওয়ার সুযোগ আছে :
১. দুই বছরের নিসাব
২. এক বছরের নিসাব
এছাড়া তিন মাস, এক মাস, পনের দিন, দশ দিন, এক সপ্তাহ, তিন দিন ইত্যাদি বিভিন্ন মেয়াদের কর্মশালার এলান ও আয়োজন থাকবে ইনশাআল্লাহ।
এ বিভাগের কদর করা তলাবায়ে কেরামের কর্তব্য। দ্বীনের নুসরত ও দ্বীনী শিক্ষা বিস্তারের সকল ক্ষেত্রেই তাফাককুহ ফিদ্দীন ও রুসূখ ফিল ইলমের প্রয়োজন। আর এর জন্য বিশেষ কোনো এক ফনে পারদর্শিতা যথেষ্ট নয়; এর জন্য প্রয়োজন ‘আলফিকহুল আম লিদ্দীন’-এর পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক উলূম-ফুনূনে বিশেষ দক্ষতা এবং সংশ্লিষ্ট উসূল ও আদাবে বিশেষ অবস্থান। এসকল বিষয়কে সামনে রেখে আল্লাহর উপর ভরসা করে ‘মাহাদুদ দাওয়াহ’-এর সূচনা হয়েছে। বিভাগটির উন্নতি, সফলতা ও কবুলিয়াতের জন্য পাঠকবৃন্দের সমীপে বিশেষ দুআর আবেদন রইল।
বর্তমান সময়ে অসংখ্য ফিতনার মধ্যে চারটি বড় ফিতনা সাধারণভাবে গোটা বিশ্বে এবং বিশেষভাবে আমাদের এই ছোট দেশটিতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
এক. শিক্ষার নামে মুসলিম শিশুদের মন-মস্তিষ্কে ধর্মহীনতা ও ইহবাদের এমন রুচি ও বিশ্বাস রচনা, যা সামনে গিয়ে বয়সের প্রত্যেক ধাপে ও জীবনের সকল ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্যের মতো তাদের সাথে যুক্ত থাকে। এ কারণেই কোনো মুসলিম জনপদই সংস্কারের নামে দ্বীন-শরীয়তের বিকৃতি সাধনের ‘সেবা’ দানকারী বুদ্ধিজীবী ও আল্লাহ তাআলার হাকিমিয়্যতে আ‘লার ইনকারকারী সেক্যুলার লিডারের থাবা-মুক্ত নয়।
দুই. বিনোদন ও সংস্কৃতির নামে মুসলিম তরুণ ও যুবশ্রেণীকে খেলাধুলা, অশ্লীলতা এবং নেশা ও মাদকে লিপ্ত করে গাফলতের ঘুমে আচ্ছন্ন করে রাখা।
তিন. দরিদ্র ও শিক্ষার আলোবঞ্চিত মুসলমানদের মাঝে ইরতিদাদ বা ধর্মত্যাগের বিস্তার। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকা হচ্ছে খ্রিস্টান মিশনারী, বিভিন্ন এনজিও ও কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের।
চার. শিক্ষিত ও ইসলামপ্রিয় শ্রেণীর মাঝে চিন্তাগত বিচ্ছিন্নতার বিস্তার এবং উলামা-মাশাইখ সম্পর্কে আস্থাহীন ও শ্রদ্ধাহীন করার অপতৎপরতা।
এ চার ফিতনার মোকাবেলার জন্য ইলমে দ্বীনের ধারক-বাহকদের দ্বীনের নুসরতের অনেক বিভাগে কাজ করা প্রয়োজন। আলহামদু লিল্লাহ কাজ হচ্ছেও, তবে প্রত্যেক বিভাগে অনেক বড় শূন্যতাও বিরাজ করছে। তুলনামূলক বেশি শূন্যতা সম্ভবত দাওয়াহ বিভাগে। অথচ এই বিভাগেও মাশাআল্লাহ ব্যাপক পরিসরে বিভিন্ন উপায়ে খিদমত জারি আছে। তলবহীনদের মাঝে দ্বীনের তলব পয়দা