আকাবিরদের পরলোকগমন
আল্লাহ তাআলা তাদের দারাজাত বুলন্দ করুন এবং আমাদের অবস্থার উপর রহম করুন।
إن لله ما أخذ و له ما أعطى، و كل شيء عنده بمقدار.
আমরা তো এমনিতেই এতীম ছিলাম, কিন্তু এখন তো আমাদের এতীমত্ব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেল। এ অঞ্চলের এবং অন্যান্য অঞ্চলের আকাবিরগণ একের পর এক পরলোকগমন করছেন। জানি না আমাদের তাকদীরে কী লেখা আছে! এবং আকাবিরদের ইন্তিকালের এ ধারায় কবে বিরতি আসবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের দেখভাল করুন! আমাদের ধর্মীয় নেতৃত্ব সংরক্ষণ করুন, আমীন!
বিগত ২৯ রবীউল আউয়াল ১৪৩৮ হি. জুমাবার দিবাগত রাতে (১ রবীউস সানি) বাদ মাগরিব দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খে সানী হযরত মাওলানা আব্দুল হক আযমী রাহ. ইন্তিকাল করেন। হযরতের জীবনচরিত নিয়ে তার সতীর্থ, সহপাঠী এবং শিষ্যগণ তো ইনশাআল্লাহ অনেক কিছু লিখবেন। আমার অনেক আফসোস যে আমি হযরত থেকে ইস্তিফাদার বেশি সুযোগ পাইনি। আমার কেবল দু-এক মজলিসে শরীক হওয়ার সুযোগ হয়েছে। আঠার উনিশ বছর আগে হযরত মারকাযুদ দাওয়াহ্য় তাশরীফ এনেছিলেন। তখন মারকায মুহাম্মদপুর মুহাম্মদী হাউজিংয়ের প্রধান সড়কের ৯ নং বাড়ীতে ভাড়া ছিল। হযরতের সাদামাটা বয়ান এবং প্রভাবপূর্ণ দুআ উপস্থিত লোকদের মাঝে অনেক প্রভাব ফেলেছিল। ১৪৩৪ হিজরীতে যখন কোনো এক উপলক্ষে দিল্লীর সফর হল তখন হযরতের দেওবন্দের বাসায় হাজির হয়েছিলাম। তার ব্যক্তিত্ব যেমন আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিত তেমনি তাঁর ঘরটিও আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। তাঁর একরাম ও সংক্ষিপ্ত মেহমানদারিতেও অনেক আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেছি। আল্লাহ হযরতের দারাজাতকে বুলন্দ করুন! তাঁর কবরকে জান্নাতের বাগিচা বানিয়ে দিন!
হযরত আযমী এবং অন্যান্য আকাবিরের ইন্তিকালের যখম শুকাতে না শুকাতেই ১৬ রবীউস সানি রবিবার দিবাগত রাতে মুসলিম জাহানের গৌরব, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় দ্বীনী ব্যক্তিত্ব, উস্তাযুল আসাতিযা, শায়খুল মাশায়েখ, শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা সালিমুল্লাহ খান ছাহেব রাহ. আখেরাতের সফরে তাশরীফ নিয়ে যান।
হযরতের ইন্তিকালের পরপরই বিগত ১৭ রবিউস সানি সোমবার দিবাগত রাতে বিশ্ববরেণ্য আলেম ও দাঈ হযরত মাওলানা আব্দুল হাফিয মাক্কী রাহ.-ও ইন্তিকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। সমগ্র বিশ্বের মত এই দেশেও তার অনেক অবদান রয়েছে। আশা করি ‘আলকাউসারে’ এ সকল আকাবিরদের নিয়ে স্বতন্ত্র প্রবন্ধ প্রকাশিত হবে।
বিগত ৮ রবিউস সানি এবং হিজাযের সময় অনুসারে ৯ রবিউস সানি মদীনা মুনাওয়ারা থেকে ভাই মহিউদ্দীন ফারুকির রিসালা এসেছে-
"توفي اليوم السبت الساعة العاشرة و النصف صباحا 9/ ربيع الآخر 1438هجرية المحقق الكبير فضيلة الشيخ محمد بن صبحي بن حسن حلاق رحمه الله و غفر له و أسكنه الفردوس الأعلى"
‘‘আজ ৯ রবিউল আখির শনিবার সকাল সাড়ে দশটায় বিশিষ্ট মুহাক্কিক ফযীলাতুশ শাইখ মুহাম্মাদ বিন সুবহী বিন হাসান হাল্লাক ইন্তিকাল করেছেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন! তার উপর দয়া করুন! এবং তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দান করুন!’’
কিছুদিন আগে বি. বাড়িয়ার ‘টান বাজার’ মসজিদের সাবেক ইমাম ও খতীব হযরত মাওলানা ইউনুস রাহ.-এরও ইন্তিকাল হয়ে যায়। আমার জন্য এটা সৌভাগ্যের বিষয় যে, তিনি আমাকে অনেক মুহাবক্ষত করতেন। তার সাথে প্রথম সাক্ষাৎ হয় ১৪১২ হিজরীর শাওয়ালে। তার ভাগিনা আমাদের সাথী জনাব মাওলানা ফযলুল হক-এর রাহবারীতে সেই সফরে মরহুম ছাড়াও জামিয়া ইউনুসিয়ার তখনকার আকাবিরদের খেদমতে হাযিরীর তাওফীক হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসের আ‘লা মাকাম দান করুন এবং পরবর্তীদেরকে সবরে জামীলের তাওফীক দান করুন, আমীন!!
-বান্দা আবদুল মালেক
২১/০৪/১৪৩৮হি.