আল্লার রহমতের আশা : পরকালের সফরে মুমিনের সম্বল
দুদিনের এ পার্থিব জীবনে আল্লাহ তাআলার সর্বাধিক আনুগত্য ও ইবাদত করে গেছেন যিনি, তিনি যে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এ নিয়ে কি আর কোনো দ্বিমত আছে! তাঁর আমল-ইবাদত যে সকল মানুষের চেয়ে শ্রেষ্ঠ- তা কি আর বলার অপেক্ষা রাখে! তিনিও যদি বলেন, আমার আমল আমাকে নাজাত দিতে পারবে না; তাহলে আমরা নিজেদের ব্যাপারে কেমন এক নিরাশায় যেন আচ্ছন্ন হয়ে পড়ি! সৃষ্টিকুলের সেরা মানবকাফেলা আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিমুস সালামেরও যিনি সর্দার, তিনিই যদি নিজ আমল দিয়ে জান্নাতে যেতে না পারেন, তাহলে আমাদের কী দশা হবে! ভাবতেই কেমন শরীর কেঁপে ওঠে! অথচ এটাই বাস্তবতা। প্রিয় নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কণ্ঠেই শুনুন-
لَنْ يُدْخِلَ أَحَدًا عَمَلُهُ الْجَنَّةَ
নিজ আমল কাউকেই জান্নাতে নিয়ে যেতে পারবে না!
সাহাবায়ে কেরামের সচকিত প্রশ্ন : ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকেও নয়?! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
لاَ، وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللَّهُ بِفَضْلٍ وَرَحْمَةٍ.
না, আমাকেও নয়, যদি না আল্লাহ দয়া ও অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে জড়িয়ে নেন।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথাটুকু থেকেই আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি। যে রাহমানুর রাহীমের দয়ায় তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন, দয়াময় সেই সত্তার নিকট তো রহমতের আশা আমরাও করতে পারি। হাদীসের শেষাংশটুকু লক্ষ করুন-
فَسَدِّدُوا وَقَارِبُوا، وَلاَ يَتَمَنَّيَنَّ أَحَدُكُمُ الْمَوْتَ إِمَّا مُحْسِنًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَزْدَادَ خَيْرًا وَإِمَّا مُسِيئًا فَلَعَلَّهُ أَنْ يَسْتَعْتِبَ.
তাই তোমরা ইবাদতে সঠিক পন্থা অবলম্বন করো এবং ইবাদত নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে বেঁচে থেকো। আর তোমাদের কেউ যেন মৃত্যুর কামনা না করে। সে যদি সৎকর্মপরায়ণ হয় তাহলে সে হয়তো কল্যাণের পথে আরও এগিয়ে যাবে, আর যদি পাপীও হয় তাহলে হতে পারে, সে পাপ থেকে তওবা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৭৩
আমাদের আশাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে এই একটি মাত্র হাদীসই যথেষ্ট, যেখানে বলা হচ্ছে- ১. নিজের যোগ্যতা ও আমল নয়, বরং আল্লাহ পাকের দয়া ও অনুগ্রহই হল সকল সফলতা ও মুক্তির মূল; ২. ইবাদত করতে গিয়েও নিজের সাধ্য ও সক্ষমতার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, এড়িয়ে চলতে হবে সাধ্যাতিরিক্ত সকল পদক্ষেপ; ৩. মৃত্যু কামনা করতে পারবে না কেউ। ভালো হলেও নয়, খারাপ হলেও নয়। আর ভালো-মন্দ মিলিয়েই তো মানুষ। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের আশা দিয়েছেন- হায়াত দীর্ঘ হলে ভালো কাজ আরও বাড়তে পারে, আর মন্দ কাজ থেকে ফিরে আসার সৌভাগ্যও মিলে যেতে পারে।
