গণমাধ্যম : ইতিবাচক অবয়বের রেখাচিহ্ন
ছোট, মাঝারি কিংবা বড়- যাই হোক একটি ইতিবাচক এবং দ্বীনী চেতনা ধারণকারী ও জাতিবান্ধব গণমাধ্যমের অবয়বটি কেমন হতে পারে- এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও প্রসঙ্গ। আসলে এ প্রশ্নের পরিধি যত বিস্তৃত, আলোচনায় ততটা ব্যাপকায়ন হয়তো প্রয়োজন হয় না এবং উদ্দিষ্টও থাকে না। বরং মোটামুটিভাবে মৌলিক ও কমন বিষয়গুলোর বাইরে কেমন চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে একটি ইতিবাচক গণমাধ্যম- এটি জানা ও অনুশীলন করাই থাকে মুখ্য ব্যাপার। সে হিসেবে অল্প ক’টি বিষয় ও মোটা দাগের কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে এখানে আলোচনার চেষ্টা করা হবে। সেটি হোক কোনো সাধারণ দৈনিক পত্রিকা কিংবা অনলাইন নিউজ পোর্টাল অথবা রেডিও টিভির বিষয়ে। কমন ও মৌলিক আয়োজনের পাশাপাশি কিংবা আয়োজনের মধ্যেই অবলম্বনযোগ্য কিছু বিষয় ও প্রসঙ্গ এখানে প্রস্তাবনা হিসেবে আসতে পারে। বিষয়গুলোর সবক’টিকেই চূড়ান্ত ও বিধিবদ্ধ কিছু হিসেবে না ধরে একটি নমুনা-প্রস্তাব ও চিন্তা হিসেবে গ্রহণ করাই সমীচীন হবে। এসব বিষয়, বৈশিষ্ট্য ও প্রসঙ্গকে ধারণ করেই দাওয়াহ-সাংবাদিকতা কিংবা দাওয়াহভিত্তিক গণমাধ্যমের অনুশীলন ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর হয়ে উঠতে পারে।
বৈশিষ্ট্য ও প্রসঙ্গগুলোর মাঝে স্বভাবগতভাবে দুটি দিক থাকতে পারে। যেমন প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই থাকে। কিছু করণীয় আর কিছু বর্জনীয় কিংবা নেতিবাচক। অর্থাৎ কিছু ইতিবাচকভাবে অবলম্বনযোগ্য। আর কিছু নেতিবাচকভাবে অবলম্বনযোগ্য। ঠিক একইভাবে কিছু থাকবে মনোজাগতিক কিংবা মানসিক, বেশিই থাকবে বাস্তব কার্যকারিতার সাথে সম্পর্কিত। এখানে উভয় দিকের বিষয় ও প্রসঙ্গগুলোই বিক্ষিপ্তভাবে আলোচনায় আসবে।
দুই.
প্রথম পর্যায়ে আমরা নেতিবাচকভাবে অবলম্বনযোগ্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারি। এ বিষয়গুলো প্রতিবাদী বৈশিষ্ট্য ও আচরণের অংশ হিসেবে অত্যন্ত কার্যকর এবং উন্মোচনধর্মী। মিডিয়া বা গণমাধ্যমের অন্যসব সাধারণ বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেই এ বিষয়গুলো থাকতে পারে। যে কোনো ইতিবাচক গণমাধ্যমের জন্যই বিষয়গুলো অনেক বেশি সুফলদায়ক সাব্যস্ত হতে থাকে।
প্রথমে প্রস্তাব করা যায় পূর্ব সিন্ধান্তকৃত পরিকল্পনা কিংবা এসাইনমেন্ট-এর ভিত্তিতে অসৎ ব্যক্তি, মহল ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে (যারা একই সঙ্গে জাতি ও দ্বীনী চেতনার বিরোধী হিসেবে পরিচিত) ‘আক্রমণাত্মক’ প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করা। এটাকে আমরা উদ্ঘাটন ও উন্মোচনধর্মী আলোকপাতও বলতে পারি। যারা বিভিন্নভাবে ইসলাম, দেশ ও জাতির ইতিবাচক চিন্তার বিরুদ্ধে সক্রিয়- সে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংস্থা বা মহল যে-ই হোক, তাদের যে কোনো গোপন অসঙ্গতি ও প্রতারণার ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করা। বিশ্বাস, বক্তব্য, আচরণ, শিক্ষা, দেশপ্রেম, চেতনা, আদর্শ, অসাম্প্রদায়িকতা, জীবনধারা কিংবা এ জাতীয় যে কোনো দিক থেকে হতে পারে এ বিষয়ের কাজ। বাস্তব ক্ষেত্রে এর অনেক উদাহরণ দেওয়া সম্ভব। কাজে নামলে বিষয়টির হাজারো উপলক্ষ ও উপায় সামনে চলে আসবে। প্রথম নজরে কাজটিকে নেতিবাচক মনে হলেও মনে রাখতে হবে, এ কাজটি বিপরীতভাবে জোর করে অধিক পরিমাণেই করছে বৈরী গণমাধ্যম। তারা করছে বিকৃত পন্থায়! ইতিবাচক গণমাধ্যমকর্মীদের করতে হবে ইতিবাচক পন্থায়। সুতরাং এ পদ্ধতি অবলম্বনে কোনো সমস্যা নেই।