করার মেহনতই তো মাশাআল্লাহ কত ব্যাপক। ইলমী উপায়েও দাওয়াতের কাজ পরিমাণে কম হলেও, আলহামদু লিল্লাহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হতে শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও সচেতন মহলের অজানা নয় যে, এ ময়দানে এখনো অনেক গভীর ও বিস্তৃত শূন্যতা বিরাজমান। এ কারণে তলাবায়ে কেরামের জানা থাকা চাই যে, খেদমতের অনেক বড় ময়দান তাদের প্রতীক্ষায়। আর তা ইলম-আমল উভয় ক্ষেত্রে তাদের উন্নতিরও যিম্মাদার।
আমার প্রত্যাশা, তলাবায়ে কেরাম ইলম, আমল ও তাকাররুব ইলাল্লাহর ক্ষেত্রে তারাক্কীর নিয়তে নিজেকে ইলমে দ্বীন ও খিদমতে দ্বীনের জন্য ওয়াক্ফ করবেন এবং এ বিভাগের গুরুত্ব ও উম্মাহর কঠিন প্রয়োজন বিবেচনায় রেখে এর সাথে যুক্ত হওয়াকে নিজের সৌভাগ্য গণ্য করবেন।
মারকাযুদ দাওয়াহর সাবেক ফাযিলগণও যারা কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানে খিদমতে রত, তাদের কেউ যদি চান মাশওয়ারার মাধ্যমে ‘মাহাদুদ দাওয়াহ’য় এক সালা বা দুই সালা নেসাবে সম্পূর্ণরূপে ফারেগ হয়ে দাখেলা নিতে পারবেন এবং সামনে ইলমুদ দাওয়াহ ও আমালুদ দাওয়াহকেই নিজের মূল কর্মক্ষেত্র বানাতে পারবেন। তদ্রূপ যে তালিবে ইলম বন্ধুরা দাওরায়ে হাদীসের পরে কোনো বিষয়ে তাখাসসুস বা তাদরীবের কোনো নেসাব সম্পন্ন করেছেন বা যে কোনোভাবে দাওয়াতী কাজে সময় লাগিয়েছেন এবং এর আমলী মশ্ক করেছেন তারাও ‘মাহাদুদ দাওয়াহ’য় দাখেলা নিতে পারবেন; বরং তারাই এ বিভাগে অংশগ্রহণের বেশি হক্বদার।
মাহাদুদ দাওয়াহ শুরু হয়েছে দুই বছর হল। আলহামদু লিল্লাহ কিছু না কিছু মেহনত ও ফিকির চলছে। দুই বছরের অভিজ্ঞতায় আমাদের কাছে এই বিভাগের প্রয়োজনীয়তা আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আমরা সকলকেই এই বিভাগ থেকে উপকৃত হওয়ার বিশেষ দাওয়াত দিচ্ছি। যারা নিছক শিক্ষার জন্য শিক্ষা নয় বরং উম্মতের কল্যাণ চিন্তা করে নিজের ফায়েদার জন্য এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে চান আমরা তাদেরই খেদমতের প্রতীক্ষায় আছি।
ইনশাআল্লাহুল আযীয খ-কালীন সময়ের কিছু তাদরীবের এলান আগামী শিক্ষাবর্ষের শুরুতে দেয়া হবে।
এই শিক্ষাবর্ষের শেষেও একটি তাদরীব অনুষ্ঠিত হবে, যার এলান এ সংখ্যায় দেয়া হয়েছে; তা দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ও আমাদের সকল তালিবে ইলম বন্ধুকে দ্বীন ও ইলমে দ্বীনের জন্য কবুল করুন- আমীন।
و كتبه العبد
محمد عبد المالك
أمين التعليم، مركز الدعوة الإسلامية داكا
২১/০৫/১৪৩৮هـ