এ জীবনে টিকে থাকতে হলেও আশা অপরিহার্য। আশার পিঠে চড়েই মানুষ বিপদের পর বিপদ মাড়িয়ে যায়। সারা জীবনের সঞ্চয়ও যখন আকস্মিকভাবে হারিয়ে যায়, বাহ্যত সামনে এগিয়ে যাওয়ার সব অবলম্বনও যখন ‘নাই’ হয়ে যায়, তখনো মানুষ বুকভরা আশা নিয়ে দাঁড়ায়। কষ্ট করে হলেও সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে এবং সেই স্বপ্নের পথে চলার সাহস সঞ্চার করে। একজন সুস্থ মানুষ, যত বিপদেই সে পড়ুক, তা পাশ কাটিয়ে সামনে চলার স্বপ্ন সে দেখবে, আশায় ভর করে সে বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াবে-এটাই স্বাভাবিকতা। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ জীবন নিয়ে সুন্দর স্বপ্ন দেখা- এক্ষেত্রে ধনী-গরীব সবাই সমান। একজন কোটিপতি যেমন নিজের ও পরিবার-পরিজনের সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে, মৃত্যু অনিবার্য জেনেও দুনিয়ার এ জীবনে কামনা করে আরও সুখের, আরও সম্পদের, আরও সম্মানের, তেমনি ‘দিন এনে দিন খায়’ এমন একজন বিত্তহীন মানুষও তার মতো করে স্বপ্ন দেখে আরেকটু সুখের, সম্পদের ও সম্মানের, আরেকটু আরামদায়ক জীবনের। এই স্বপ্ন এই আশাই মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এই যে কথায় বলে- জীবন থেমে থাকে না! জীবন চলবেই। আর আশাই হল সেই চলার চালিকাশক্তি। বারবার আশাহত হতে হতে কারও আশা কখনো দুর্বল হতে পারে, একসময়ের রঙ্গিন জীবনের পরিবর্তে এখন সে সাদামাটা ভবিষ্যতের আশা করতে পারে। কিন্তু আশা থাকবেই। এটাই বাস্তব। সামনে চলার জন্য এর বিকল্প নেই।
এ তো পার্থিব জীবন নিয়ে কথা। আর পরকালীন জীবনে? সেখানেও আল্লাহর রহমতের আশাই সম্বল। পরকালীন জীবন যেন সমৃদ্ধ হয়, সুখকর ও আনন্দময় হয়, সেজন্যও আমলের সাথে সাথে আল্লাহর রহমতের আশাই আমাদের পাথেয়। পবিত্র কুরআনে কারীমে ও হাদীস শরীফে আমাদের জন্যে রয়েছে আশাজাগানিয়া অনেক বাণী। যে হাদীসটি আমরা উপরে উল্লেখ করেছি সেটিই আবার লক্ষ করুন- সুখী-সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণে কীভাবে আমাদের আশাকে সেখানে জাগিয়ে তোলা হয়েছে!
আশার উপাদান যে কত ধরনের- তা গুনে গুনে হিসাব করা সহজ নয়। কয়েকটি উদাহরণ লক্ষ করুন-
আল্লাহ পাক রাহমানুর রাহীম। তিনি ক্ষমাশীল দয়ালু। কিন্তু তিনি কাকে ক্ষমা করবেন? কতটুকু অপরাধ ক্ষমা করবেন? কতবার ক্ষমা করবেন? কতক্ষণ ক্ষমা করবেন? এসবের উত্তরে এক কথায় বলা যায়- অপরাধ যত বড়ই হোক, অপরাধী যদি তওবা করে এবং আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তিনি ক্ষমা করে দেবেন। এক্ষেত্রে কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা নেই। শর্ত একটাই- আন্তরিকভাবে ক্ষমাপ্রার্থনা। তাহলেই তিনি ক্ষমা করবেন। অপরাধের ধরন যত জঘন্যই হোক, পরিমাণ যত বেশিই হোক- এগুলো কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত একটি ঘটনা বলি- বনি ইসরাইলের এক ব্যক্তি নিরানবক্ষইজন মানুষকে হত্যা করেছিল। এরপর সে তখনকার সেরা আলেমের সন্ধান করল। লোকেরা তাকে এক পাদ্রী দেখিয়ে দিল। পাদ্রীর কাছে গিয়ে সে জানাল- সে নিরানবক্ষইজন মানুষ হত্যা করে এসেছে। তার জন্য কি এখন তওবার কোনো সুযোগ আছে? পাদ্রী বলল : না, এমন পাপের তওবার কোনো সুযোগ নেই। লোকটি তখন পাদ্রীকেও হত্যা করল এবং খুনের সংখ্যা একশ পূর্ণ করল। এরপর সে আরেকজন সেরা আলেমের সন্ধান করল। লোকেরা তাকে আরেকজন আলেম দেখিয়ে দিল। তার কাছে গিয়ে সে জানাল- সে একশজন মানুষ হত্যা করে এসেছে। এখন কি তার জন্যে তওবা করার সুযোগ আছে? আলেম বললেন : কেন নয়, কে তার তওবাকে বাধা দিয়ে রাখতে পারে! এরপর তিনি তাকে বললেন : ‘তুমি এ এলাকা ছেড়ে অমুক অঞ্চলে চলে যাও। সেখানে কিছু মানুষ আছে, যারা আল্লাহর ইবাদত করে। তাদের সঙ্গে তুমিও ইবাদত শুরু করে দাও। তোমার এ এলাকায় তুমি আর ফিরে এসো না। জায়গাটি ভালো নয়।’ কথামতো সে চলতে শুরু করল। এ আলেমের নির্দেশিত অঞ্চলটি এখন তার গন্তব্য। কিন্তু অর্ধেক পথ যখন সে অতিক্রম করল, তখনই তার মৃত্যু হল। মৃত্যুর পর শুরু হল আরেক দৃশ্য। তাকে নেয়ার জন্যে রহমতের ফেরেশতাদলও উপস্থিত, আজাবের ফেরেশতারাও উপস্থিত। তাকে নিয়ে দুই দল ফেরেশতার টানাটানি। রহমতের ফেরেশতাদলের বক্তব্য- সে তো তওবা করে আল্লাহর অভিমুখী হয়েই এখানে এসেছে। আর আজাবের ফেরেশতারা যুক্তি দিল- সে তো কখনোই কোনো ভালো কাজ করেনি। দুই দল ফেরেশতার বিবাদ মেটাতে আল্লাহ মানুষরূপে আরেক ফেরেশতা পাঠালেন। সবাই তাকে ফয়সালা করার ভার দিল। এ ফেরেশতা বললেন : তোমরা মেপে দেখ, সে যে অঞ্চলের কাছাকাছি হবে সেখানকার বলেই গণ্য হবে। এদিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে অঞ্চল দুটিকে আদেশ করা হল- তার নিজ অঞ্চলটি যেন দূরে সরে যায় আর কাঙ্ক্ষিত অঞ্চলটি যেন কাছে চলে আসে। মাপার পর দেখা গেল, সে তার গন্তব্যের দিকে আধা হাত এগিয়ে আছে। তখন রহমতের ফেরেশতারা তাকে নিয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৭৬৬
এমন রহমতের মালিক যে সত্তা, তাঁর কাছে তো আশা করাই যায়। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহগুলোর একটি। পবিত্র কুরআনের ভাষ্য অনুসারে, একজন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করা। অন্যায় হত্যা এতটাই জঘন্য! অথচ একে একে একশ জন মানুষকে হত্যা করার পর কৃত তওবাকে তিনি গ্রহণ করে নিলেন!
কুরআনে কারীমে কত রকম পাপের শাস্তির কথা বলা হয়েছে! কোথাও শাস্তির পরিমাণ নির্ধারিত! আবার কোথাও শুধু বলা হয়েছে ‘মহাশাস্তি’র কথা, কিংবা ‘যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’র কথা। শাস্তির কথা বলে বলেও আবার রহমতের কথা বলেছেন। আশার বাণী শুনিয়েছেন। অপরাধ যত জঘন্যই হোক, খাঁটি মনে তওবা করলে তা কবুল করার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। এই যে দেখুন, খ্রিস্টানরা কখনো হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর ছেলে বলে থাকে, কখনো বা ‘খোদা’ই বলে বসে। তাদের এই ধৃষ্টতা কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে। সেই বর্ণনার পর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে স্বীয় রহমতের দিকে আহক্ষান করেছেন এভাবে-
اَفَلَا یَتُوْبُوْنَ اِلَی اللهِ وَ یَسْتَغْفِرُوْنَهٗ وَ اللهُ غَفُوْرٌ رَّحِیْمٌ.
তারা কি আল্লাহর কাছে তওবা করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে না? আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু। -সূরা মায়িদা (৫) : ৭৪
ফেরাউন তো নিজেকে খোদা বলেই দাবি করে বসেছিল! তার ঘটনাও পবিত্র কুরআনের অনেক স্থানে বর্ণিত হয়েছে। অথচ এই ভ- স্বঘোষিত খোদাকেও পরম করুণাময় আল্লাহ রহমতের দিকে ডেকেছেন। বিশেষ হেদায়েত ও নির্দেশনা দিয়ে তিনি তাঁর নবী হযরত মূসা আলাইহিস সালামকে এ ‘নকল’ খোদার কাছে পাঠিয়েছেন। পবিত্র কুরআনের একটি সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি-
اِذْهَبْ اِلٰی فِرْعَوْنَ اِنَّهٗ طَغٰی، فَقُلْ هَلْ لَّكَ اِلٰۤی اَنْ تَزَكّٰی، وَ اَهْدِیَكَ اِلٰی رَبِّكَ فَتَخْشٰی، فَاَرٰىهُ الْاٰیَةَ الْكُبْرٰی، فَكَذَّبَ وَعَصٰی، ثُمَّ اَدْبَرَ یَسْعٰی، فَحَشَرَ فَنَادٰی، فَقَالَ اَنَا رَبُّكُمُ الْاَعْلٰی.