আরেকটি বিষয় হতে পারে এমন যে, আন্তর্জাতিক মিডিয়া থেকে নেওয়া যে কোনো খবর কোনো সম্পাদনা ছাড়া অনুগত ভঙ্গিতে পরিবেশন না করা। বিদেশি সূত্রে বিদেশি খবরগুলো নিজেদের তথ্য, দৃষ্টিভঙ্গি এবং তাদের অসঙ্গতি ও ভ্রষ্টাচারের অতীত সামনে নিয়ে সম্পাদনা করে খবরটি পরিবেশন করা। কখনো কখনো বিদেশি (বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইহুদি প্রভাবিত সংবাদ সংস্থা) সূত্রের খবরগুলোর সঙ্গে প্রয়োজনীয় মন্তব্য-নোট অথবা সম্পূরক তথ্য জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করা। তাদের (বিদেশি সংবাদ সংস্থা) ছুড়ে দেওয়া গালি, নেতিবাচক পরিভাষা কিংবা ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী আবহ অথবা নির্দিষ্ট শব্দ এড়িয়ে যাওয়ার গ্রহণযোগ্য ধারা তৈরি করা। আন্তর্জাতিক খবর সংগ্রহ ও পরিবেশনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মিডিয়ার ডেস্কগুলোতে সচেতনভাবে এ বিষয়ক কাজটি আঞ্জাম দেওয়া সম্ভব। বাস্তব ক্ষেত্রে এর সুফলও হবে অনেক। এ প্রসঙ্গে অন্য একটি লেখায় সবিস্তার আলোচনা হয়েছে।
তৃতীয় বিষয়টি হতে পারে বিভ্রান্তি অপনোদনমূলক। অর্থাৎ যে কোনো স্পর্শকাতর ইস্যু বা ঘটনা নিয়ে বৈরী গণমাধ্যম কিংবা মহলে ইচ্ছাকৃত বিকৃতি কিংবা বাড়াবাড়ি শুরু করলে ওই বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরা। ইস্যু বা ঘটনাটি দেশি হলে সরেজমিন রিপোর্ট করে কিংবা পূর্বাপর সব খুঁটিয়ে দেখিয়ে প্রকৃত বাস্তবতা দ্রুত সামনে নিয়ে আসা। আর ইস্যু বা ঘটনাটি বিদেশি হলে নানা সূত্র থেকে প্রয়োজনীয় আরো তথ্য সংগ্রহ এবং অতীত-বর্তমান মিলিয়ে যথাযথ উপযোগী ও কল্যাণকর ব্যাখ্যা বা বিবরণ পেশ করা। আন্তর্জাতিক পরিসরে ইসলাম কিংবা মুসলিম ইস্যুর সঙ্গে যুক্ত যে কোনো বদ প্রপাগান্ডার যথাযথ উত্তর দেওয়া। এটা রিপোর্টে, কলামে কিংবা বিভিন্ন রকম আলোকপাতেও হতে পারে।
অনেকে মনে করেন, দেশ ও বিদেশের এমন কিছু ইস্যু নিয়ে হঠাৎ বৈরী ও বিদ্বেষী গণমাধ্যম বিচিত্র রকম একতরফা মাতামাতি শুরু করে যে, মুসলমানদের মাথা ও চিন্তা যেন তাতে হেঁট হয়ে যায়। অথচ ইতিহাস থেকে বিভিন্ন নজির এনে তুলনা দিলেই এসব বদ প্রচারণার বেলুন ফুটো হয়ে চুপসে যাওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার। সন্ত্রাসের সঙ্গে শুধু ইসলাম ও মুসলমানকে যুক্ত করা এবং সশস্ত্র তৎপরতার দায়ে মুসলমানদের একচেটিয়া দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়গুলোতে এ-জাতীয় ব্যবস্থা অনেক সুফলদায়ক হতে পারে। নিকট ও দূরের ইতিহাস আবৃত্তি এবং কিছু তুলনামূলক দৃষ্টান্ত এ-জাতীয় মিথ্যাচারী প্রবণতার মুখে উপযুক্ত জবাব হিসেবে দাঁড়াতে পারে। তাই ইতিহাসের স্মরণ এবং ‘তুলনার অস্ত্র’ প্রয়োগে ইতিবাচক মিডিয়াকে প্রস্তুতিসহ সচেতন থাকতে হবে।
তিন.
