সফর ১৪৩৮   ||   নভেম্বর ২০১৬

আমি কি দ্বীনের খাদেম হতে চাই?

আবু আহমাদ

একজন মুসলিমের জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জন হল, ইসলামের খেদমত করতে পারা। আল্লাহ্র দেওয়া জীবন যদি আল্লাহ্র দ্বীনের খেদমতে ব্যয়ই না হল তো এ জীবনের কী অর্থ! যে কোনোভাবে আমার জান, মাল ও মেধা দিয়ে দ্বীনের খেদমত করতে পারি, সেটা হবে জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, আখেরাতের সবচেয়ে বড় উপার্জন। জীবন হবে ধন্য।

আমি- এই ক্ষুদ্র সত্তা দ্বারা যদি দ্বীনের সামান্য খেদমতও হয়, তাহলে আমি ধন্য। আল্লাহ্র দরবারে সেজদাবনত- আল্লাহ আমার মত নগন্যের দ্বারা দ্বীনের খেদমত নিয়েছেন। আমি ধন্য।

আমাদের সকলেরই আকাক্সক্ষা- দ্বীনের খাদেম হওয়া। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে, তুমি ইল্ম শিখে, বড় হয়ে কী করতে চাও। উত্তর হবে, দ্বীনের খাদেম হতে চাই। সুতরাং দ্বীনের খাদেম হওয়ার জন্য তো নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাকে ইল্ম শিখতে হবে, কুরআন-হাদীসের ভাষা- আরবী শিখতে হবে, শিখতে হবে বাংলাভাষা, শেখার প্রয়োজন আছে ইংরেজিরও। পারদর্শী হতে হবে আধুনিক জ্ঞান-বিদ্যায়, শিখতে হবে এই এই ইত্যাদি। কিন্তু আমাকে মনে রাখতে হবে, দ্বীনের খাদেমের সবচেয়ে বড় প্রস্তুতি- তাকওয়া অর্জন, গুনাহ বর্জন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপন।

দ্বীনের যে অঙ্গনেই কাজ করতে চাই, তাকওয়া ছাড়া, তাআল্লুক মাআল্লাহ ছাড়া আমার কাজ গ্রহণীয় হবে না; হবে শুধু কিছু হাত-পা ছোড়াছুড়ি। অনেক যোগ্যতা আমার, অনেক বিষয়ে পারদর্শী আমি। খুব সুন্দর আলোচনা করতে পারি, কিন্তু তাকওয়া-খোদা-ভীতি নেই, ইখলাসও নেই, তো আমার সব কাজ হবে অর্থহীন দৌড়ঝাঁপ, সব বক্তব্য হবে হেদায়েতের নূরহীন শব্দ-বাক্য।

আমি দ্বীনের খাদেম হলাম কিন্তু গুনাহ ছাড়লাম না- বিষয়টি কেমন হবে? মানুষকে ভালো কাজের কথা বলছি, কিন্তু নিজেই ভালো কাজ করছি না বা পাপে জড়িয়ে পড়ছি। এমন হলে আমার দ্বীনী খেদমত হবে শুধু জমা-খরচ। সুতরাং দ্বীনের খাদেম হতে হলে আমাকে গুনাহ ছাড়তেই হবে। লক্ষ করি আল্লাহ তাআলার ইরশাদ-

اَتَاْمُرُوْنَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَ تَنْسَوْنَ اَنْفُسَكُمْ وَ اَنْتُمْ تَتْلُوْنَ الْكِتٰبَ  اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ.

তোমরা কি মানুষকে ভালো কাজের আদেশ দাও আর নিজেদের কথা ভুলে যাও। অথচ তোমরা কিতাব (কুরআন) তিলাওয়াত কর। তবে কি তোমরা বুঝ না? -সূরা বাকারা (২) : ৪৪

একটু ভেবে দেখি। দ্বীনের খাদেম মানে- আমি মানুষকে গুনাহ থেকে বাঁচাতে চাই, সৎপথে আনতে চাই। আমি চাই মানুষ অন্যায় দৃষ্টি থেকে, কুদৃষ্টি থেকে বেঁচে যাক। এখন আমার মাঝেই যদি এ গুনাহ থাকে তো আমার কথায় মানুষ গুনাহ থেকে ফিরবে কীভাবে? আমি মানুষকে যে গুনাহ থেকে ফেরাতে চাই, আমি নিজেই যদি সেই গুনাহে লিপ্ত থাকি- তাহলে সেটা কেমন কথা হল! আমি মানুষকে ভালো কাজের কথা বলি আর আমি ভালো কাজ না করি- সেটা কি আল্লাহ পছন্দ করবেন? আল্লাহর বাণী স্মরণ করি-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا لِمَ تَقُوْلُوْنَ مَا لَا تَفْعَلُوْنَ  كَبُرَ مَقْتاً عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لا تَفْعَلُونَ.

হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা কর না! আল্লাহর কাছে এ বিষয়টি অতি অপছন্দনীয় যে, তোমরা এমন কথা বলবে, যা তোমরা (নিজেরা আমল) কর না। -সূরা ছফ (৬১) : ২-৩

আমার ভাষা সুন্দর, উপস্থাপন সুন্দর।  মানুষ মুগ্ধ হয়, বাহবা দেয়। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। যদি আমার হৃদয়টা আলোকিত না হয় তাহলে আমার কথা দ্বারা মানুষ আনন্দ পাবে কিন্তু আলোকিত হবে না। তাই ভাষা, উপস্থাপন ইত্যাদি সুন্দর করার সাথে সাথে আমাকে আলোকিত হতে হবে। গুনাহ বর্জন করতে হবে। অর্থাৎ তাকওয়া ও এখলাস ছাড়া আমার সুন্দর সুন্দর আলোচনা-মেহনত তেমন ফলদায়ক হবে না। আমার কাজ তো মানুষকে ভালো কথা বলা, হেদায়েত দান করবেন তো আল্লাহ তাআলা। এখন আমার যদি আল্লাহ্র সাথে সম্পর্ক ভালো না থাকে তো আল্লাহ আমার কথার দ্বারা মানুষের হেদায়েতের ফয়সালা করবেন কীভাবে?

পৃথিবীতে এমন অনেক আল্লাহর বান্দা ছিলেন এবং এখনো আছেন- যাঁদের ভাষা খুব সুন্দর না, উপস্থাপন সাদামাটা, কিন্তু তাঁর রয়েছে একটি আলোকিত হৃদয়। সেই আলোর সান্যিধ্যে যে-ই আসে সেই আলোকিত হয়। সুতরাং দ্বীনের খাদেম হতে হলে অন্য সকল প্রস্তুতির সাথে সাথে আমাকে অর্জন করতে হবে- একটি আলোকিত হৃদয়। মানুষকে ভালো বানানোর মেহনতের প্রথম প্রস্তুতি হবে- নিজে একজন ভালো মানুষ হওয়া। মানুষকে গুনাহ থেকে ফেরাতে হলে- আগে নিজেকে গুনাহ বর্জন করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে, ভালো মানুষ হতে হলে ভালো মানুষের সান্যিধ্যে থাকা জরুরি।

আরেকটি বিষয় হল, দ্বীনের খেদমত করতে হলে কোনো মুরব্বির তত্ত্বাবধানে করা। মুরব্বির তত্ত্বাবধান ছাড়া কাজ করতে গেলে আমি যথাযথ কাজ করতে পারবো না। বা কাজ করতে গিয়ে দ্বীনের খেদমতের চেয়ে ক্ষতি করে ফেলতে পারি বা আমি নিজে পদস্খলনের শিকার হতে পারি। 

 

 

advertisement