ফেরাউনের নিকট যাও, সে তো সীমালঙ্ঘন করেছে। এবং বলো, তোমার কি আগ্রহ আছে যে তুমি পবিত্র হও আর আমি তোমাকে তোমার প্রতিপালকের দিকে পথপ্রদর্শন করি, যেন তুমি তাকে ভয় কর? অতপর সে তাকে মহানিদর্শন দেখাল। কিন্তু সে অস্বীকার করল এবং অবাধ্য হল। এরপর সে পেছনে ফিরে প্রতিবিধানে সচেষ্ট হল। সকলকে সমবেত করে উচ্চস্বরে সে ঘোষণা করে বলল : আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ প্রতিপালক! -সূরা নাযিয়াত (৭৯) : ১৭-২৪
মিথ্যা প্রভুত্বের দাবিদার যে ব্যক্তি, তার জন্যও উন্মোচিত আসল প্রভুর রহমতের দুয়ার! এমন প্রভুর কাছে তো আশা করাই যায়। কত সুস্পষ্ট তাঁর ঘোষণা-
قُلْ یٰعِبَادِیَ الَّذِیْنَ اَسْرَفُوْا عَلٰۤی اَنْفُسِهِمْ لَا تَقْنَطُوْا مِنْ رَّحْمَةِ اللهِ اِنَّ اللهَ یَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِیْعًا اِنَّهٗ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِیْمُ.
হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ! আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। সন্দেহ নেই, আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয়ই তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। -সূরা যুমার (৩৯) : ৫৩
আল্লাহ তাআলার রহমত যে কত ব্যাপক- তা কল্পনা করার জন্যে একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
جَعَلَ اللَّهُ الرَّحْمَةَ مِئَةَ جُزْءٍ فَأَمْسَكَ عِنْدَهُ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ جُزْءًا وَأَنْزَلَ فِي الأَرْضِ جُزْءًا وَاحِدًا فَمِنْ ذَلِكَ الْجُزْءِ يَتَرَاحَمُ الْخَلْقُ حَتَّى تَرْفَعَ الْفَرَسُ حَافِرَهَا عَنْ وَلَدِهَا خَشْيَةَ أَنْ تُصِيبَهُ.
আল্লাহ রহমতকে একশ ভাগ করেছেন। নিজের কাছেই রেখে দিয়েছেন নিরানবক্ষই ভাগ। একভাগ পাঠিয়েছেন পৃথিবীতে। সেই এক ভাগের কারণেই পুরো সৃষ্টিজগত পরস্পরকে দয়া করে। এমনকি ঘোড়াও তার পা উঁচু করে রাখে যেন তার বাচ্চা কোনো কিছুতে আক্রান্ত না হয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬০০০
এবার তাঁর রহমতের ভিন্ন একটি দিক লক্ষ করুন। তিনি আমাদেরকে তাঁর ইবাদতের জন্যেই সৃষ্টি করেছেন- একথা কুরআনেও বলা হয়েছে। আবার সৃষ্টিগতভাবে তিনি আমাদের মাঝে কিছু বন্ধন জুড়ে দিয়েছেন। মানবিকতার টানেই আমরা সেই বন্ধন রক্ষা করি। জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা পেতে আমরা তাঁর ইবাদত করি। আমরা আমাদের শুধুই ইবাদত দিয়ে বেহেশতে যেতে পারব না ঠিক, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি কীভাবে আমাদের ইবাদতের সওয়াবকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন দেখুন- শবে কদরের একটি মাত্র রাত ইবাদতে কাটালে হাজার মাসেরও বেশি ইবাদতে কাটানোর সওয়াব পাওয়া যায়; জামাতে নামায পড়লে সাতাশ গুণ বেশি সওয়াব মেলে; মসজিদে হারামে এক রাকাত নামায পড়লে এর সওয়াব বেড়ে যায় এক লক্ষ গুণ ইত্যাদি।
বলেছিলাম, আমরা আমাদের সুখময় ও সমৃদ্ধ পরকাল নির্মাণের জন্যে আল্লাহর রহমতের আশাবাদী। আমরা আশা করি, তিনি নিজ অনুগ্রহে আমাদের সামান্য নেক আমলটুকু কবুল করে নেবেন। এগুলো ত্রুটিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও নিজ দয়ায় তিনি ত্রুটিগুলো মুছে দিয়ে আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। এ আশা পোষণ করা ঈমানের দাবি।
তবে মনে রাখতে হবে, নিজের সাধ্যটুকু বিলিয়ে দিয়ে আশা পোষণ করতে হবে। বীজ বপন না করে চারাগাছের আশা করা যেমন নির্বুদ্ধিতা, তেমনি নেক আমল না করে এবং গোনাহ ছেড়ে তওবা না করে পরকালীন মুক্তির জন্যে আল্লাহ পাকের রহমতের আশায় বসে থাকাও তেমনি বোকামি। আর আশা যদি হয় তওবার দরজা পেরিয়ে নেক আমলকে সঙ্গে নিয়ে, তাহলে সে আশাই পরকালের সফরে মুমিনের সম্বল।