ইতিবাচক গণমাধ্যমে করণীয় কিছু বিষয় এবং নিখাঁদ ইতিবাচকতার নানা বৈশিষ্ট্যও থাকতে হবে। সেটা মোটা দাগে হাতে গোনা দুই-চারটা বিষয়ও হতে পারে। আবার বিশ্লেষণের সঙ্গে দীর্ঘ তালিকা সংবলিতও হতে পারে। অবগতি ও উড়ন্ত দৃষ্টিপাতের সুবিধার্থে এখানে মৌলিকত্বের বিবেচনায় কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের বা প্রসঙ্গের উল্লেখ করা যেতে পারে।
প্রথম বিষয় হতে পারে, ইসলামী ইস্যু, নৈতিক ইস্যু, মানবিক ইস্যু ও জনহিতকর ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়া। কারণ, ইতিবাচক গণমাধ্যম কিংবা দাওয়াহভিত্তিক গণমাধ্যমের অন্যতম করণীয়ের মধ্যে এ প্রসঙ্গগুলো পড়ে। আর ইতিবাচক গণমাধ্যমে নির্লিপ্তভাবেই এ বিষয়গুলোর লালন ও চর্চা করতে হবে। মুসলমানদের শুধু নয়, বরং যে কোনো সততা-সন্ধানী মানুষের গণমাধ্যমে শ্বাশত ইসলামের পরিশীলিত প্রচার ন্যায্যতারই দাবি। তুলে ধরতে হবে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ও আদর্শ। ইসলামের কল্যাণকর অনুশাসনের মাধুর্য। একইভাবে মানবিক ও জনহিতকর ইস্যুকেও দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আলোকপাতে নিয়ে আসার কাজটি করে যেতে হবে। এসব বিষয়ে বৈরী গণমাধ্যমগুলোর মতো কোনো রকম ক্ষুদ্রতার পরিচয় দেওয়া ইতিবাচক গণমাধ্যমের কাছে প্রত্যাশিত হতে পারে না।
এর দ্বিতীয় বিষয়টি হতে পারে, কোনো রকম ব্যক্তিগত কুৎসার প্রচার-প্রকাশে না যাওয়া। অপ্রয়োজনীয় এবং জনস্বার্থের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পর্কিত নয়- এমন কোনো ব্যক্তিগত কুৎসা ও গোপনীয়তা (নীতি ও আদর্শের দৃষ্টিকোণ থেকে বিপরীত প্রান্তের কারো হলেও) প্রকাশ-প্রচার করার পথে না যাওয়া চাই। নেতিবাচক গোপনীয়তা ফাঁস করে, কুৎসা প্রচার করে কেবল পাঠকের নেতিবাচক মজা ও কাটতি বৃদ্ধির চেষ্টার পাঁকে কোনো ইতিবাচক ও সততাবাদী গণমাধ্যমের অবতরণ করা সমীচীন হতে পারে না। এই দুষ্ট সুরসুরি ও ঠুনকো উল্লাস-উপকরণ থেকে ভ্রষ্টাচারমুক্ত গণমাধ্যমের বেঁচে থাকাটা জরুরি। অবশ্য যদি বিষয়টির সঙ্গে কোনো জাতীয় প্রতারক, ঠগ ও ধোঁকাবাজের মুখোশ উন্মোচনের প্রয়োজনীয় উপলক্ষ ও উপাত্ত বিদ্যমান থাকে- সে ক্ষেত্রে উপযোগী উপায়ে তথ্য সরবরাহ করা যেতেই পারে।
