হযরত মাওলানা আবদুল জববার রাহ.
আকাবির ও বড়দের ইন্তেকালের ধারা যেন অবিচ্ছিন্নভাবেই চলছে। নিকটতম সময়ে বিভিন্ন এলাকার কয়েকজন আকাবির ও মাশায়েখের ইন্তেকালের পর বিগত ১৭ সফর ১৪৩৮ হি. মোতাবেক ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ঈ. জুমাবার বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার মহাসচিব হযরত মাওলানা আবদুল জবক্ষার ছাহেবেরও ইন্তেকাল হয়ে গেল।
إنا لله وإنا إليه راجعون
তাঁর শোক এখনো তাজা, এরই মাঝে দেশের বর্ষীয়ান বুযুর্গ হযরত মাওলানা সাইয়েদ আহমদ ছাহেব (উলামাবাজার, ফেনী)ও আল্লাহ তাআলার নিকট চলে গেলেন। এর দুই-তিন দিন বা তিন-চার দিন আগে উলামাবাজার মাদরাসার আরেকজন শিক্ষকও দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।
২০ রবিউল আওয়াল ১৪৩৮ হি. = ২১ ডিসেম্বর ২০১৬ ঈ. বুধবার হযরত মাওলানা ক্বারী উবাইদুল্লাহ (সাবেক ইমাম ও খতীব, চকবাজার মসজিদ, ঢাকা) দীর্ঘ অসুস্থতার পর পরলোক গমন করেন। এর পরের দিন বৃহস্পতিবার বগুড়ার প্রসিদ্ধ আলেম ও জনসমাদৃত শায়েখ হযরত মাওলানা মুফতী ইবরাহীম ছাহেবও বিচ্ছেদের দাগ কেটে আমাদের থেকে চলে গেছেন।
إنا لله وإنا إليه راجعون. إن لله ما أخذ وله ما أعطى، وكل شيء عنده بمقدار. العين تدمع والقلب يحزن، ولا نقول إلا ما يرضي ربنا.
হযরত মাওলানা সাইয়েদ আহমদ ছাহেব রাহ. সম্পর্কে গত সংখ্যায় মাওলানা ইসহাক উবাইদী দামাত বারাকাতুহুমের প্রবন্ধ ছেপেছে। এখন হযরত মাওলানা আবদুল জবক্ষার ছাহেব রাহ. সম্পর্কে কিছু আরজ করার ইচ্ছা করছি।
বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার মরহুম মহাসচিব হযরত মাওলানা আবদুল জবক্ষার ছাহেব রাহ. সম্পর্কে যে কথা সব সময় আমার মনে পড়ে তা হল, তিনি নিজেকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন। তাঁর জন্য মাশাআল্লাহ অন্যান্য দ্বীনী খিদমতেরও সুযোগ ছিল। তাদরীস ও শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খিদমতের বাস্তব অভিজ্ঞতাও ছিল তাঁর। তা সত্ত্বেও তিনি অন্যান্য সব ব্যস্ততা ছেড়ে নিজেকে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যার খেদমতের জন্য ওয়াক্ফ করে দিয়েছিলেন।
আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে বেফাকুল মাদারিসের মুফতী বোর্ডের এক মজলিসে শরীক হয়েছিলাম। মজলিসে হযরত মাওলানা আবদুল বারী দামাত বারাকাতুহুম (সাবেক মুহতামিম, বড়কাটারা মাদরাসা) উপস্থিত ছিলেন। কোনো প্রসঙ্গে এই মজলিসে তিনি অনেক উঁচু শব্দে বেফাকুল মাদারিসের জন্য মরহুমের কুরবানী ও আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করেছিলেন। কোনো সন্দেহ নেই, মাদারিসে ক্বাওমিয়া, উসতায-শিক্ষক, তালাবা ও মাদরাসা সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁর অনেক এহসান ছিল যে, তিনি এই প্রতিষ্ঠানটিকে ধরে রেখেছিলেন। এর জন্য আমরা অন্তরের অন্তস্তল থেকে তাঁর এবং তাঁর উপরস্থ আকাবির ও তাঁর সব সহকর্মী, সহযোগীদের শুকরিয়া আদায় করছি। আল্লাহ তাআলা তাদের প্রত্যেককে জাযায়ে খায়ের দান করেন। এবং মরহুমকে জান্নাতুল ফিরদাওসের উঁচু মাকাম নসীব করেন। এবং বেফাককে, যার মাঝে মরহুমের জীবনের হয়ত সবচে গুরুত্বপূর্ণ অংশ অতিবাহিত হয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত বাকি ও প্রতিষ্ঠিত রাখেন। সর্বদা এর তারাক্কী ও উন্নতি দান করেন। তালিমী ও জাতীয় ব্যাপারে উত্তম সমাধান পেশ করার জন্য একে আরো শক্তিশালী করে দেন। এবং এই কাজে একে সব সময় উদ্যমী ও সচল রাখেন। আমীন।
বেফাকুল মাদারিসের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই তিনি বেফাকের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। এবং ১৯৯২ ঈ. থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বেফাকের মহাসচিব ছিলেন।
বেফাকের সাথে যুক্ত হওয়ার আগে তিনি আশরাফুল উলূম বড়কাটারা মাদরাসা, ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদরাসা ও দারুল কুরআন মাদরাসা কচুয়া, বাগেরহাটসহ আরো কিছু মাদরাসায় শিক্ষকতার খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন।
তাদরীস ও শিক্ষকতা ছাড়া বিভিন্নভাবে তিনি বিভিন্ন দাওয়াতী ও সিয়াসী খেদমতেও অংশ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন মসজিদ-মাদরাসা প্রতিষ্ঠায়ও মাশাআল্লাহ বড় অংশ ছিল তাঁর।
হেদায়া জামাত থেকে আশরাফুল উলূম বড়কাটারা মাদারাসাতে তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬১ ঈসাব্দে তিনি দাওরায়ে হাদীস শেষ করেন। তাঁর কবুলিয়াত এবং আসাতিযাগণের আস্থাভাজন ও ভালবাসার পাত্র হওয়ার প্রমাণ হল যে, ঐ বছর ঐ মাদরাসাতেই তাদরীসের খেদমতের জন্য তাঁর উসতাযগণ তাঁকে নির্বাচন করেছিলেন।
হযরতের জন্ম ২৯ আগস্ট ১৯৩৭ ঈ. মোতাবেক ১৪ ভাদ্র ১৩৪৪ বঙ্গাব্দে। সে হিসাবে ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয় ৭৯ বছর।
মুহতারাম মাওলানা ইনামুল হক জালালাবাদীর শুকরিয়া আদায় করছি, তিনি হযরত সম্পর্কে এই তথ্যগুলো আমাকে দিয়েছেন। আমাদের আশা, তিনি হযরতের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রবন্ধ প্রস্ত্তত করবেন ইনশাআল্লাহ।