কেউ কেউ বলেন, গণমাধ্যমের অন্যতম ভ্রষ্টাচার হলো নিজেদের পক্ষের লোক বা মহলের কোনো দোষ দেখে না, কিন্তু বিপরীত পক্ষকে নগ্ন করতে সব সময় তৎপর থাকে। এ রকম ‘মুখস্থ’ ভ্রষ্টাচার থেকে ইতিবাচক গণমাধ্যমের বেঁচে থাকা অতি জরুরি। এর জন্য বড় অবলম্বন হলো, সাধারণভাবে ন্যায়ানুগ থাকা। কোনো ব্যক্তি বা মহলের বিদ্বেষ যেন ন্যায় ও সততা থেকে সরে গিয়ে তাকে ‘দূষিত’ করে উপস্থাপন করতে উসকানি না দিতে পারে- এ ব্যাপারে সতর্ক ও সংযত থাকা। যে বা যারা সততার আদর্শ ও নৈতিকতাকে আঘাত করে বা করবে- তাদেরকে তো উপযুক্ত ক্ষেত্রে উপযুক্ত উপায়ে ঘায়েল করতেই হবে। কিন্তু তাদেরকে ঘায়েল করতে গিয়ে অন্যায়ভাবে তাদেরকে ‘অভিযুক্ত’ বা ‘দোষী’ বানানোর চেষ্টা করা যাবে না। সুবিচার করে যেতেই হবে। এমন কিছু করলে সাংবাদিকতায় এটি হবে অবিচার, অনুচিত কাজ ও ন্যায়ভ্রষ্টতা। বিপরীত ও কথিত প্রগতিশীল গণমাধ্যম এ জাতীয় কাজ ও চেষ্টা সব সময় করে গেলেও সততাপন্থীদের জন্য এভাবে এ উপায়ে কোনো কিছুর ‘জবাব’ দেওয়া একদমই ঠিক হবে না। পবিত্র কুরআনেও এ প্রবণতা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলাম ও জাতির বিরোধীপক্ষকে ঘায়েল করা কিংবা তাদের মুখোশ উন্মোচনের জন্য এমন বিদ্বেষ কিংবা অন্যায্য উপায়ে ‘দোষী’ বানানোর চেষ্টায় যাওয়ার কোনো প্রয়োজনই হয় না। তারা এমনিতেই এমন বহু পাপ ও অসঙ্গতির মধ্যে ডুবে আছে যে, প্রকৃত তথ্যগুলো উঠিয়ে এনে দিলে অথবা সমন্বয় করে সামনে এনে ছাড়লেই ওদের সব রকম ইমেজের মুখে কালি লেপ্টে যাবে। সুতরাং ইসলামের দৃষ্টিতে অনুমোদিত নয়- এমন পন্থায় না গিয়ে সঠিক উপায়ে তাদের জাতীয় পাপ ও দোষের তথ্য সামনে নিয়ে আসাই সমীচীন।
চার.
সততার আদর্শের প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমে কাজ করার উপযোগী কিছু বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে। কথা হয়েছে ইতিবাচক গণমাধ্যমের ইতিবাচক অবলম্বনযোগ্য কিছু বৈশিষ্ট্য নিয়েও। অল্প কিছু মানসিক প্রস্তুতি কিংবা প্রেরণার বিষয়ও এ পর্যায়ে সামনে আসতে পারে, বৈরী গণমাধ্যমের স্রোতের মধ্যে কাজ করার সময় যে প্রেরণা ও মনোপ্রস্তুতি ভেতরে থাকলে ইতিবাচক কাজ করতে সব সময় তা বাড়তি শক্তি জুগিয়ে যাবে।
প্রথমত সওয়াবের কাজ মনে করে গণমাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে ও সততার সঙ্গে কাজ করা। আল্লাহ তাআলা আমার কাজকর্মও দেখছেন এবং মনের ভেতরে কী আছে- তাও দেখছেন। সেজন্যই খেদমত ও দাওয়াহ হিসেবে কাজ করা। কোনো রকম অসততা, অবৈধ সুযোগ সন্ধান কিংবা স্বার্থ-তাড়িত হয়ে কারো ক্ষতি বা অনুচিত উপকার সাধনে নিজের প্রয়াস ব্যয় না করা। সাংবাদিকতার এ জগতে কাজের মাপ, ওজন ও পরিধি অনেক সুদূরপ্রসারী। এ জন্যই স্খলন থেকে নিজেকে ও নিজের চেষ্টাকে সম্পূর্ণভাবে বাঁচিয়ে রাখা, মুক্ত রাখা চাই। চাই আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করে কাজ করে যাওয়া। ইসলাম, দেশ, জাতি ও মানুষের সেবায় এবং কল্যাণে নিজেকে প্রয়োজন অনুযায়ী পেশ করে যাওয়া।
দ্বিতীয়ত গণমাধ্যমের জগতে কাজ করতে গিয়ে ব্যাপক বৃত্তে ও পরিসরে সহজ বিচরণের সুবিধার্থে অনেক রকম ‘কৌশল’ গ্রহণ করতে হয়। কাজে, মুখে, আলোচনায়, মেলামেশায় এই কৌশলের সহযোগিতা নেওয়া লাগতেই পারে। এমনকি গণমাধ্যমের অস্তিত্বের প্রয়োজনেও অনেক সময় পূর্ণ কিংবা আধা বিপরীত মেরুর ব্যক্তি কিংবা মহলের সঙ্গে সমঝোতা কিংবা উঠাবসাও করতে হতে পারে। মনে রাখতে হবে, দ্বীনী তারুণ্যের জন্য, গণমাধ্যমের ঈমানদার কলমজীবীর জন্য এর সবই কৌশল। এর সবই সাময়িক ও প্রয়োজন মাফিক। এ ‘কৌশল’ যেন কাজ ও জীবনের ক্ষেত্রে ‘আসলে’ পরিণত না হয়। নিজেদের জীবন, চিন্তা ও কাজে যেন ক্ষয় শুরু না হয়। বিপরীত আদর্শের নীতি ও ব্যক্তিকে যেন হৃদয়ের জায়গা ছেড়ে দিতে না হয়। খুবই খেয়াল রাখার বিষয়। বিষয়টি দিল, জান, জীবন ও অঙ্গনের অস্তিত্বের সুস্থতার বিষয়। এ ক্ষেত্রে স্খলন ও পতন হলে এর চেয়ে বড় বিপর্যয় এ অঙ্গনে আর কিছুই হতে পারে না। চলতে হবে, পড়তেও হবে। কিন্তু প্রভাবিত হওয়া যাবে না।
তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে, আত্মমর্যাদার অনুভূতি লালন ও নিজের মনোভঙ্গির উচ্চতা বজায় রাখা। সাংবাদিকতা কিংবা গণমাধ্যমে বৈরীমহলে শক্তিমানের সংখ্যাই তো বেশি। ব্যক্তি, মেধা, হাউজ- সব ক্ষেত্রেই। কিন্তু নিজের চিন্তার উচ্চতা, হিম্মতের দৃঢ়তা এবং চোখের ধার কিছুতেই নীচে নামানো যাবে না। হীনম্মন্যতার কোনো বিন্দুও যেন মনের আশেপাশে ঘেষতে না পারে! দ্বীন ও সত্যের কাজের চেয়ে বড় কোনো কাজ তো দুনিয়ায় নেই। বিপরীত প্রান্তের রথি-মহারথিরা যত কীর্তিমানই হোক, আমার চেয়ে মর্যাদায় নেই, কাজের মানে আমার চেয়ে বড়ও নয়। তাদের দিকে প্রয়োজনে পর্যবেক্ষণের চোখে তাকাব; আত্মবিলীন হওয়ার মুগ্ধতায় তাদের দেখব না। প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ডের প্রতি তাকানোর সময় আমার দৃষ্টিতে ধার থাকবে, জেদ থাকবে, পরিবর্তনের প্রত্যয় থাকবে, প্রতিশ্রুতির দ্যুতি থাকবে; হীনম্মন্যতার গ্লানি যেন না থাকে। না থাকে যেন হেরে যাওয়া কিংবা হারিয়ে যাওয়ার ঘোলা দৃষ্টি। তাহলে এই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার রণক্ষেত্রে আমার পক্ষে যথার্থ দাঈর ভূমিকা পালন করা খুব মুশকিল হয়ে যাবে। এমন দুর্ঘটনা যেন না ঘটে কিছুতেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহায় হোন। আমীন।
৪ অক্টোবর ২০১৬
পল্লবী, ঢাকা।